somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গলফ খেলাটি বুঝতে চান? গলফের নিয়ম কানুনঃ

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্বোচ্চ উচ্চতায় দেশের পতাকা উত্তোলনের প্রত্যয় নিয়ে দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান এখন অস্ট্রেলিয়ায়। আজ থেকে রয়্যাল মেলবোর্ন গলফ ক্লাবে শুরু হচ্ছে গলফ বিশ্বকাপ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো গলফার অংশ নিচ্ছেন তাতে।
১৯৫৩ সালে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ গলফে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ২৪ বারের চ্যাম্পিয়ন এবং নয়বারের রানার-আপ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন এবং চারবারের রানার-আপ। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে গলফ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য।
সিদ্দিকুর রহমান প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ আসরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অনন্য ইতিহাস গড়লেন। মাত্রই কদিন আগে সিদ্দিকুর জিতেছেন হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন। সিদ্দিকুরের কারণেই আমাদের প্রায় অনেকেরই অচেনা খেলা গলফটি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নেওয়ার সময় এসে গেছে। আসুন, সংক্ষেপে বুঝে নিই গলফ খেলাটি।
আমজনতার মধ্যে একটা ধারণা আছে, গলফ কোটিপতিদের খেলা। আসলেও অনেকটা যেন তা-ই। প্রধানত ইংরেজিভাষী ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেই গলফ জনপ্রিয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগ্রসরমাণ দেশ যেমন—চীন কিংবা ভারতেও খেলাটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
পেশাদার গলফ প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে—ম্যচ প্লে ও স্ট্রোক প্লে। এ ছাড়া বুগি প্রতিযোগিতা, স্কিন গেম, নয়-পয়েন্ট, ফোরবল, বেস্টবল ইত্যাদি নামে আরও কিছু উপ-আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক গলফও প্রচলিত।
যদিও বর্তমান বিশ্বে গলফ আক্ষরিক অর্থেই ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ সবার খেলা, এর পরও গলফ সম্পর্কে একটা বেশ চালু মিথ আছে। ইংরেজি GOLF শব্দটি Gentlemen Only, Ladies Forbidden-এরই নাকি একটি অদ্যাক্ষর মিলিয়ে তৈরি। অবশ্য নারী-পুরুষের সমতায় বিশ্বাসীরা জেনে খুশি হবেন, এই মিথের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। গলফের উত্পত্তির ইতিহাস সম্পর্কে নেদারল্যান্ড, চীন, পারস্য, রোম প্রতৃতি দেশ নিয়ে নানা মুনির নানা মত থাকলেও আধুনিক গলফ বলতে মূলত ১৫ শতকে স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া গলফকেই বোঝানো হয়ে থাকে।

গলফ খেলায় উপকরণের লম্বা তালিকা থাকলেও প্রধান সরঞ্জাম মূলত দুটি—গলফ ক্লাব ও গলফ বল। অন্যান্য উপকরণের মধ্যে থাকে টি, নিশানদণ্ড, বল মার্কার, গলফ ব্যাগ, ক্লাব কভার। বাধ্যতামূলক নয়, তবে গলফাররা গ্লাভস, ক্যাপ, কেডসও ব্যবহার করে গলফের কেতা অনুসরণ করেন। খেলাটার মধ্যেই যে একটা আভিজাত্যের সুর আছে।

গলফে টি ব্যবহার করা হয় প্রথম শটটি খেলার জন্য বলকে মাটি থেকে একটু উঁচুতে রাখতে। নিশানদণ্ড ব্যবহূত হয় দূর থেকে ‘হোল’ চিহ্নিত করার জন্য। খেলার সময় প্রয়োজনভেদে একজন গলফার বিভিন্ন ধরনের সর্বোচ্চ ১৪টি ক্লাব ব্যবহার করতে পারেন। গলফ ক্লাব সাধারণত কাঠ, লোহা, পুটার এই তিন ধরনের বা এদের সংকর হয়ে থাকে।

‘যে খেলা যতটা অভিজাত, সেটা ততটাই উত্তেজনাহীন এবং খেলার প্রক্রিয়াও সাধারণের জন্য যথেষ্ট দুর্বোধ্য’—সাধারণ এই নীতি গলফের ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য নয়। উত্তেজনা ক্রিকেট-ফুটবলের মতো না হলেও নিয়মনীতিতে গলফ খেলা আর দশটা খেলার চেয়ে বেশ সরল। ‘ক্লাব’-এর আঘাতে বলকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত হোল-এ ফেলাই হচ্ছে গলফের সারসংক্ষেপ। গলফ গুটিকয়েক ব্যাট-বলের খেলার অন্যতম, যেখানে মাঠের কোনো নির্দিষ্ট আয়তন নেই; বরং ১০০ থেকে ২০০ একরের গলফ খেলার মাঠ বা গলফ কোর্সকে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে বল ফেলার নির্দিষ্ট গর্ত বা হোল দিয়ে।

কিছু ব্যতিক্রম বাদে গলফ ১৮ হোলের খেলা। খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয় সব কটি হোল সম্পন্ন করতে নেওয়া সর্বমোট স্ট্রোকের ভিত্তিতে। নির্ধারিত স্ট্রোকের চেয়ে সবচেয়ে কম খেলা স্ট্রোকের ভিত্তিতেই ঠিক করা হয় বিজয়ী।

তাই খেলাটির স্কোরিংও করা হয় প্রতিটি হোলের জন্য নির্ধারিত স্ট্রোক বা ‘পার’-এর সঙ্গে তুলনা করে। ১৮ হোলের জন্য নির্ধারিত সর্বমোট স্ট্রোকের সংখ্যা ৭২। যার মধ্যে চারটি হোল তিন স্ট্রোকের, মোট ১২ স্ট্রোক; দশটি হোল চার স্ট্রোকের, মোট ৪০ স্ট্রোক এবং চারটি হোল পাঁচ স্ট্রোকের, মোট ২০ স্ট্রোক। পারের চেয়ে এক স্ট্রোক কম খেলাকে বলা হয় ‘বার্ডি’। যথাক্রমে দুই, তিন ও চার স্ট্রোক কম খেলার নাম ইগল, অ্যালবাট্রস বা ডাবল ইগল ও কন্ডোর। এই বার্ডি বা ইগলই একজন গলফারের পরম আরাধ্য। যেহেতু গলফ খেলায় কম সংখ্যক স্ট্রোকই একমাত্র বিবেচ্য, তাই একটা বার্ডি বা ইগলের অর্থ হলো পারের চেয়ে -১ বা -২-এ এগিয়ে থাকা এবং জয়ের দিকে অগ্রসর হওয়া। অপরদিকে পারের চেয়ে বেশি স্ট্রোক খেলাকে স্ট্রোকের সংখ্যার ভিত্তিতে যথাক্রমে ‘বুগি’, ডাবল বুগি ও ট্রিপল বুগিতে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

প্রতিবছরই পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিভিন্ন গলফ টুর্নামেন্ট ও চ্যাম্পিয়নশিপ হয়ে থাকে। প্রাইজ মানির হিসাবে প্লেয়ারস চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ার্ল্ড গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ, দুবাই, ইউরোপিয়ান ট্যুর প্রভৃতি প্রতিযোগিতা এগিয়ে থাকলেও ঐতিহ্য ও মর্যাদার দিক থেকে বিশেষ উল্লেখযোগ্য মেজর চ্যাম্পিয়নশিপ বা শুধুই মেজর। মেজরে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়েরাই অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং একজন খেলোয়াড়ের খ্যাতি ও প্রতিপত্তি বহুলাংশে নির্ভর করে মেজরের সংখ্যার ওপর।

প্রতিবছর ‘মাস্টার্স টুর্নামেন্ট’, ‘ইউএস ওপেন’, ‘ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ’ এবং ‘পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপ’ নামে পুরুষদের চারটি মেজর অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্যের ‘ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ’ ছাড়া এ চারটি মেজরের তিনটিই যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত হয়। প্রতিবছর মেয়েদের অনুষ্ঠিত মেজর পাঁচটি। বিখ্যাত খেলোয়াড় ও শিরোপার সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। বিশ্বের প্রায় ৩৫ হাজার গলফ কোর্সের মধ্যে ৫০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত।

সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়, যেদিন এ দেশেও ফুটবলের গোলের সঙ্গে একই কাতারে উচ্চারিত হবে গলফের স্ট্রোক আর হোল কিংবা ক্রিকেটের উইকেট-ছয়-চারের সঙ্গে উচ্চারিত হবে বার্ডি-বুগি-পার শব্দগুলো। সিদ্দিকুর রহমান যে পথ আমাদের দেখালেন, কে জানে সে পথ ধরে এ দেশ থেকেও একদিন উঠে আসবে না টাইগার উডস, জ্যাক নিকলাস, বেন হোগান, আর্নল্ড পালমার, গ্রেগ নরম্যান, কেরি ওয়েবরা!

বিদেশ বিভুঁইয়ে দেশের পতাকা এর আগেও অনেকবার সগৌরবে উড়েছে। অধিকাংশ সময়ই সেই পতাকা বহনের গুরুভার হয়তো বইতে হয়েছে ১১ জনের একটি দলকে। দেশের সেই পতাকার ভার সিদ্দিকুরের একার কাঁধে। একজন শেরপা দিনের পর দিন এভারেস্ট জয় করে চলেন কিন্তু দিন শেষের তারার মেলায় তার দেখা পাওয়া ভার। তখন তিনি নিঃসঙ্গ শেরপা। আমাদের নিঃসঙ্গ শেরপা সিদ্দিকুরের জন্য শুভকামনা। তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি!
লেখাটি নেয়া হয়েছেঃ Click This Link
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×