কয়েক দিন আগে অনলাইনে দেখা একটা একটা ফানি ভিডিওর কথা মনে পড়লো । সেখানে দেখা যায় একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছে জানতে চাইছে, আচ্ছা হানি, যদি আমি মোটা হয়ে যাই তবুও কি তুমি আমাকে ভালোবাসবে ?
স্বামীটি কিছু বলতে যাবে তার আগেই পাশ থেকে তাদের ছেলে বলে উঠলো, বাট মম, ইউ আর ফ্যাট ।
এই নির্দোষ সত্য কথা, একটা বাচ্চা কোন প্রকার চিন্তা ভাবনা ছাড়াই বলে দিতে পারছে, একজন মানুষ কি সেটা বলতে পারে? ধরুন উপরের স্বামীটি কি কোন দিন তার স্ত্রীকে বলবে পারবে, হানি তুমি তো মোটাই ? কোন দিন পারবে না । আর পারলেও তার কপালে কী যে আছে পরে সেটা কী কল্পনা করা যায় ? আমরা যত বড় হই আমাদের মধ্যে তত এই আফটার ইফেক্টের চিন্তা ভর করতে থাকে তত আমাদের ভেতরের সত্য বলার পরিবেশ সংকুচিত হতে থাকে । একজন শিশুর বেলাতে তা হয় না । এই জন্য তাদের জীবনটা এতো আনন্দময় !
যে গল্প বলার জন্য এই লেখার শুরু সেটা বলি । পারিনের ছোট বোনের নাম হচ্ছে ডোরিন । ক্লাস টু তে উঠেছে । বেশ কয়েকটা দাঁত পরে গেছে । কথা বলার সময় ফোকলা দাঁত বের হয়ে যায় । ডোরিন ক্রিকেট খেলার কিছুই বোঝে না । সে তার বাবার কাছে নানান কিছু জানতে চায় । যেমন যে বল নিয়ে ছুড়ে মারে তাকে বলে বোলার ! সে মাঠে ফিল্ডিং করে বল কুড়িয়ে নিয়ে আসে তাকে বলে ফিল্ডার । যে উইকেটের পেছনে বল ধরে তাকে বলে উইকেট কিপার । এই পর্যন্ত সব কিছু ডোরিনের কাছে ঠিকই মনে হয়েছে । কিন্তু যখনই ব্যাটসম্যানের কথা আসলো তখন সেটা কোন ভাবেই ডোরিনের মাথায় ঢুকলো না । সে তার বাবার কাছে জানতে চাইলো, বল করলে যদি বোলার হয়, ফিল্ডিং করলে ফিল্ডার হয় তাহলে ব্যাট করলে তো তার নাম ব্যাটার হওয়ার কথা! তার বদলে ব্যাটস ম্যান কেন ? কথা শুনে এক চোট হাসাহাসি হল । কিন্তু আদতে চিন্তা করলে কিন্তু ডোরিনের হিসাবটা ঠিকই আছে । আসলেই তো যে নিয়মে সব কিছু হয়েছে সেই হিসাবে তো ব্যাটার হওয়ারই কথা ! বল করে যে বোলার, ব্যাট করে যে ব্যাটার ।
গতদিন ডোরিনের বাবা পেপার পড়তে গিয়ে ডোরিনের নাম ধরে ডাক দিয়ে বলল, কই রে ডোরিন । এই দেখ তোর কথাই ঠিক হয়ে গেল ।
ডোরিন দৌড়ে গিয়ে বলল, কোন কথা ?
-ঐ যে তুই বলেছিলি না ব্যাটার ডাকতে হবে । এখন থেকে এই নিয়ম হয়েছে । যারা ব্যাট করে তাদের সবাইকে এখন থেকে আর ব্যাটসম্যান বলা যাবে না । বলতে হবে ব্যাটার !
শিশুদের ভেতরে যতদিন না দুনিয়া জটিল সুত্র প্রবেশ করছে ততদিন পর্যন্ত তাদের চিন্তাধারা এমন সহজ আর সোজা থাকে । এই সময়টাই বোধ করি ওদের সব থেকে আনন্দের সময় । যতই দুনিয়ার নিয়ম কানুন তাদের মনের ভেতরে ঢুকতে শুরু করে ততই তাদের সোজা চিন্তা করার পথ বন্ধ হয়ে যায় । আমাদের যেমন বন্ধ হয়ে গেছে ।
আরও খুচরো ব্লগিং পড়তে চাইলে
খুচরো ব্লগিং ০১
খুচরো ব্লগিং ০২
খুচরো ব্লগিং ০৩
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৫৮