somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদ আমার জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছেন

১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হুমায়ূন আহমেদের লেখা প্রথম যে বইটা আমি পড়েছিলাম সেটার নাম ছিল বোতলভুত। তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি সম্ভবত। বইটার প্রথম কয়েকটা পাতা ছিল না। আমি বইটা পড়া শুরু করি ৩২ নম্বর পাতা থেকে। এই ব্যাপারটা আমার এখনও মনে আছে স্পষ্ট। কম করে হলেও ২৫ বছর আগের ঘটনা এটা। তারপরেও আমার মনে আছে। নানী বাড়ির মামাতো কোন ভাইবোনের বুকসেলফে বইটা ছিল। সেই বইটা সেদিন আমি পড়ে ফেলেছিলাম। যদিও আমার স্পষ্ট মনে নেই তবে সম্ভবত এই বইটাই আমার পড়া প্রথম উপন্যাস ছিল। অবশ্য ভুল হতে পারে। এই বইটার আগে ছোট গল্প টাইপেরই বইটই পড়েছি কিন্তু উপন্যাস পড়েছিলাম কিনা মনে নেই আজ।
এরপর ক্লাস সেভেন আমি স্থানীয় পাব্লিক লাইব্রেরীর সদস্য হই। সেখানে অবশ্য প্রথম দুই বছর আমি কেবল কিশোর ক্লাসিক বইগুলোই পড়েছি। এরপর ক্লাস এইটের শেষের দিক একদিন আমি লাইব্রেরিয়ানকে একটা ভুতের বই দিতে বলি। কারণ ততদিনে লাইব্রেরীতে থাকা ভুতের বই আমি সব পড়ে ফেলেছি। আমি আর কিছু খুজে পাচ্ছি না। লাইব্রেরিয়ান আমাকে হুমায়ূন আহমেদের ''কুটু মিয়া'' বইটা এনে দিল। সেই বই পড়ে আমি ভয় পেয়েছিলাম কিনা আমার মনে নেই তবে বই পড়ার স্বাদে একটা পরিবর্তন যে এল সেটা বুঝতে পারলাম। আছে না এমন একটা বই পড়ার পর লেখকের আরও বই পড়তে ইচ্ছে করে সেই রকম। মনে হয়েছিল যে এই লেখকের আরও বই পড়তে হবে।
তারপর ফাইনাল পরীক্ষার কারণে কয়েকদিন লাইব্রেরীতে আসা বন্ধ ছিল। পরীক্ষা শেষ করে আবার যখন এলাম তখন লাইব্রেরিয়ানই আমাকে হুমায়ূন আহমেদের আরেকটা বই পড়ে দিয়েছিল। বইটার নাম ছিল ‘তোমাকে’। সেই থেকে আমার হুমায়ূন পড়া শুরু। তারপর খোজ পেলাম হিমু সিরিজ, মিসির আলী সিরিজ শুভ্র সিরিজ। স্কুললের শেষ সময় টুকু আর কলেজের পুরো সময়টা আমি হুমায়ূন পড়েই কাটিয়েছি। লাইব্রেরীতে নতুন বই এলেই সবার আগে আমি সেটা পড়ে ফেলতাম। আমার বই পড়তে বেশি সময় লাগত না, বই নেওয়ার এক কি দুইদিনের ভেতরেই বই ফেরত দিয়ে দিতাম তাই লাইব্রেরিয়ান আমাকেই আগে দিত নতুন বই। আমার মনে আছে প্রতিটা বই আমি শেষ করতাম আর তারপর কিছু সময় সেই বই আমার মাথার ভেতরেই ঘুরপাক খেতে থাকত। অন্য কিছু তখন মাথাতেই আসতো না। যারা হুমায়ূন পড়েছেন তারা জানেন যে তার বইয়ের শেষটা কেমন হয়। কিছু কিছু পড়তে পড়তে আমি হো হো করে হেসে উঠতাম আবার কিছু লাইন পরে চোখে পানি চলে আসত। বাংলাদেশ নাইট নামের হুমায়ূনের একটা আত্মজীবনী মূলক লেখা আছে। আমি এখনও যতবার এই লেখাটা পড়ি ততবার আমার চোখ সিক্ত হয়ে আসে। খুব সাধারণ একটা ঘটনা। অথচ তিনি এমন ভাবে লেখাটা লিখেছেন যে প্রতিবার মনের ভেতরে একটা ধাক্কা দিবেই। আমি জীবনে অনেকের লেখা পড়েছি। আজ পর্যন্ত এমন কোনো লেখকই আমি পাই নি। এই ক্ষমতা বুঝি কেবল তারই ছিল।
আমি হুমায়ূন আহমেদের প্রতিটা বই পড়েছি শুধু একটা বই বাদ দিয়ে। তার যত বই প্রকাশিত হয়েছে সব বই আমার পড়া। আমি এক বই সাধারণত দ্বিতীয়বার পড়ি না। কেবল মাত্র তার বেশ কিছু দ্বিতীয় তৃতীয় বার করে পড়েছি। সব কিছু তবে বেশ কয়েকটা বই। শুধু মাত্র একটা বই পড়া হয় নি। তার ‘‘বিখ্যাত কোথাও কেউ নেই’’। এমন না যে বইটা আমার কাছে নেই। তারপরেও আমি এই বইটা পড়ি নি। বারবার মনে হয়েছে যে এই বইটা পড়ে ফেললেই তো তার সব বই পড়া শেষ হয়ে যাবে। তার বই আর ধরা হবে না। বরং এই একটা বই না পড়া থাকলে মনে হবে একটা বই এখনও পড়া হয় নি। এই একটা বই তার পড়তে হবে। আমি জানি অদ্ভুত চিন্তা তারপরেও!

আমি হুমায়ূন আহমেদকে কখন সামনা সামনি দেখি নি। আমার তাকে দেখার ইচ্ছাও জাগে নি। আমার কোন দিন ইচ্ছাও হয় নি তার কাছে গিয়ে তার একটা অটোগ্রাফ নিই বা তার সাথে একটা ছবি তুলি! লেখক আর লেখা কখনোই এক হয় না। অনেকে লেখকের লেখা পড়ে তার ছবি আঁকে। তাকে সেই চরিত্রে বসিয়ে ফেলে। কিন্তু বাস্তবে লেখকের লেখার সাথে তার বাস্তব চরিত্রের আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকতে পারে। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে এই পার্থক্যটা অনেক বেশি। তাই পছন্দের লেখকের সাথে কখনই দেখা করা উচিৎ না বাস্তবে। তাহলে তার লেখা পড়ে মনের ভেতরে তার যে ছবি আঁকা ছিল সেটা ভেঙ্গে যেতে পারে।

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ। আপনি এই দেশে না জন্মালে হয়তো কত মানুষ বই-ই পড়তো না জীবনে!

(গতকাল ছিল হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। গতকালই লেখাটা পোস্ট করার দরকার ছিল কিন্তু গতকাল যে সার্কাস চলছিল ব্লগে তাতে আর ইচ্ছে হয় নি।)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০০
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×