পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪
আমি যখন খুব বেশী আবেগ তাড়িত হয়ে নিজের প্রতারিত হবার, অপমানিত হবার কথা লিখছি ঠিক তখন লিটল এঞ্জেল এসে হাজির। “মা পানির পিতাসা লেগেছে অনেক। পানি দাও”।এঞ্জেলের নাম রোদেলা।আমার ছোট মেয়ে। সন্ধি আসলে আমি নিজেই। আমি আমার নিজের কথাই এতক্ষণ বলছিলাম।
মনন এলে জানতে চাই-‘সারিয়ার সাথে কি সম্পর্ক? দেখা হয়েছে কিনা?এখনো সম্পর্ক আছে?” মনন স্মার্ট ছেলে। খুব বেশী অপ্রস্তুত না হয়ে চুপ করে থাকলো। অনেকক্ষণ প্রশ্ন করার পর উত্তর এলো-“দেখা হয়েছে একবার। শরীর ড্রামের মত আগাগোড়া সমান।তাই পরে আর যাই নি”। পাগল পাগল লাগছিল তখন। মনে হচ্ছিল মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। তার মানে কি? যেখানে যে খাঁজ থাকার কথা সেখানে সেটা আছে দেখেই শুধু মনন আমার সাথে আছে নাকি আমি ওর একটা “সা্ইন বোর্ড”। যে ওর সব কিছু আড়াল করে রাখবে আর ও যা ইচ্ছা তাই করেও পরিবারে, সমাজে বুক ফুলিয়ে চলতে পারবে। বাসায় যখন বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে ড্রাগস-এ এডিকটেড ছোট দেবরের সমস্যা সমাধানের জন্য আমার খুব বেশী ধার্মিক শাশুড়ি ওকে ডাকে আর ও গম্ভীর মুখে বসে সমাধান দেয় তখন যে আমার অনুভূতি কি হয়? হাসবো না কাঁদবো নাকি ওকে একটা ঠাস্ করে সবার সামন চড় দিয়ে আসবো বুঝি না। জানেন আমি মনের কষ্টটা লাঘব করার জন্য চিৎকার করে কাঁদতে পর্যন্ত সেদিন পারিনি। সে সময় বাসায় আমার মা-বাবা বেড়াতে গিয়েছিলেন।ওনারা জেনে ফেলবে সে ভয়ে। তাহলে আমার মান-সম্মান আর কিছুই যে থাকবে না। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছি। মননের কাছেই চাইতাম সান্ত্বনা। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। আমার কষ্টের একমাত্র সাথী। চমৎকার, না?
মননের সাথে ভাল ব্যবহার আর করা হয় না। করতে পারি না। ও বারবার বুঝাতে লাগলো এটা ওর একটা পদস্খলন মাত্র। আর কখনো এমন হবে না। আমি সত্যিই জানি না এক মানুষের পদস্খলন কয়বার হয় আর তা মাফ করা যায় ক’বার। এর মাঝেও একবার ফেন্সিডিল ধরা পড়ল। কোরআন শরীফ ছুঁয়ে বলল ও সব নাকি খায় না। আমি তখন ওর লেভেল চিন্তা করতে পারছিলাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম সুইসাইড করবো। আবার মননের কাছে আমার দুই মেয়েকে রেখে গেলে ওদের অবস্থা যে কি হবে তা আমি ভাবতেও পারছিলাম না। পরে ঠিক করি তিনজন একসাথে মরবো।
কিন্তু মেয়েদু’টা এত সুন্দর, এত ছোট, এত মায়াবতী যে আমি ওই অপকর্মটি করতে পারলাম না কিছুতেই। মেয়েদের ভবিষ্যত ভেবে ডিভোর্সের চিন্তাও বাদ দিলাম। ভাবলাম আমি তো শেষ। মেয়ে দু’টা ভাল থাকুক। এর কিছুদিন পর একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানীতে চাকরী পেলাম। ছয় মাস পর কনফার্ম । ভাইভাতে এমন অবস্থা যে পারলে সে মূহুর্তেই কম্পানীর যেখানেই চাই সেখানেই জয়েন করিয়ে ফেলে। যাই হোক ছয় মাস প্রায় শেষ। চাকরী স্থায়ী হবার কোন আলামত নাই। আমার দু’জন বস ছিল। দু’জন দু’রকম। একজন ঘোর তাবলীগী। প্রতি বছর চিল্লায় যায়। আরেকজন প্রকাশ্যেই মদ খায়, লাইফ ইনজয় করতে যায় থাইল্যান্ড। আমি ও ভাবে হেজাব-নেকাপও করতে পারিনা আবার অতটা মডার্ন (তথাকথিত মডার্ন)ও না। ফলে যা হবার তাই হল- এক বছর হয়ে গেলেও আমার চাকরীটা কনফার্ম হলো না। বরং চেষ্টা করা হচ্ছিল –“আমি অযোগ্য “ –এটা প্রমাণ করার। সব দিক থেকে হেরে যাওয়া এই আমি আধা ঘন্টার মাঝে (হয়তো বিবেচনা না করেই) চাকরীটা ছাড়ার ডিসিশন নিলাম।
(চলবে ...)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



