somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার "পিঁপড়াবিদ্যা" দর্শণ .....

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Kim-Ki-Duk এর Pietà (film) দেখার পর মনে হয়েছিলো এমন একটা আজগুবি/অবান্তর গল্প নিয়ে 'কিম' কি ভেবে এই ছবিটা করলেন !!?? আসলে কি আছে এ ছবিতে ?! তার গল্প বলার ঢংটা চেনা ..তবে কাহিনীতে যেন প্রাণ নেই !! মানবিক সম্পর্কের কি অদ্ভূত এক ধাঁধায় তিনি দর্শককে টেনে নিলেন !!

এই ছবির শেষ দৃশ্যটাই পুরো গল্পটা ধারণ করেছে। কিম তার সব ছবিতেই দর্শকদের একটা 'ভিজ্যুয়াল ইমেজ' দেন যাতে করে দর্শকরা তাদের ইচ্ছেমত অন্য এক চিন্তার জগতে হারিয়ে যেতে পারে । তার ছবিগুলো অনেকটা 'অ্যাবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং কিংবা কবিতার' মত .....ব্যাখ্যা আশা করাটা বোকামী তবে দর্শকরা তাদের কল্পনাশক্তি কাজে লাগাবার সুযোগ পান পুরোটাই । অর্থাৎ তার ছবির দর্শকদের কল্পনাপ্রবণ হতে হয় ।

দ্বিধা-দ্বন্দ্ব..কৌতুহল... 'পাজলিং মেটাফোর' এর আঘাতে আপনার চিন্তার ব্যাপ্তি যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে, হুট করে নিজেকে এক ভয়ংকর সুন্দরের মাঝে আবিষ্কার করবেন । কিম এর মুন্সিয়ানা এখানেই । দর্শককে একটা গভীর 'বোধের' ভেতর আটকে ফেলা ।।

"পিঁপড়াবিদ্যা" মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ৫ম চলচ্চিত্র ! ছবি মুক্তির অনেক আগেই পোস্টার নিয়ে সমালোচনা ছিল ( হলিউডের The Silence Of The Lambs এর অনুকরণে । সেটা অন্য প্রসঙ্গ । ) তার ছবিতে কিম এর প্রভাবটা স্পষ্ট বলেই শুরুতে 'কিম' কে টেনে আনা । জানিনা ফারুকী ভাই সেটা স্বীকার করবেন কি না । তার প্রতিটা ছবিতেই 'মেটাফোর' ইউজ করা হয় । এখানে যেমন 'পিপড়া' । লোভ..কৌতুহল..উচ্চাকাঙ্খা....সমীকরণের শেষে যে ''পাপ'' তা কিভাবে 'পিঁপড়া'র মত আমাদের ভেতরটাকে কামড়ে ধরে একটা 'ভয়' ঢুকিয়ে দিচ্ছে পরিচালক সেটাই গল্প আকারে বলতে চেয়েছেন ।



গল্পের 'মিঠু' চরিত্রটা আমাদের ভীষণ চেনা । কখনো সেটা আমি নিজে...কখনো আমার চারপাশ ঘিরে থাকা মানুষগুলো । একটা সাধারণ পরিবারের খুব সাধারণ এক যুবক যে স্ট্রাগল করছে বেকারত্ব কাটাতে । কোটিপতি হবার উচ্চাকাঙ্খায় সুযোগ পেলেই লুফে নিচ্ছে । ...কিন্তু আসন্ন বিপদটা টের পাচ্ছেনা । এমএলএম কোম্পানীর প্রলোভন...সস্তায় চুরির ফোন কেনা .. পুরোনো প্রেমিকার কাছে নিজেকে 'জয়ী' হিসেবে দেখানোর এ্যারোগেন্স...এবং আস্তে আস্তে পিঁপড়ার গর্তে পা ফেলা ।

অন্যায় করার পর যে পাপবোধের জন্ম .. বিবেকের দংশন .. এবং তা থেকে তৈরী যে 'ভয়' তা 'মিঠু'কে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে ছবির শেষার্ধ জুড়ে । অনুরুপ 'পাপী' দর্শকদের মনে সেই 'ভয়'টা সমানভাবে ঢুকে যায় .... ।

ছবিতে যে নিষ্ঠুরতাগুলো দেখানো হয়নি তা দর্শকদের মনে ঠিকই একটা ভিজ্যুয়াল ইমেজ তৈরী করে । তখন দর্শক নিজেই ছবির একটা চরিত্র হয়ে পড়ে । একজন মানুষ আদতে হয়তো নিষ্ঠুর নন কিংবা কোন গুঢ় পাপও করেননি ... সেই তিনিই যখন চরিত্রের ভেতরে ঢুকে পড়েন, তিনি চরম নিষ্ঠুর হতে পারেন কিংবা সমানভাবে ভীত । এখানেই পরিচালকের কাজের স্বার্থকতা ।

নায়িকা 'মীরা' গোপন ভিডিও ফাঁসের ভয়ে মিঠুর সমস্ত কাজে স্বায় দিয়ে যায় । তারও ভয় যদি এ ভিডিও প্রকাশ হয়ে পড়ে তবে তার ক্যারিয়ারের ক্ষতি । গল্পের শেষে এসেও দেখা যায় সেই 'ভয়' তাকে কিভাবে ক্ষতবিক্ষত করছে । কিভাবে অসংখ্য পিঁপড়ার কামড়ে সে প্রতিনিয়ত ছটফট করছে । সেই ভয়টা সে ট্রান্সফার করেছে মিঠুর ওপর ।

নায়ক যখন 'ভয়ের' কাছে পরাজিত হয়ে মায়ের কাছে ফিরে এসে আবার সেই ছোটবেলার মত মায়ের কাছাকাছি থাকা কিংবা তখনকার মতো হতে চাইলো তখন দর্শকরাও সমাধান পেয়ে যান । দর্শকরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন .. যাক এবার বুঝি সব মিটমাট হবে ।

পুরো ছবিজুড়ে মিঠুর বোন আর বাবাকে অনেকবার স্ক্রীনে দেখিয়েও কোন ডায়লগ দেয়া হয়নি দেখে অবাক হচ্ছিলাম । .. কিন্তু গল্পের পাঞ্চলাইনটা বেরোলো বোনের মুখেই ..." ভাইয়া তুমি কি সত্যি সত্যি ...??!!! না কি অভিনয় করতেছো ??!! ""

এই প্রশ্নটা দর্শকদের মনেও উদয় হয় । কাহিনী ওপেন এন্ডেড .... দর্শকরা তাদের ইচ্ছেমত উত্তর বের করে নিতে পারেন । আসলেই কি মিঠু আবার সেইসময়টায় ফিরে গেছে যখন তাকে লোভ..উচ্চাকাঙ্খা .. ভয় নামের পিঁপড়াগুলা জাপটে ধরতে পারেনি । যখন সে নিতান্তই সাধারণ এক মানুষ !!
না কি এসব ''পিঁপড়া'' থেকে বাঁচতে পাগল সাজার অভিনয় করছে ....??!!

পিকচারাইজেশন,মিউজিক,ব্যাকগ্রাউন্ড ... এগুলোও সিনেমার এক একটা ক্যারেক্টার । ছবির মিউজিক ভালো ছিল । গানের সংখ্যা যদিও সামান্য । লোকেশনও খুব মন্দ হয়নি । অভিনয়ে সাবলিলতা ছিল । ফারুকী ভাইয়ের ছবিতে বিনোদন না থাকাটা অষ্টম আশ্চর্য্যের মতই । ... মুকিত ভাইয়ের রোলটা এতো ছোট কেন ??!!

পরিশেষে একটা সহজ বাস্তব বলি... এ ধরণের ছবি 'খাবার' মত দর্শক এখনও এদেশে তৈরি হয়নি... আমাদের দর্শকরা মেইনস্ট্রিম । রোমান্স, অ্যাকশান, কমেডি...... এই ধারার বাইরে বের হয়ে ছবির গল্পের সাথে মিশে গিয়ে নিজেই একজন দক্ষ গল্পকার বনে যাবার মত দর্শক আমাদের নিতান্তই কম । আমাদের দর্শকরা বিনোদিত হতে চায়... যে গল্প মগজের তার ধরে ঝুলাঝুলি করবে, শেষপর্যন্ত এসেও একটা ধাঁধায় জড়িয়ে রাখবে , সেসব গল্পে দর্শকদের মন ভরেনা...পেটে গুরুপাক হয় । টাকা খরচ করে হলে গিয়ে ''মানসিক প্যাড়া'' নেবার মত উন্নত রুচির দর্শক আমরা ওখনও হতে পারিনি ।



সময় বদলাচ্ছে । ধীরে ধীরে এসবও পরিবর্তন হবে ।
আশার কথা এসব ছবি দেখতেও হলে দর্শকেরা ভীড় করছেন । ছবির গুণাগুণ বিচার করছেন । ভিন্ন ধারার কিছু দর্শক তৈরী হচ্ছে । এটা আমাদের সিনেমার জন্য ভালো ।

সমালোচকদের সাথে আমি একটা জায়গায় একমত ...ছবির লেংথটা আরেকটু বাড়ানো যেতো । দেড়ঘন্টার মুভি হলে গিয়ে দেখার ধৈর্য্য খুব কম মানুষের থাকে । তবে আশার কথা ক্ষোভ কিংবা অভিমান থেকেই কি না ফারুকী ঘোষণা দিয়েছেন তার নেক্সট মুভিটা ৩ ঘন্টার হবে । :P

ওভারঅল আমার রেটিং ১০ এ ৭ ...... B-) :D

পুরষ্কার/নমিনেশন :



আইএমডিবি ইউজারদের প্রদত্ত রেটিং ৮.১ :



মুভি ট্রেলার দেখে নিতে পারেন ঝটঝট

চিরকুটের এই গানটা দারুণ হয়েছে
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×