প্রায়ই ফয়সালের ঘুম ভাঙ্গে কাকের কর্কশ কাঁ কাঁ শব্দে। আজ কোন শব্দ ছাড়াই ঘুম ভাঙ্গে, চোখ খুলে কিছুক্ষন জানালার দিকে তাকিয়ে কাকটাকে খুজে ফয়সাল,আছে কাকটা,পাশে ইলেকট্রিক খুটির তারে বসে। চুপচাপ।জানালার পাশে দারিয়ে কাকটাকে দেখে ফায়সাল কাকটার কি আজ তার মত মন খারাপ!
ভোরের আলোয় কাকটাকে বড় নিঃস্গ মনে হয় ফয়সালের, ঠিক তার মত।
বাইরে যাওয়ার জন্য সিড়ি দিয়ে নামতে,মায়ের সাথে দেখা হয় ...
‘নাস্তা করবি না?’
‘না মা , তারা আছে’।
‘কখন ফিরবি?’
‘জানি না’
কিছুক্ষন মা ফয়সালের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
‘হাসপাতালে যাচ্ছিস?’
‘হ্যা’
‘নেহার জন্য পায়েস দেব?’
‘মা ,নেহা ত কিছু খেতে পারে না’
‘ও’
মা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন...হয়ত কান্না সামলাচ্ছেন।
‘মা, আসি’
ফায়সালের মা নেহাকে অনেক বেশি পছন্দ করেন হয়ত ফায়সালের থেকেও বেশি...তাই হয়ত হাসপাতালে নেহাকে দেখতে যান না।
না যাওয়াই ভাল। নেহার এখনকার অবস্থা ফায়সালের মা সহ্য করতে পারবেন না।
এখনকার আধুনিক হাসপাতাল গুলো দেখতে ভাল লাগে। কেমন যেন পরিশকার ছিমছাম পরিবেশ।মনে হয় কোন বড় হোটেল। ভিজিটিং আউয়ার শুরু হয় নি। ওয়েটিংরুমে ফায়সাল বসে আছে। আশপাশের সোফায় দুই এক জন বশে আছে।দেয়ালে এল সি ডি টি ভি তে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে নতুন একটি গ্রহ আবিস্কারের ভিডিও দেখাচ্ছে।নতুন এই গ্রহে নাকি মানুষের বাস করার উপযোগি পরিবেশ আছে। একজন মানুষ একমুঠো গোলাপ হাতে ঘরে ঢোকে।
ফয়সাল গোলাপ গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে।
নেহার যে ফুলে এল্যার্জি আছে ফয়সাল তা জানত না। নেহার সাথে প্রথম দেখা করার দিন ফয়সাল পাঁচটা গোলাপ নিয়ে যায়। নেহার দিকে ফুলগুলো এগিয়ে দিতে নেহা বেশ আগ্রহ করে ফুলগুলো নেয়।ঘ্রাণ নেয় বলে...
‘পাচটা কেন?’
‘এর বেশি কেনার টাকা ছিল না’
‘আমার কাছে এই পাঁচটাই পাঁচ লক্ষ গোলাপ’ এই বলে নেহা হাচি দেয়। তারপর দিতেই থাকে...
‘তোমার কি শরীর খারাপ?’
‘আমার ফুলে এল্যার্জির মতো আছে।‘
ফয়সাল তাকিয়ে দেখে অল্পক্ষ্ণণের মদ্ধেই নেহার মুখ লাল হয়ে গেছে।
‘তোমার ফুলে এল্যার্জি আছে আগে বললে না কেন?’
‘তাহলে তোমাকে ফুল দিতাম না ।’
নেহা তাকিয়ে বলে ‘আমার ভাল লাগার মানুষ টা, প্রথম আমাকে কিছু দিলো, আর আমি তা ফেরত দিব?
আমি সেরকম মেয়েই না’ বলেই আবার হাচি দিল।
ফায়সাল ঘড়ি দেখে, ভিজিটিং আওয়ার শুরু হয়েছে। এখন যাওয়া যায়।
নেহার কেবিনটা করিডরের শেষ মাথায়। করিডর দিয়ে হাটতে হাটতে ফয়সালের নেহার সাথে প্রথম দেখ হওয়ার কথা মনে পরলো। এমনি এক করিডর ছিল, আর ছিল কিছু ব্যাস্ত ছেলেমেয়েদের ভীড়।
ফায়সালের ক্লাশের বেশির ভাগ ছেলে মেয়েরাই লোখমান স্যারের ক্লাশ ফাকি দেয়।আর যারা যাআরা ক্লাশ করে তারা নিজেদের মাঝে নিচু গলায় গল্প করে আর নাহয় আন্য কিছু নিয়ে নিজেদের ব্যাস্ত রাখে।
এক কথায় বলতে গেলে স্যারের কথা এক কান দিয়ে শোনে আর অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। লোখমান স্যার বিষয় টা জানেন। তবে ক্লাশে কিছু বলেন না। তাই ক্লাশের বাইরে যাকেই পান তাকেই ঝাড়ির উপর রাখেন।সেদিন করিডরে ফয়সালকে পেয়ে যান,
ইউ বয়...
জি, আমাকে বলছেন?
হ্যা ,তোমাকে ছাড়া আর কাকে? কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
লাইব্রেরিতে
Why?
নোট করতে...
নোট ? ক্লাশ তো ঠিক মত কর না আবার নোট......
হঠাত ফিক করে হাশির শব্দ
ফয়সালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মেয়ে মুচকি হেসে চলে যায়। ফয়সাল দেখে মেয়েটি আবার পেছন ফিরে আবার একটু হাশি দিয়ে চলে গেল।পরে ফয়সাল নেহাকে জিজ্ঞেস করেছিল অমন করে হাসার কারন কি ছিল?
স্যার যেভাবে তিরিং বিড়িং করে তমাকে বকছিল, আর তোমার চেহারা যা হয়েছিল না দেখার মত...
আমার জায়গায় তুমি হলে তুমিও না হেসে পারতে না।
এত হাশি খুশি মেয়েটা অদ্ভুত কিছু যন্ত্র পাতির মাঝে শুয়ে আছে। আগের সেই গোলগাল মুখটা আর নেই।শুকিয়ে মমির মতো হয়ে গেছে।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে ফায়সাল। পাশে বসে। নেহার শীর্ণ একটা হাত নিজের হাতে রাখে সেখানে উষ্ণতার কোনো ছোয়া নেই। নেহা চোখ মেলে, কিচুক্ষন তাকিয়ে থাকে ফয়সালের দিকে। রোগটা সব সৌন্দর্যকে কেড়ে নিলেও ওর মায়াবি চোখের সৌন্দর্য টাকে কেড়ে নিতে পারে নি। নেহা যেন কিছু বলতে চায়, কিন্তু বলতে পারে না। নেহার দুচোখ এখন তার মনের ভাষা বলে। আর ফয়সাল তা বোঝে। কিন্তু বেশিক্ষন সে ভাষা পড়া যায় না।অনেক কষ্টের কথা সেখানে লেখা রয়েছে। ফায়সালকে কে যেন বলছে ‘আমি কি ভাল হব না? ফয়সাল’
ফয়সাল জানে না...
কিছুক্ষন পর নেহার বাবা আসেন, ফয়সালকে দেখে বলেন ‘কেমন আছ বাবা?’
‘ভালো’
কতক্ষন এসেছো?
এইতো...
থাকো... আমি বাইরে বসি...
না... আপনি বসুন আমি যাই।
ভাল থেকো বাবা...
চেস্টা করব...
ফয়সাল হাটছে...
কোথায় যাবে জানে না। একটা চক্রব্যূহে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে সে...
এই চক্রব্যূহ থেকে সে কি কখনো পারবে , বের হতে?
ফয়সাল জানে না... সে নিরন্তর ঘুরছে...
তার খুদা নেই ক্লান্তি নেই...জীবনের মানেটাই তার কাছে বদলে গেছে।
হঠাত কাঁ কাঁ শব্দ। ফায়সাল তাকায়। ইলেক্ট্রিক তারে দুটো কাক বসে আছে।
একটা কাক উড়ে দূরে চলে যায়।
অন্য কাকটা বসে থাকে...
চেয়ে থাকে উড়ে যাওয়া কাকটার দিকে...
আলোচিত ব্লগ
ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।
ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।
সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা
সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না
...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না
ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন