“যখন মানুষ সর্বান্তকরনে চায় কিছু একটা পেতে, মহা বিশ্বের প্রতিটি কনা যোগসাজশে লেগে পরে সেই চাহিদা মেটাতে”
কখন স্বপ্ন দেখেছেন । সেটা ঘুমিয়ে বা জেগে থেকে হতে পারে । স্বপ্নেরও ব্যাখ্যা রয়েছে । তবে সবাই স্বপ্ন ছুতে পারে না । স্বপ্ন অনেক সময় স্বপ্ন ই থেকে যায় । কেউ কেউ ছুটে চলে তার স্বপ্নের দিকে । স্বপ্নের ব্যাখ্যা খুজে বেড়ায় মানুষ । হর হামেশা ই তারা খুজতে থাকে তাদের স্বপ্ন কে । কিন্তু কত জন তাদের স্বপ্ন কে ধরতে পারে । কত জন ই বা সফল হতে পারে তাদের স্বপ্ন নিয়ে । আদৌ কি স্বপ্ন কে ছুতে পারা যায় । নাকি সে কেবল এক মরীচিকা । সেটা জানা সম্ভব শুধু স্বপ্নের লক্ষন অনুভব করে ।
জীবনের লক্ষ্য কি? কোন উদ্দেশ্যেই বা আমরা পৃথিবীতে এলাম । সেটা কি জানার কোন উপায় রয়েছে নাকি আমরা এখানে এসে সব ভুলে গিয়েছি । নাকি পৃথিবীটা সবার কথা জানিয়ে দেবে এক এক করে । জীবনের লক্ষ্য কি খুজে পাওয়া সম্ভব । সবার জীবনের লক্ষ্য কি সবাই খুজে পায় । নাকি সবাই তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে জীবনের অর্থ খুজে বেড়ায় । সত্যিকার অর্থে জীবন আসলে কি ?
আন্দালুসিয়ার রাখাল বালক সান্তিয়াগো । একদিন স্বপ্ন দেখে গুপ্তধনের । তাকে যেতে হবে পৃথিবী ভ্রমনে । খুজে বের করতে হবে সেই গুপ্তধন । যা রয়েছে পৃথিবীর অপর প্রান্তে । কিন্তু সেখানে যাওয়াটা খুব সহজ নয় । তাকে পেরিয়ে যেতে হবে অনেক পথ । যেতে হবে বহুদূর । রাস্তায় অনেক বিপদ এবং সংকটপূর্ন । হয়ত গুপ্তধন পাওয়া যেতেও পারে, আবার নাও পারে । তবে তাকে যেতে হবে । যেভাবেই হোক খুজে বের করতে হবে সেই গুপ্তধন । তবে কিভাবে সেটা হবে?
সবার আগে বের করতে হবে কিভাবে যাওয়া যায় । স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছিল এক জিপসি । তার কাছ থেকে কোন পথ না পেয়ে নিজেই বেড়িয়ে পরে পথের সন্ধানে । যদিও সে জানে না কিভাবে খুজে বের করবে । কারন সে পথিক তবে সে পথের দিশা জানে না । তবে সেটা এটা জানে সে পথ খুজে পাবেই । পথেই দেখা হয়ে যায় এক বুড়োর সংগে যিনি নিজেকে সালেম এর রাজা বলে পরিচয় দেন । তিনি রাখাল বালকে পথ খুজে পাবার কিছু নির্দেশনা দেন । খুজে বের করতে বলেন আলকেমিস্ট কে । হয়ত সেই জানে কোথায় রয়েছে গুপ্তধন । যদিও সালেম এর রাজা বলেছেন পৃথিবীর সবাই এক । শুধু চিন্তা ভাবনাতে পার্থক্য হয় মানুষের । আর এই পার্থক্যটাই মানুষে মানুষে পার্থক্য গড়ে দেয় ।
সান্তিয়াগোও সেই দলের একজন যারা নিজেদের স্বপ্নের কথা ভাবে । ছুটে চলে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে । ভেড়ার পাল বিক্রি করে যাত্রা শুরু করে ছুটে চলে তার স্বপ্নের পানে । এগিয়ে চলে তার লক্ষ্য পূরনের দিকে । যদিও সে জানে না ভবিষ্যৎ কি হবে । তবুও আত্মবিশ্বাস আর সাহস নিয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে । হয়ত সুদিন আসবে ।
সে লক্ষণ দেখে এগিয়ে চলে । পথে দেখা হয় সেই আলকেমিস্ট এর সাথে । তিনি তাকে শেখান মহাবিশ্বের ভাষা, শুনতে সাহায্য করেন আত্মার কথা । পৃথিবীর মধ্যেও আত্মা রয়েছে, তাদের ভাষা । প্রতিটি বিন্দু ধুলিকনার ভাষা বুঝতে শেখান । কিন্তু সান্তিয়াগোর মনের মধ্যে রয়েছে একজন ফাতিমা । তার কথা বারবার ই মনে পরে । তবে সে জানে তার লক্ষ্য পূরন হলেই কেবল তাকে পাওয়া যাবে । আলকেমিস্ট তাকে পথ নির্দেশনা দিয়ে দেন । এরপর তার পথ চলা শুরু একা এবং নিঃসঙ্গ ।
সান্তিয়াগো কি পারবে তার লক্ষ্যে পৌছুতে?
যেই বইটার কথা বলছি সেটা আর অন্য কোন বই নয় সেটি হচ্ছে “দি আলকেমিস্ট” । বইটি মুলত পুর্তগীজ ভাষায় লেখা হয়েছিল । বইটি এই পর্যন্ত ৫৬টির ও বেশি ভাষায় রুপান্তর করা হয়েছে । বিশ্বের অন্যতম বই যেটি এত ভাষায় রূপান্তর করা হয়েছে । বইটি এত ভাষায় রুপান্তর হবার কারন কি?
কারন আছে । তার কারন হচ্ছে বইটি যেন আপনার মনের কথা একদম সামনে থেকে তুলে ধরেছে । আপনি জীবনে কি করতে চান কোথায় যেতে চান সেটার বর্ননা দেয়া হয়েছে । এক রাখাল বালকের মাধ্যমে আপনার ভেতরের জীবন বোধ কে তুলে ধরা হয়েছে । আসলে আপনার জীবনের লক্ষ্যটা কি সেটা আপনি জয় করতে চান কিনা আর কিভাবে করতে চান সেটাই মুখ্য বিষয় ।
বইটির সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে আপনি চাইলেও বইটি থেকে উঠতে পারবেন না । তারচেয়ে বড় কথা বইটি যেন আপনাকে নিয়েই লেখা হয়েছে । রাখাল বালকের চিত্র যেন আপনাকে বর্ননা করছে । কথা হচ্ছে আপনি যেন সেই রাখাল বালক যে খুজে ফিরছে গুপ্তধন । খুজে ফিরছে নিজেকে । খুজে ফিরছে নিজে অস্থিত্ব কে ।
বইটির খারাপ দিক নেই । কারণ বইটি জীবনবোধের বড় অনুভূতি দেয় । যদিও বইটি ছোটদের জন্য নয় । তবে আপনি এর গভীরতা বুঝতে পারলে আপনিও হয়ে যাবেন সেই রাখাল বালক । দেরি না করে শুরু করে দিন ।
তা কবে শুরু করছেন আপনার যাত্রা?
বইঃ দি আলকেমিস্ট
লেখকঃ পাওলো কোয়েলহো
অনুবাদঃ মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩০