somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ মুনফ্লাওয়ার মার্ডার্স

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ম্যাগপাই মার্ডার্স বইটার কথা আশা করি সবাই জানেন । কয়েকদিন আগে এই বইয়ের রিভিউ দিয়েছিলাম । এই বইটার পরের পর্ব হচ্ছে মুনফ্লাওয়ার মার্ডার্স। গত বইটা যেখানে শুরু হয়েছিলো সুজ্যান রাইল্যান্ডের জীবন তার দুই বছর পরের গল্প হচ্ছে মুনফ্লাওয়ার মার্ডার্স । ম্যাগপাই মার্ডার্স আমার কাছে বেশ চমৎকার একটা বই মনে হয়েছে । বিশেষ করে একটা বইয়ের ভেতরে আরেকটা বই, এক টিকিতে দুইটা বই পড়ার ব্যাপারটা বেশ চমৎকার এবং একটা বইয়ের ভেতরে অন্য একটা খুনের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে ।

যাই হোক, আগে গল্প শুরু করা যাক । ম্যাগপাই মার্ডার্সের মত মুনফ্লাওয়ার মার্ডার্স বইতেও এক টিকিটে দুখানা ইংরেজি সিনেমাই আপনি দেখবেন । গল্পের প্রধান চরিত্র সুজ্যান রাইল্যান্ড এখন তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে থাকে গ্রীসে । সেখানে একটা ছোট্ট হোটেল সামলায় তারা । দুই বছর পার হয়ে গেছে সুজ্যান লন্ডন ছেড়েছে । তবে নিজের এমন অবস্থা দেখে সে নিজের উপরেই খানিকটা বিরক্ত হয়ে উঠেছে । এমন জীবন তো সে চায় নি ।

একদিন এক বৃদ্ধ দম্পতি এসে হাজির হয় সুজ্যানদের হোটেলে। তারাও হোটেল বিজনেসের সাথে যুক্ত । তারা সুজ্যানকে এক অদ্ভুত কেস সমাধান করার জন্য তাকে প্রস্তাব দেয় । আবারও সুজ্যানের জীবনে মৃত লেখক অ্যালান কনওয়ে এসে হাজির । দম্পতি জানায় যে তাদের মেয়ে সিসিলি গায়েব হয়ে গেছে । গায়েব হয়ে যাওয়ার সাথে আট বছর আগে সংগঠিত একটা হত্যা কান্ড জড়িত। হত্যা কান্ডটা ঘটেছিলো তাদেরই হোটেলের মুনফ্লাওয়ার বিল্ডিং । এক অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞাপন এজেন্সীতে কাজ করা একজনকে হাতুড়ী দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো । এবং হত্যার জন্য হোটেলেরই এক রোমানিয়ান কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। হত্যাকন্ডের কিছুদিন পরে অ্যালান কনওয়ে এসেছিলো তাদের হোটেলে । সেই হত্যা কান্ড সম্পর্কে অনেকের সাথেই কথা বার্তা বলে এবং পরে সেই কাহিনীর উপরে বেজ করে একটা রহস্য উপন্যাস লেখে । ''অ্যাটিকাস পান্ড টেকস দ্য কেস'' । সিসিলি এই বইটা পড়েই জানতে পারে যে আট বছর আগে তাদের হোটেলে যে হত্যা কান্ড হয়েছিলো সেটা আসল খুনি কে ! আট বছর ধরে একজন ভুল মানুষ জেলে সাজা খাটছে । এটাই ফোন করে সে তার বাবা মাকে বলেছিলো । তার পরপরই সিসিলি গায়েব হয়ে যায় । হাটতে বের হয়েছিলো । আর ফেরৎ আসে নি ।
যেহেতু অ্যাটিকাস পান্ড টেকস দ্য কেস বইটা পড়েই সিসিলি বুঝতে পেরেছিলো আসল খুনি কে এবং সম্ভবত সেই খুনিই সিসিলিকে গায়েব করেছে এবং যেহেতু সুজ্যান রাইল্যান্ড বইটার এডিটর ছিল তাই বইটার ভেতরে এমন কি রহস্য রয়েছে সেটা সুজ্যানের চেয়ে ভাল আর কেউ বুঝতে পারবে না ।

সুজ্যান হাজির হয় আবারও লন্ডনে। তাদের হোটেলেই থাকা শুরু করে এবং তদন্ত শুরু করে আট বছর আগেই সেই খুনের। ম্যাগপাই মার্ডার্সের প্রায় সব চরিত্রই এই বইতে ধীরে ধীরে হাজির হয় । একটা সময়ে সুজ্যান কোন কুল কিনারা করতে পারে না । তারপর সে বইটা শুরু করে । অ্যাটিকাস পান্ড টেকস দ্য কেস বই পড়েও খুব একটা লাভ হয় না ।

অ্যাটিকাস পান্ড টেকস দ্য কেস এর কাহিনীটা এক বিখ্যাত সাবেক অভিনেত্রীকে মিলিসিয়া জেমসকে নিয়ে । সে অভিনয় ছেড়ে দিয়ে তার থেকে বছর দশে ছোট এক ছেলেকে বিয়ে করে একটা শান্ত গ্রামে এসে থাকা শুরু করে । একটা হোটেল কিনে ব্যবসা শুরু করে । কিন্তু হোটেলের দায়িত্বে থেকে ম্যানেজার হোটেল থেকে চুরি করে । হোটেলে লসে চলতে থাকে। অন্য দিকে মিলিসিয়া জেমস এক ভন্ড মাধ্যমে বেশ কিছু টাকা ইণভেস্ট করে । এবং এক সময়ে সেই টাকা ফেরৎ চায় । তার স্বামী চোখের আড়ালে সে আবার একজনের সাথে এফেয়ারও করে । এক প্রোডিউসারকে কথা দিয়েও সে তার ছবিতে কাজ করতে রাজি হয় না অন্য একটা ভাল অফার পেয়ে । এমন সময়ই মিলিসিয়া জেমসকে তার বাসায় হত্যা করা হয় । অনেকের কাছেই তাকে হত্যা করার মোটিভ ছিল পরিস্কার । তার স্বামী, তার হোটেলের ম্যানেজার দম্পত্তি, সেই ভন্ড ব্রোকার, প্রোডিউসার সবাই তাকে খুন করতে পারে কিন্তু খুন করে কে! এমন সময়ে অ্যাটিকাস পান্ড কেস টা হাতে নেয় এবং এক সময়ে সেটা সমাধানও করে ।

এই বই পড়ে সুজ্যান প্রথমে কিছুই বুঝতে পারে না । তবে ওর কাছে এটা প্রতীয়মান হয় যে বইয়ের চরিত্রের সাথে বাস্তবের অনেক চরিত্রেরই মিল আছে বেশ কিন্তু দুই প্লট একেবারে আলাদা । শেষ পর্যন্ত বই থেকেই সমাধান খুজে পায় সুজ্যান । তবে সেটা কাহিনী নাকি অন্য কিছুর থেকে সেটা বইটা পড়লেই আপনারা বুঝতে পারবেন ।

এই মোটামুটি কাহিনী ।

মূলত ম্যাগপাই মার্ডার্সের কারণেই এই বইটা পড়া শুরু করেছিলাম । তবে আগেরটার মত এতোটা আকর্ষনীয় ছিল না এটা । ভাল না লাগার প্রধাণ কারণ হচ্ছে সুজ্যান যখন সবাইকে প্রশ্ন করে খুন সম্পর্ক, চ্যাপ্টারের পর চ্যাপ্টার আমার কেবল মনে হয়েছে একই কাহিনী বারবার হচ্ছে । বারবার একই লাইন আমি পড়ছি । এছাড়া এই বইটা বলা যায় ট্রিপিক্যাল রহস্য উপন্যাস । একটা না দুইটা রহস্য উপন্যাস । অ্যাটিকাস পান্ড টেকস দ্য কেস বইতে শেষের সমাধান টা ভাল ছিল । আমি প্রথমে যাকে খুনী ভেবেছিলাম সেই খুনি হয়েছে । তবে তার আগের ঘটনা গুলো বেশ চমৎকার ছিল । দ্বিতীয় খুনি টাকে আমার একদম বোগাস মনে হয়েছে । পছন্দ হয় নি । অন্য দিকে বইয়ের বাইরের খুনি প্রথমে বুঝতে না পারলেও উল্লেখ করার আগেই টের পেয়েছিলাম কে হতে পারে !


বইয়ের নাম মুনফ্লাওয়ার মার্ডার্স
লেখক অ্যান্টনি হরোউইটয
আমার রেটিং ৩.২/৫


ছবি উৎস
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৩২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×