আমি কখনোই জীবনে খুব বেশি বড়লোক হতে চাইনি। কখনো চাইনি রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা সবচেয়ে দামী গাড়িটা আমার হোক। দেদারসে মদ, মেয়েলোক বাঁহাতে অভিজাত গেলাসে করে এক চুমুকে খেয়ে ফেলতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম ছোট্ট লাল রঙের একটা মিষ্টি ঘর। যেখানে তুমি থাকবে, আমি থাকবো, ভালোবাসা থাকবে। আর থাকবে মস্ত বড় প্রভাবশালী একটা জানালা। বর্ষার সময় লক্ষ লক্ষ সংখ্যায় জলকণা ঢুকবে, পূর্ণিমায় সে জানালা দিয়ে ঢুকবে জ্যোৎস্না ফুল।
আমি যত্ন করে সেই জ্যোৎস্না ফুল তোমার মেঘরঙা চুলে গুঁজে দেবো। তুমি বিরক্ত হবার ভান করবে। মনে মনে হাসবে। আমি ঠিকই সেটা দেখতে পাবো। আমি তোমার সব দেখতে পাই। আমি যে তোমায় ভালোবাসি। মনে আছে তোমার, এক রক্তধোয়া বিকেলে তুমি আর আমি দুজনে মিলে তেলে ডোবানো সুদর্শন সিঙ্গারা খাচ্ছিলাম।
আমি ত্রিকোণাকৃতি সুদর্শন খাবার জিনিসটাকে ভুলে তোমাকে দেখায় মেতেছিলাম। বিড়ালের মতো নাকমুখ ডুবিয়ে কিভাবে তুমি খাও! জীবন তখন সুন্দর ছিল। আজ বিকেল হলে অবধারিতভাবে তাই আমার মন খারাপ হয়ে যায়। এখনো বিকেল হলে আমি ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তোমার কথা ভাবি। ভাবতে ভাবতে মনে এবং প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামাবার চেষ্টা করি।
জানি তুমি প্রতিদিন যত্ন নিয়ে স্নান করতে। তবু আমার কাছে এলেই তোমার গা থেকে একটা টকটক গন্ধ আসতো। তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করতে, কি ব্যাপার, কথার মাঝে তুমি এভাবে হুট করে চুপ হয়ে গেলে যে! আমি কিছু না বলে আমার হলুদ দাঁত দেখাতাম। আজ বলি, কারণটা আর কিছুই ছিলোনা। ছিলো তোমার গা থেকে আসা প্রেমময়, অপার্থিব, হৃদয় ফালি ফালি করে কাটা একপ্রকার গন্ধ।
আমি ইদানিং মানুষের মতো হাঁটার ভান করে রাস্তা দিতে যাবার সময় কুকুরক্ষিপ্র গতিতে কি যেন কিসের গন্ধ খুঁজে বেড়াই। ঢাকা নগরীতে যে কয়টা ডাস্টবিন আছে, পৃথিবীর আর কোন দেশে বোধহয় তা নেই। তাই অতিরিক্ত ঘ্রাণ সচেতন হতে গিয়ে আমি পঁচাগলা বস্তু ও তার ঘ্রাণ বিশারদ হয়ে উঠেছি। কিন্তু এমন তো হবার কথা ছিলোনা মেয়ে। তুমি শুধু আমার ছিলে, তোমার গন্ধটুকু ছিলো আমার অধিকার।
প্রতিদিন না হোক, অন্তত একটা বিকেলের জন্য হলেও মেয়ে তুমি চোখ মেলে রাস্তার ধারে আমায় খুঁজে দেখো। ভীষণ নোংরা, আধছেঁড়া জিন্স আর তোমার দেয়া লাল ভালোবাসা টিশার্টে একটা ছেলে গভীর মনযোগে রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে হারিয়ে যাওয়া তার মানবী আকাশলীনাকে খুঁজছে।
তুমি দেখতে পাবে, সেই সাথে সে খুঁজছে তার নিজ হৃদয়টাকেও! বেশ কবছর আগে খুব বিশ্বাস করে এই প্রাণচঞ্চল হৃদয়খানি হতভাগাটা জ্যোৎস্নার ফুল কুড়োবার খেলার সাথী নাক বোঁচা এক মায়াবতীকে দিয়ে দিয়েছিল। একদিন ক্ষতবিক্ষত হবে জেনেও চোখ বড় ছেলেটা হাসিহাসি মুখ করে সেটা গল্পগন্ধা মায়াবতীটাকে দিয়ে দিয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০