somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানিজ ভাষা শেখা এবং কমিটমেন্ট ট্র্যাপে পড়া

০৫ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেশ কয়েকদিন ধরে আমি জাপানিক ভাষা শিখতে শুরু করেছি। বেশির ভাগ জাপানিজ এনিমে ইংরেজি ডাব পাওয়া যায় না। আর আমি সাবটাইটেল দিয়ে কোন কিছু দেখতে পছন্দ করি না। তাই মনে হল যদি মোটামুটি ভাষাটা শেখা যায় তবে এগুলো দেখা যাবে। তবে সেই আশায় গুড়েবালি। জাপানিজ ভাষা শেখা এতো সহজ কোন ব্যাপার না। যাক সেটা অন্য ব্যাপার। আমি কিছু বইপত্র কিনেছি। এছাড়া অনলাইনে একটা ভাষা শেখার এপ নিয়মিত ব্যবহার করি। আপনারা অনেকেই ডুয়োলিঙ্গের নাম শুনে থাকবেন। এই মোবাইল এপটা আমি নিয়মিত ব্যবহার করি। এই এপের একটা ফাংশন হচ্ছে, এখানে একটা চ্যালেঞ্জ আছে যেখানে প্রতিদিন অংশ গ্রহন করতে হয়, অন্তত একটা টাস্ক শেষ করতে হয়। প্রথম প্রথম এই চ্যালেঞ্জটা আমার কাছে স্বাভাবিকই মনে হয়েছে। আমি প্রতিদিন সময় করে একবার অন্তত এই এপটা ওপেন করতাম। তারপর একটা কি দুইটা টাস্ক করে বের হয়ে যেতাম। গত কয়েকদিন আমি ১৫০ দিনের স্ট্রিক মাইল ফলক ছুঁয়েছি। এর মানে টানা ১৫০ দিনের প্রতিদিন আমি এই এপটা ব্যবহার করেছি। কিন্তু এখন আমি একটা ব্যাপার খুব ভাল করে অনুভব করছি। সেটা হচ্ছে এই প্রতিদিন আমি এপটা ব্যবহার করছি, এটা করার জন্য আমি নিজ থেকে একটা চাপ অনুভব করছি। আমার মনে হচ্ছে এই কাজটা আমাকে করতে হবে, আমাকে করতেই হবে। এতো দূর আমি এসেছি, এখন যদি আমি না করি, তাহলে আমার আগের সব কিছু বৃথা হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম এই ব্যাপারটা না ধরতে পারলেও এখন এটা পরিস্কার যে এই ট্রাপে আমি পরেছি।

নেটে কিছু সময়ে খোজ খবর নিয়ে দেখলাম যে এই চাপ অনুভব করার একটা টার্ম রয়েছে। এটাকে বলে ‘কমিটমেন্ট ট্র্যাপ’। এটা এমন একটা মানসিক অবস্থা, যেখানে আপনি কোনো কাজের পেছনে আপনার সময়, শ্রম বা মানসিক শক্তির এতোটাই ব্যয় করেছেন যে সেটা থেকে আপনি আর বের হয়ে আসতে পারেন না বা বের হয়ে আসাটা আপনার জন্য কঠিন। আমার বেলাতে যদি ব্যাপারটা আমি দেখি আমার জাপানিজ ভাষা শেখার আকটা আগ্রহ আছে। সেটা থেকেই আমি এই ভাষা শিখছি। কিন্তু তার মানে কিন্তু এই না যে আমাকে প্রতিদিন নিয়ম করে একবার হলেও এই এপে আসতেই হবে! কিন্তু আমি আসছি। প্রথম প্রথম ২৫/৫০ তারপর ১০০ দিন পরপর এলাম, তখন মনে হল যে বাহ চমৎকার তো! নিজের কাছেই নিজেকে বাহবা দেওয়ার একটা উপলক্ষ্য! এটা যদি ভেঙ্গে ফেলি তাহলে নিজের কাছে কেমন হবে, মনে হবে যে এতোদুর এসে বন্ধ করে দিলাম। ১৫০ দিন হয়েছে এরপর ২০০ দিন হবে, যদিও আমি খুব ভাল করেই জানি যে স্ট্রিক যদি আমি বন্ধ করে দিই, তাহলে কিছুই হবে না। আর যদি আমি এক হাজার দিনের স্ট্রিক পুরণ করলেও আসলে কিছুই যাবে আসবে না। তবুও আমি এই কাজটা চালিয়ে যাওয়ার একটা চাপ আমি ঠিকই অনুভব করছি।

এই কমিটমেন্ট ট্র্যাপের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে সানক কস্ট ফ্যালাসি। আমি ১৫০ দিন সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করে ফেলেছি তাই স্ট্রিক ভাঙলে যেন আমার সব পরিশ্রম নষ্ট হয়ে যাবে, এমন একটি ভুল ধারণা মনের ভেতরে এসে জড় হয়েছে। মূলত এই কারণেই এই কাজটা আমি চালিয়ে যাচ্ছি। এমন না যে আমি কাজটা করতে ঠিক পছন্দ করছি না, তবে এমনও না যে আমাকে এই কাজটা প্রতিদিনই করতে হবে।

কমিটমেন্ট ট্র্যাপের আরেকটা কারণ হচ্ছে গ্যামিফিকেশন ইফেক্ট। ডুয়োলিঙ্গোর মতো অ্যাপগুলো গ্যামিফিকেশন কৌশল ব্যবহার করে থাকে। এই যেমন স্ট্রিক কাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ব্যাজ, বা লিডারবোর্ড ইতায়দি। এগুলো করা মূলত আপনি যাতে প্রতিদিনই এপে ফিরে আসেন সেই কারণে। প্রথম প্রথম এই কাজগুলো, এই প্রাপ্তিগুলো বেশ ভালই লাগে। তবে কয়েকদিন পরেই এই গুলো আর আগের মত এতো ভাল লাগে না।

এখানে আরেকটা কথা বলি। এই এপের ভেতরে প্রতিদিনের স্ট্রিক ছাড়াও আরেকটা চ্যালেঞ্জ আছে। সেখানে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে হয়। প্রতিটা প্রতিযোগিতা মোটামুটি ৬/৭ দিন ধরে হয়। এই প্রতিযোগিতায় এই সাত দিনে আপনাকে অনেক টাস্ক করতে হয়, প্রতি টাস্কের পরে একটা পয়েন্ট যোগ হয়। এই ছয় দিনে আমরা যত পয়েন্ট পাবো তার উপরে ভিত্তি করে প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় সিরিয়াল হবে। এবং পরের ধাপে এগিয়ে যাবে। আমি প্রথম প্রথম খুব আগ্রহ নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। আমার মনে আছে দিনে ১০টা বা ১২টা টাস্ক করে ফেলতাম। আমার তখন মনে হত যে আমাকে পরের ধাপে যেতে হবেই। এই রিওয়ার্ড পেতেই হবে। এই গ্যামিফিকেশন ইফেক্টটা কাজ করছিল তখন। কিন্তু এক সময়ে যখনই অনুভব করলাম আমি একটা চাপ অনুভব করছি তখনই টাস্কগুলো করে পয়েন্ট পাওয়ার ব্যাপারটা একেবারে বাদ দিয়ে দিলাম। আর এখন এই একটা টাস্ক করার চাপ অনুভব করছি।

কমিটমেন্ট ট্র্যাপের আরেকটা কারণ হচ্ছে হ্যাবিট লুপ। মস্তিষ্কের হ্যাবিট লুপটা Cue-Routine-Reward দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ডুয়োলিঙ্গ এপ যখন খুলি তখন Cue, যখন টাস্ক করি তখন Routine, এবং আর যখন স্ট্রিক বাড়ে তখন হয় Reward। এই লুপ চলতেই থাকে। আমিও এই লুপের ভেতরেই পরেছি।

আজকেই ঠিক করেছি এই লুপ আমি ভেঙ্গে ফেলব। আগের বার যেমন প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে এসেছি । এবার এটা থেকেও বের হয়ে আসব। এখন থেকে নিয়মিত ভাবে আর এই এপে ঢুকব না। তার বদলে সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন এই এপে ঢুকব। তবে একটা কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে এই এই এই এপটা আমার বেশ উপকার করেছে। এই এপের কারণেই জাপানিক এপফাবেট হিরাগানা এবং কাটাকানা বেশ ভাল ভাবেই শিখে ফেলেছি। এই এপটা না ব্যবহার করলে এবং টানা এতোদিন যদি না ব্যবহার করতয়াম তাহলে এটা শেখা হত না। এবার শব্দ গঠন এবং গ্রামারের দিকে বেশি নজর দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:২৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৩৬ জুলাই আন্দোলনে সাবেক আর্মি অফিসারদের অবদান

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৯ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৩

ফাছিহ তখন সিলেটে মুভ করছে, হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। আহত আন্দোলনকারীদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ঠিক তখন, তার মুঠোফোনে কল আসে আর্মির একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের মোবাইলফোন থেকে। তিনি বললেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চীন সফরের রাজনীতি ও বাংলাদেশের দ্বিধাদ্বন্দ্ব: বিএনপি-জামায়াত কী খুঁজছে চীনে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:০৫


বাংলাদেশের রাজনীতি যখন নির্বাচনী অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের নিচে পিষ্ট, তখন একের পর এক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চীন সফর এক ধরনের কৌশলগত স্পর্ধার ইঙ্গিত দেয়। বিএনপি ইতোমধ্যে চারবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঠারো শতকে বাংলায় ইহুদি বণিক: এক বিস্মৃত অধ্যায়

লিখেছেন কিরকুট, ০৯ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:২৪





বাংলার ইতিহাসে মুসলিম, হিন্দু, ইংরেজ এবং আর্মেনীয় ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি নিয়ে বহু আলোচনা হলেও, একটি স্বল্পপরিচিত গোষ্ঠী — ইহুদি বণিকরা — প্রায় নজরের বাইরে থেকে গেছে। ১৮শ শতকে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জরিপঃ আপনি কি চান ব্লগার ওমর খাইয়াম আপনার পোস্টে কমেন্ট করুন?

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১০ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:২৪



ব্লগার ওমর খাইয়াম একটু কঠিন মন্তব্য করেন। অনেকের পক্ষেই তা সহ্য করা সম্ভব হয় না। কেউ তাকে ব্যান করেন, আবার কেউবা রিপোর্ট করেন। আপনি যদি তাকে কখনো বলেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ পরিচালনায় জামায়াত কতটা দক্ষতা দেখাতে পারে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১০ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:০৭



জামায়াত শিবির একটি সুসংগঠিত সংগঠন। সেই তুলনায় বিএনপি, জাতীয়পার্টি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত আম্লিগ সুসংগঠিত নয়। জামায়তের সংগে বিএনপি, জাতীয়পার্টি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত আম্লিগের বিশাল ফারাক লক্ষ করা যায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×