somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কাঁসার কাপ রাশিয়ায়! কাঁসার কাপটির জন্যই বিশ্বসেরা ফুটবল যুদ্ধ!!!

২১ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাপটা নকল! কাঁসা দিয়ে বানানো। কাঁসার তৈরী একটি কাপই প্রতি ফুটবল বিশ্বকাপের আগে ফিফার সদস্য দেশগুলোতে ঘুরে বেড়ায়। এই কাঁসার কাপটিকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টিভি পর্দায় দেখানো হয় বিশ্বকাপের আগে-পরে বেশ কয়েক মাস। ঐ কাঁসার কাপটিকেই ফিফা মিডিয়ার সামনে ডিসপ্লে করেন যখন প্রয়োজন তখনই। মাসাধিককাল অপেক্ষার প্রহর শেষ হলে যখন চ্যাম্পিয়ন দল বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে, ওটা মূলতঃ কাঁসার কাপ! নকল কাপ!! ফিফার পক্ষ থেকে ওই কাঁসার কাপটিকেই তুলে দেয়া হয় চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে। ওই কাঁসার কাপ নিয়েই চ্যাম্পিয়ন দল নিজের দেশে গিয়ে সারা দেশময় ঘুরে বেড়ান, কাপ দেখিয়ে জাহির করেন নিজেদের যোগ্যতা। ঔই কাঁসার কাপটাই বিজেতা দেশের আজীবনের সম্পদ হিসাবে থেকে যায় তাদের কাছে। ওই কাঁসার কাপ নিয়েই বড়াই চলে বছরের পর বছর, দশকের পর দশক। রাশিয়ায়ও ওই একটা কাঁসার কাপের জন্যই এতো আয়োজন।

সোনার কাপটা তাহলে গেলো কোথায়?? না ওটা চুরি যায়নি, রাখা আছে ফিফার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এবং নিরাপদে। ইতিহাসটা একটু বলা প্রয়োজন। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কাপ ঘরে তোলে। খেলাটা হয়েছিলো ইংল্যান্ডেই। আর ঐ কাপটা ছিলো আসল কাপ, সোনার তৈরী। কিন্তু ঐ বছরই লন্ডনের একটা প্রদর্শনী থেকে তখনকার ঐ আসল বিশ্বকাপটা চুরি হয়ে যায়। তবে আশার কথা হচ্ছে, গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড একটি কুকুরের সহায়তা নিয়ে বিশ্বকাপটি একটি বাগানে পুতে রাখা অবস্থা থেকে উদ্ধার করে। এরপর ফিফা আইন করে যে, আসল বিশ্বকাপ নিতে গেলে তিন বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে হবে। তিনবার কোন দেশ যদি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় তখন তাকে আসল কাপ চিরদিনের জন্য দিয়ে দেয়া হবে। ১৯৭০ সালে ব্রাজিল তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে এবং তাদেরকে সোনার তৈরী আসল বিশ্বকাপ দিয়ে দেয়া হয়। যদিও ব্রাজিল তাদের বিশ্বকাপটি নিরাপদে রাখতে পারে নি। ১৯৮৩ সালে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনারিও থেকে ব্রাজিলের বিশ্বকাপটি চুরি হয়ে যায়। ঐ চুরি যাওয়া স্বর্ণের কাপটি ব্রাজিল আর উদ্ধার করতে পারে নি।

১৯৭০ সালে ব্রাজিলকে কাপ দিয়ে দেয়ার পর ফিফা ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের জন্য কাপের ডিজাইন পরিবর্তন করে। নতুন কাপ তৈরির সাথে সাথে ফিফা আইনও পরিবর্তন করে। পরিবর্তিত আইন অনুসারে ফিফা আর কোন চ্যাম্পিয়নকেই আসল কাপ দিবে না। দিবে একটি কাঁসার তৈরী নকল কাপ। আসল কাপটি ফিফার হেফাজতেই নিরাপদে থাকবে। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে ফিফার নতুন কাপ আর নতুন আইন অদ্যাবধি বহাল আছে।

বিশ্বকাপে এবার দল হিসাবে ইটালীর উপস্থিতি নেই। তবে অন্য হিসাবে ইটালীর উপস্থিতি রাশিয়া বিশ্বকাপে ভালমতোই আছে। ফিফা ১৯৭০ সালে নতুন কাপের জন্য ডিজাইন আহবান করে। পরে বিশ্বকাপের ৫৩টি নতুন ডিজাইনের মধ্য থেকে যে ডিজাইনটি মনোনিত হয়, সেটি ছিলো ইটালীয়ান ডিজাইনার সিলভিও গাজ্জানিগার ডিজাইনকৃত কাপ। প্রতি ফুটবল বিশ্বাকাপের আগে নির্ধারিত সময়ে সিলভিও গাজ্জানিগার মালিকানাধীন ইটালীর সেই একই কারখানা থেকেই কাঁসার তৈরী হুবহু নকল একটি কাপ ফিফার কাছে পোঁছায়। সেই কাঁসার নকল কাপই সারা বিশ্ব পরিভ্রমণ করে বিশ্বকাপ আয়োজক দেশে গিয়ে হাজির হয়। এবারের কাঁসার কাপটির বর্তমান অবস্থান এখন রাশিয়ায়। বর্তমানের আসল বিশ্বকাপটির উচ্চতা সাড়ে চৌদ্দ ইঞ্চি এবং এটি ১৮ ক্যারেটের সোনা দিয়ে তৈরী যার ওজন ৬ কেজি ১৪২ গ্রাম। আসল কাপ রাশিয়ায় যায় নি, যাবেও না। তাই লড়াইটা মূলত ঐ কাঁসার কাপের জন্যই। সিলভিও গাজ্জানিগারের নতুন তৈরী কাঁসার কাপটিই ফিফার পক্ষ থেকে তুলে দেয়া হবে রাশিয়া বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের হাতে।

হ্যাঁ, এটা সত্যি যে সোনার কাপ দেয়ার বদলে কাঁসার কাপ দিলেও বিশ্বকাপের সম্মান, জনপ্রিয়তা, ঐতিহ্য বা বিশ্বকাপ নিয়ে দুনিয়াব্যাপী উন্মাদনা মোটেও কমেনি। এমনাটা হতে পারে যে বিষয়টি সাধারণ ফুটবল দর্শকরা জানলে কাপ নিয়ে উন্মাদনায় ভাটাও পড়তে পারে। যেমন ব্রাজিল বিশ্বকাপের কাঁসার কাপটা ২০১৩ সালে কোকাকোলার স্পন্সরে বিশ্বভ্রমণের পথে যখন ঢাকায় আসে, সে কি উল্লাস! বিশেষ বিমানে করে আসা, বিশেষ নিরাপত্তা, টিকিট দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দেখা... কাঁসার কাপ জানলে আমার মনে হয় না সাধারণ মানুষ বা সরকার এতকিছু করতো!! তবে কাপটা নকল হলেও খেলাটা যেহেতু আসল তাই বিশ্বকাপ খেলার সময় কাপ নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন সময় নেই.. প্রয়োজনও নেই। বিশ্ব প্রতিযোগিতা জেতাই আসল কথা, হোকনা সে কাঁসার কাপ!!! ফুটবলের মজাই আসল কথা... জয়ীদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাস আর পরাজীতদের হতাশা, কন্নাই আসল কথা... হোকনা সে মাটির কাপ। তাই মাতামাতি হোক ফুটবল নিয়ে, জয়ী হোক বিশ্ব ফুটবলের আলো ঝলসানো ক্রীড়ানৈপূণ্য। ভুলে যান কাঁসার কাপের ইতিহাস!!

পাঠক লাল গোলদার
২১ জুন ২০১৮
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩১
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×