somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও গো বিদেশিনী...

১৬ ই জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসপাতালের বেডে চিৎ পটাং হয়ে শুয়ে আছি।
আমার এ করুণ অবস্থার জন্য আমি নিজেই দায়ী। সকালে পরোটা, দুপুরে সিঙাড়া আর রাতে খেয়ে না খেয়ে শরীরের অবস্থা বেগতিক করে ফেলেছি। ফলাফল স্বরুপ, কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই দেহের ইন্জিন ব্রেক কষে দিয়েছে। আর যাই কোথায় ! গ্যাস্টিকের প্রবল যন্ত্রনায় বিদ্ধ হয়ে বন্ধুদের সহযোগীতায় সোজা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সারাদিন ‘ফাও’ কাজে ব্যাস্ত থাকলেও এখন কোন কাজ নেই। পুরোপুরি রেস্ট। দিনে দু’বার ডাক্তার এসে স্টেথোস্কোপ বুকে লাগিয়ে জোরে জোরে নি:শ্বাস নিতে বলে। তারপর হাসি হাসি মুখে চলে যায়। মাঝে মাঝে আমার রুমমেটরা ভিজিট করতে এসে বেডের পাশে থমথমে মুখে দাড়িয়ে থাকে। আমার দেখতে বেশ ভালই লাগে। ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগী, রোগীদের আত্মীয় স্বজন কিংবা নার্সদের চিৎকার চেচামেচিতে যখন চরম বিরক্ত হয়ে যাই তখন প্লান করি পালিয়ে যাবার। পোটলা-পাটলি নিয়ে পালানো বেশ ঝামেলার কাজ, ফলে অনেক ভেবে চিন্তে শেষমেষ আর পালানো হয়না। পালাবার পরিবর্তে কবিতার বই পড়তে মন চায়। মেডিকেল পড়–য়া বন্ধু রেজওয়ানের কথা মনে পড়ে। হাসপাতাল থেকে মেডিকেলের ফজলে রাব্বি হল খুব কাছাকাছি হওয়াতে অসুস্থতার তৃতীয় দিন বিকেলে ওকে ফোন দিলাম।
- হ্যালো, রেজওয়ান ?
- হ্যা। কি রে আছিস কেমন?
- বিপদে আছি রে ! কারাগারে বন্দি। দম বন্ধ হয় হয় অবস্থা !
- বলিস কি ! কোন কারাগারে ? কি করেছিস ?
উত্তেজিত গলায় হড়বড় করে রেজওয়ান কথাগুলো বলল। আমি শান্ত গলায় জবাব দিলাম-
- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কারাগারে ! পাকনামি করতে গিয়া অবস্থা টাইট। বিরাট অসুস্থ।
- তোর সমস্যাটা কি বল তো ? তুই অসুস্থ আর আমি কিছুই জানিনা ! রেজওয়ান অস্থির কন্ঠে বলল।
- শোন এতো কথা বলতে পারবো না। যেখান থেকে পারিস ‘জয় গোস্বামীর প্রেমের কবিতা’ বইটা জোগাড় করে নিয়ে আয়। রোগী দেখতে আসলে মানুষ ফলমূল-হরলিক্স নিয়ে আসে। তুই আসবি কবিতার বই নিয়ে। কিছু বুঝলি ?
রেজওয়ান খুব হতাশ গলায় বলল,
- না।
আমি বললাম, তোর বোঝা লাগবে না। শুধু ওয়ার্ড নাম্বার ৩ আর বেড নাম্বার ৭ মনে রাখলেই হবে। রাখলাম।
আমি রেজওয়ান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লাইন কাটলাম এবং তার পরপরই ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘন্টা দেড়েক পর রেজওয়ানের ধাক্কা ধাক্কিতে ঘুম ভাঙল। ঘুমঘুম চোখে বিরক্তি মেশানো গলায় বললাম,
- ধাক্কা মারিস ক্যান ? কয়দিন পর ডাক্তার হবি অথচ রেগীর সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয় শিখিস নাই ?
আমি কথা বলা শেষ করে রেজওয়ানের দিকে তাকাতেই ভীষণ বিব্রত হলাম। রেজওয়ানের সাথে দুজন বান্ধবী এসেছে। বিব্রত হবার মূলত ওরাই কারন। কেননা আমার গায়ে কোন কাপড় নেই। আমি কিছুটা উঠে বসে ওদের সাথে কথা বলার ভেতর কৌশলে একটা চাদর গায়ে টেনে নিলাম। রেজওয়ানকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাল। কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছে আমার খোজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি রেজওয়ান আমাকে অনেক বকাঝকাও করল। বেশ খানিকটা সময় আমার কাছে থেকে চলে যাবার সময় রেজওয়ান ওর বান্ধবীদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। বিষয়টা আমার কাছে অসুস্থতার মাঝেও রিমঝিম আনন্দের। মনে মনে আমি রেজওয়ানকে কয়েক কোটি ধন্যবাদ দিলাম। নাবিলা ও জাইকা, সদ্য পরিচিতা রেজওয়ানের দুই বান্ধবী আমার সুস্থতা কামনা করে বিদায় নেবার আগে আমি রেজওয়ানের কাছে জাইকা সম্পর্কে ফিসফিস করে বললাম,
- দোস্ত মেয়েটা তো জোশ !
রেজওয়ান চোখ কপালে তুলে বলল, শালা ও কাশ্মিরি মেয়ে। তোর মত ঢাকা ভার্সিটির কোন বেইল নাই, বুঝছোস ?
আমি রেজওয়ানের কথা কানে না তুলে মনে মনে ভীষণ আনন্দিত হলাম। ‘মেয়েটা ফরেনার, দারুণ সুন্দরী’ এ বিষয় দুটি আমার মাথার মধ্যে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে লাগল। কিছুতেই আর নামতে চাইলনা। ওরা চলে যাওয়ার পর আমি আবিস্কার করলাম রেজওয়ান আমার জন্য কোন কবিতার বই আনেনি...! জঘণ্য অপরাধ। কিন্তু ওকে মাফ করে দেওয়া হল। জাইকার মত সুন্দরী মেয়েদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে এমন দু’চারটা জঘণ্য অপরাধ ক্ষমা করা যেতে পারে !






২.
চার দিন হাসপাতালে থাকার পর মাত্র গতকাল হলে ফিরেছি।
শরীরটা খানিক চাঙা লাগছে। তবে ওষুধ ওষুধ একটা গন্ধ নাকের মধ্যে অথবা মস্তিষ্কের কোথাও সেট হয়ে গেছে। সব কিছুতেই ওষুধ ওষুধ গন্ধ পাচ্ছি। বিষয়টা অস্বস্তিকর হলেও সকালে চা খেতে গিয়ে বেশ উপভোগ করেছি। গন্ধটা চায়ের স্বাদের সাথে মিলে মিশে দারুণ এক ককটেল তৈরী করেছে। ব্যাপরটা আমার পছন্দ হয়েছে। এই পছন্দের কথাটা রেজওয়ানকে জানানো দরকার। তাই রেজওয়ানকে ফোন দিলাম।
- দোস্ত কই?
রেজওয়ান রিসিভ করে জবাব দিল,
- আমি কলেজ চত্বরে। কাজ না থাকলে আয়।
- ওকে আসছি। অমি লাইন কাটলাম।
টি.এস.সি থেকে মিনিট দশেকের মধ্যে আমি মেডিকেল কলেজে এসে পৌঁছালাম। রেজওয়ানরা আড্ডা দিচ্ছিল। চার পাঁচজন হবে। আড্ডায় একটা মাত্র মেয়ে নাম নাবিলা। আমি জাইকাকে না দেখে খুব হতাশ হলাম। খুব সামান্য হলেও মনে মনে আশা করেছিলাম জাইকার দেখা পাব। আমার প্রত্যাশার গুড়ে একেবারে বালি ঝড় বয়ে গেল। আমার অসুস্থতা নিয়ে ওরা বেশ কিছুৃক্ষণ মজা করল। মাঝখানে ঝালমুড়ি খেলাম। তারপর অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমি জাইকার কথা জানতে চাইলে রেজওয়ান জানালো, কাশ্মিরী মেয়রা মূলত কারো সাথে মেশে না। তবে জাইকা খানিকটা অন্যরকম। সবসময় আড্ডাতে না থাকলেও মাঝে মাঝে আসে। খুব ভালো বাংলা বলতে পারে না। তবে বোঝে সবই। তুই কবিতা লিখিস শুনে খুশি হয়েছে। ওর বাংলা কবিতা শুনতে নাকি অনেক ভালো লাগে। সুস্থ হলে তোর কাছ থেকে কবিতা শুনবে বলেছে। ব্যাপরটা আমার কাছে মেঘ না চাইতেই শিলা বৃষ্টির মত মনে হল। আমি আনন্দিত গলায় বোকার মত বললাম,
- আহারে ! কোথায় মেয়েটা।
সবাই হাসতে হাসতে জবাব দিল, ‘ কিছুক্ষন পরেই আসবে। অপেক্ষা করুন জনাব। ’ সত্যি সত্যি কিছুক্ষন পর মাথায় স্কার্ফ জড়ানো আগুনের মত রুপবতী এক মেয়ে এসে অধমাদের আড্ডার গতি বাড়িয়ে দিল। সেই সঙ্গে আমার মনের গতিও। একজন অসুস্থ মানুষের মনের গতি বাড়িয়ে দেওয়ায় আমি জাইকার প্রতি কৃতার্থ হলাম। জাইকা মিষ্টি হেসে সবাইকে ‘হ্যালো’ বললো। তারপর এসে আমার পাশে বসলো। ব্যপারটা কাকতালীয় কি না জানিনা তবে আমার বেশ ভাল লাগল। রেজওয়ান হাসতে হাসতে বললো,
- ম্যাডাম, তোমার কবি হজির। এবার তোমার কবিতা শোনার মনোবাসনা পূর্ন হতে পারে।
জাইকা রোবটের মত আমার দিকে তাকালো। তারপর একটা অদ্ভুত ছন্দে বাংলায় বলল,
- তুমি এসেছো ? এখন ভাল আছো ?
আমি মাথা ঝাকিয়ে ‘হ্যা’ বলি। জাইকা অমাকে অবাক করে বলে,
- তুমি কবিতা লেখ শুনলাম। আমি শুনবো...।
এমনিতে কেউ বললেই আমি কবিতা শোনাই না। তবে জাইকার ব্যপারটা আলাদা। আমি চোখ বন্ধ করে এক নি:শ্বাসে আমার ‘মেঘলা-পরী’ কবিতাটা শুনিয়ে দিলাম। জাইকা কি বুঝলো জানিনা তবে চোখেমুখে মুগ্ধতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি বিব্রত হলাম। সন্ধা হয়ে যাওয়াতে আলোচনা বেশীদূর গড়ালো না। ‘ বাংলাদেশ কেমন লাগছে, কেমন যাচ্ছে দিন’ এইসব টুকিটাকি কথা চালাচালি করে বিদায় নিলাম। আসার সময় ছোট্ট করে বললাম - আবার দেখা হবে। কথাটা প্রশ্নের মত শোনাল কি না বলতে পারবো না, তবে জাইকা বলল- নিশ্চই। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরবার সময় খানিক খারাপ লাগছিল। মেয়েটা আমার কবিতা শুনে ভালো মন্দ কোন মন্তব্যই করল না। না কি বোঝেইনি কিছুই ! মনের মধ্যে খস্খসে একটা অনুভূতি নিয়ে রুমে ফিরলাম।


৩.
সেদিন রাতে জাইকা আমাকে একটা ম্যসেজ পাঠিয়েছিল। পরে জেনেছিলাম রেজওয়ান নাম্বার নিয়েছিল। মাত্র একলাইনে ছোট্ট করে ও লিখেছিল, ‘ আম রিয়েলি সারপ্রাইজড টু লিসেন ইওর নাইস পোয়েম।, আমি খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। সেলফোনটা হাতে নিয়ে অনেক্ষন বসে ছিলাম। ছোট্ট একটা কথা কিন্ত এর ব্যপ্তিটা বোধহয় ছিল অনেক বেশী । ফলে ধীরে ধীরে ম্যসেজ থেকে ফোনে কথা বলা, মধ্যরাতে কবিতা শোনানো, বন্ধুরা একসাথে ফিল্ম শো দেখতে যাওয়া, ক্যম্পাসের প্রোগ্রামে জাইকাকে নিয়ে উপস্থিত হওয়া, বর্ষার দিনে পর্দা মাথায় দিয়ে রিক্সায় ঘোরা...ইত্যাদি অসংখ্য স্মৃতিময় ঘটনার জন্ম হতে থাকল। মাত্র পাঁচ মাসে আমাদের ভেতর একটা প্রগাঢ় বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে ওঠল। ওদিকে মেডিকেল সার্কেলের বাইরে আমাদের এ সম্পর্ক নিয়ে জাইকার বন্ধুদের মধ্যে বিস্ময়, হতাশা, ইর্ষা... এরকম অনেক কিছুর ঝড় বয়ে যেতে থাকল।
জাইকা ওর সব কথা আমাকে বলত। আসলে ওর মন পড়ে থাকতো কাশ্মিরে। কাশ্মিরের অপরুপ সৌন্দর্য ও আমাকে পরম মমতার সঙ্গে বর্ননা করে শোনাত। আমি জাইকার ঘোলা চোখে কশ্মিরের স্বচ্ছ সৌন্দর্য আঁকতে শুরু করেছিলাম। ওর কাছ থেকেই শ্রিনগর, পহেলগামের কথা আমি জেনেছিলাম। জেনেছিলাম ডালঝিল দেখতে গিয়ে ওর পা পিছলে পানিতে পড়ে যাবার কথা। অপরুপ সৌন্দর্যময় -



প্রকৃতির মাঝে বেড়ে উঠেছে বলে জাইকাও বোধহয় খুব বেশী প্রকৃতিপ্রেমী। ইট-কাঠের ঢাকাকে নিয়ে তাই ওর দারুন হতাশা। ওর না কি দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার খুব ইচ্ছা করে মেয়েটাকে আমার গ্রমে নিয়ে যেতে। ইচ্ছে করে ওকে মাইলের পর মাইল বিস্তির্ণ ধান ক্ষেত দেখাতে, দিগন্ত ছোঁয়া হলুদে রাঙানো সরিষার ক্ষেত দেখাতা, খেজুরের রসে চিতল পিঠা খাওয়াতে। ‘নদীতে পাল তোলা নৌকা দেখে ও বলবে- কী সুন্দর, কী সুন্দর !’ - এরকম একটা দৃশ্য কল্পনা করে আমি মনে মনে আনন্দিত হলেও কোনদিন তা বাস্তবায়নের সুযোগ পাইনি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, সামনের ছুটিতে ওকে নিয়ে সবুজে ঘেড়া বাংলাদেশ দেখাতে নিয়ে যাবো। ও মুগ্ধ হয়ে সব কিছু দেখবে। শহীদ মিনারের সামনের রাস্তায় হাটতে হাটতে আমি জাইকাকে হুট করে বললাম,
- ‘আমার সঙ্গে যাবে?’,
- কোথায় ? ও আবাক তাকিয়ে বলল।
- বাংলাদেশ দেখতে ! আমি দৃঢ় গলায় জবাব দিলাম।
জাইকার বিস্মিত গলা শুনলাম, - মানে ?
- ইট-কাঠের যন্ত্রিকতার বাইরে সত্যিকারের বাংলাদেশ। যেখানে নদী-পাখি-ফুল মিলে মিশে স্বর্গ বানায় !
কবিতারমত কথাগুলো শুনে জাইকা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি কথা বলতে পারলাম না।


৪.
একদিন সকালে জাইকা আমাকে ফোন দিল।
- তুমি কোথায় ইমরান ?
আমি ঘুম জড়ানো গলায় কোনমতে বললাম,
- হলে । ঘুমুচ্ছি।
- আমার হলের সামনে একটু আসবে ? জরুরী কথা ছিল।
জরুরী কথাটা শুনে তন্দ্রাচ্ছন্ন্ ভাবটা উধাও।
- আচ্ছা , আসছি।
ফোন কেটে যথাদ্রুত আমি হলের সামনে গিয়ে জাইকাকে মিসড কল দিলাম। ও মিনিট পাঁচেক পর নেমে হাসতে হাসতে সামনে এসে দাড়ালো। এই মেয়ে তো দেখি হাসে ! আমি ভাবলাম কি না কি ! ভেতরে ভেতরে অবাক হলাম। জাইকা একটা প্যাকেট আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
- আমি কাল কাশ্মির যাচ্ছি। একমাস থাকবো। তোমাকে খুব মিস করবো। ভালো থেকো। অনিয়ম করে আবার হাসপাতালে যেওনা যেন !
আমি থতমত গলায় বললাম, - সাবধানে যেও। ভালো থেকো।
জাইকা চলে যায়। আমার অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করলেও কিছুই বলতে পারলাম না। ফিরতি পথে প্যকেটটা খুললাম। ভেতর থেকে কারুকার্য খচিত একটা কাশ্মিরি শাল আর চিরকুট বেড়োলো। তাতে লেখা , ‘ ডিয়ার পোয়েট, বি রেডী...! আই উড লাইক টু ফিল ইওর ফিলিংস্ থ্রো পেয়েমস্...। কাম ব্যাক সুন..।’ চিরকুটটা পকেটে ভরে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,
- আচ্ছা, একমাস কী খুব দীর্ঘ সময় ?


৫.
ছুটি কাটিয়ে একমাস পর জাইকার ফিরে আসার কথা থাকলেও ও আর ফিরে আসেনি।
দেড়মাসের মাথায় রেজওয়ানের কাছে খবর নিলে জানালো ওরাও জাইকার ফিরে না আসায় চিন্তিত। জাইকার কাশ্মিরের কোন সেল নাম্বার জানা না থাকায় আমি অসহায় হয়ে অপেক্ষার প্রহর গোনা ছাড়া কিছুই করতে পারলাম না। আমার অপেক্ষা দুইমাস তের দিনের মাথায় একটা ই-মেইল পাবার মাধ্যমে ভাঙলো। বেশ দীর্ঘ এবং আবেগী চিঠিতে জাইকা অনেক কিছু লিখেছে যার সারমর্ম হচ্ছে- ছুটিতে বাড়ি ফিরবার পর বাবা-মায়ের ইচ্ছায় ওর বিয়ে হয়ে যায়। এয়ারপোর্ট থেকে সেলফোনটা হারিয়ে যওয়াতে কারো সঙ্গেই যেগাযোগ করতে পারেনি। ওর হাজবেন্ড কিংবা বাবা-মা কেউই চয়না জাইকা আর বাংলাদেশে ফিরে পরাশোনা শেষ করুক। ফলে মন খারাপ হলেও বিষয়টা ওকে মেনে নিতে হয়েছে। আমাকে এবং ওর বন্ধুদের ও খুব মিস করে। আমার সঙ্গে কাটানো মূহুর্তগুলো ওর আজীবন মনে থাকবে। আমি কখোনো কাশ্মির গেলে ওর সঙ্গে যেন দেখা করি। কবিতা লেখাটা যেন চালিয়ে যাই। নতুন কিছু লিখলে ওকে যেন মেইল করে পাঠাই। সবশেষে অনেকবার ক্ষমা চেয়ে আমাকে ভল থাকতে বলেছে। মেইলের নিচে ওর পূর্নাঙ্গ ঠিকানা দেওয়া। মেইলটা পড়া শেষে আমি অনেক্ষন মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর লেখাশুরু করলাম,





জাইকা,
ও বন্ধু আমার...
জানিনা কেমন আছো, তবে আমি ভালো নেই। তোমার মেইল পড়ে কোনকিছু বলার ভাষা
হারিয়ে ফেলেছি। তোমার অভাবে আমার দিন কেটে যায় নিদারুণ নি:সঙ্গতায়। তুমি আর
ফিরবে না শুনে আমার একটা স্বপ্ন ভেঙে গেল। আমার খুব ইচ্ছা ছিল তোমায় নিয়ে আমাদের
গ্রমে যাবার। ইচ্ছা ছিল নদীর তীরে বসে নৌকা দেখার আর রিমঝিম বৃষ্টিতে নদীর বুকে
টাপুর টুপুর শব্দ শোনার। আমি জানি আমার এ ইচ্ছাটা কোনদিনই আর পূরণ হবে না।....

এই পর্যন্ত লিখে আমার কি যে হল ! আমি ব্যকস্পেস চেপে সবটাই মুছে ফেললাম। শুধু লিখলাম, ‘ভাল থোকো আমার লক্ষী বিদেশিনী। আমিও তেমায় খুব মিস করবো, হয়তো তোমার থেকেও বেশী। ’ মেইলটা সেন্ড করে আমি জানালায় এসে দাড়ালাম। স্বচ্ছ একটা নীল আকাশ দেখতে লাগলাম। জাইকাকে আর কোনদিনও হয়তো আমার স্বপ্নটার কথা জানানো হবে না। বোঝানো যাবেনা ইট-কাঠের যন্ত্রিকতার বাইরে সবুজাভ বাংলাদেশ কতটা মোহনীয়। বুকের মধ্যে হাহাকার আর শূন্যতা একসাথে খেলা করতে লাগলো। মনে মনে বললাম, ভাল থেকো জাইকা, ভাল থাকুক আমাদের আনন্দময় দিন...।



৩৩২, কবি জসীমউদ্দিন হল,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঔড়ষড়ল২০০৭@ুধযড়ড়.পড়স
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×