সময়টা ২০০৭।
আমার এইচ.এস.সি পরীক্ষা চলছিল। অর্থনীতি ২য় পত্রের পরীক্ষা দিতে ঘর থেকে বেড়োনোর আগে অসুস্থ মাকে সালাম করলাম। আমার স্নেহময়ী মা মলিন কন্ঠে বললেন, ‘ভাল করে পরীক্ষা দিস বাবা, এ প্লাস পেতেই হবে।’ আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। ছোটবেলা থেকেই মায়ের মুখে হাসি না দেখা এই আমি স্বপ্ন দেখতে লাগলাম ভাল ফলাফল করে মায়ের মুখে অচেনা ফুলের মত দিগন্তজোড়া হাসি দেখার। রিক্সায় চড়ে পরীক্ষা কেন্দ্র নৌ-বাহিনী কলেজে যেতে যেতে হিসাব কষি পূর্বেকার পরীক্ষা গুলোর। বুঝতে পারি কেবল আজকের পরীক্ষাটা ভাল হলেই সব মিলিয়ে আমার মায়ের স্বপ্নটা পূরণ হতে পারে। এরপর আমি ঢাকায় যাবো কোচিং করতে, ভর্তি হবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রাশি রাশি আনন্দের উপকরণ নিয়ে হাজির হবো আমার অভিমানি মায়ের সামনে... এ রকম নানা রঙের স্বপ্নগুলো রিক্সার চাকার ঘূর্ণণের সাথে সাথে আমার মনের মধ্যে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে যেতে লাগল। আসলে মানুষ তো স্বপ্নে বাঁচে- না কি স্বপ্ন মানুষকে বাঁচায় !
কিন্তু অপ্রত্যাশিত কোন আঘাতে মানুষের সারা জীবনের স্বপ্ন কাঁচের মত ঝুরঝুর করে ভেঙে যেতে পারে তা কেবল গল্প উপন্যাসে পড়েছি, বাস্তবে উপলদ্ধি করিনি কোনদিন। সৃষ্টিকর্তা পরীক্ষার হলে তারই বাস্তবায়ন ঘটালেন আমাকে দিয়ে।
২২ মার্চ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট। লেখার জন্য শিক্ষক আমাকে যে খাতাটি দিলেন তা বান্ডিলের উপরে থাকায় ভাঁজপড়া ছিল। আমি খাতাটি পরিবর্তন করে দিতে বললে হল পরিদর্শক আমাকে না করে দেন। আমি পুনরায় অনুরোধ করলে শুরু করেন অকথ্য ভাষায় গালাগাল। প্রতিবাদ করতে গেলে আমাকে ‘বেয়াদব’ বলে আখ্যায়িত করেন। একজন শিক্ষকের এমন আচরণে বিস্মিত আমি চুপচাপ সজল চোখে ভাঁজপড়া খাতাতেই পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি। মানসিক ভাবে প্রচন্ড আঘাত পাই।
কিন্তু আমার জন্য এর চেয়েও বড় আঘাত অপেক্ষা করছিল। প্রশ্ন পাবার পর ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলে আমি লিখতে শুরু করি। দুই ঘন্টা লেখার পর হঠাৎ নৌ-বাহিনী কলেজের অধ্যক্ষ আমাদের রুমে প্রবেশ করেন। প্রচন্ড চিৎকার করে বলেন- হোয়ার দ্যা বাসটার্ড ? সমস্ত রুম স্তব্ধ। সেই শিক্ষক আমাকে দেখিয়ে দিলে রুদ্রমুর্তির অধ্যক্ষ ছো মেরে আমার খাতাটি নিয়ে যান।
এরপরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে। শিক্ষকের সাথে অসাদাচরণের অভিযোগে আমাকে বহি:স্কারের প্রস্তুতি চলছিল। আমি শুধু অসহায় চোখে দেখছিলাম কিছু ক্ষমতাবান মানুষ কত নিপুঁন ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন। শেষবারের মত আমি যখন অধ্যক্ষের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলাম- ‘স্যার, আমার কোন অপরাধ নেই, আমার জীবনটা নষ্ট করবেন না।’ তখন আমি তার চোখে মমতার পরিবর্তে হায়নার ক্রোধ দেখেছিলাম। যখন কিছুতেই আমি তার পা ছাড়ছিলাম না তিনি তার বুট জুতার তীব্র লাথি আমার বুকে বসিয়ে দিলেন। মেঝেতে লুটিয়ে অজ্ঞান হবার আগে বছর বছর ধরে গড়ে তোলা মায়ের স্বপ্ন, বিশ্বাস আর ভবিষ্যৎকে একজন সৈনিকের বুটজুতার তলে পিষ্ট হতে দেখলাম।
এরপর কতকিছু হল। মানব বন্ধন, প্রধান উপদেষ্টাকে স্বারক লিপি প্রদান, উপদেষ্টার নির্দেশে তদন্ত কমিটি, বোর্ডের চেযারম্যানের দু:খ প্রকাশ, ছবিসহ পত্রিকার পাতায় বিশাল বিশাল নিউজ...আরও কত কি !! আমি তখন হাসপাতালর বিছানায় শুয়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন এক স্বপ্ন ভাঙা তরুন। কিন্তু কিছুতেই অপরাধীদের কোন কিছু হল না। আমার অভিমানী মা আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদেন। আমার স্বপ্ন ভাঙার কষ্টের চাইতে তার স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট যে অনেক বেশী !
আমার বন্ধু তমাল, শাওন, ওয়ালিদ, মহিউদ্দিন, মোহাইমিন, কিনুরাম স্যার, শাওন ভাইরা আমাকে স্বাভাবিক কারার জন্যে অনেক করেছেন। আমার ঘুম ঘুম দিন যেত, ঘুম ঘুম রাত। মায়ের অনুপ্রেরনায়, অরষার প্রচেষ্টায় আমি আবার মানসিক ভাবে ঘুরে দাড়াই। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে আবার প্রস্তুতি নিতে বলেন। আমি ২০০৮ ফের পরীক্ষা দিলাম। ভাল ফলাফল করলাম। এ প্লাস না পেলেও মানবিক বিভাগ থেকে ৪.৮০ পেলাম। এরপর পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় ভর্তি হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । আমার মায়ের মলিন মুখে ঠিকই হাসি ফুটল তবে অনেক বৃষ্টি ঝরার পর। আমার জীবন থেকে যারা একটি বছর কেড়ে নিয়েছিল তাদের কোন বিচার হয়নি। দুটি তদন্তের একটিরও রিপোর্ট কেউ জমা দেননি। এডিসি (শিক্ষা) আমাকে একদিন ডেকে বললেন, ‘ইমরান আমি দু:খিত। এ রিপোর্ট জমা দিলে আমাকে বদলি করে দেবে খাগরাছড়ি।’
অসহায় আমার কারও উপর কোন অভিযোগ নেই। আমি যে হারিযে যাইনি এটাই জরুরী খবর। সব সম্ভবের এ দেশে আমার স্বপ্ন গুলো যে ‘বুটের আঘাত’ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারেনি এটাই বা কম কিসে ! এই লেখাটা যদি খুলনার সেই অধ্যক্ষ আর শিক্ষক পড়েন তবে বলব, পেশি শক্তি দিয়ে কারও মেধাকে আপাত দৃষ্টিতে দমিয়ে রাখা গেলেও মেধাবীরা অপেক্ষা করে সত্যিকার কোন সময়ের, যে সময় হয়ে ওঠে নিজেই বিপ্লবী।
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।