somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধুর উন্নত শির আকাশ ছুঁয়েছে বামনরা থাকবে পায়ের কাছেই

১৩ ই আগস্ট, ২০০৭ রাত ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনজুরুল আহসান বুলবুল: (দৈনিক আমাদের সময়ে প্রকাশিত লেখার অংশবিশেষ)

৩। সদ্য ভেঙে দেয়া র‌্যাংগস ভবনটিকে যেমন বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন ‘দুর্নীতির মনুমেন্ট’, তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসে গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জমান, মীর কাসেমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির ‘জীবন্ত পিলার’। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, রাজনীতির নানান সমীকরণে তারা খুবই ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী। আবার আমাদের সৌভাগ্য যে, তারা আমাদের আশপাশেই চড়ে বেড়ায় বলে ঘৃণার থুথুর দলাটি তাদের উপর ছুড়ে দিতে আমাদের খুব কষ্ট হয় না। স্বাধীনতার সাড়ে তিন দশকে রাজনীতির নানা কূটকৌশল আর চর্বি ও পুষ্টিতে বড় হয়ে ওঠা তাদের এ অবস্থানের জন্য কারা কতটুকু দায়ী: সে নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক ও আÍসমালোচনা হতেই পারে। কিš' এ সত্যটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, গোলাম-নিজামী বাহিনীকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের জন্য পৃথক কোনও মামলা বা তা নিয়ে দীর্ঘ শুনানিরও প্রয়োজন নেই। সারাজীবনে সব কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে যেমন লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড দেয়া হয়, তেমনি ১৯৭১ সালে মাত্র এক বছরের কীর্তি বিচার করেই গোলাম-নিজামী বাহিনীকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসিতে ঝুলানো যায়। চতুর কুশলী দুর্বৃত্ত নিজামীরা এমনও দাবি করে, ১৯৭১ সালে তারা যে অপকর্ম করেছে তার কোনও প্রমাণ নেই। তাদের জানা উচিত, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাদের বিচারের জন্য সেসবের কোনও প্রয়োজনও নেই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বর্বরবাহিনী এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ-লুটপাট করেছে, আর তাদের সহযোগী ছিল গোলাম-নিজামী বাহিনী, এর প্রমাণ মিলবে তাদের বক্তৃতায়, তাদের নিজেদের পত্রিকায় প্রকাশিত নানান তৎপরতার বিবরণীতে, তাদের প্রভু পাকিস্তানি নানান জেনারেলের রচনায়। পাকিস্তানি বাহিনীর সকল বর্বরতার পরিকল্পনায় তারা ছিল নীতিনির্ধারক পর্যায়ে। কাজেই তাদের অপরাধ সার্বিকভাবেই বিবেচনা করতে হবে, এখানে ব্যক্তিগত অপরাধের প্রসঙ্গটি প্রাধান্য না দিলেও কোনও অসুবিধা নেই। যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির (সে সময়ে ছাত্র সংঘ) যেমন শর্তহীনভাবে অভিযুক্ত, তেমনি এই দলের নেতা হিসেবে গোলাম-নিজামীরাও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। এর বাইরে কোনও ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য তারা দায়ী হতেই পারে, কিš' তা না হলেও যুদ্ধাপরাধের দায় নেতা হিসেবে তারা এড়াতে পারে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক যুদ্ধাপরাধীর এমন অভিযোগে সাজার কথা যদি বাদও দেই, একেবারে হালে সার্বিয়া এবং প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়ার এমন অনেকেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাভোগ করছে যারা শুধু গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের নির্দেশনা দেয়া, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল। এ জন্য তাদের বক্তৃতা, বিবৃতি, আহ্বান এবং নানান ঘোষণাই প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়েছে। গোলাম-নিজামী বাহিনীর অপরাধ তো তার চেয়ে আরও বেশি। আর তা প্রমাণের জন্য তথ্য-দলিল খুব দুষ্প্রাপ্য নয়।
দেশের বর্তমান সেনা সমর্থিত সরকার এমন অনেক কাজেই হাত দিয়েছেন, রাজনৈতিক সরকারগুলো যেদিকে নজর দেয়নি। হতে পারে রাজনৈতিক কারণেই তারা বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে। ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার বিষয়টি তাদের এজেন্ডায় আনতে পারেন? তারা কি একটি নিরপেক্ষ অনুসন্ধান চালাতে পারেন, এ দেশে ইসলামী জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রটি তৈরিতে প্রতক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে কারা?
৪। আমি ক্ষুব্ধ এ কারণে, এ দেশের জšে§র বিরোধিতার জন্য যে দুর্বৃত্তের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার হওয়ার কথা, সেই রাজাকার শিরোমনি মতিউর রহমান নিজামীই কিনা বুক ফুলিয়ে মন্তব্য করছে এই দেশটির স্বাধীনতার আন্দোলনের মহানায়ক, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে। বিস্ময়েরও সীমা থাকে, ধৃষ্টতারও সীমা থাকে। গোলাম-নিজামীরা সব বিস্ময়কেই স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে, সব ধৃষ্টতারও সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবেগের ভাষায় যদি বলি, তাহলে হৃদয়ের অবিরাম রক্তক্ষরণকে চেপে রেখে এ কথা বলব, যে বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বেঁচে থাকতে রাজাকার শিরোমনি মতিউর রহমান নিজামীদের সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে, তেমন একটি বাংলাদেশ থাকারই কোনও প্রয়োজন নেই। আর যুক্তির ভাষায় যদি বলি তা হলে বলব: নিজামীদের ধৃষ্টতার বিষদাঁতটি ভেঙে দেয়ার কাজটি করতে হবে যতদ্রুত সম্ভব। গোলাম-নিজামীরা এ কথাটি ভুলে গেছে, তাদের গত সাড়ে তিন দশকের জীবন শেখ মুজিবের কৃপা ও মুক্তিযোদ্ধাদের দয়া-উদারতার দান। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী গোলাম-নিজামী ও তাদের বংশধরদের বেঁচে থাকতে হবে এদেেশর স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষদের করুণায়। আমাদের ধমনীতে শহীদের রক্ত, এ রক্ত কখনই যুদ্ধাপরাধীদের ধৃষ্টতা সহ্য করবে না।
নিজামীদের ধৃষ্টতার আরেক নজির দিই: সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্য ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে দেশে জঙ্গিবাদ শক্তিশালী হবে।’ কী কারণে জঙ্গিবাদ শক্তিশালী হবে অথবা দুর্বল হবে তা নিজামীর চেয়ে আর ভালো কে জানে? দেশে বাংলাভাইদের উত্থান পর্বে সব মিডিয়ার সৃষ্টি বলে উড়িয়ে দিয়েছিল এই নিজামী। এখন দেখা যায় বাংলাভাই বায়বীয় নয়, তাকে ধরা যায়, ফাঁসি দেয়া যায়, তাদের মদদদাতা, চারদলীয় জোটে নিজামীদেরই সহযোগী বিএনপি নেতার তিরিশ বছর জেল হয়। তবে নিজামীর সাম্প্রতিক বক্তব্যটি সরাসরি হুমকিও। কিš' পৃথিবীর ইতিহাসে কোনও ধর্মকেই রাজনীতির আশ্রয়ে টিকে থাকতে হয়নি। ধর্ম-দর্শন টিকে থাকে তার অন্তর্নিহিত জীবনমুখী শক্তির কারণেই। বরং ধর্মকে রাজনীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলে পরিণতি কী হয় পাকিস্তান-আফগানিস্তান তার প্রমাণ। ধর্মের জন্য নিজামীদের প্রয়োজন নেই, বরং নিজামীদের রাজনীতির ব্যবসার জন্যই তারা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
ধর্মটুকু বাদ দিলে তাদের রাজনীতিতে আর যা আছে তা কেবল অন্ধকার আর বর্বরতা। সে কারণেই তারা ঢাল হিসেবে ধর্মকে চায়, আর তা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইলে জঙ্গিবাদের ভয় দেখায়।
৫। বাংলাদেশের অন্যতম এক প্রগতিশীল রাজনীতিক, সম্পাদক আহমদুল কবির বলতেন: যে শাসক রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে বলা হয় স্বৈরশাসক। যে সম্পাদক তার সম্পাদকীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তাকে কী বলা হবে সে প্রশ্ন তিনি রাখতেন আমাদের কাছে। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর বক্তব্যকে আমাদের সময় যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে, মতপ্রকাশে নিজামীকে এককভাবে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তাতে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় ক্ষমতার অপব্যবহার বা সম্পাদকীয় ক্ষমতার উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার করা হয়েছে কি না সে নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। এ ক্ষেত্রে সম্পাদকের সহজ আÍপক্ষ সমর্থনটি হবে, তিনি ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এই সাধু উদ্দেশ্যের সঙ্গে আমার কোনও দ্বিমত নেই। কিš' ভিন্নমত কাকে বলে? একই দলে ভিন্ন ভিন্ন মতের অনুসারী থাকতে পারেন, তারা সেটি যথাযথ ফোরামে প্রকাশও করতে পারেন। আবার কোনও বিষয়ে কারও কোনও মত প্রকাশিত হলে তার বিপরীতে যে কেউ মত প্রকাশ করতে পারেন। কিš' জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নিজামীর মত কি ভিন্নমহ, আবারও প্রশ্ন রাখি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর নিজামীর অবস্থান সম্পর্কে কে না জানে। কাজেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নিজামীর মত ভিন্নমত নয়, বরং বলা যায় শত্র“মত। ১৯৭১ সালেই এই অবস্থানটি ফয়সালা হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর মতিউর রহমান নিজামীর অবস্থান শুধু ভিন্ন মতের হলে কোনও না কোনওভাবে তার একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হয়তো সম্ভব হত। কিš' তা হয়নি, কারণ নিজামীরা সে সময় অবস্থান নেয় বাঙালির শত্র“ পাকিস্তানিদের পক্ষে এবং সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরাজিত নিজামীদের মত শত্র“মত নয়, পরাজিত মতও। কাজেই মুক্তিযুদ্ধ বা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নিজামীকে এক তরফা কিছু মন্তব্যের সুযোগ দেয়া মানে ভিন্নমতের নামে চরম শত্র“পক্ষকেই সুযোগ করে দেয়া। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং জয়-পরাজয়ের মধ্যে দিয়েই এ অবস্থান চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
বোঝার জন্য আরও সহজ করে বলি: জর্জ বুশ আর ওসামা বিন লাদেনের অবস্থান শুধু ভিন্নমতের নয়। তারা পরস্পর পরস্পরের শত্র“। যদিও ভিন্নমত প্রকাশের মধ্য দিয়েই এর শুরু, কিš' চূড়ান্ত বিচারে তা হয়ে দাঁড়ায় শত্র“-মিত্রে।
৬। এ অবস্থানের কারণেই গোলাম আযম-নিজামীরা শহীদ মিনার মেনে নেয় না, জাতীয় স্মৃতিসৌধ মেনে নেয় না। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ বা শিখা অনির্বাণে তাদের আপত্তি। সেই একই কারণে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে পাকিস্তানের জাতির জনক মানতে আপত্তি করে না গোলাম-নিজামীরা। কিš' তাদের প্রবল আপত্তি বাংলাদেশের জাতির জনকের জায়গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম এলেই। এ বিষয়ে জামাতি তাত্ত্বিকরা ইসলামের ইতিহাস আর মুসলিম জাতিসত্তার আবেগী সাম্প্রদায়িক অপযুক্তিগুলো তুলে ধরে। তাতে বিভ্রান্ত হন অনেক সুধীজন- যারা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানান, কিš' তাকে জাতির জনক বলার প্রশ্নে স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান নিতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুর সমান্তরালে কাউকে দাঁড় করানোর চেষ্টা ও এই মতলববাজিদের আরেক কৌশল।
৭। বন্ধু আবু হাসান শাহরিয়ার মাঝে মাঝেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন, দেশে বামনদের দাপট ও প্রভাব দেখে। আমিও বলি: সব মিলিয়ে নেতা বঙ্গবন্ধুর বিশালত্ব তো বটেই, তার দীর্ঘ শালপ্রাংশু অবয়বের কাছেও অনেকে বামনের মতোই। এই বামনদের সাধ্য কি বঙ্গবন্ধুর সমমানে ওঠে আসা। কবি হেলাল হাফিজের কবিতা: ‘কে আছেন/ দয়া করে আকাশকে বলেন/ একটু উপরে উঠুক/ আমি দাঁড়াতে পারছি না’। বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুর উন্নত শির আকাশ ছুঁয়েছে বামনরা থাকবে পায়ের কাছেই






মনজুরুল আহসান বুলবুল:
১। এই রচনাটি গত ৯ আগস্ট, ২০০৭ বৃহস্পতিবারের আমাদের সময় পত্রিকায় প্রথম পাতার মূল শিরোনামে প্রকাশিত খবর সম্পর্কে।
২। কয়েকটি অধিকার নিয়ে এই প্রতিক্রিয়াটি লিখছি। আমার স্মৃতিতে সবচেয়ে জ্বলজ্বলে অংশটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সমান বয়সী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে আমার যে ক’জন স্বজন নিহত হয়েছেন তাদের একজন শহীদ নাজমুল আহসান, আমার মামা। ময়মনসিংহে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ও কৃতী এই ছাত্রের নামে নাজমুল আহসান হল তৈরি করে তার স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রাজাকারদের দেয়া খবরের সূত্র ধরে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর ঘেরাওয়ে পড়ে লড়াই করতে করতে আরও দুই ভাইসহ নাজমুল আহসান কীভাবে শহীদ হয়েছেন তা জানা যাবে শেরপুরের নালিতাবাড়ী অঞ্চলে গেলে। মুক্তিযুদ্ধের পর তিন ভাইয়ের দেহাবশেষ তুলে আনতে যে দলটি শেরপুরের কাটাখালীতে যায়, আমরা কয়েক কিশোর তাদের সহযাত্রী ছিলাম। শুকিয়ে যাওয়া বিলের তলায় তিন ভাইয়ের দেহাবশেষ পৃথক করা যায়নি। নালিতাবাড়ীতে গেলে তারাগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের পাশে দেখা যাবে তিন শহীদের একটি কবর।
মাদ্রাসায় পড়ে ডিগ্রি নেয়া, দাড়ি টুপি পরা, উর্দু জানা আমার ছোট চাচার আÍবিশ্বাস ছিল পাকিস্তানি বাহিনী অন্তত তাকে কিছু করবে না। কিš' ১৯৭১ সালে নালিতাবাড়ীতে রূপনারায়ণকুড়ায় আমাদের গ্রামের বাড়িটি যেদিন পাকিস্তানি বর্বরবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকারদের হাতে আক্রান্ত হল, সেদিন তার বিশ্বাস পুরোটাই টুটে গিয়েছিল। দীর্ঘ বাড়িটিতে হানাদারদের তাণ্ডবের পর পালিয়ে যাওয়া আমরা যখন ফিরলাম তখনকার দৃশ্য: পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে আমার চাচার এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাওয়া বুক দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরছে, আমার অসহায় চিকিৎসক বাবা তার সর্বশক্তি দিয়ে, সবচেয়ে আদরের ছোট সহোদরকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা শেষে তার মাথার কাছে কোরআন নিয়ে বসেছেন, আমার সত্তরোর্ধ দাদী তার কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করছেন তার মাথাটি কোলে নিয়ে, কী কষ্ট তার বুকে তা তার অশ্র“হীন নির্বাক চোখ দেখে কারও বুঝতেই অসুবিধা হয় না। এ দৃশ্য আমার কষ্ট-কল্পিত নয়, নিজের চোখে দেখা।
আমার এলএমএফ পাস নানা, আবদুস সামাদÑ বুকে দৃশ্যমান রেডক্রস কার্ড ঝুলিয়ে বাইসাইকেলে রোগী দেখে বেড়াতেন গারো পাহাড়ের গাঁ-ঘেঁষা নন্নী-পোড়াগাও-বরোমারী অঞ্চলে। রাজাকাররা কী কারণে বেজার হয়ে তাকে ধরে তুলে দিয়েছিল পাকিস্তানি বর্বরদের হাতে, সে তথ্য আজও আমাদের অজানা। বর্বরদের হাতে একজন নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসকের নির্মম মৃত্যুর স্মৃতি আমাদের স্মৃতিতে আজও জ্বলজ্বল করে।
কাজেই আমার এই প্রতিক্রিয়াটি নিছক রাজনৈতিক আক্রোশজাত নয়, নিজের বুকের ভিতর থেকে উঠে আসা প্রতিবাদ। আশাকরি পাঠককূল তা বুঝবেন।
৩। সদ্য ভেঙে দেয়া র‌্যাংগস ভবনটিকে যেমন বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন ‘দুর্নীতির মনুমেন্ট’, তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসে গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জমান, মীর কাসেমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির ‘জীবন্ত পিলার’। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, রাজনীতির নানান সমীকরণে তারা খুবই ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী। আবার আমাদের সৌভাগ্য যে, তারা আমাদের আশপাশেই চড়ে বেড়ায় বলে ঘৃণার থুথুর দলাটি তাদের উপর ছুড়ে দিতে আমাদের খুব কষ্ট হয় না। স্বাধীনতার সাড়ে তিন দশকে রাজনীতির নানা কূটকৌশল আর চর্বি ও পুষ্টিতে বড় হয়ে ওঠা তাদের এ অবস্থানের জন্য কারা কতটুকু দায়ী: সে নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক ও আÍসমালোচনা হতেই পারে। কিš' এ সত্যটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, গোলাম-নিজামী বাহিনীকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের জন্য পৃথক কোনও মামলা বা তা নিয়ে দীর্ঘ শুনানিরও প্রয়োজন নেই। সারাজীবনে সব কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে যেমন লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড দেয়া হয়, তেমনি ১৯৭১ সালে মাত্র এক বছরের কীর্তি বিচার করেই গোলাম-নিজামী বাহিনীকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসিতে ঝুলানো যায়। চতুর কুশলী দুর্বৃত্ত নিজামীরা এমনও দাবি করে, ১৯৭১ সালে তারা যে অপকর্ম করেছে তার কোনও প্রমাণ নেই। তাদের জানা উচিত, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাদের বিচারের জন্য সেসবের কোনও প্রয়োজনও নেই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বর্বরবাহিনী এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ-লুটপাট করেছে, আর তাদের সহযোগী ছিল গোলাম-নিজামী বাহিনী, এর প্রমাণ মিলবে তাদের বক্তৃতায়, তাদের নিজেদের পত্রিকায় প্রকাশিত নানান তৎপরতার বিবরণীতে, তাদের প্রভু পাকিস্তানি নানান জেনারেলের রচনায়। পাকিস্তানি বাহিনীর সকল বর্বরতার পরিকল্পনায় তারা ছিল নীতিনির্ধারক পর্যায়ে। কাজেই তাদের অপরাধ সার্বিকভাবেই বিবেচনা করতে হবে, এখানে ব্যক্তিগত অপরাধের প্রসঙ্গটি প্রাধান্য না দিলেও কোনও অসুবিধা নেই। যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির (সে সময়ে ছাত্র সংঘ) যেমন শর্তহীনভাবে অভিযুক্ত, তেমনি এই দলের নেতা হিসেবে গোলাম-নিজামীরাও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। এর বাইরে কোনও ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য তারা দায়ী হতেই পারে, কিš' তা না হলেও যুদ্ধাপরাধের দায় নেতা হিসেবে তারা এড়াতে পারে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক যুদ্ধাপরাধীর এমন অভিযোগে সাজার কথা যদি বাদও দেই, একেবারে হালে সার্বিয়া এবং প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়ার এমন অনেকেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাভোগ করছে যারা শুধু গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের নির্দেশনা দেয়া, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল। এ জন্য তাদের বক্তৃতা, বিবৃতি, আহ্বান এবং নানান ঘোষণাই প্রমাণ হিসেবে গ
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×