
সুনসান নির্জন রাতে সবাই যখন ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করছে রিয়াদ খেয়াল করলো লায়লা তখনো জেগে আছে। প্রবেশদ্বারে মিটমিট করে জ্বলছে সবুজবাতি। এটা যেন তার গোপন সাম্রাজ্যে প্রবেশের গ্রীনসিগন্যাল। সবুজসংকেত। সে আগপিছ না ভেবেই তার সাম্রাজ্যে হানা দেয়।
জিজ্ঞেস করে - কেমন আছো লায়লা ?
- আরে রিয়াদ ভাই ! এতো রাতে আপনি !
ষোড়শী লায়লা যেন অষ্টমাশ্চার্য সন্ধান পাওয়ার খুশিতে অথবা অমূল্য সম্পদ হারিয়ে পুনরায় ফিরে পাওয়ার অানন্দে লম্পজম্প শুরু করলো। আসলে এই সুনসান নিস্তব্ধ রাতে সে তার উপস্থিতি এভাবে আশা করেনি।
-হ্যাঁ লায়লা.. ঘুম আসছিল না। দেখি তুমিও জেগে আছো। তাই.....
- ভাল করেছেন রিয়াদ ভাই। খুব ভাল করেছেন। আমারও ঘুম আসছিল না। খুব এলোন লাগছিল।
- তাই !
- হুম। একটু ওয়েট করেন তো। দরজাটা বন্ধ করে দেই...
- কেনো কেনো.. দরজা বন্ধ করবে কেনো ?
- আরে বুঝেন না,বাবা যদি খেয়াল করে এতো রাতে আমি আপনার সাথে....
- ও আচ্ছা আচ্ছা...
৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা দেহের অধিকারী রিয়াদ। শ্যামল বর্ণ। যে কারণে পাড়ার মেয়েরা তার প্রতি একটু বেশিই অনুরক্ত। তাছাড়া এইবছর সে নামকরা এক কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার চান্স পাওয়ায় ভালই একটা ক্রেজিভাব ভর করেছে তার উপর।
- আচ্ছা লায়লা, তোমার পড়াশুনার কী খবর ?
- আরে রিয়াদ ভাই আপনি তো আপাদমস্তকই বোকা। এতো রাতে একটা ছেলে একটা মেয়ের পড়াশুনার খবর নেয় !
রিয়াদ একটু ঘাবড়ে যায়। সে বলে-
তাহলে কিসের খবর নিবো লায়লা ?
- এই নির্জন রাতে মানুষ কিসের খবর নেয় তা জানেন না ! আমার মনের খবর, দেহের খবর !
রিয়াদ উসখুস করে। বুকটা ছপাত ছপাত করে উঠল তার। বুকের মধ্যখানে কেউ যেন গরম তেলে মাছ ভাজি করে খাচ্ছে এখন।
এবার একটু সাহস করে বলেই ফেলল,
- তাহলে দেহের খবরটা বলো শুনি।
- দেহের খবর আর কি বলবো রিয়াদ ভাই। আমাদের পাড়ার গিট্টুবাবু আছে না, সে তো শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর গিট্টটা একটু ঠাইট করে দিয়েন তো আপনি।
- আচ্ছা দিবো নে, দিবো নে.... তবে তোমার সুন্দর দেহের দিকে না তাকাইয়া কেউ পারে বলো !
- তাই ! আপনি কি কখনো তাকাইছেন রিয়াদ ভাই ?
রিয়াদ কোনো উত্তর দেয়না। আসলেই তার দেহের গড়ন চমৎকার। যেন সাগরের উত্তাল তরঙ্গ। কখনো বা কাশবনে বয়ে যাওয়া শিরশির বাতাসের মৃদু ছন্দ।
গভীর-নির্জন রাতের এই আলোচনা আঙুলের মাথা থেকে শিরশির করে হৃদয় বেয়ে মস্তিষ্কে গিয়ে আলোড়ন তুলছে তাদের। রিয়াদের ইচ্ছে হলো - লায়লাকে একটু কাছে পেতে, একটু ছুঁয়ে নিতে। তার বলতে ইচ্ছে করলো, লায়লা, তোমার হাতে একটু হাত রাখি, তোমার চোখে একটু চোখ রাখি...
তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মনের গোপন কথাগুলো প্রকাশ করতে না পারা কী যে কষ্টের, তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে সে। লায়লারও একই হাল। ভোরের বৃষ্টিভেজা গাদাফুলের ন্যায় তার মুখমন্ডল টলটল করছে এখন। যেন স্পর্শেই কপোকাত!
হঠাৎ সবুজবাতি নিভে যায় !
রিয়াদ বুঝতে পারছেনা এভাবে চ্যাট থেকে লায়লার উধাও হওয়ার হেতু কী। তাহলে লায়লার ইন্টারনেট ডাটা কি শেষ হয়ে গেল ! নাকি ইচ্ছে করেই....
কিন্তু অনেক কথা যে বলা হয়নি তার !
বিছানায় চটপট করছে সে। নেশায় বুঁদ হওয়া রিয়াদ ফেসবুক তন্নতন্ন করে খুঁজে ফিরছে আর কোনো লায়লা জেগে আছে কিনা।
না, নেই। মানুষে গিজগিজ করা পৃথিবীতে খুব একা লাগছে তার। খুব একা।
রিয়াদ অজান্তেই অন্তর্জালের ফাঁদে পা বাড়ায়। পুরো বিশ্ব এখন তার হাতের তালুতে। সে খুঁজে বেড়ায় স্বর্ণকেশী অচেনা ললনা। গুগল হয়ে যায় আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ । চাওয়ার আগেই পাওয়া যায় সব। অতঃপর........
২
রিয়াদ হাসপাতালের বিছানায় কুঁকড়াচ্ছে। মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অসীম রায় তাকে নিয়ে স্ট্যাডি করছেন। বিড়বিড় করে বলছেন - আসক্তি ! এ্যডিক্টেড !
মা-বাবাকে পুত্রের এমন বেঁকে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন। কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না তারা। হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন রিয়াদের মা-বাবা। তাদের শৈশবকে খুঁজে ফিরেন তারা। কতো দুরন্তপনায় ভরপুর ছিল সেই শৈশব !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


