গল্প ১ :
কৃষকের ছেলে আবদুস সোবহান মন্ডল । রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করে গ্রামীণ ব্যাংকে যোগ দেয় ২০০২ সালে । বেতন সামান্য হলেও সংসার চালিয়ে নিতে পারে ভালভাবেই । বছর তিনেক হল বিয়ে করেছে । বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে ভূড়িটা তাঁর জামা ভেদ করার পায়তারা করছে । এ নিয়ে তাঁর কলিগদের মস্করার শেষ নাই । নিতান্তই সাদামাটা মানুষ হলেও রাজনীতি সম্পর্কে আবদুস সোবহানের খুব আগ্রহ । "মিয়ারা ! সেই দিন আর নাই । ভাষানী , মুজিব , জিয়া - এরা হইল দেশের খুঁটি । আর এখন একজনের মেয়ে আর একজনের বউ দেশটা শেষ করে দিল” - সোবহান তাঁর কলিগদের বলছে চা খেতে খেতে । তবুও আবদুস সোবহান নিজেকে যোগ্য নাগরিক ভেবে প্রতিবারই ভোট দেয় । জামায়াতকে পছন্দ করে না বলে নৌকা মার্কাতেই সিল মারে । এবারো ব্যাতীক্রম হয়নি । দিন চলে যাচ্ছিল ...একদিন সকাল বেলা খবর পায় তাঁর অফিসের বস ইউনুস স্যার নোবেল পাইছে । এই লোকটার প্রতি সোবহানের অগাধ শ্রদ্ধা । এত বড় মাপের লোক হয়েও প্রতিদিন অফিসে ঢোকার সময় সোবহানের সাথে দেখা হলেই বলে "কি খবর ! ভাল আছো?" । সব কর্মচারীর সাথে ভাল ব্যবহারের জন্য ইউনুস স্যারের সুনাম আছে। নোবেল পাবার পর থেকেই কানাঘুসা শুরু হয় স্যারকে নিয়ে । সরকারের একেক মন্ত্রী সোবহানের স্যারকে নিয়ে উলটাপালটা কথা বলতে থাকে । এসব শুনে শুনে সোবহানের মনে ক্ষোভ জমে । "কি করে ওই লোকটাকে নিয়া বাজে কথা কয়?" - এই প্রশ্ন তার মনে জেগে ওঠে । ...... এর পরের বছর দুয়েক জুড়ে চলে নানা নাটক । ২০১৪ সাল - জাতীয় নির্বাচন । যথারীতি ভোট দিতে যায় আবদুস সোবহান মন্ডল । ব্যালট পেপার হাতে নিয়ে যেই না সিল মারতে যাবে ওমনি অজানা এক চিন্তাই বুক আঁতকে উঠল । রাজাকারকে তো ভোট দিবে না ...শেষমেষ কাউকে ভোট না দিয়ে বের হল ।
গল্প ২:
ফুটবল খেলায় পারদর্শী পিকুল । স্কুল কলেজের সেরা খেলোয়াড় । ২০০৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে বুয়েটে ভর্তি হয় । বুয়েটেও কুমিল্লা জেলা সমিতির হয়ে ফুটবল খেলে । বন্ধু গোছে পিকুলের খুব দাপট । উচা লম্বা হওয়ায় সবাই ওকে একটু ভয় করেই চলত । কথার মাঝে নেতা নেতা ভাব । অল্পতেই নজরে পড়ে রুস্তম ভাইয়ের । রুস্তম ভাই - যদিও সেই ০৪ সিরিজের ছাত্র , এখনও পাশ করতে পারেননি । বুয়েট ছাত্রলীগের নামকরা নেতা । কিছুদিনের মাঝেই পিকুলের ওঠাবসা শুরু হয় রুস্তম ভাইয়ের সাথে । নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে রাজনীতির সাথে । অন্যরা মারকাটের রাজনীতি করলেও পিকুল ছিল ভিন্ন । হয়তবা স্কুল মাস্টার পিতার আদর্শ রক্তে মিশে আছে তাই ।ভিসি পদত্যাগের আন্দোলনে রুস্তম ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বল্লেও মন থেকে ঠিকই বিরোধিতা করেছে । সরকারের ইন্ধন যে এখানে আছে তা পিকুল ভালভাবেই টের পায় । কিন্তু কি করবে সে !! গন্ডগোলের রেশ ধরেই হারিয়ে যায় জীবন থেকে পুরো চারটি মাস । ২০১৪ সাল - জাতীয় নির্বাচন । জীবনের প্রথম বারের মত ভোট দিতে যায় পিকুল । যদিও ততদিনে পাশ করে বের হয়ে যাবার কথা কিন্তু সেশন জটের ফলে কেবল ৩য় বর্ষে পড়ে থাকে । ছাত্রলীগ করার ফলে সিলটা নৌকাতেই মারতে যাচ্ছিল । কিন্তু কি এক অজানা চিন্তায় বুক আতকে উঠল । বিবেক তাকে শেষ পর্যন্ত "না" ভোট দিতে বাধ্য করল ।
গল্প ৩:
পাড়ার সবচেয়ে ভদ্র ছেলে শুভ । ক্লাশ ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত সব ক্লাশে ফার্স্ট বয় । হেডস্যারের মতে এই ছেলে একদিন অনেক বড় হবে । বড় ভাই প্রাইভেট কলেজে সদ্য গণিতের শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছে । মেজ বোন ডাক্তার হবার অনেক চেষ্টা করেও চান্স পায়নি । মধ্যবিত্ত পরিবার হয়েও বাবা শেষমেষ ওকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে । ভর্তি করাতে অনেক টাকা লাগে তাই বাবা লোন নেয় সোনালী ব্যাংক থেকে । মেয়ের ব্যর্থতাকে ঢাকবার জন্যে স্বপ্ন দেখছে শুভকে নিয়ে । শুভ একদিন বড় ডাক্তার হবে । পাবনার আলহেরা একাডেমী থেকে SSC তে গোল্ডেন পায় শুভ । ভর্তি হয় নটরডেম কলেজে । পড়াশুনা ঠিকঠাক চলছে । অ্যাডমিশনের সময় চাপ বেশি হবে তাই আগে থেকেই প্রিপারেশন নিচ্ছিল শুভ । ২০১২ সাল - উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা । সব পরীক্ষাই খুব ভাল হচ্ছিল । বাঁধ সাধল শেষ পরীক্ষায় এসে । হোস্টেল থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবার সময় রাস্তায় মিছিলের কারনে জ্যামে আটকা পড়ে । বাস থেকে নেমে দৌড়ান শুরু করে শুভ । টেনশনে বুক দুরু দুরু । যখন পৌছায় তখন অলরেডী ২০ মিনিট পার হয়ে যায় । টেনশনের চোটে পরীক্ষাটা আশানুরুপ দিতে পারেনা । ফলাফল এক সাব্জেক্টে A+ মিস । তবুও শুভ কিছু মনে করে না কারন সে জানে তাঁর প্রিপারেশন ভাল আছে । কিন্তু একদিন শুনতে পায় যে সরকার নাকি মেডিকেল পরীক্ষার নতুন নিয়ম করেছে । রেজাল্টের ভিত্তিতে ভর্তি হবে । শুভর কান্না আর কে দেখে । যত বারই তাঁর মনে পড়ে যে সে ডাক্তার হতে পারবেনা ততবারই এক অজানা চিন্তায় বুক আঁতকে ওঠে । রাগে ক্ষোভে সে ভাবে "আর যাই হোক ! কখনই আমি আমার ভবিষ্যত অন্ধকারকারীদের নির্বাচিত করবনা"
এরকম গল্পের চরিত্র আমাদের চারপাশেই আছে । কি কারনে আবদুস সোবহান মন্ডল , পিকুল , শুভ ...এদের অজানা চিন্তায় বুক আঁতকে উঠল ?
বঙ্গবন্ধুর চেতনা কি এই ছিল ? তিনি আজ বেঁচে থাকলে এই বাংলাদেশকে নিয়ে কি মন্তব্য করতেন ? বর্তমান সরকার কি পেরেছে মুজিবের চেতনায় উজ্জীবিত হতে ? প্রশ্ন ঠিকই আছে ...উত্তর বোধয় নেই

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




