somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগে ১ বছর পূর্তি, ভালোলাগায় ভালোবাসায় :: নিজের কোনো এক সময়ের খন্ডিত আত্মকাহিনী।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামুতে এসে যা শিখেছি-সমগ্রজীবনের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিখতে পারিনি, সুযোগ ছিলোনা। কোনো কষ্ট নেই, খেদ নেই। ১ বছর পূর্তিতে লেখার কোনো যোগ্যতাও তেমন নেই। তাই নিজের জীবনের একটি খন্ডিত অংশ সবার সাথে শেয়ার করতে চাই, যাদের সাথে ১টি বছরের প্রতিটি দিনই ব্যয় করেছি দিনের কোনোনা কোন সময়।

তখন১৯৯২ ইং সাল, ঢাকা সিটি কলেজে পড়ি। ১২ টায় ক্লাশ শুরু, ৫টায় শেষ। সাদা শার্টের কলেজ ড্রেসে মীরপুর থেকেই কলেজ করি। থাকি চাকুরীজীবী কাকার সাথে। একটি মেয়ের সাথে একটি অনুষ্ঠানে দেখা হয়। মাঝে মাঝে কথা হয়। মোবাইল না থাকায় সাক্ষাতেই কথা হয়। একদিন নিজের দূর্বলতা বুঝতে পারি। বিপরীতজনেরটাও বুঝতে পারি। প্রকাশিত হলে উভয়ের রাজি ও খুশী হই। প্রতিদিন কলেজে যাবার সময় আর আসার সময় একটি মেয়ে দুতলার বারান্দায় বসে থাকে কোনো একটি বই হাতে। এভাবেই চলতে থাকে।
এক বুদ্ধিজীবী দিবসে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে আমরা কথা বলি প্রায় সারা দুপুর। এরই মধ্যে চোখে পড়ি আমরা নবনীতার মা ও দুই বোনের। বন্ধ হয় বারান্দায় বসা। যোগাযোগের উপায়হীন অবস্থায় জার্মান টেকনিক্যালের সামনে দাড়াই মনিপুর ‍উচ্চ বিদ্যালয় যাওয়ার পথে। জানি সে স্কুলে যাবেই। দেখাও হয়। আবারো শুরু হয় মনে সুবাতাস বইতে। এসএসসি শেষ হলে বাইরে চলাফেরা বন্ধ। বহু চেষ্টায় কাজের বুয়ার যোগাযোগ করতে পারি। এভাবেই চলতে থাকে যোগাযোগ। মানবিক কাজের বুয়া বুদ্ধির সীমাবদ্ধতায় ধরা পড়ে নবনীতার মা’র কাছে। চাকুরী হারা বুয়ার জন্য শদুয়েক টাকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকেনা। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। নানান দিক থেকে হুমকি ধামকি আসতে থাকে। ভয়ার্ত কাকা গৃহহীন করার হুমকিকে মেনে নিয়ে জাবিতে ভর্তি হয়ে যাই। উদ্ভ্রান্তের মতো চলতে থাকে যন্ত্রনাবিদ্ধ সময়। এক সময় রাজনীতিই হয়ে উঠে ২৪ঘন্টার কাজ। নষ্টরাজনীতির নষ্টামীতে ডুবতে থাকি। ক্লাশের বান্ধবীরাও সাহস করে কথা বলতো না তেমন। বন্ধুমহলে ব্যাপক গ্রহনযোগ্য হলেও আড়ালেই থাকে আমার নবনীতা।
একদিন খবর পাই নবনীতা মাসনিক হাসপাতালে ভর্তি। ক্যাম্পাস থেকে ঢাকায় আসি। এক সদাশয় খালাম্মাকে বহু চেষ্টায় রাজি করাই আমাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে। যাই হাসপাতালে, কিন্তু আমাকে গেটে রেখে খালাম্মাকে কেবিনে নেওয়া হয়। বহু অনুনয় বিনয় করেও আমি তাকে দেখতে পারিনি। ওর মা-বোন আমাকে দেখা করতে দেয়নি। খালাম্মা ফিরে এসে জানায়, ইচ্ছা করেই হয়তো তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তেমন কোনো সমস্যা তিনি দেখতে পাননি। আমার কথা কি তার মনে আছে কিনা, জানতে চাইলে খাল্লাম্মা জানায় সেখানের লোকজনের উপস্থিতিতে তিনি তা বলতে পারেননি। এমনকি নবনীতার মা তাকে বলেছে, আর দেখতে আসার দরকার নেই, ডাক্তাররা না করেছেন। অপমানিত খালাম্মার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা থেকে হাটতে হাটতে জাবি ক্যাম্পাসে ফিরে আসি। আর কোনো খবর আমি পেলাম না।
চলতে থাকে আমার রাজনীতি, পরীক্ষা, কোনো মতে পাস। ক্যাম্পাস ছেড়ে আসি। জীবনের তাগিদে একদিন চাকুরী নিয়ে আমি ঢাকা ছাড়ি, যেখানে হয়তো এখনো কোথাও আছে আমার নবনীতা। একদিন সংসারে চাপে সংসারী হওয়ার সাধনায় কাউকে ঘরে আনি পারিবারিক চাপেই।

সংসারের চাপে তবুও তলে পড়েনা নবনীতার কথা। একদিন আমার গর্ভদ বউ জানতে চায় আমার কোনো কষ্ট আছে কিনা। ঠিক বেঠিক না ভেবেই বলি, হ্যা আমার কষ্ট একটি আছে। আমি বেঁচে থাকা অবধি একবার হলেও একটি মেয়ে নবনীতার সাথে কথা বলতে চাই। না হলেও একবার দেখতে চাই। কিন্তু কোনো উপায়তো নেই। তবুও আমার কষ্ট হয়, তুমি আছো তারপরও। বউ কতক্ষণ চুপ করে থাকে। জানতে চায় অতীত এবং সম্পর্কের ধরণ সম্পর্কে। বলে দিই যন্ত্রণার কথা। মনে হয়, বউ কষ্ট পেলো, আমার জন্য। অনেক ভেবে জবাব দেয়, জীবনে একবার হলেও আমি তোমাকে নবনীতার সাথে দেখা করিয়ে দিবো, তুমি শুধু ওর বাবার বাসার ঠিকানাটি দাও।
একটু পড়েই মনে হলো, আমি কি ঠিক করলাম? আমার জন্য আমার বউ কেন কষ্ট পাবে? আমি জানি সুখের স্থায়িত্ব মানুষের জীবনে খুবই ক্ষনস্থায়ী। তবুও আমি সুখ ছাড়াই শান্তিতেই তো ছিলাম। কেন বলতে গেলাম। এখন মাঝে মাঝেই বউ আমাকে নবনীতার কথা, কেমন ছিলো, কেমন বলতো, চলতো, হাসতো-এসব জিজ্ঞাসা করে। জবাব খুব মনযোগ দিয়ে শুনে সহধর্মিনীটি চুপ করে থাকে আর ভাবে। কি ভাবে সে?
আমি কি ঠিক করেছি নবনীতাকে মনে রেখে? আমি কি ঠিক করেছি নবনীতাকে না জানিয়ে বিয়ে করে? আমি কি ভুল করেছি নবনীতার কথা বউকে বলে? কিন্তু আমি শুধু একবার নবনীতাকে দেখতে চাই, কথা বলতে চাইই চাই-এটা থেকে আমাকে কেউ সরাতে পারবেনা।
ব্লগাররা চিন্তাশীল যৌক্তিক-তাই আজ জানতে চাই, আমার কোথায় ভুল ছিলো, বা এখন ভুল হচ্ছে। সেদিন যদি ব্লগারদের চিনতাম নিশ্চয় একটি উপায় আমি নবনীতার জন্য করতে পারতাম। তবুও আজ জানতে চাই-এখন আমার কি করা উচিত?


৪৮টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×