somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৃষ্টিতত্ত্বের গালগপ্প বনাম বিবর্তনের শিক্ষা :: তানবীরা তালুকদার

২৬ শে জুন, ২০০৮ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৃষ্টিতত্ত্বের গালগপ্প বনাম বিবর্তনের শিক্ষা
মেহুল কামদার
অনুবাদক: তানবীরা তালুকদার



অনেক অনেক বছর আগে ভারতে আমার ছোট্টবেলার এক ঘটনা। আমি তখন আমার দাদাবাড়িতে। খুব কষ্ট করে আমার দাদা বাড়ি তথা তার চশমার শোরুম-এর ছাদে উঠেছিলাম। এমনি এমনি ছাদে উঠিনি, মনে ধান্দা ছিলো একটা। ভাবছিলাম, সেদিনের ইতিহাস ক্লাশে পড়ানো আর্কিমিডিসের একটা পরীক্ষা হাতে নাতে করা যায় কিনা। আসলে স্কুলের স্যার সেদিন আমাদেরকে আর্কিমিডিস কিভাবে সূর্যরশ্মির সাহায্যে “পার্শিয়ান নৌযান পুড়িয়ে” দিয়েছিলেন সে সম্বন্ধে পড়িয়েছিলেন। আর বলেছিলেন আমরা নিজেরাই চশমার কাচ ব্যবহার করে একই পদ্ধতিতে ছোট কাগজ পোড়াতে পারব। আমি দোকানে রাখা বিশাল বাক্স থেকে খুজে পেতে দশ ডাইঅপ্টারের একটি কাচ বের করে নিলাম এবং সেটা নিয়ে মাদ্রাজের তীব্র রোদ উপেক্ষা করে বাইরে চলে এলাম হাতে একটা শক্ত কাগজ নিয়ে। তখনও আমি স্কুলের পোষাক পাল্টায়নি, আমি প্রচন্ড মনোযোগ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম কাচের ভেতর দিয়ে সূর্যরশ্মিকে কাঁচের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীভূত করে কাগজটাকে পুড়িয়ে দিতে। কিছুটা সময় অপেক্ষার পর আমি দেখতে পেলাম, কাগজের মাথায় যেখানে আলো পড়েছিল সেখানটায় একটা কালো দাগ পড়েছে, এবং একটা মৃদু ধোঁয়ার কুন্ডলী উঠছে। আলোক রশ্মির দ্বারা কাগজটা পুড়েছে। এটা আমার জন্য একটি দম বন্ধ করা মুহুর্ত - আমি কাচের ভেতরের রশ্মির সাহায্যে আস্তে আস্তে বোর্ডের উপড় আমার নাম লেখার চেষ্টা করছিলাম, প্রথম তিনটা অক্ষর লেখা হতেই আমি আনন্দে আমার হাতের কাপুনি এবং আমার উত্তেজনা টের পেতে লাগলাম। ঠিক সেসময় আমার মা আমাকে ছাদের লাগোয়া রান্নাঘর থেকে ডাক পাড়লেন, “মেহুল, তুমি এই রোদের মধ্যে ছাদে বসে কি করছ”? আমি মায়ের দিকে না তাকিয়েই সানন্দে চিৎকার উত্তর দিলাম, “আমি কাচ দিয়ে সূর্যের আলো দিয়ে কাগজে আমার নাম লিখছি”। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই মা দৌড়ে এসে খপ করে আমার হাত থেকে সব কেড়ে নিলেন। আমি হতভম্ব চোখে তাকিয়ে মাত্র জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম আমি কি কিছু ভুল করেছি, ঠিক তখনই আমার গালে কষে একটা চড় পড়ল। চড়ের সাথে বলা মায়ের কথাগুলোও এখনও আমার মনে আছে, যদিও গুজরাটি থেকে অনুবাদ করলে ভাষাটা অনেকটাই তার মাধুর্য্য হারাবে। তিনি আমাকে বললেন, “সূর্য দেবতা রেগে যাবেন”, আম সজল নেত্রে মাকে বল্লাম, সূর্য রশ্মি ব্যবহার করলে সূর্যদেব যদি রেগেই যেতেন তাহলে তিনি পার্শিদের বিরুদ্ধে গ্রীকদের যুদ্ধে তাদেরকে জেতার জন্য রশ্মি দিয়ে সাহায্য করতেন না। প্রায় সাথে সাথেই আর একটি চড় অবধারিত ভাবে গালে নেমে এলো। আমি বুঝতে পারলাম ধর্মীয় অতিকথা নিয়ে প্রশ্ন করা বিপদজনক - যা আমি সেই কিশোর বয়সে বুঝেছি অনেকেই তা হয়ত তাদের জীবন দিয়ে শিখেছেন।
তারপরও ধর্মকথা আমাকে প্রবল ভাবে আকর্ষন করে। মায়ের কাছে প্রত্যকে বার চড় খাওয়া মানেই ভারতের সংস্কৃতিতে দাদীর কাছে প্রত্যেকবার আদর পাওয়া। আমাদের দাদী যখন আমরা ছোট ছিলাম তখন আমাদেরকে গান গেয়ে ভোলাতেন আর যখন বড় হলাম তখন গল্প বলে ভোলাতেন। দাদীর বিশাল গল্পের ভান্ডারে আমাদের প্রত্যেকেরই পছন্দের আলাদা গল্প ছিল, এবং দাদী খুব খুশি মনেই সে সব গল্প আমাদেরকে বারবার শুনিয়ে যেতেন। দাদীর গল্প আমাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছিল যে অনেক অনেক বছর পড়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য পড়তে আগ্রহী হই। যাক সেটা অন্য আর একটি গল্প। কিন্তু যখন মুক্তমনাতে ডারউইন ডে’র উপর লেখা দেয়ার জন্য সবাইকে আমন্ত্রন জানানো হলো, আমি অতি সহজেই সেটিকে এড়িয়ে যেতে পারতাম এই ভেবে যে এই বিষয়ের উপরতো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমি পড়িনি। যে এ্যামেরিকায় বাস করে অতীতে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের মধ্যে ধর্মের রূপকথাকে কেন্দ্র করে (যাদের অধুনা অবতার হলো “Intelligent Design” বা 'সৃষ্টির বুদ্ধিদীপ্ত অনুকল্প') স্মরন রাখার মতো যুদ্ধের কথা জেনেছি, এবং তাদের সে যুদ্ধ এখনো নানাভাবে দেখছি, বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির আলোকে এই সৃষ্টিতত্ত্বের উপকথাগুলো নিয়ে আলোচনা করাটা আমার জন্য বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
বিভিন্ন দেশের শত শত উপকথার নানা রকম তথ্য দিয়ে শত শত ওয়েব সাইট তৈরী হয়েছে। যেমন আশা করা যায় কেউ কেউ আছেন ধর্মের গল্প গুলো শুধু শুনেছেন এবং সেই শোনা গল্পগুলোই মানব জাতীর জন্য লিখে ফেলেছেন, আবার কারো কারো কাছে হয়তো এই গল্পগুলো শুধুই উপভোগ্য কল্পিত গল্প মাত্র, বিভিন্ন যুগের গল্প গুলোকে এক সাথে জোড়া দিলে মানুষের চিন্তা ভাবনার বিকাশের স্তরগুলো পাওয়া যায়। তাদের কথানুযায়ী ধর্মের উপকথা থেকে মূল বক্তব্য নেয়া প্রয়োজনীয় বলে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এমন কোন আজগুবী ওয়েব সাইট থেকে গল্প নেবো যারা এই গল্পগুলোকে সত্যি বলে প্রমান করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। কোন নিরশ্বরবাদী কিংবা স্বাধীন চিন্তা ভাবনার ওয়েব সাইট থেকে যদি তথ্য সংগ্রহ করি তাহলে হয়তো তাদের তথ্যে লেখায় আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনার ছাপ পড়ে যেতে পারে। আর যে ওয়েব সাইট গুলো বিশ্বাস করে যে এই গল্প গুলো ভবিষ্যতের কোন একটি বিরাট ইঙ্গিত বহন করছে তারা অনেক রঙ চঙ দিয়ে সেই গুলোকে বিস্তারিত ভাবে পরিবেশন করেছে।
ইহুদী-খ্রীষ্টানদের মিথ দিয়েই শুরু করি। বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন যাকে এই সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হবে তার মতবাদের সাথে প্রথমেই যাদের মতবাদের সরাসরি দ্বন্দ্ব - তারা হলেন মূসা- খ্রীষ্টের অনুসারীরা। বাইবেলের সৃষ্টি তত্বের জেনেসিস অধ্যায়টি মনোযোগ দিয়ে পড়লে এটি খুব সহজেই বোঝা যায় -
শুরুতেই স্রষ্টা প্রথমে স্বর্গ তৈরী করেছেন আর পৃথিবী। পৃথিবী তখন ছিল আকারহীন এবং অকার্যকর একটা জায়গা। এর মুখায়ব ছিল অন্ধকারে ঢাকা। স্রষ্টার চিন্তা তখন পানির দিকে ঘুরল। স্রষ্টা তখন বললেন, আলো হোক, জগত আলোয় ভরে উঠল। স্রষ্টা আলো দেখে মুগ্ধ হলেন, তিনি অতঃপর আলোকে অন্ধকার থেকে আলাদা করলেন। আলোকে স্রষ্টা নাম দিলেন দিবা আর অন্ধকারকে নাম দিলেন রাত্রি। আর সন্ধ্যা এবং সকাল হলো দিনের প্রথম সূচনা। তারপর তিনি বললেন সমুদ্রের ঠিক মাঝখানে একটি মহাকাশ তৈরী হোক, এবং এরপর পানি পানি থেকে পৃথক হোক। এরপর তিনি মহাকাশ তৈরী করেন, তারপর তিনি মহাকাশের উপরের পানি থেকে নীচের পানি আলাদা করেন। এবং এভাবেই এই জগতের সৃষ্টি হয়েছে।
অ্যাপাচি রূপকথার সাথে এই রূপকথার গল্পের পার্থক্য কতো :
শুরুতে কিছুই ছিল না, না পৃথিবী, না আকাশ, না চাদ, না সূর্য, শুধুই অন্ধকার ছিল চারিধারে। হঠাৎ করে অন্ধকার থেকে একটি হালকা গোলাকার সমতল একটা চাকতি বেরিয়ে আসল, যার এক পাশ হলুদ আর অন্যপাশ সাদা, মধ্যকাশে ঝুলন্ত অবস্থায় এটিকে দেখা গেলো। সেই পাতলা গোলাকার চাকতির মধ্যে একজন শুভ্র সফেত পোষাক পড়া দাড়িওয়ালা স্রষ্টা বসে আছেন । যেনো এইমাত্র তিনি লম্বা ঘুম থেকে দুইহাতে চোখ মুখ কচলে উঠে বসলেন।
যখন তিনি অসীম অন্ধকারের দিকে তাকালেন, উপড়ে আলো জ্বলে উঠল। তিনি নীচের দিকে তাকালেন সেখানেও আলোর সমুদ্র তৈরী হলো। পূর্ব দিকে তিনি অত্যন্ত দ্রুত উজ্জল হলুদাভ প্রত্যুষ তৈরী করলেন। পশ্চিম দিকের চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে দিলেন অনেক রঙের আনাগোনা। নানা রঙের মেঘও ছিল অবশ্য।
আর কারা এসব রুপকথায় বিশ্বাস করে বলে আপনি ভাবছেন :
লক্ষ্য লক্ষ্য অগনিত বছর ধরে যে অন্ধকার ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যখন স্বর্গ - মত্য কিছুই ছিল না, শুধু ছিল সীমাহীন স্বর্গীয় বিধি বিধান। তখন দিন আর রাত ছিল না, সূর্য বা চাদ ছিল না। যেনো স্রষ্টা সীমাহীন এক অতল নিদ্রায় তলিয়ে ছিলেন। সৃষ্টির কোন সংজ্ঞা ছিল না, কোন বানী ছিল না, আলো - বাতাস কিছুই ছিল না। জন্ম, মৃত্যু বা পরকালের জীবনের কোন অস্তিত্ব ছিল না। কোন মহাদেশ, কোন অঞ্চল, কোন বহতা নদী বা সাত সমুদ্রের সীমারেখা ছিল না। ইহকাল - পরকাল, স্বর্গ - মর্ত্য, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সময়ের কোন কিছুরই কোন অস্তিত্ব ছিল না। জন্ম - মৃত্যু তখন আসেওনি, ফিরেও যায় নি।
(এটা শিখ সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে নেওয়া হয়েছে)

(চলবে)
তানবীরা তালুকদার
৩০. ০৫. ০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×