somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সাথে আরব শাসকদের সহযোগিতা: বিশ্বাসঘাতকতার নানা দিক

২১ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ এবং গাজায় চলমান গণহত্যার পেছনে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE) সরাসরি ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এই দুই দেশ ইসরাইলি কোম্পানিগুলোতে বিপুল বিনিয়োগ করছে, যারা ফিলিস্তিনি ভূমি দখল, অবৈধ বসতি নির্মাণ, গাজায় ব্যবহৃত অস্ত্র উৎপাদন এবং ফিলিস্তিনের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণে জড়িত।এছাড়াও তুরস্ক মিশর জর্দান কেউ ই ইসরাইলএর সাথে হাত মেলাতে কম যায় না । নিচে এর বিস্তারিত চিত্র প্রদান করা হলো:

১. ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতি নির্মাণে অর্থায়ন

ফিনিক্স হোল্ডিংস: ইসরাইলি দখলদারিত্বের অর্থনৈতিক স্তম্ভ
সৌদি, কাতার এবং আরব আমিরাত বিপুল পরিমান বিনিয়োগ করেছে ট্রাম্প এর জামাতা জ্যারেড কুশনারের বিনিয়োগ ফার্ম অ্যাফিনিটি পার্টনার্স এ। সৌদি সরকারের বিনিয়োগ অন্তত ২ বিলিয়ন ডলার বলে জানা যায়, এর বাইরে আরো গোপন বিনিয়োগ থাকাটা অসম্ভব নয় মোটেই। অ্যাফিনিটি পার্টনার্স আবার সেই টাকা বিনিয়োগ করে ইসরাইলি কোম্পানি ফিনিক্স হোল্ডিংসের শীর্ষ শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হয়েছে।
এই ফিনিক্স হোল্ডিংস ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অবৈধ বসতিগুলোর নির্মাণ, অর্থায়ন ও বীমা সেবা প্রদান করে।এটি পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি অবৈধ বসতির স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় আর্থিক সেবা সরবরাহ করে। রামাট নামক পূর্ব জেরুজালেমের একটি অবৈধ বসতিতে অবস্থিত বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের ৮০% মালিকানা ফিনিক্স হোল্ডিংসের।

ফিনিক্স হোল্ডিংস সিরিয়ায় দখলকৃত গোলান হাইটসে এমেক হাবাচা (Emek Habacha) বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অর্থায়ন করছে, যা ইসরাইলের অবৈধ দখলদারিত্বকে শক্তিশালী করছে।

২. ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করা
এলবিট সিস্টেমস: ফিলিস্তিনি হত্যার অস্ত্র সরবরাহকারী
ফিনিক্স হোল্ডিংস ইসরাইলের বৃহত্তম অস্ত্র প্রস্তুতকারক এলবিট সিস্টেমসের প্রধান শেয়ারহোল্ডার (২ মিলিয়নের বেশি শেয়ার)। গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী যে ড্রোন ব্যবহার করে, তার ৮৫% এলবিট সিস্টেমস দ্বারা সরবরাহ করা হয়। এই ড্রোনগুলো ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক, শিশু ও চিকিৎসকদের টার্গেট করে হামলা চালায়।

ফিনিক্স হোল্ডিংস ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প এরিয়েল শ্যারনের ১৫% মালিক, যা ইসরাইলি সৈন্যদের প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি ইসরাইলের 'অ্যাডপ্ট এ সোলজার' প্রকল্পেরও অংশীদার, যা নতুন সৈন্যদের প্রশিক্ষণ ও সামরিক জীবনে অভ্যস্ত করতে সাহায্য করে।

৩. শ্লোমো গ্রুপ: ইসরাইলি নৌবাহিনীর জাহাজ সরবরাহকারি

অ্যাফিনিটি পার্টনার্স ইসরাইলি কোম্পানি শ্লোমো গ্রুপে বিনিয়োগ করেছে, যা ইসরাইলি নৌবাহিনীর সব গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধজাহাজ তৈরি করে। শ্লোমো গ্রুপ ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর শাআগ ইউনিটকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে, যারা আল-শিফা হাসপাতালে নৃশংস হামলা চালিয়েছিল। এই হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন এবং চিকিৎসকদের অপহরণ করে নির্যাতন করা হয়েছিল, যার মধ্যে একজন ডাক্তারকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।

৪. UAE-র সরাসরি সামরিক বিনিয়োগ
হাইল্যান্ডার এভিয়েশন: ফিলিস্তিনের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ

UAE-র রাষ্ট্রীয় অস্ত্র কোম্পানি এজ গ্রুপ ২০২৩ সালে ইসরাইলি ড্রোন স্টার্টআপ হাইল্যান্ডার এভিয়েশনে ১৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। হাইল্যান্ডার এভিয়েশনের এয়ারস্পেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইসরাইলের ড্রোন বহরের কোঅর্ডিনেশন করে এবং এর মাধ্যমে ইসরাইলকে ফিলিস্তিনের আকাশসীমা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা গাজায় বিমান হামলাকে সহজতর করে।

গোস্ট সোলজার: ফিলিস্তিনি হত্যার জন্য AI প্রযুক্তি
UAE-র রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এজ গ্রুপ ইসরাইলি গোয়েন্দা কোম্পানি থার্ডআই সিস্টেমসের ৩০% মালিক, যা "গোস্ট সোলজার" নামের একটি AI সিস্টেম তৈরি করেছে। এই সিস্টেমটি ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় অভিযানের আগে ব্যবহার করে। এটি একটি ভার্চুয়াল সিমুলেশন তৈরি করে, যা ইসরাইলি সৈন্যদের সম্ভাব্য হামলার পরিস্থিতি পূর্বাভাস দেয় এবং কীভাবে কম ক্ষয়ক্ষতিতে ফিলিস্তিনিদের উপর আঘাত হানা যায় তা নির্ধারণ করে।

৫. তুরস্কের ভূমিকা: ইসরাইলি সামরিক অবকাঠামোকে সমর্থন
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আহমেদ জুলু ইসরাইলি কোম্পানি দুরাদ এনার্জির ২৫% শেয়ারের মালিক। এই কোম্পানি ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিগুলোকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যার মাধ্যমে ইসরাইলি বাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বজায় থাকে।

তুর্কি সাংবাদিক মেটিন চিহান এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এরদোয়ানের পুত্র বুরাক এরদোয়ানের শিপিং কোম্পানি গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা চলাকালেও ইসরাইলের সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যায়। এই কোম্পানি ইসরাইলি পণ্য পরিবহনে সরাসরি ভূমিকা রাখে।

৬. মিশরের ভূমিকা: গাজার অবরোধ ও শোষণ

মিশর গাজার রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রেখে ফিলিস্তিনিদের ফাঁদে আটকে দিয়েছে। ইব্রাহিম আরজানি নামে এক মিশরীয় ব্যবসায়ী, যিনি মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির খুব কাছের মানুষ, গাজাবাসীদের কাছ থেকে প্রতিজনকে হাজার হাজার ডলার চাঁদা নিয়ে তবেই তাদের গাজা থেকে বের হতে দিতেন। এই অবৈধ চাঁদাবাজির মাধ্যমে তিনি প্রতিদিন লক্ষাধিক ডলার আয় করতেন।

স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায়, মিশর ক্রমবর্ধমানভাবে ইসরায়েলি গ্যাস আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মিশরের মোট আমদানিকৃত গ্যাসের ৪০-৬০% এবং মোট গ্যাস খরচের প্রায় ১৫-২০% ইসরায়েল থেকে আসে। ইরান এই সপ্তাহে ইসরাইলের হাইফা তে হামলা চালানোর ফলে ইসরাইল সেফটি রিসনে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার আগে পর্যন্ত মিশর সেখান থেকে পাইপলাইনে গ্যাস কেনা অব্যাহত রেখেছিল ।

৭. জর্ডানের ভূমিকা: ইসরাইলকে সুরক্ষা প্রদান
জর্ডান ইরান থেকে ইসরাইলের দিকে ছোড়া মিসাইলগুলো তাদের আকাশসীমায় আটকাচ্ছে, যাতে সেগুলো ইসরাইলে আঘাত করতে না পারে। এটি ইসরাইলকে ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলা থেকে রক্ষা করছে।

উপসংহার: আরব শাসকদের বিশ্বাসঘাতকতা বনাম জনগণের সংগ্রাম
এই তথ্যগুলো স্পষ্ট করে যে, সৌদি আরব, UAE, মিশর, জর্ডান ও তুরস্কের শাসকরা ইসরাইলকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিকভাবে সমর্থন করে চলেছে, অথচ তাদের জনগণ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। ইসরাইলি বসতি সম্প্রসারণ, গাজার গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনি ভূমি দখলের পেছনে এই দেশগুলোর অর্থই প্রধান হাতিয়ার। এসব দেশের জনগণ নিজেদেরকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে না পারলে ফিলিস্তিনকে সাহায্য করা বহু দূরের ব্যাপার

Source: https://www.youtube.com/watch?v=eUU1rJfWFq0
https://www.presstv.ir/Detail/2024/08/07/730869/KSA-and-UAE-funding-of-Israeli-arms-firms-and-illegal-settlements
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×