বৃষ্টিটা আসার আর সময় পেলনা। গাড়ির জানালার কাঁচটা তুলতে তুলতে ভাবে নিমা। মগবাজারের মোড়ে বসে অস্থির লাগে। এই সিগন্যালটা ছাড়তে এত দেরি করে!মোবাইল ফোনটা বেজে উঠতে রিসিভ করে কানে ঠেকায়।
-হ্যালো!
-কোথায় তুমি?
-এইতো মগবাজার।
-এখনো মগবাজার!ওখানে কি করতে গেছ?
-পাপিয়া কে নামাতে হল তাই।একটু দেরি হয়ে গেছ।স্যরি।
-আমি তো তোমার ভার্সিটির এখানে।
-পৌঁছে গেছ? একটু ওয়েট কর প্লিজ।আমার আসতে যতক্ষণ লাগে।বৃষ্টিতে ভিজ না আবার।
-অলরেডি ভিজে গেছি।
- কী যে করনা!ভিতরে গিয়ে দাঁড়াও প্লিজ।
-তুমি তাড়াতাড়ি আস।কতদূর?
-এইতো। সিগন্যাল ছাড়লো।
-মাত্র!!
-স্যরি।
-ধুর...লোকজন এর মাঝখানে এভাবে শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকা যায় নাকি?
-শুধু শুধু কই?তুমি তো আমার সাথে কথা বলছ।
-হুঁ।
-এইতো আর একটু পরেই চল আসব।এসে কথা বলি?
-আচ্ছা।
বাইরে তাকিয়ে মন খারাপ হয়ে যায় নিমার। ওদের আজ প্রথম দেখা। আজই দেরি হতে হবে?এতদিন ছবি দেখেছে, কথা বলেছে, সরাসরিও দেখেছে ওয়েব ক্যামে। আজ সামনা সামনি দেখা হবে।নিমা জানেনা কেন মনটা আজ একটু চঞ্চল ওর।
পাঁচমিনিটও যায়না। আবার ফোন।
-হ্যালো।
-কতদূর আসলে?
-এইতো আর বেশিক্ষণ লাগবে না।তুমি ভিজছ না তো?
-জানিনা।মেজাজটা খারাপ হচ্ছে।
-আসছি তো বাবা।
-কতক্ষণ আর?
-বেশি হলে ১০ মিনিট।
-আচ্ছা।
-কথা বল ততক্ষণ আমার সাথে?
-না থাক। আস।
নিমা ফোন রেখে নিজের মনেই হেসে ফেলে। কী যে অস্থির! পাগল! ওরা দুইজনই অপেক্ষা করেছে এই দিনটার জন্য। দউইজনই দুইজনকে চেনে, তবু নিমা জিঙ্গেস করেছিল , 'কি রং পরব?' শ্রাবণ উত্তর দিয়েছিল,
-' তোমার যা পছন্দ।'
-আমার পছন্দ তো সাদা।
-ওকে। মেক ইট হোয়াইট। সাদা পরী।
আবার ফোন...............................
-হ্যালো।
-কই তুমি?১০ মিনিট হয়ে গেল তো!
-এই যে শেষ সিগন্যাল পার হচ্ছি।আর পাঁচ মিনিট। স্যরি।
-শোন আমি বরং চলে যাই।
-কেন??? আমি চলে আসছি তো বাবা।
-আমি যাই।আরেকদিন নাহয় দেখা হবে।এই রিকশা।
-কি অদ্ভুত!! আমি মাত্র রোডে ঢুকলাম।
-দেখিনা তো।
-দুইটা মিনিট আর ওয়েট করতে পারছনা?
-আমার খুব আনইজি লাগছিল।
-কি আশ্চর্য্য! আমি কি ইচ্ছে করে দেরি করেছি?
-তোমার গাড়ির মডেল কি বলতো?
-মানে? কেন?
-বল না?
-আমি জানিনা এইসব।কিছু একটা হবে আরকি। তুমি কি সত্যি চলে যাচ্ছ?আমি চলে আসছি।
-তোমার গাড়ি কি সাদা?
-হুঁ।কেন?
-আমি মাত্র তোমাকে পাস্ করলাম রিকশায়।
-মানে? চলে যাচ্ছ? আর কিভাবে বুঝলে যে আমাকে পাস্ করেছ?গাড়ির কাঁচ তো বৃষ্টিতে ঝাপসা।
-তুমি গাড়ির বাম দিকে বসে আছ না?
-শ্রাবণ! কোথায় তুমি?
-চলে আসছি অনেক দূর।
-ব্যাক করো।এখনি।আমি পৌঁছে গেছি।গাড়ী থেকে নামছি। খবরদার যদি গেছ!!
- আমি আসতে পারবনা।মোড়ে দাঁড়াচ্ছি।তুমি আস।দেরী করে আসার শাস্তি।
-আচ্ছা আসছি।
মোড়ে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখেনা নিমা। বৃষ্টিটা একটু কমে আবার টিপ টিপ করে শুরু হচ্ছে।এবার নিমার ফোন করার পালা।
-হ্যালো।
- কি? কোথায় তুমি?
-চলে আসছ নাকি?
-মানে কি? তুমি কোথায়?
- এইতো দোকানে সিগারেট কিনতে আসছিলাম।
-আমি দাঁড়িয়ে ভিজছি।
-দোকানের দিকে আসলেই তো হয়।
-এখন তো শোনার পর হাঁটা শুরু করলাম। না জানলে কোথায় আসব?
-ইস্ । আমি এখনো তোমাকে দেখতে পাচ্ছিনা।কোনদিকে আসছ?
-আমি দেখতে পাচ্ছি।
নিমা ফোন কটে দেয়।রাস্তার বিপরীত প্রান্ত থেকে ওর দিকে হেঁটে আসছে শ্রাবণ।এখন শ্রাবনও দেখেছে।হাসছে ওর দিকে চেয়ে।নিমার ইচ্ছে হয় ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে।ইচ্ছেটা চেপে সেও হাসে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



