somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

BAL সরকার ও আজকের বাংলাদেশ :| :| :|

১৫ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্প ১ :

কৃষকের ছেলে আবদুস সোবহান মন্ডল । রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করে গ্রামীণ ব্যাংকে যোগ দেয় ২০০২ সালে । বেতন সামান্য হলেও সংসার চালিয়ে নিতে পারে ভালভাবেই । বছর তিনেক হল বিয়ে করেছে । বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে ভূড়িটা তাঁর জামা ভেদ করার পায়তারা করছে । এ নিয়ে তাঁর কলিগদের মস্করার শেষ নাই । নিতান্তই সাদামাটা মানুষ হলেও রাজনীতি সম্পর্কে আবদুস সোবহানের খুব আগ্রহ । "মিয়ারা ! সেই দিন আর নাই । ভাষানী , মুজিব , জিয়া - এরা হইল দেশের খুঁটি । আর এখন একজনের মেয়ে আর একজনের বউ দেশটা শেষ করে দিল” - সোবহান তাঁর কলিগদের বলছে চা খেতে খেতে । তবুও আবদুস সোবহান নিজেকে যোগ্য নাগরিক ভেবে প্রতিবারই ভোট দেয় । জামায়াতকে পছন্দ করে না বলে নৌকা মার্কাতেই সিল মারে । এবারো ব্যাতীক্রম হয়নি । দিন চলে যাচ্ছিল ...একদিন সকাল বেলা খবর পায় তাঁর অফিসের বস ইউনুস স্যার নোবেল পাইছে । এই লোকটার প্রতি সোবহানের অগাধ শ্রদ্ধা । এত বড় মাপের লোক হয়েও প্রতিদিন অফিসে ঢোকার সময় সোবহানের সাথে দেখা হলেই বলে "কি খবর ! ভাল আছো?" । সব কর্মচারীর সাথে ভাল ব্যবহারের জন্য ইউনুস স্যারের সুনাম আছে। নোবেল পাবার পর থেকেই কানাঘুসা শুরু হয় স্যারকে নিয়ে । সরকারের একেক মন্ত্রী সোবহানের স্যারকে নিয়ে উলটাপালটা কথা বলতে থাকে । এসব শুনে শুনে সোবহানের মনে ক্ষোভ জমে । "কি করে ওই লোকটাকে নিয়া বাজে কথা কয়?" - এই প্রশ্ন তার মনে জেগে ওঠে । ...... এর পরের বছর দুয়েক জুড়ে চলে নানা নাটক । ২০১৪ সাল - জাতীয় নির্বাচন । যথারীতি ভোট দিতে যায় আবদুস সোবহান মন্ডল । ব্যালট পেপার হাতে নিয়ে যেই না সিল মারতে যাবে ওমনি অজানা এক চিন্তাই বুক আঁতকে উঠল । রাজাকারকে তো ভোট দিবে না ...শেষমেষ কাউকে ভোট না দিয়ে বের হল ।


গল্প ২:

ফুটবল খেলায় পারদর্শী পিকুল । স্কুল কলেজের সেরা খেলোয়াড় । ২০০৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে বুয়েটে ভর্তি হয় । বুয়েটেও কুমিল্লা জেলা সমিতির হয়ে ফুটবল খেলে । বন্ধু গোছে পিকুলের খুব দাপট । উচা লম্বা হওয়ায় সবাই ওকে একটু ভয় করেই চলত । কথার মাঝে নেতা নেতা ভাব । অল্পতেই নজরে পড়ে রুস্তম ভাইয়ের । রুস্তম ভাই - যদিও সেই ০৪ সিরিজের ছাত্র , এখনও পাশ করতে পারেননি । বুয়েট ছাত্রলীগের নামকরা নেতা । কিছুদিনের মাঝেই পিকুলের ওঠাবসা শুরু হয় রুস্তম ভাইয়ের সাথে । নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে রাজনীতির সাথে । অন্যরা মারকাটের রাজনীতি করলেও পিকুল ছিল ভিন্ন । হয়তবা স্কুল মাস্টার পিতার আদর্শ রক্তে মিশে আছে তাই ।ভিসি পদত্যাগের আন্দোলনে রুস্তম ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বল্লেও মন থেকে ঠিকই বিরোধিতা করেছে । সরকারের ইন্ধন যে এখানে আছে তা পিকুল ভালভাবেই টের পায় । কিন্তু কি করবে সে !! গন্ডগোলের রেশ ধরেই হারিয়ে যায় জীবন থেকে পুরো চারটি মাস । ২০১৪ সাল - জাতীয় নির্বাচন । জীবনের প্রথম বারের মত ভোট দিতে যায় পিকুল । যদিও ততদিনে পাশ করে বের হয়ে যাবার কথা কিন্তু সেশন জটের ফলে কেবল ৩য় বর্ষে পড়ে থাকে । ছাত্রলীগ করার ফলে সিলটা নৌকাতেই মারতে যাচ্ছিল । কিন্তু কি এক অজানা চিন্তায় বুক আতকে উঠল । বিবেক তাকে শেষ পর্যন্ত "না" ভোট দিতে বাধ্য করল ।



গল্প ৩:

পাড়ার সবচেয়ে ভদ্র ছেলে শুভ । ক্লাশ ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত সব ক্লাশে ফার্স্ট বয় । হেডস্যারের মতে এই ছেলে একদিন অনেক বড় হবে । বড় ভাই প্রাইভেট কলেজে সদ্য গণিতের শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছে । মেজ বোন ডাক্তার হবার অনেক চেষ্টা করেও চান্স পায়নি । মধ্যবিত্ত পরিবার হয়েও বাবা শেষমেষ ওকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে । ভর্তি করাতে অনেক টাকা লাগে তাই বাবা লোন নেয় সোনালী ব্যাংক থেকে । মেয়ের ব্যর্থতাকে ঢাকবার জন্যে স্বপ্ন দেখছে শুভকে নিয়ে । শুভ একদিন বড় ডাক্তার হবে । পাবনার আলহেরা একাডেমী থেকে SSC তে গোল্ডেন পায় শুভ । ভর্তি হয় নটরডেম কলেজে । পড়াশুনা ঠিকঠাক চলছে । অ্যাডমিশনের সময় চাপ বেশি হবে তাই আগে থেকেই প্রিপারেশন নিচ্ছিল শুভ । ২০১২ সাল - উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা । সব পরীক্ষাই খুব ভাল হচ্ছিল । বাঁধ সাধল শেষ পরীক্ষায় এসে । হোস্টেল থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবার সময় রাস্তায় মিছিলের কারনে জ্যামে আটকা পড়ে । বাস থেকে নেমে দৌড়ান শুরু করে শুভ । টেনশনে বুক দুরু দুরু । যখন পৌছায় তখন অলরেডী ২০ মিনিট পার হয়ে যায় । টেনশনের চোটে পরীক্ষাটা আশানুরুপ দিতে পারেনা । ফলাফল এক সাব্জেক্টে A+ মিস । তবুও শুভ কিছু মনে করে না কারন সে জানে তাঁর প্রিপারেশন ভাল আছে । কিন্তু একদিন শুনতে পায় যে সরকার নাকি মেডিকেল পরীক্ষার নতুন নিয়ম করেছে । রেজাল্টের ভিত্তিতে ভর্তি হবে । শুভর কান্না আর কে দেখে । যত বারই তাঁর মনে পড়ে যে সে ডাক্তার হতে পারবেনা ততবারই এক অজানা চিন্তায় বুক আঁতকে ওঠে । রাগে ক্ষোভে সে ভাবে "আর যাই হোক ! কখনই আমি আমার ভবিষ্যত অন্ধকারকারীদের নির্বাচিত করবনা"


এরকম গল্পের চরিত্র আমাদের চারপাশেই আছে । কি কারনে আবদুস সোবহান মন্ডল , পিকুল , শুভ ...এদের অজানা চিন্তায় বুক আঁতকে উঠল ?

বঙ্গবন্ধুর চেতনা কি এই ছিল ? তিনি আজ বেঁচে থাকলে এই বাংলাদেশকে নিয়ে কি মন্তব্য করতেন ? বর্তমান সরকার কি পেরেছে মুজিবের চেতনায় উজ্জীবিত হতে ? প্রশ্ন ঠিকই আছে ...উত্তর বোধয় নেই :|
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×