আমি ২৯ ও ৩০ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকুরী পাইনি। মেধা তালিকায় আমার থেকে নীচে যথাক্রমে ১৪২৮ তম ও ১০০২তম সিরিয়ালে অবস্থান করেও আমার দুই বন্ধু চাকুরী পেয়েছে(আমার অবস্থা ছিল ৯৫৪)।ওরা চাকুরী পেয়েছে “কোটা ক্যাটাগরীতে”-মেধা তালিকায় নয়। সব থেকে আশ্চার্য্য বিষয়-এবার মেধা তালিকার ১৪০০ সিরিয়ালের উর্ধে ২১৫ জনকে কোটা প্রথায় চাকুরীর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। “কোটা” প্রথায় আমি কোনো ক্যাটাগরীতে পরিনা। তাই আমার বিসিএস চাকুরী হয়নি এবং আর হবেওনা।
বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শূন্য পদের শতকরা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৪৫ ভাগ। বাকি ৫৫ ভাগ প্রাধিকারঃ
মুক্তিযোদ্ধা ৩০ ভাগ,
নারী ১০ ভাগ
জেলা ১০ ভাগ
উপজাতি ৫ ভাগ।
(প্রধানমন্ত্রী তণয়া সায়মা হোসেন পুতুলের উদ্যোগে অটিস্টিক/প্রতিবন্ধীদের জন্য ১০ ভাগ কোটা করার প্রস্তাব বিবেচনাধীন। এছাড়াও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অন্ধদের জন্য ৫ ভাগ, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কৃষক সন্তানদের জন্য ৫ ভাগ কোটা বরাদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে)
অথচ মুক্তিযোদ্ধা,জেলা,ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী ও নারীদের জন্য বরাদ্দ এই মোট ৫৫ ভাগ কোটা কোনো বিসিএস এই কোটা পূরণ হচ্ছে না। কারণ কোটায় যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা প্রাথমিক যোগ্যতাই অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছেন। অর্থাত্ এসব কোটায় যোগ্য প্রার্থীই কম। ফলে বিসিএস মুক্তিযোদ্ধা নারী ও উপজাতীয় কোটা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
এক্ষেত্রে আগে বিধান ছিল কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থী দিয়ে তা পূরণ করা হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার মেধাবীদের সে সুযোগও কেড়ে নিয়েছে। সরকার নিয়ম করেছে, কোটা পূরণ না হলে তা খালি রাখতে হবে। আর বিশেষ বিসিএসের জন্য ২০০২ ও ২০০৩ সালে জোট সরকারের আমলে জারি করা দুটি সার্কুলার বাতিল করেছে।
শুধু তাই নয়,মুক্তিযোদ্ধা এবং উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে এবং ছেলেমেয়ে পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের দিয়ে ওই কোটা পূরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
টেকনিক্যাল ক্যাডারে অপূরণকৃত পদ পূরণের লক্ষ্যে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ২৩তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছিল।সেই পরীক্ষায়ও উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় ৭০৯টি পদের বিপরীতে কমিশন মাত্র ৭৯ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করতে পেরেছিল। যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ২৩তম বিসিএসে ৬৩০টি পদে কোনো প্রার্থী কমিশন কর্তৃক সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি। একই কারণে ভবিষ্যতেও পর্যাপ্তসংখ্যক উত্তীর্ণ মুক্তিযোদ্ধা,মহিলা ও উপজাতীয় প্রার্থী পাওয়া যাবে কি না তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
কাকতালীয়ভাবে গত দুইবারই আমার ভাইবা বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন পিএসসি’র সদস্য শহিদ সেরেনিয়াবাত, যিনি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট আত্মীয়। তিনি আমার একাডেমিক রেজাল্ট দেখে বলেছিলেন-“তুমি ভাল রেজাল্ট করেছো, বাট তুমি কোনো কোটারই অন্তর্ভূক্ত নও-বলেই আমার কাগজপত্র ফিরিয়ে দিলেন।
আমি নিশ্চিত হলাম-এবারও আমার হবেনা! আমি বললাম-“স্যার, যদি বেয়াদবী নানেন তবে একটা কথা বলতে পারি?
তিনি বললেন-বলো...
আমি বলি-“স্যার, মুক্তি যুদ্ধের সময় আবার বাবার বয়সছিল ১০/১১ বছর, চাচারা আরো ছোট। দাদা,নানা মারা গিয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪/৫ বছর আগে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের পরিবারে কেউ ছিলনা মুক্তি যুদ্ধে করার মত। তবে আমার পরিচত একজন মুক্তি যোদ্ধা আছেন’মুক্তি যোদ্ধার পরিচিত’ হিসেবে কি আমাকে বিবেচনা করা যায়”?
তিনি স্বাভাবিক ভাবেই বললেন-“না”।
বলি-“স্যার, আমি সামহোয়্যারইন ব্লগের একজন নগণ্য ব্লগার, ব্লগারদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু করলে আমার কপাল খুলতেও পারে”- বলেই বেড় হয়ে আসি।
যেহেতু মেধার পরিবর্তে এখন “কোটা” প্রথাই বেশী সুবিধা প্রাপ্ত-কাজেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন আরো “কোটা” ক্যাটাগরী বাড়ানো হোক। সেক্ষেত্রে আমি প্রথমেই বলবো “ব্লগার কোটা” চালু করা হোক। কারন, শুধু সামু ব্লগেই লক্ষাধিক শিক্ষিত ব্লগার আছেন-যাদেরমধ্যে অনেকেই বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও কোনো কোটা অন্তর্ভূক্ত হতে নাপেরে চাকুরী পাচ্ছেননা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



