somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রম সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া (সূচনা পর্ব -১)

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফ্রম সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া (পর্ব-২)


গ্রামের অবস্থাপন্ন মোড়ল রাকিব মন্ডল সবার কাছে রাকিব মিয়া নামেরই সমধিক পরিচিত। মোড়ল সাহেবের বিষয় আশায় যথেষ্ট। উত্তরাধিকার সূত্রে একশো বিঘার উপর সম্পত্তির মালিক হলেও বহু জমির আল চেনেন না বলে ওনার বেশ গর্ব আছে। পাশাপাশি আছে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের বেশ কয়েকটি পুকুর এবং নানা রকমের ফলের গাছ।জমি-জায়গা বাগান পুকুর সবই লোক দিয়ে দেখাশোনা করেন।কিন্তু কাকে দিচ্ছেন কিভাবে দিচ্ছেন কত পেলেন এই নিয়ে কাউকে কখনো কৈফিয়ৎ তলব করেননি। অলস প্রকৃতির মানুষটি সম্পত্তি নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন।কথায় কথায় বলেন বিষয় আশায় বা সম্পত্তি সবই উপরওয়ালার দান। উনি যখন বুঝবেন তা আবার নিয়েও নেবেন।আমরা হাজার বাঁধা দিলেও তাকে রক্ষা করতে পারবোনা।খামোকা দুশ্চিন্তা করে নিজের সুখ-সমৃদ্ধিকে নষ্ট করা ছাড়া আর আমাদের কিছু করার নেই। তার এই উদার দার্শনিক সুলভ কথাবার্তায় গ্রামবাসীরা অত্যন্ত খুশি হন।গ্রামবাসীদের খুশি খুশি দেখে তিনিও মনে মনে বেশ পুলকিত বোধ করেন।

পরোপকার মোড়ল বাড়ির অন্যতম একটি মস্ত বড় গুণ। পাড়াপড়শি থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন যেকোনো মানুষের আপদ-বিপদে মোড়লরা যথেষ্ট সহানুভূতিশীল এবং আন্তরিক। যতটা সম্ভব তারা মানুষের পাশে দাঁড়ান। গ্রামবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো-না-কোনো উপায়ে মোড়লবাড়ি দ্বারা উপকৃত। উল্লেখ্য গ্রামবাসীদের প্রতি মোড়ল বাড়ির এই সহানুভূতি বা ভালোবাসা অবশ্য একদিনের নয়। পরোপকার বিষয়টা এ বাড়ির একটা পারিবারিক ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে,যেটা বাপ-দাদার আমল থেকেই চলে আসছে।পারিবারিক মূল্যবোধে রাকিব মিয়াও তার ব্যতিক্রম নন; অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষটি বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পূর্বপুরুষের থেকেও ঊর্ধ্বে।গ্রামবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষটি প্রয়োজন পড়লেই তিনি তার সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেন। স্বাভাবিকভাবে গ্রামবাসীরাও মোড়ল সাহেবের প্রতি অত্যধিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাবোধ জ্ঞাপন করেন।যে কারণে এবাড়ির কোনরকম ক্ষয়-ক্ষতি তারা যেন কল্পনাও করতে পারেন না।মোড়লবাড়ির আপদে-বিপদে তারাও নিজের মতো করে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, আর পাঁচটা গ্রামের মত এগ্রামেও মাঝে মাঝে একে অপরের মধ্যে টুকটাক ঝগড়াঝাঁটি ঠোকাঠুকি লেগেই থাকে। তবে এসব ক্ষেত্রে সাহায্যের দরকার হলে উভয়পক্ষ মোড়ল সাহেবের শরণাপন্ন হন। রাকিব মিয়া অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে নিরপেক্ষতা ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।যদিও সব যে সময় উভয় পক্ষকে খুশি করতে পারেন তা নয়, তবুও মোড়ল সাহেবের কথার অমান্য করার নজির একেবারেই নেই। যেকারণে কোন অভাব অভিযোগকে কেন্দ্র করে এ গ্রামে কেউ কখনো পুলিশে অভিযোগ করেনি বা অভিযোগের সারবত্তা নিয়ে পুলিশ ঢুকেছে- এমন দৃশ্যও গ্রামবাসীরা কেউ কখনো প্রত্যক্ষ করেছেন বলে মনে করতে পারেন না।

স্ত্রী সাহিদা বিবি, একমাত্র পুত্র হারুন এবং চার কন্যা রত্না রেখা রুবি ও রানুকে নিয়ে রাকিব মিয়ার সুখের সংসার। অত্যন্ত পর্দানশীন পরিবার। গ্রামেরই বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পর বড় তিন কন্যাকে আর স্কুল মুখো হতে দেননি। তবে ইসলামী শিক্ষা দিতে মেয়েদেরকে তিনি কসুর করেননি। সম্প্রতি জ্যেষ্ঠা কন্যা রত্নাকে সম্বন্ধ করে বিয়ে দিয়েছেন মহকুমা শহরের লাগোয়া সমুদ্রগড় গ্রামের সম্পন্ন ব্যবসায়ী পাত্রের সঙ্গে। এলাকার নামি পরিবার বলেই পাত্রের পরিবারেরও সুখ্যাতি আছে। সাধারণত পাত্রীকে সম্মান করতে পাত্রপক্ষ থেকে তাদেরকে আলোচনা সাপেক্ষ যৌতুক দেওয়ার চল থাকলেও মোড়লরা এসব রীতিনীতিকে সামাজিক ব্যাধি বলেই মনে করেন। তাদের ধারণা এটা পাত্রীর সম্মান বা অসম্মানের বিষয় নয়, এটা আসলেই পাত্রীর বাবার অর্থ আদায় করার একটা কৌশল মাত্র।যেটা সমাজে দিনের পর দিন চলে আসছে। যদিও এহেন সামাজিক ব্যাধি থেকে মোড়ল পরিবার সম্পূর্ণ মুক্ত। তবে তারা এরকম যৌতুকে বিশ্বাস না করলেও গ্রামের অন্যান্যদের বিষয়ে অবশ্য মাথা ঘামাতে বিশেষ রাজি নন। পাত্রী সম্পাদনকালে গ্রামের গরিব বাবার হাতে যদি দুটো পয়সা আসে তাহলে তারা বিষয়টিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন। তাই আশেপাশের পরিবারগুলি যখন মেয়ে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বিয়েতে যৌতুক পাওয়ার প্রত্যাশা করেন তখন রাকিব মিয়া পরিবারের ধারা অক্ষুণ্ন রেখে মেয়েকে বিনা যৌতুকে পাত্রস্থ করেছেন। শুধু পাত্রস্থ করা নয়, উল্টে কন্যা সম্প্রদানেও যথাসাধ্য গয়নাগাটি দিতে কার্পণ্য করেননি। এহেন রাকিব মিয়া বিয়ের পরপরই নতুন জামাই-মেয়েকে ফিরিয়ে আনার আমন্ত্রণ দিতে গিয়ে পড়লেন বেশ সংকটে।

গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতে ঘরের ভিতরে বা বারান্দায় নিদেনপক্ষে একটি, কারো কারো আবার একাধিক বাঁশের চৌকি আছে। চৌকিগুলি যেখানে তৈরি করা হয় পরে আর স্থানান্তরিত করা যায় না। চারটি বা ছয়টি বাঁশের পায়া মাটি খুঁড়ে বসিয়ে তার উপরে আবার চারদিকে চারটি ভাড়া' খাঁটিয়ে বাঁশগুলোকে আধাআধি করে কেটে পেরেক দিয়া আটকিয়ে চৌকি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পরের দিকে গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।নগরজীবনের বিলাসিতা গ্রামকে ক্রমশ গ্রাস করে।গ্রামের জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে শহরের মতো আয়েসি ও ব্যয়বহুল।বাড়িগুলো থেকে ক্রমশ বিলুপ্ত হতে থাকে বাঁশের মাচাগুলো। আর তার স্থান দখল করে কোথাও কাঠের নির্মিত চৌকি বা কাঠের নির্মিত সুসজ্জিত খাট। আর এই বাঁশের চৌকিগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পরিণত হয় উইপোকার খাবারে। কখনো বা পাড়ার মোড়ে মোড়ে নতুন নাম মাচা নামে পরিচিত হয়ে পরিণত হয় যুব সমাজের আড্ডার ক্ষেত্রে।

রাকিব মিয়া মেয়ে জামাই ফিরিয়ে আনতে নেমন্তন্ন করতে গেছিলেন সমুদ্রগড় গ্রামে। ছেলের বাড়ির পক্ষ থেকে ওনার প্রতি আদর যত্নের কোনো খামতি ছিল না। নতুন হলেও মাত্র কদিনেই রত্নাকে এই বাড়িতে হাসিমুখে ঘুরতে ফিরতে দেখে উনি খুব আনন্দিত হলেন। প্রাথমিক আলাপচারিতায় ছেলের বাবা-মাকে ইতিপূর্বে বলে রেখেছেন দুদিন পরেই মেয়ে জমাকে নিতে লোক পাঠাবেন। ওনারা অবশ্য তখনই মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়েছিলেন। নতুন বেয়াই-বেয়াইনকে ওনার খুব সরল সাদাসিদে বলে মনে হয়েছে। ওনাদের আন্তরিকতায় উনিও খুব খুশি হলেন। সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত গল্প গুজব হলো। তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় এবাড়ির সদস্য সংখ্যা তুলনায় বেশি। বাড়িতে সারাক্ষণই লোকজনের আসা যাওয়া লেগেই আছে।আর তাদের কথাবার্তায় গোটা বাড়িটা যেন সারাদিনই গমগম করছে। রাতে খাওয়ার পরে শাশুড়িমা বৌমাকে বাবাকে শোয়ার ব্যবস্থা করতে বলে গেলেন। রত্না বাবাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে গেল নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানে বাবা -মেয়ের আরও একপ্রস্থ গল্পগুজব হলো। এতক্ষণ বিষয়টি খেয়াল না করলেও এবার রাকিব মিয়ার চোখে পড়লো। একটু উঁচু করে শয্যাটি তৈরি করা হলেও ওনার বাড়ির চৌকির মত কোন শব্দ নেই। বাঁশেরচৌকিতে বসলে যে শব্দের সঙ্গে উনি পরিচিত এখানে তা অনুপস্থিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বাঁশের চৌকিগুলি থেকে সব সময় একটা ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ হয়। উনি হঠাৎ চৌকি থেকে নেমে ভালো করে প্রত্যক্ষ করলেন, এই চৌকিটি ওনার বাড়ির মত বাঁশের নয়, কাঠের তৈরি এবং অত্যন্ত সুদৃশ্য। রত্নাও বুঝতে পারলো এ বাড়ির বৈসাদৃশ্য চৌকির প্রতি তার বাবার কৌতুহল হওয়াটা স্বাভাবিক। সেও হাসি হাসি মুখে ফ্যালফ্যাল করে বাবার দিকে চেয়ে থাকল। আর এমন একটা অভিনব জিনিস মেয়ের বাড়িতে দেখতে পেয়ে খুশি বাবাও। সন্তানের সুখ যেকোনো বাবা-মায়ের লক্ষ্য। আর সেই সুখ-সমৃদ্ধি যদি কোন ভাবেই নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে তাহলে বাবা-মায়ের কাছে তা পরম সৌভাগ্যের বৈকি। এক্ষণে রত্নার বাড়িতে মোটা কাঠের চৌকি দেখে তার আগামীর সুখ-সমৃদ্ধি উপলব্ধি করে রাকিব মিয়ার চোখের আনন্দাশ্রু বাঁধ মানলো না।কিন্তু তিনি তা লুকানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না। মনে মনে উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দিলেন কপাল গুনে মেয়েকে এমন জায়গায় পাত্রস্থ করতে পেরেছেন বলে।

রাকিব মিয়া আবেগকে চেপে রাখতে পারলেন না। চৌকির উপর বসে গদগদ কন্ঠে রত্নাকে জানালেন,
-মারে, আমি যে খুব লজ্জায় পড়ে গেছি।
-কেন আব্বু কি হয়েছে তোমার?
-কি আর হবে? তোদের বাড়ির এই এত সুন্দর চৌকি আমি আমার জন্মেও কোনদিন দেখিনি। আজ তার উপরে ঘুমাতে চলেছি। সাত জন্মে কপাল না করলে মেয়ের বাড়ির এ সুখ কি কেউ দেখে যেতে পারে? কিন্তু সমস্যা যে অন্য জায়গায় মা...
-কি সমস্যা আব্বু?
- বড় মুখ করে নিতে এলাম কিন্তু এখন জামাইকে বাঁশের চৌকিতে কি করে শুতে দেই বল দেখি?
-হ্যাঁ আব্বু আমারও এটা নিয়ে খুব চিন্তা হয়।
-কি চিন্তা রে মা?
-আব্বু জামাই সারাদিন কাজ করলেও ঘুমের সময় খুব খুঁতখুঁতে। ও বলে শোয়ার জায়গাটা খুব পরিচ্ছন্ন নিরিবিলি এবং আরামের না হলে নাকি ঘুম আসেনা।
-বলিস কি মা? আমি যে খুব সমস্যায় পড়ে গেলাম তাহলে।অমন বনেদি পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষা করা যে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
-আব্বু আমি একটা কথা বলবো?
-একটা কথা কেন মা, যতটা পারিস বল। এখন আমার একটা পরামর্শ দে, কি করে আমি জামাইয়ের সম্মান রক্ষা করতে পারবো?
-তুমি বাড়িতে গিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা চৌকির ব্যবস্থা করো।
- কিন্তু হাতে তো সময় নেই, মাত্র দু'দিন। এই সময়ে কি করে সম্ভব?

সে রাতে রাকিব মিয়ার আর ভালো ঘুম হয়নি। আর ঘুম হবেই বা কেমন করে, মেয়ে যদি বাবাকে জানায় জামাই জন্ম থেকে কাঠের চৌকির নরম বিছানায় শুয়ে বড় হয়ে এসেছে ;কাজেই অনতিবিলম্বে এমন বিছানার ব্যবস্থা করতে। তাহলে যেকোনো বাবারই তা মাথাব্যথার কারণ হতে বাধ্য। বিষয়টি যতই ভাবছেন ততই রাকিব মিয়ার দুর্ভাবনায় পরিণত হচ্ছে। ক্রমশ মাথার মধ্যে যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আসন্ন সমস্যা থেকে সমাধান কিভাবে সম্ভব এ কথা ভেবে ভেবে রত্নার বাড়িতে সৌজন্যে সূচক বাকি সময়টুকু থাকতে বাধ্য হওয়াতে ভিতরে ভিতরে তিনি যেন অস্থির হয়ে উঠেছেন।


অবশেষে মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। রত্নার বিয়েতে যারা ত্রিপল বা সামিয়ানা ভাড়া দিয়েছিল তাদের কাছে গিয়ে খোঁজ করলে নিশ্চয়ই একটা সুরাহা হবে। হঠাৎ এক টুকরো আশার ঝলক দেখতে পেয়ে রাকিব মিয়ার মনের মধ্যে এক ঝলক ফাগুন হাওয়া বয়ে গেল। প্রফুল্ল চিত্তে কিছুটা দুলে উঠলেন। সকালে বিদায় নেওয়ার সময় যতই এগিয়ে আসতে লাগল ততই তিনি অস্থির হয়ে উঠেছেন। অবশেষে অন্তিম মুহূর্তে সকলে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকল মূল ফটকের বাইরে। রত্না দু-এক পা এগিয়ে এসে বাবার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। কান্নায় ভেঙে পড়ল।বাবাও মেয়েকে বুকে আগলে নিলেন পরম আদরে।
-চলে যাওয়ার সময় এমন করে কাঁদতে নেইরে মা, বোকা মেয়ে কোথাকার, বলে সস্নেহে কপালে আরেকবার চুমু দিলেন।
রত্না অত লোকের সামনে এভাবে তার কান্না করা যে ঠিক হয়নি তা বুঝতে পেরে লজ্জিত হলো।
শাশুড়ি মা-ই পরিস্থিতি সামলে নিলেন,
-বাপ সোহাগী মেয়ে। গতকাল থেকে বাপকে পেয়ে খুব আনন্দে ছিল। এখন বাপকে মন থেকে ছাড়তে চাইছে না তাই কেঁদে অস্থির হয়ে পড়েছে।
রাকিব মিয়া অত্যন্ত খুশি হলেন,
- বেয়াইন সাহেবা একদম মনের কথা বলেছেন। এই হলো সত্যিকারের মায়ের মন। আপনি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। রত্না এখন থেকে এক মা-বাবাকে মিস করলেও আরেক মা-বাবাকে ঠিক পেয়ে গেছে। এ আমাদের পরম সৌভাগ্যের।যাক আপনার মেয়ে আপনি সামলান,বলেই হাসতে হাসতে রাকিব মিয়া সাইকেলে চেপে বসলেন।

রত্নার বাড়ি থেকে বার হয়ে রাকিব মিয়ার শরীরের উত্তেজনা অনেক বেড়ে গেল। বয়সের কথা ভুলে গিয়ে জোরে আরো জোরে প্যাডেলে চাপ দিতে লাগলেন। সাইকেল ছুটতে লাগলো দ্রুত গতিতে। প্যাটেলের সঙ্গে তাল রেখে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লো শরীরের হার্টবিট। কিছুটা পথ গিয়ে অসুস্থ অনুভব করলেন। রীতিমতো শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল। সাইকেল থেকে নেমে একটা গাছ তলায় বসে পড়লেন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার চড়লেন সাইকেলে। নিজেই উপলব্ধি করলেন, নাহ এভাবে দ্রুত সাইকেল চালানো একেবারেই ঠিক হয়নি। বাকি রাস্তাটুকু স্বাভাবিক গতিতে সাইকেল চালিয়ে অবশেষে একসময় বড় রাস্তা ফেলে নিজের গ্রাম মাখালগাছার পথ ধরলেন। মোড়লরা গ্রামের বনেদি পরিবার। বাড়ির চারিদিকে উঁচু করে মাটির পাঁচিল দেওয়া। পাঁচিলের উপরে দুচাল বিশিষ্ট আড়াই আড়াই পাঁচ ফুটের খড়ের ছাউনি। মূল ফটকে একটি বাঁশের দরজা। কারণ ছাড়া দরজাটি সারা দিন বন্ধই থাকে। দরজার কাছে গিয়ে রাকিব মিয়া বার কয়েক ধাক্কা দিয়ে,
-হাম্মা হাম্মা, বলে ডাকতে লাগলেন।
রাকিব মিয়ার একমাত্র পুত্র হারুন। স্ত্রীকে তিনি নাম না ধরে হারুনের মা বলেই ডাকেন।খুব টেনশনে পড়লে রাকিব মিয়া স্ত্রীকে আর হারুনের মা বলতে না পেরে হাম্মা হাম্মা বলেই ডাকেন। সাহিদা বিবি স্বামীর এহেনো ডাকের সঙ্গে পরিচিত। তিনি বুঝতে পারলেন হারুনের বাপ মেয়ের বাড়িতে বা পথে কোথাও একটা সমস্যায় পড়েছেন। তিনি ছোট মেয়ে রুনাকে পাঠালেন ফটকটি খুলে দিতে। রুনা দরজা খুলতেই দেখে তাদের আব্বু রেগে অস্থির। ভয় পেয়ে রুনা এক ছুটে চলে আসে ঘরের ভিতরে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কিছু টাইপো থাকতে পারে পরে সময় নিয়ে ঠিক করা হবে।


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:০৮
৩৪টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×