ছবি ইন্টারনেট
এই করোনার সময়ে শুনছি ঢাকাতে ডেংগু মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে । আবার মবিন ভাইয়ের পোস্ট থেকে মানসিক সমস্যার কথাও জানা যায় যা ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে । ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের এই ব্লগেও কিছু রোগবালাইয়ের অবস্থান আসন পেতে আছে অনেক আগে থেকেই । সেগুলোর দিকে কেউ আসলে লক্ষ্য দিচ্ছে না । কিন্তু দেওয়া উচিৎ । কয়েক বছর আগে ব্লগার অপূর্ন রায়হান ঠিক এই রোগ সমূহ গুলো নিয়ে বিস্তার আলোচনা করেছিলো । কিন্তু সেই পোস্টটা আর নেই । সে ব্লগ ছেড়ে চলে যাওয়ার সাথে সাথে তাার সকল পোস্ট ড্রাফট করে নিয়েছে । আজকেই পোস্ট টি মূলত সেই পোস্টটির একটি এডাপশন । এখন যারা ব্লগে আছেন তাদের বেশির ভাগই সেই পোস্ট সম্পর্কে জানেন না । সেই রোগ গুলোর ব্যাপারে মানুষকে জানানোর দরকার । সেই দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিয়েছি। আমার যদিও সেই পোস্টের রোগ গুলোর ব্যাপারে হুবাহু সব কিছু মনে নেই । কেবল ধারনা টুকু আছে । যতটুকু মনে আছে সেই ধারনা থেকে এবং নতুন আরও কিছু সংযুক্ত করে নতুন একটা পোস্ট লেখা যাক ! মিলিয়ে নিন আপনি এই সমস্ত রোগের মাঝে কোন রোগে আক্রান্ত কিনা !
পোস্টোকাইসিস পোস্টোকাইসিসের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে ঘনঘন পোস্ট করা । ফেসবুকে আগে আমি যেমন মিনিটে মিনিটে স্টাটাস পোস্ট করতাম, দিনে ১০/১২ টি পোস্টের বেশি হয়ে যেত, এই সামুতেও আগে দেখা যেন এমন অনেকেই আছে যারা ঘন্টায় ঘন্টায় পোস্ট প্রসব করতেন । সম্ভবত এখন একটা নিয়ম সামুতে নতুন হয়েছে যে প্রথম পাতায় একজনের তিনটির বেশি পোস্ট স্থান পাবে না টাইপ কিছু হবে । আগে এমন কিছু ছিল না । এমন যে গেছে যে প্রথম পাতার পুরো প্রথম পাতা জুড়ে কেবল একজনের পোস্ট । তবে এখন এই রোগের মানুষ কমই দেখা যায় । তারপরেও এখনও মাঝে মধ্যে এমন পোস্টোকাইসিস ব্লগারের দেখা মেলে ।
কমেন্টোসিয়োসিস কমেন্টোসিয়োসিস মূলত বেশি বেশি কমেন্ট কারী ব্লগারদের মাঝে দেখা যায় । তবে এখানে একটা মানদন্ড আছে । যে ব্লগারেরা প্রচুর ব্লগ পড়ে এবং প্রচুর কমেন্ট করে তারা মোটেই এই রোগে আক্রান্ত নন । বরং যারা পোস্ট না পড়ে, পুরো টুকু না পড়ে একের পর কমেন্ট করেই । এমনও প্রচুর দেখা গেছে আগে একটা চার শব্দের শব্দের গল্প পোস্ট করার দুই মিনিটের মাথায় নিচে কমেন্ট এসে হাজির । ঢালাও ভাবে কোন পোস্ট ভাল ভাবে না পড়ে একের পর এক কমেন্ট কারীরা এই কমেন্টোসিয়োসিস রোগে আক্রান্ত ।
লুলোফ্রেন্ট্রি ডিসঅর্ডার লুলোফ্রেন্ট্রিক ডিসঅর্ডার রোগটা মূলত পুরুষদের মাঝে দেখা যায় । মেয়েদের মাঝে এই পোস্ট দেখা যায় না বললেই চলে । এই রোগে আক্রান্ত ব্লগারেরা খুজে খুজে কেবল নারী ব্লগারদের নিক খুজে বের করে এবং কেবল সেই নারী ব্লগারদের পোস্টেই কমেন্ট করে । মূলত নারী ব্লগারদের পোস্টের ভূয়সী প্রশংসা করে যেখানে অন্য পুরুষ ব্লগারদের তার কমেন্ট দেখা যায় না বললেই চলে ।
এন্টি কমেন্টো ডিসঅর্ডার এন্টিকমেন্টো ডিসঅর্ডার রোগে ভোগা ব্লগারেরা ব্লগে মোটেই কারো পোস্টে কমেন্ট করতে চান না । করেনই না বলতে গেলে । ব্লগে আসে ঘুরে বেড়ায় পোস্ট পড়ে তারপর চলে যায় । সত্যিই বলতে কি আমার নিজের মাঝে এই এন্টি কোমেন্টো ডিসঅর্ডার রোগের লক্ষণ কিছুটা আছে ।
রিপ্লাওকাইসিস রিপ্লাইওকাইসিস রোগের লক্ষ্য হচ্ছে ব্লগার নিজের ব্লগপোস্টে আসা কোন কমেন্টের রিপ্লাই দেন না । দিলেও খুব কালে ভাদ্রে দেন । তার কাছে একটা রিপ্লাই দেওয়ার মত কষ্টের কাজ আর কিছু নেই ।
লাইকোফেবিয়া এই রোগে আক্রান্ত ব্লগারেরা লাইক দিতে ভয় পায় । কিংবা বলা চলে তারা সামুতে যে একটা লাইক বাটন আছে এটা তারা জানেই না । পোস্টটি চমৎকার হয়েছে, খুব পছন্দ হয়েছে, এমন কি কমেন্টে সেই পোস্টের অনেক প্রশংসাও করেছে তারপরেও পোস্টের লাইক বাটনে এরা চাপ দেয় না । আমি নিজেও এক সময় এই রোগে আক্রান্ত ছিলাম । তবে এখন এই রোগটা আমি কাটিয়ে উঠেছি । পোস্ট ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক বাটনে চাপ দেই ।
এরিস্টোলিমিয়া এরিস্টোলিমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্লগার নিজেকে ব্লগের মাথা কিংবা মোড়ল মনে করে । তার কাছে মনে হয় সেই হচ্ছে ব্লগের আইন । সে যা মনে করে সেটাই সঠিক আর তার বিরুদ্ধে বলা অন্য সবাই হচ্ছে মূলত ব্লগের বিরুদ্ধে বলছে । এছাড়া এরিসস্টোলিমিয়ার আরেকটা লক্ষণ হচ্ছে আক্রান্ত ব্লগার সবার সব ব্যাপারেই নাক গলাতে শুরু করেছে এমন কি যে ব্যাপারে তার নিজের কোন দক্ষতা নেই সেটা নিয়েও তার নিজেস্ব মতামত দিতেই হবে !
কপিপেস্টোফেমিয়া কপিপেসস্টোফেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্লগার মূলত ফেসবুক সহ অন্যান্য যে কোন স্থান থেকে নানান ধরনের গল্প, কবিতাসহ নানান ধরনের লেখা কোন প্রকার কার্টেসী ছাড়া পোস্ট করে দেয় । এই রোগের ভয়ানক ভারে তারা আক্রান্ত যারা সামুর ব্লগারদের পোস্টই কপি করে সামুতে পোস্ট করে ।
গালিওডেমিক নাম শুনেই এই রোগেই লক্ষণ ব্যাপারে একটা ধারনা পাওয়া যায় । এই রোগে আক্রান্ত ব্লগার মূলত সুস্থ ভাষা ব্যবহারে অক্ষম । ক্ষুদ্র মস্তিস্ক থাকার কারণে সে মনে করে সামনের জনকে যদি আমি গালি দিয়ে কিছু বলতে পারলাম তাতেই জিতে গেলাম । কেবল গালিই নয় কমেন্ট আরও নানান ধরনের অশালীন অসভ্য শব্দের ব্যবহার করাও এই রোগের লক্ষণের ভেতরে পড়ে ।
ডিলেটোফেরিয়া ডিলেটোফেরিয়া রোগে আক্রান্ত ব্লগারেরা মূলত নিজের পোস্টের সমালোচনা এবং এবং তার মতের সাথে মিল নয় এমন কমেন্ট সহ্য করতে পারে না । এই জাতীয় কমেন্ট দেখলেই তারা কেঁপে ওঠে । ভয়ে বুক শুকিয়ে যায় । তখন তারা মূলত সেই মুছে দেয় । তারা নিজেদের পোস্টের ভুল ধরিয়ে দেওয়া কমেন্ট গুলোও মুছে ফেলে ।
নিকোফাইসিস নিকে ফাইসিস রোগে আক্রান্ত ব্লগারদের একের অধিক মাল্টিনিক থাকে । তারা মূলত তাদের প্রধান নিকে সবার কাছে খুব ভাল হয়ে থাকে । কিন্তু মাল্টি নিক থেকেই অন্যান্য সব ব্লগারদের নানান ভাবে আক্রমন করে থাকে । মাঝে মাঝে সেই মাল্টি নিক দিয়ে নিজেদের প্রধান নিক ভূয়সী প্রশংসাও করে থাকে কমেন্টে ।
অজানা রোগঃ এই রোগের আসলে কোন নাম এখনও ঠিক করা যায় নি । এমনি কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যও দেখা যায় নি এই রোগের । এরা নিয়মিত লাইক দেয়, কমেন্ট করে, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে না অথ্যাৎ উপরে বর্নিত কোন রোগই তাদের ভেতরে নেই। তবে কিছু ভাসা ভাসা ব্যাপার ধরা গেছে । এই রোগে আক্রান্ত ব্লগারদর লক্ষণ হচ্ছে তারা কেবল মাত্র সেই সমস্ত ব্লগারদের ব্লগে গিয়ে হাজির হয় যারা তার পোস্টে কমেন্ট করে । তাদের বক্তব্য হচ্ছে তুমি কত ভাল লেখো কত ভাল বিশ্লেষন দাও তাতে আমার কিছু যায় আসে না, যদি তুমি আমার ব্লগে কমেন্ট কর তাহলেই আমি তোমার ব্লগ পড়বো এবং মন্তব্য করবো ! । এই ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে । সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়ার পর রোগ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে ! ব্লগার জুনের পরামর্শ মতে রোগটির নাম গিভেন্টেকোসিস দেওয়া গেল !
সংযুক্তিঃ
ব্লগার ডার্কম্যান আরেকটা রোগের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে !
সিন্ডিকোসিয়েসিস সিন্ডিকোসিয়েসিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা দলবদ্ধ ভাবে সব কাজ করতে পছন্দ করে । একক ভাবে ভাবে তারা অতিদূর্বল অনুভব করে । এরা সাধারনত নিজেরাই নিজেদের পোস্টে কমেন্ট লাইক করে ভাসিয়ে ফেলে । তারপর কারো পোস্টে হামলা করলে এক সাথে হামলা করে । এদের একা একা কিছু করার কোন সামর্থ্য থাকে না । কথিত আছে সিন্ডিকোসিয়েসিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা একা একা বাধরুমেও যেতে ভয় পায় ! অতীতে এই রোগী আক্রান্ত প্রচুর ছিল ব্লগে তবে এখন বর্তমানে এটা অনেকটাই বিলুপ্ত !
মূলত এরোগ গুলোর খোজ পাওয়া গেছে আপাতত । এর ভেতরে দেখুন, আপনি নিজে কোন রোগে আক্রান্ত কি না । মাঝে মাঝে দেখা যায় একজন ব্লগার একের অধিক রোগে আক্রান্ত । আপনিও লক্ষণ গুলো ভাল করে খেয়াল করে দেখুন । নিজে আক্রান্ত কি না পরীক্ষা করে নিন ।
প্রতিকারঃ ব্লগীয় এই রোগ গুলোর আসলে তেমন কোন প্রতিকার নেই । তবে কিছু কিছু বাদ দিয়ে বেশির ভাগ রোগ আত্মঘাতি নেই । নিয়মিত মেডিটেশন এবং সেবা গ্রহন করলে এই রোগ গুলো থেকে স হজেই পরিত্রান পাওয়া সম্ভব !
পোস্ট টি মূলত ফান পোস্ট । আশা করি ফান হিসাবেই নিবেন সবাই । হ্যাপি ব্লগিং !
ফুটনোটঃ অপূর্ন রায়হানের পোস্টটি সম্ভবত রস আলোর একটা পোস্ট থেকে এডাপ্ট করা হয়েছিলো । পোস্ট টি ছিল ফেসবুকীয় রোগ এবং লক্ষন । সেটার ব্লগ ভার্শন ছিল এটা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:১৩