somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিলিথ- A witch

১৭ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দৃশ্যঃ১
কিসের যেন শব্দ হচ্ছে। মনে হল টিনের বেড়ার সঙ্গে কিছু একটা ধাক্কা খেল। শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় মাজেদের। কেউ একজন দৌড়াচ্ছে, পায়ের শব্দ শোনা যায়; নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। বিছানা থেকে উঠে ছাউনির বাহিরে আসে। দরজার কাছে আসতেই দেখে- বিরাট একটা ছায়া। নারীর ছায়া, হাতে ধারালো অস্ত্র। সামনে শুয়ে আছে একজন মানুষ। ঠিক দেবী কালীর মত লাগচ্ছে। ঘোর লেগে যায় মাজেদের, ভয়ে কাঁপতে থাকে। অস্ত্রটা চালিয়ে দেয় নারী মূর্তি। আর সহ্য করতে পারে না মাজেদ, লুটিয়ে পরে মাটিতে।

"দৃশ্যঃ২"
"গভীর রাত। রাতের বুকে জমে আছে নির্জন- স্তব্দতা। মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ী হুস করে চির ধরিয়ে যাছে নিরবতার বুকে। চাঁদ মধু আকাসে। এমন রাতে একটা নারী, অপূর্ব সুন্দর নারী হেটে বেড়ায় শহরের রাস্তায়। সবাই জানে। ওটায়তো এখন আলোচনার একমাত্র বিষয়।" বলে পান খাওয়া দাতগুলো বের করে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে থাকে সফর আলী। মাথায় টুপি। মুখে খোচা খোচা দাড়ি। নতুন নতুন রাখতে শুরু করলে যেমন হয়। গায়ে ফতুয়া টাইপ কিছু একটা। পরনে লুঙ্গী। ইদানিং হাতে তসবি রাখা শুরু করেছে। সফর আলী একটা রিক্সা গ্যরেজের মালিক। গতকাল রাতে ওর গ্যরেজের সামনেই ঘটনাটা ঘটে। গ্যরেজে তখন ছিলো মাজেদ। মাজেদ অল্প কিছুদিন হল গ্রাম থেকে এসেছে। ঢাকা শহরে থাকার কোন জায়গা নেই বলে সফর আলী গ্যরেজে তার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। চাক্ষুস সাক্ষী বলতে একমাত্র সেই। তাই তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু গতকাল রাত থেকেই মাজেদ কেমন করছে। কেমন উদ্ভ্রান্তের মত সবার দিকে তাকাচ্ছে। বিড়বিড় করে কীসব বলছে। মাঝে মাঝে প্রচন্ড ভয়ে কাঁপছে। মাজেদের এমন অবস্থা দেখে সফর আলী মাজেদের সাথে থানায় এসেছে। থানার দু'একজন কন্সটেবলের সাথে তার ভালো সম্পর্ক। এলাকার দুই একজন নেতার সাথেও আছে চেনা- জানা ।

ইন্সেপেক্টর সেজাদ বড্ড বিরক্ত। গত কয়েকদিন যাবত শহরের বিভিন্ন জায়গায় খুন হচ্ছে। খুন গুলো সব এক প্যাটার্নে। মাথাটা থেতলে লিঙ্গ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কে করছে, কী কারণে করছে, কিছুই জানা যাচ্ছে না। তারওপর এই লোকটা যতসব গাজাখুরি গল্প বলা শুরু করছে। সেজাদ মাজেদের দিকে তাকিয়ে বলে " কি দেখেছিস বল?"। মাজেদ সেজাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। যেন সেজাদ ভিন গ্রহের ভাষায় কথা বলছে। মাজেদ তার অর্থ কিছুই বুঝতে পারছে না। সেজাদ আবার বলে " গতকাল রাতে যা দেখেছিস বলেফেল, কেন ঝামেলা করছিস?" মাজেদ একবার সফর আলীর দিকে আর একবার সেজাদের দিকে তাকায়। সেজাদ এবার রেগে টেবিলে থাবা দিয়ে দাড়িয়ে উঠে বলে " বল হারামজাদা কি দেখেছিস?"। মাজেদ ভয়ে চেয়ার ফেলে দিয়ে মেঝেতে গিয়ে বসে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। কয়েকজন কন্সটেবল ছুটে আসে। সেজাদ কন্সটেবলদের বলে" ওকে নিয়ে যাও"। পকেট থেকে সিগারেটের প্যকেট বের করে। একটা সিগারেট ঠোঁটে গুজে প্যকেট টা টেবিলের উপর ছুড়ে ফেলে। পকেটে হাত দিয়ে লাইটার খুঁজতে থাকে। সফর আলী বলে ওঠে " শান্ত হন স্যার, এত রাগ করলে চলে! আমি বলছি"। সেজাদ সফর আলীর দিকে তাকায়। সফর আলী টেবিলের উপড়ের প্যকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে নেয়। ফতুয়ার পকেট থেকে লাইটার বের করে সিগারেট ধরিয়ে আগুনটা সেজাদের দিকে এগিয়ে দেয়। সেজাদ সিগারেট ধরিয়ে চেয়ারে বসে পরে। সফর আলী বলতে শুরু করে " সিগারেট খাওয়া ছেড়েই দিছি। ডায়াবেটিস বেড়েছে, সাথে প্রেশারটাও। ডাক্তার বলল ছেড়ে দিতে, তা ডাক্তারকে কে গোণায় ধরে! কিন্তু বউডা মাথায় হাত দিয়ে প্রতিঙ্গা করিয়ে নিলো" একটু লাজুক হয়ে বলল " বড্ড ভালোবাসে তো, ডায়াবেটিস আর ভালবাসা একবার যদি ধরে আর নিস্তার নেই। আবার দুটোয়, বাড়লেও সমস্যা কমলেও সমস্যা। আপনার খাওয়া দেখে হঠাত খেতে ইচ্ছে করলো, কিছু মনে করবেন না। জানেন তো বিড়ি আর নারী, পুরুষ যদি একবার স্বাদ পায় আর ছাড়তে পারে না।" সেজাদ চেয়ারে হেলান দিলো, বড্ড বিরক্ত করছে লোকটা। সফর আলী সামনে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলতে লাগলো, যেন গোপন কোন গুপ্তধনের কথা বলছে " ওটাতো কোন মেয়েছেলে না স্যার, আস্ত একটা ডাইনি। দশ হাত মত লম্বা। মাথার চুল মাটিতে পড়ে। ঐ চুল দিয়েইতো গলা পেঁচিয়ে ধরে। ইয়া বড় বড় হাতের নখ। পা দুটো উল্টো।" চেয়ারে হেলান দিতে দিতে স্বাভাবিক গলায় বলে " অনেকেই দেখেছে"। কোন জরুরী তথ্য দিতে ভুলে গেছে এমন ভাব করে তড়িঘড়ি আবার সামনের দিকে ঝুঁকে বলে "কেউ কেউ নাকি উড়তেও দেখেছে; স্যার"। গলাটা স্বাভাবিক করে পেছন দিকে সরে এসে বলতে থাকে " এ জন্যই তো তসবি নিয়ে ঘুরছি। বউ হুজুরের কাছ থেকে থেকে তাবিজ এনে দিয়েছে আর পই পই করে বলে দিয়েছে রাত ১০ টার পর যেন বাহিরে না থাকি। আসলে স্যার বউডা..."। সেজাদ হাত তুলে থামতে বলে। তবুও সফর আলী বিড়বিড় করে " বড্ড ভালবাসে তো"। দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখা বিরক্তি গলায় উঠে আসে, সেজাদ বিরক্তিকর কণ্ঠে বলে "থামুন, অনেক হয়েছে আর একটা কথাও বলবেন না। আপনি এবার আসুনতো"। সফর আলী মুখ বিকৃত করে বলে " ওহ, বিশ্বাস করলেন না! ঠিক আছে না করলে নাই।" বলতে বলতে সফর আলী চলে যায়। সেজাদ সাব-ইন্সেপেক্ট্রর নাফিজ কে উদ্দেশ্য কর বলে " এই হল পুলিশের চাকরি, নাও এবার ডাইনীকে ধরো। যতসব গাঁজাখুরি গল্প।"
নাফিজঃ কিন্তু ঘটনাটা তো সত্য। গলায় পেচানো দাগ পাওয়া গেছে।
তাচ্ছিলের স্বরে সেজাদঃ হ্যা, ডাইনী চুল দিয়ে পেঁচিয়ে ধরেছে।
নাফিজঃ লোকেতো তাই বলছে। তাছাড়া, রাত ১০ টার পর শহরে আর কোন মানুষ দেখা যায় না। আমার wife ও বলে দিয়েছে ১০ টার পর যেন বাহিরে না থাকি।
সেজাদ ব্যঙ্গ করেঃ তাহলে আর কি, যাও- পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে wife এর কোলে গিয়ে বসে থাকো।

"দৃশ্যঃ৩"
ঘন- গভীর রাত। চারপাশ নির্জন, জমাটা বেঁধে আছে নিরবতা। মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ী হুস করে নিরবতার বুকে চির ধরিয়ে যাচ্ছে। শফিক চোলায় দোকান থেকে মাল খেয়ে টলতে টলতে আসছে। হটাত দেখে রাস্তায় একটা মেয়ে, অসম্ভব সুন্দরী। শফিক এক জীবনে এমন সুন্দর মেয়ে দেখেনি। পাড়ায় নিয়মিত যাতায়াত আছে ওর। পাড়ার ঐ মেয়ে নীলিমা। যার রূপের খ্যতি বাতাসে ভাসে। সেও এত সুন্দর না। নীলিমার চারপাশে অনেক ঘুরেছে শফিক কিন্তু কাছে ঘেঁষতে পারেনি। মেয়েটার দাম বড্ড বেশী। আর আজ এই নির্জন রাস্তায় নীলিমার থেকে চারগুণ সুন্দরি একটা মেয়ে কে একা পেয়ে যায়। স্ট্রিট ল্যম্পের ফ্যকাশে আলোতে ও রূপ যেন ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে। নেশাটা মাথা চারা দিয় শফিকের। সেই চিরচেনা লোভ, আকাংখা, সেই আদিম বাসনার নেশা। আসে পাশে ভালো করে দেখে নেয়। মেয়েটার পিছু পিছু হাটতে থাকে। চাপা গলায় কয়েকবার ডাক দেয়। মেয়েটা থমকে দাঁড়ায়। মাথা ঘুরিয়ে শফিকের দিকে তাকায়, আবার হাটতে থাকে। আর ভালো লাগে না শফিকের, ধৈর্য্যে কুলায় না। রিতিমত দৌড়াতে শুরু করে। মেয়েটাও দৌড়ায়, দৌড়ে এক গলির মধ্যে ঢুকে পড়ে। গলির মাথায় এসে দাড়িয়ে পড়ে শফিক। অপর পাশে গলির মুখ বন্ধ। এক ঝলক হসি ফুটে ওঠে শফিকের ঠোঁটে। রাস্তাটা আবার ভালো করে দেখে নেয়। ধীরে ধীরে গলির ভেতর ঢুকে পড়ে সে। কয়েক কদম এগোতেই দেখতে পায় ধবধবে সাদা পায়ের আঙ্গুল- জামার কিছু অংশ। প্রাচীলের আড়ালেয় লুকিয়ে আছে মেয়েটা। পা টিপে টিপে এগোয় শফিক। প্রাচীলের সামনে গিয়ে দাড়াতেয় চোখ ছানাবারা হয়ে যায়, কী দেখছে ও। মুখ দিয়ে চিৎকার বেরোবার আগেই কি যেন গলা পেচিয়ে ধরে ওর। চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসে। মাথা শক্ত একটা কিছুর সাথে বাড়ী খায়। ঝিমঝিম করতে থাকে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে। কে যেন তার প্যন্ট খুলছে। শিকারী নিজেই শিকার হচ্ছে।

"দৃশ্যঃ৪"
সেজাদ গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তার ঠিক সামনেই লাশটা পড়ে আছে। মাথা থেতলানো, লিঙ্গ কাটা। বীভৎস দেখাচ্ছে। জমাট বাধা রক্ত শুকিয়ে গেছে। কয়েকজন সাংবাদিক হট্রগোল করছে। সেজাদ সেদিকে তাকায়।
সাংবাদিক১ঃ একের পর এক হচ্ছে খুন। সাধারন জনগণ বলছে খুন করছে একটা ডাইনি।
সাংবাদিক২ ঃ গভীর রাতে নির্জন রাস্তায় হেটে বেড়ায় একটা মেয়ে। যে পুরুষ মেয়ের খপরে পড়ছে সেই হচ্ছে খুন।
সাংবাদিক৩ঃ রাতের অন্ধকারে একটা মেয়ে হয়ে উঠছে ডাইনি। খুন করছে একের পর এক।
সেজাদ মৃদু হাসে। কিসব বাজে বকছে। সাব-ইন্সেপেক্টর নাফিজ বলে ওঠে “সকাল থেকেয় বড্ড বিরক্ত করছে।“
সেজাদঃ হুম...কিছু পাওয়া গেল?
নাফিজঃ না স্যার, মাথাটা এমন ভাবে থেতলা করেছে যে identify করা কঠিন।
চলবে..........
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×