somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুশানের জন্য ভালোবাসা !! (একটি কাল্পনিক গল্প)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-আমি রুশান বাবু চলে গেলে, তোমরা আমাকে কোথায় পাবে?
ইসমত রায়হানা কিছুক্ষন জন্য চোখে ঝাহসা দেখলেন ! তিনি ভাবতেই পারছেন না এই ছেলেটা কিছু হয়েছে !
কেমন করে তার এমন মিষ্টি বাবুটার কিছু হতে পারে ?
তিনি এটা বিশ্বাস করতে চান না ! মাঝে মাঝে মনে হয় হয়তো তিনি কোন দুঃস্বপ্ন দেখছেন ! হয়তো ঘুম থেকে উঠে দেখবন তার এই সুইট বাবুটা খেলা করছে আপন মনে !
উনাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে মিষ্টি করে বলবে
-মামুনি, আমাকে খেতে দিবা না ? আমার বুঝি খুদা লাগে না ?
ইসমত রায়হানা জলদি জলদি রান্না ঘরের দিকে যাবেন । ফ্রীজে সব সময় রুশানের জন্য কিছু না কিছু তৈরি করাই থাকে !
তিনি যখন অফিসে যান তখন তৈরি করে রেখে যান আবার যখন বাসায় আসেন তখনও রান্না করে রাখেন । ইসমত রায়হানা চান না তার ছেলেটা কখনও না খেয়ে থাকুক !
খাওয়ানো শেষে তিনি রুশানকে গোছল করান নিজের হাতে ! তার বাবুটা ঠান্ডা পানি একেবারে সহ্য করতে পারে না । একটু ঠান্ডা পানি গায়ে লাগলেই গায়ে জ্বর চলে আসে !
একবার তিনি অফোসে ছিলেন ! তার মা না বুঝে রুশানকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোছল করিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি বাসায় এসে দেখেন রুশানের গায়ে আকাশ পাতাল জ্বর ! মায়ের সাথে কি রাগারাগি তার । পরে অবশ্য বুঝেছিলেন বৃদ্ধ মা ঠিক মত বুঝতে পারে নি । কিন্তু রুশানের কিছু হলে তিনি সেটা সহ্যই করতে পারেন না !

কিন্তু এখন তাকে কত কিছু করতে সহ্য করতে হচ্ছে ! তার আদরের ছেলেটা আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অথচ তিনি কিছুই করতে পারছেন না । তার যেন চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কোন কিছুই করার নাই !
জন্মের সময়ই রুশান খানিকটা জটিলতা নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছিল তাই রুশানের প্রতি তার যত্নতা ছিল সব থেকে বেশি ! ডাক্তার অবশ্য বলেছিল যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই জটিলতা আরো বাড়বে । তকখন কিন্তু কিছুতেই রুশানকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না ।
তিনি মন ডাক্তার কে বলেছিলেন যে কোন কিচু বিনিময়েই তিনি রুশানকে রক্ষা করবেন ! পৃথিবীর কোন শক্তি রুশানকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না ।
এখন মনে হচ্ছে তিনি হেরে যাচ্ছেন ! এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর কাছে তিনি হেরে যাচ্ছেন ! কোন কিছুই যেন তার করার নাই ! মাঝে মাজেহ তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে ! এই পৃথিবীর মানুষকে বলতে ইচ্ছা করে
তোমরা কি দেখছো না আমার বাবুটা আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে !!
তোমাদের কি কিছুই করার নাই ! সামান্য কয়টা টাকা কি তোমাদের কাছে খুব বেশি হয়ে গেল ! আমার বাবুর জীবনটার কি কোন দাম নেই !
কিন্তু তিনি বলতে পারেন না ! তিনি কিছুই করতে পারেন না !
কেবলই আল্লাহর কাছে দোয়া করেন !
তিনি এখনও বিশ্বাস করেন মানুষ এতো মায়া হীন হতে পারে না ! এই দেশের মানুষ এতো নির্দর হতে পারে না ! তারা তার ছোট্ট বাবুটার জন্য কিছু না কিছু করবেই !
তাকে বাঁচিয়ে তুলবেই !

আগামী নয় ডিসেম্বর রুশানকে ঢাকার ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে ! ওখানকার ডাঃ শহিদুল ইসলাম ইসমত রায়হানা কে আশ্বাস দিয়েছেন যে ঠিক মত অপারেশন হলে রুশান আগের মতই খেলাধুলা করবে ! কোন সমস্যা থাকবে না ।
ইসমত রায়হানা বিশ্বাস করেছেন ! কিন্তু তবুও আশ্বত্ব হতে পারেন নি ! কারন হল টাকা !
অপারেশনের জন্য দশ লক্ষ টাকা লাগবে ! এতো টাকা তার নেই ! এমন কি তার যা আছে তা সব বিক্রি করেই তিনি এতো টাকা জোগার করতে পারবেন না !
তিনি সদরে ডেলভিউ ডায়াগনস্টিক এ একটা ছোট চাকরি করেন ! তার উপার্জন দিয়ে রুশান ও তার আরো দুই সন্তানকে তিনবেলা ভাত মুখে তুলে দিতেই পারেন না। এই ক্ষুদ্র এই উপার্জন রুশানের এই বিপজ্জনক অসুখের চিকিৎসার কাছে খুবই দুর্বল !
তাহলে কি টাকার জোগার হবে না !
তার ছোট্ট রুশান কি আর খেলবে না ! আর হাসবে না !
আর কি বলবে না " আম্মু আমার ক্ষুদা লেগেছে । আমাকে খাইয়ে দাও "

দেখতে দেখতে ৯ ডিসেম্বর চলে আসে ! তিনি কিছুই করতে পারেন না ! টাকার জোগার জোগার হয় নি তবুও তিনি রুশানকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ! এতো ছোট অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে বাই রোড যাওয়া খুবই বিপদজনক, তাই লঞ্চের একটা কেবিন ভাড়া করা হয়েছে !
খুব ভোরে যখন তিনি সদর ঘাট টার্মিনালে নামলেন তখন একটা অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখলেন ! কয়েক হাজার লোক রুশানের জন্য ব্যানার হাতে দারিয়ে আছে । প্রথমে তিনি খুব ভাল করে বুঝতে পারেন নি যে এতো লোক কেন ! কিন্তু একটু ভাল করে লক্ষ্য করতেই দেখলেন তার ছেলে রুশানের ছবিয়ালা বড় ব্যানার নিয়ে কয়েক জন দাড়িয়ে আছে !
সেখানে লেখা
রুশান কে আমরা যেতে দেব না !
রুশান আমরা তোমার পাশে আছি !

তারপরের দৃশ্য গুলো যেন খুব জলদি হয়ে গেল !
টার্মিলান থেকে হাজার মানুষের ঢলটা বেরিয়ে এল । আগে থেকেই এম্বুলেন্স ঠিক করা ছিল ! রুশান কে দ্রুত এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা করে দেওয়া হল ।
ইসমত রায়হানার আবারও মনে হল তিনি স্বপ্ন দেখছেন না তো !
এতো গুলো মানুষ তার ছেলের জন্য এসেছে !
মানুষ কি এমন হয় ?
অপরিচিত কারো জন্য কেউ কি এতোটা করে ?
এম্বুলেন্সের ভিতর তার পাশেই তরুনী বয়সের একটা মেয়ে বসে ছিলেন । মেয়েটি কে তিনি চিনেন না ! সামনে আরো দুজন যুবক বসে আছেন !তাদের একজন কে তিনি খানিটা চিনেন ! কয়েকবার মোবাইলে কথা হয়েছে আর একবার যুবকটা তার বাসায় গিয়েছিল রুশানকে দেখতে !
পাশে বসা মেয়েটি হঠাৎ বলল
-আপা, আপনি কোন চিন্তা করবেন না ! রুশানের কিছু হবে ! আমরা আছি না !
এতো দিন কত মানুষ, কত পরিচিত মানুষ তাকে আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু তিনি আস্থা রাখতে পারে নি । কিন্তু আজ এই অপরিচিত মেয়েটার কথায় কেন জানি খুব ভরশা পেলেন !
ইসমত রায়হানা বললেন
-কিন্তু টাকা ......
মেয়েটি একটু হেসে বলল
-টাকার জোগার হয়ে গেছে ! আমরা ব্লগার সবাই খুব চেষ্টা করেছি ! মন প্রান দিয়ে দোয়া করেছি ! এতো গুলো মানুষের চেষ্টা এতো গুলো মানুষের দোয়া কখনও বিফলে যেতে পারে না ! আমাদের চেষ্টার সারা দেশ থেকে সাহায্য এসেছে ! আপনি কোন চিন্তা করবেন না !
ইসমত রায়হানার কাছে আবার মনে হয় তিনি ঠিক শুনলেন তো !!
টাকার জোগার হয়ে গেছে !!
তার বাবুটা আবার বাঁচবে !
আবার হাসবে ! আবার খেলবে !!

কোন কথা তার মুখ থেকে কোন কথা বের হল না ! কেবলই কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো !!



আমার বুকে কেন জানি মায়া দয়া কম ! মানুষের কথা আমি খুব কম চিন্তা করি ! কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমার চার পাশের মানুষ গুলো আমার মত নয় ! তারা মানুষের জন্য চিন্তা করে ! তার প্রমান এই ব্লগ ! তাদের মত মানুষ গুলো বেঁচে আছে বলেই এই পৃথিবীটা এতো সুন্দর আর মায়াময় !
আমি যে গল্পটা লিখেছি হয়তো এটার শেষটা কাল্পননিক ! কিন্তু আম বিশ্বাস করি এটা বাস্তবে রুপান্তরিত হবে ! আমার চারপাশের ঐমানুষ গুলো কিছুতেই ছোট্ট রুশানকে হারিয়ে যেতে দিবে না !
আমি মন প্রানদিয়ে বিশ্বাস করি তাদের চেষ্টা বিফলে যাবে না !
সবাই যারা রুশানের জন্য চেষ্টা করছেন তাদের কে ধন্যবাদ ! যারা সাহায্য করেছেন তাদের ধন্যবাদ ! যারা করবেন বলে ঠিক করেছেন তাদেরও ধন্যবাদ ! আর যারা করতে পারছেন না তারা কেবল দোয়া করবেন , তবে কিছু কিছু লোক কে ধন্যবাদ না দিলেই না ! তাদের প্রথমেই আসে শিপু ভাইয়ের নাম ! আমি আগেও খুব দেখেছি শিপু ভাই সব সময় সব মহৎ কাজে সবার আগে এগিয়ে আসে ! আরো যারা আছেন
১. আমিনুর রহমান (০১৭৫৫৩০৬০২১)
২. ব্লগার কান্ডারি অথর্ব (০১৯৩০০৭৪৯০১)
৩. ব্লগার srjony (০১৬৭৩২৫৮০৫৯)
৪. ব্লগার কাল্পনিক_ভালোবাসা (০১৭৬৪৩৪০৪৪৭)
৫. ব্লগার মেহেদী হাসান মাহী (০১৭৩৭৪৮৯৫৩৫)
৬. ব্লগার তামিম ইবনে আমান (০১৮২৯২৬০১৯০)
৭. ব্লগার সঞ্জয় নিপু (০১৬১৫৬০৫০০৫),
৮. ব্লগার একজন আরমান (০১৯১৮০৫০৫৮০)
৯. ব্লগার ঘুড্ডির পাইলট(০১৮৪৩৮৮৮৮৮১)
এরা বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে রুশানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে কোন রকম স্বার্থ ছাড়াই !!
আসুন আমরা সবাই দোয়া করি যেন আমাদের এই চেষ্টা কিছুতেই বিফলে না যায় ! ছোট্ট রুশান আমাদের যেন কিছুতেই ছেড়ে না যায় !

আমিন !!!

রুশানকে নিয়ে লেখা কয়েকটি পোষ্ট
(রুশানের জন্য লেখা বিভিন্ন পোষ্ট পড়ে গল্পটা লিখেছি)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জামায়াতকর্মীরা সমাজকর্মী হয়ে থাকবে : আমির

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৯




বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে নিজেদের জনগণের শাসক নয়, সেবক ও খাদেম পরিচয় দেবে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত কর্মীরা আজীবন সমাজকর্মী হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৮




মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১২




নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়

লিখেছেন জাহিদ শাওন, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৫০


এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধী চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের মিলিটারীকে ক্ষমতা থেকে দুরে রাখতে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৩:২৪



১৯৭১ সালের জেনারেশন'এর কাছে ইন্দিরা (১৯১৭ - ১৯৮৪ ) ছিলেন ১ জন বিশাল ব্যক্তিত্ব; যু্দ্ধ লেগে যাওয়ার পর, উনি বলেছিলেন যে, বাংগালীরা ভালো ও নীরিহ জাতি, তিনি এই জাতিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×