২০০৩ সাল। সবে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে একটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। প্রথম দিন স্কুলে যাবো, মনে মনে খুব শিহরিত। নতুন প্রাঙ্গন, নতুন সহপাঠি, নতুন শিক্ষক- স্বভাবতই কচি মনে একটু উত্তেজনা বোধ হচ্ছিল। আম্মু এসে নতুন ড্রেস পরিয়ে, পরিপাটি করে সাজিয়ে স্কুলের জন্য তৈরী করে দিলেন। আব্বু এসে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়ার আগে অদ্ভুদ কিছু কথা বললেন, যেগুলো আমার ছোট্ট মনটাতে একটা দাগ ফেলে দিয়েছিল। আব্বু বললেন, 'স্কুলে মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। স্যারদের কথা মনযোগ দিয়ে শুনবে। একদম দুষ্টুমি করবে না।' এতটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। এরপরই আব্বু সাবধান করার ভঙ্গীতে বলতে লাগলেন,"আর চাকমা ছেলেদের সাথে বেশি কথা বলো না। ওদের সাথে কখনই লাগতে যেও না। কিছু বললে চুপ করে শুনে থাকবে, পাল্টা কিছু বলার দরকার নেই। এমনকি, স্যারকেও কিছু বলবে না।"
অনেক অবাক হয়ে বলেছিলাম,"কেন বাবা?" আব্বু করুণ মুখে বলেছিলেন,"নয়তো, ওরা তোমাকে একা পেয়ে মারবে বাবা।" একথা বলেই আব্বু বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। আমাকে ধরে মারবে আর আমি স্যারকেও বলতে পারবো না- এ আমি মানতে পারছিলাম না। তবু অনেক ভয়ও পেয়েছিলাম। পরে বুঝতে পেরেছিলাম আব্বু নিজের ছেলেকে রক্ষা করতেই এরকম কাপুরুষোচিত আচরণ করতে বলেছিলেন। আমি নিশ্চিত, আমাদের প্রত্যেকটি বাঙালি সহপাঠিকে তাদের পিতা-মাতা একই উপদেশ দিয়েছিলেন এবং আজও দিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘটনাটিই আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি বিশেষ করে চাকমাদের প্রতি বাঙালিদের মনোভাব নির্দেশ করে। যদিও জানি সব চাকমাই এমন নয়। কিন্তু কিছু লোকের কারণে ভয়ে এমন ধারণা করতে বাধ্য হয়।
একটা ভয়ার্ত মন নিয়েই ক্লাস করতাম। একবার স্কুলে একটি খেলনা নিয়ে গিয়েছিলাম, লুকিয়েই রেখেছিলাম। কিন্তু কিভাবে যেন এক চাকমা ছেলে সেটা দেখে ফেলে, সে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ওটার দিকে। কিছুক্ষণ পর, ছেলেটি আমার কাছে এসে খেলনাটি চাইল। কিছু না বলেই দিয়ে দিলাম। কোনোভাবে উচ্চারণ করলাম, কেন? ছেলেটি বললো, এটা স্যারের কাছে দিয়ে দেব। আমি পুরো ক্লাসে করুণভাবে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নাহ, ছেলেটি স্যারকে সেই খেলনাটি দেয়নি। দুইদিন পর দেখি, সেই ছেলেটিই আমার খেলনা স্কুলে এনে খেলছে। আমার দিকে চোখ পড়তেই সে খেলনাটি লুকিয়ে ফেলল। সেদিন ছেলেটিকে কিছুই বলতে পারিনি। প্রতিবাদ করতে পারিনি, সাহস করে জোর গলায় দাবি করতে পারিনি, এমনকি স্যারের কাছেও যাইনি। শুধু ছোট্ট মনটা ভেঙ্গে গিয়েছিল, ফুঁফিয়ে কেঁদেছিলাম।
বিস্তারিত দেখুন- Click This Link
২০০৩ সাল। সবে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে একটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। প্রথম দিন স্কুলে যাবো, মনে মনে খুব শিহরিত। নতুন প্রাঙ্গন, নতুন সহপাঠি, নতুন শিক্ষক- স্বভাবতই কচি মনে একটু উত্তেজনা বোধ হচ্ছিল। আম্মু এসে নতুন ড্রেস পরিয়ে, পরিপাটি করে সাজিয়ে স্কুলের জন্য তৈরী করে দিলেন। আব্বু এসে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়ার আগে অদ্ভুদ কিছু কথা বললেন, যেগুলো আমার ছোট্ট মনটাতে একটা দাগ ফেলে দিয়েছিল। আব্বু বললেন, 'স্কুলে মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। স্যারদের কথা মনযোগ দিয়ে শুনবে। একদম দুষ্টুমি করবে না।' এতটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। এরপরই আব্বু সাবধান করার ভঙ্গীতে বলতে লাগলেন,"আর চাকমা ছেলেদের সাথে বেশি কথা বলো না। ওদের সাথে কখনই লাগতে যেও না। কিছু বললে চুপ করে শুনে থাকবে, পাল্টা কিছু বলার দরকার নেই। এমনকি, স্যারকেও কিছু বলবে না।"
অনেক অবাক হয়ে বলেছিলাম,"কেন বাবা?" আব্বু করুণ মুখে বলেছিলেন,"নয়তো, ওরা তোমাকে একা পেয়ে মারবে বাবা।" একথা বলেই আব্বু বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। আমাকে ধরে মারবে আর আমি স্যারকেও বলতে পারবো না- এ আমি মানতে পারছিলাম না। তবু অনেক ভয়ও পেয়েছিলাম। পরে বুঝতে পেরেছিলাম আব্বু নিজের ছেলেকে রক্ষা করতেই এরকম কাপুরুষোচিত আচরণ করতে বলেছিলেন। আমি নিশ্চিত, আমাদের প্রত্যেকটি বাঙালি সহপাঠিকে তাদের পিতা-মাতা একই উপদেশ দিয়েছিলেন এবং আজও দিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘটনাটিই আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি বিশেষ করে চাকমাদের প্রতি বাঙালিদের মনোভাব নির্দেশ করে। যদিও জানি সব চাকমাই এমন নয়। কিন্তু কিছু লোকের কারণে ভয়ে এমন ধারণা করতে বাধ্য হয়।
একটা ভয়ার্ত মন নিয়েই ক্লাস করতাম। একবার স্কুলে একটি খেলনা নিয়ে গিয়েছিলাম, লুকিয়েই রেখেছিলাম। কিন্তু কিভাবে যেন এক চাকমা ছেলে সেটা দেখে ফেলে, সে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ওটার দিকে। কিছুক্ষণ পর, ছেলেটি আমার কাছে এসে খেলনাটি চাইল। কিছু না বলেই দিয়ে দিলাম। কোনোভাবে উচ্চারণ করলাম, কেন? ছেলেটি বললো, এটা স্যারের কাছে দিয়ে দেব। আমি পুরো ক্লাসে করুণভাবে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নাহ, ছেলেটি স্যারকে সেই খেলনাটি দেয়নি। দুইদিন পর দেখি, সেই ছেলেটিই আমার খেলনা স্কুলে এনে খেলছে। আমার দিকে চোখ পড়তেই সে খেলনাটি লুকিয়ে ফেলল। সেদিন ছেলেটিকে কিছুই বলতে পারিনি। প্রতিবাদ করতে পারিনি, সাহস করে জোর গলায় দাবি করতে পারিনি, এমনকি স্যারের কাছেও যাইনি। শুধু ছোট্ট মনটা ভেঙ্গে গিয়েছিল, ফুঁফিয়ে কেঁদেছিলাম।
বিস্তারিত দেখুন- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




