ধর্ম কি নাস্তিকে অপমান করছে, না ধার্মিকেরাই? ধর্ম অবমাননা হয় কীভাবে? ধর্মানুভূতি ঠিক থাকে কোথায়? যার জন্য মানুষ খুন করা যায়। ঠিক কী কারণে ধর্ম আঘাতপ্রাপ্ত হয়?

ধর্ম কে নিয়ে আমরা চরমতম পর্যায়ে উঠে এসছি। যেকোন বিষয়ে ধর্মকে টেনে আনছি। নিজেদের সুবিধাভোগের জন্য ব্যাবহার করছি ধর্মকে। একটা গল্প বলি, আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন শুনলাম একজন লোক আর একজন কে বলছে- তার এলাকায় যত মসজিদ আছে, সব মসজিদের সভাপতি সুদ খোর। তার সাথে গেলে সে প্রমাণ দেখাতে পারবে। কথাটা শুনে আমি হাসলাম। কারণ সে যে লোক কে বলছে, সেই লোক নিজেও সুদখোর এবং আমাদের এলাকার মসজিদ কমিটিতে আছে। অথচো করোনার সময় যখন মসজিদ বন্ধ করতে বলা হল, জামাতের সাথে নামাজ বন্ধ করতে বলা হল তখন এই লোক হয়ে উঠলেন বিদ্রোহী। তিনি ছড়াতে লাগলেন "আল্লাহ কে দেখে ভয় করছো না, আর কোরোনা কে দেখে ভয় করছো। মসজিদ বন্ধ করতে বললেই আমরা শুনবো! আমরা আল্লাহর পথে আছি, তিনিই আমাদের দেখবেন।" যে মসজিদ সর্ব সাধারণের জন্য সর্বদাই উন্মুক্ত থাকার কথা সেই মসজিদে এসি, ফ্যান লাগিয়ে আমরা তালা দিয়ে রাখছি। আগে যখন অপরিচিত কেউ অন্য কোন এলাকায় যেত, কোথাও থাকার ব্যবস্থা না হলে তখন মসজিদেই তার ঠায় হত। মানুষের জন্য পথ বন্ধ করে আমরা মানুষকেই ধর্মের পথে টানছি। ধর্মকে ব্যাবহার করছি নিজেদের সুবিধামত। নিজেদের যেসব ক্ষেত্রে সমস্যা সেখানে ধর্মকে পাস কাটিয়ে, যেখানে সমস্যা নেই সেখানে ধর্মকে চরম আকার দিচ্ছি। নয়তো কোথায় কে কোন এঙ, ব্যাঙ, চ্যাঙের ছবি এঁকে বললো মোহাম্মদ (সাঃ) এর ছবি আর আমরা ঝাপিয়ে পড়লাম তার উপর। অথচো খোদ ধর্মের ভেতরে বসে থেকে দেওয়ানবাগী যখন বলেছিলো মহানবী (সাঃ) এর কন্যা পুনর্জন্ম নিয়ে তার বউ রুপে ফিরে এসেছে এবং সে আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারে। তখন কেউ ছুরি-চাকু নিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়েনি। তখন ধর্মের অবমাননা হয়নি, অপমান হয়নি?
এই ধর্মানুভূতি থাকে কোথায়? ঠিক কী কী কারণে কী কী করলে সেটা আঘাত প্রাপ্ত হয়?
খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন করলেন সম্রাট আকবর, যিনি একজন মুসলমান। এবং সে সময় কৃষকের গোলায় ধান উঠতো, তাদের হাতে দুটো টাকা আসতো বলে তারা সেটাকে উদযাপন করতে শুরু করলো। কালের বিবর্তনে সেটা আজকের পহেলা বৈশাখে রুপ নিয়েছে, বাংগালীর নিজস্ব একটা উৎসবে পরিণত হয়েছে। অথচো আমারি এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু বললো মঙ্গল শোভা যাত্রা নাকি হিন্দুদের রথ যাত্রা থেকে এসেছে। এর আগে টিভিতে দেখলাম গ্রামের লোকেরা আর নববর্ষ উদযাপন করে না। কারণ হুজুর বলেছে এটা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি। ধর্মের ক্ষেত্রে শিক্ষিত-মূর্খ সব এক পর্যায়ে নেমে আসে। কোয়ান্টামে কোরান নামে একটি সংগঠন আছে। তাদের মুখপাত্রের একটা বয়ান শুনলাম। সেখানে সে একটা গল্প বলল। একবার একটা গরু মসজিদে ঢুকে গেছে। হুজুর তো ক্ষেপে গেছেন, কার গরু? তখন অন্য একজন বললো- বাদ দেন হুজুর, গরুই তো। বুদ্ধি নেই, বুদ্ধি থাকলে কি আর ঢুকতো। যেখানে ধার্মিকরাই বলে কোরান হল সর্বৌচ্চ জ্ঞান, সেখানে তারাই কোরান কতটুকু বুঝে পড়েছে? জ্ঞান অর্জন না করে গরু হয়ে মসজিদে ঢুকলে হবে?
যেকোন বিষয়ের জন্য মৌলানা, আলেমদের উপর নির্ভর করে। অথচো আলেম, মৌলানা তো ফেরেস্তা নয়, নবী-রাসূল ও নয়। শয়তান তাদের উপর ও ভর করতে পারে। তারাও ভুল হতে পারে। নিজেদের প্রয়োজনে ধর্মকে ব্যাবহার করতে পারে। জাহান্নামে নাকি সর্ব প্রথম এই আলেম, মৌলানারাই যাবে। আমরা সেটা ভুলে যাচ্ছি। যখন মাইক আবিস্কার হল তখন হুজুররা সেটা নিষিদ্ধ করলেন। কারণ এটা খোদার উপর খোদদারি। একি ভাবে রেডিও, টেলিভিশন সব নিষিদ্ধ হল। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ যখন এগুলোই ধর্ম প্রচারের মাধ্যাম হিসাবে ব্যাবহার হচ্ছে তখন এগুলো হালাল হয়ে যায় না। ছবি তোলা এখনো ধর্মে হারাম। অথচো হুজুররা ওয়াজ রেকর্ড করে দেদারসে ব্যাবসা করে যাচ্ছে। ধর্ম প্রচারের জন্য কবে কোন নবী রাসূল অর্থ নিয়েছে?
স্বয়ং মহান আল্লাহর বন্ধু মহানবী (সাঃ) জীবিকার জন্য ব্যাবসা করতেন। অথচো আমরা নামাজ পড়িয়ে, আজান দিয়ে খাচ্ছি। এ কোন ধর্মের পথে হাটছি আমরা?
নাস্তিকেরা কিছু বললেই ধর্ম ছোট হয়ে যায়, অবমাননা হয়। সঙ্গে সঙ্গে একদল ধার্মিক ধর্মকে রক্ষা করতে, নবীর সম্মান কে রক্ষা করতে বেড়িয়ে পড়ে। এরা কি বুঝতে পারছে, যে বিশ্বজাহান সৃষ্টি করেছে সেই সৃষ্টিকর্তা কে এরা কতটা ছোট করছে। যে এই ব্রমান্ড সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সৃষ্ট ছোট্ট পৃথিবীতে, ছোট্ট ছোট্ট কিছু মানুষ তাঁর ধর্মকে, তাঁর বন্ধু নবীর সম্মান রক্ষা করছে। সৃষ্টিকর্তা কি এত দূর্বল? যে তিনি তাঁর নিজের সৃষ্ট ধর্মকে, তাঁর বন্ধুর সম্মান কে রক্ষা করতে পারছেন না? তাঁকে তাঁরই সৃষ্ট মানুষের সহায়তা নিতে হচ্ছে?
অজস্র ধার্মিকের মুখে শুনেছি, বিজ্ঞানীরা নাকি কোরান পড়েই বিজ্ঞানের সব অবিশ্বাস্য আবিস্কার গুলো করেছে। এটা কত বড় অযৌক্তিক সেটা কি তারা বুঝতে পারছে। কোরান পড়ে তারা বিগ ব্যাঙ্গ আবিস্কার করলো তারপর কোরানকেই অস্বীকার করলো? এত এত আলেম, হাফেজ কোরান যাদের ঠোটের আগায় ঠোটস্থ তারা কেন বিজ্ঞানী হতে পারছে না? কারণ তারা বিজ্ঞান সম্পর্কে জানেই না। বিজ্ঞান বইয়েও যখন ধর্ম খোজা হয় তখন আর কী হবে? ধর্মের জন্য তো সম্পূর্ণ একটা বই-ই আছে। তারপরও বিজ্ঞান বইয়ে ধর্ম কেন থাকতে হবে? এদের ধর্মের উপর বিশ্বাস এতটাই কম, যে এরা জানে সম্পূর্ণ একটা বই পড়েও কেউ আস্তিক হবে না, মাত্র একটা চ্যাপ্টার পড়ে সবাই নাস্তিক হয়ে যাবে?
নাস্তিক প্রসঙ্গ আসলেই বলে- কেউ নাস্তিক নয়, তারা ইসলাম বিরোধী। তাকে কোরান পড়ার নসিহত দেওয়া হয়। কেন পড়বে সে কোরান? আপনারা নিজেরা কী পড়েন? এমন কিছু কি, যে কোরান পড়লে আর কেউ নাস্তিক হবে না? কিন্তু বিজ্ঞানীরা তো হচ্ছে, কোরান পড়ে কোরান থেকে আবিস্কার করে কোরান কেই অস্বীকার করছে। পৃথিবীতে ২০৬ টা ধর্ম আছে (উইকিপিডিয়ার মতে), কয়টা ধর্ম সম্পর্কে আপনারা জানেন? জন্মসূত্রে একটা ধর্ম পেয়ে বলছেন এটাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। আমাদের ৯০% ভাগ মুসলমানের দেশে যখন একটা বাচ্চা জন্ম নেয়, তখন সর্ব প্রথম তাকে আযান শোনানো হয়। বাচ্চা বুঝতে শেখার আগেই তাকে বলা হয়, এটা করো না আল্লাহ পাপ দিবে, ওটা করো না আল্লাহ গুণা দিবে। সেই বাচ্চা বড় হয়ে যখন নাস্তিক হবে সে তো ইসলাম ধর্মের বিপরীতেই লিখবে, কারণ সে ইসলাম সম্পর্কে যতটা দেখেছে, জানে অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানে না। এটা কমনসেন্স।
যখনি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তখনি এমন একটা কোরান বের করে বলা হয়, দেখো কোরানের কিছু হয়নি। এটা কত বড় লজ্জার সেটা বুঝতে পারছেন? ৯০ % মুসলমানের দেশে পাঁচ হাজার দোকানের মধ্যে মাত্র একটা কোরান, মাত্র একজন ধার্মিক, মাত্র একজন কোরান পড়তেন। সৃষ্টিকর্তা এত ছোট? ৫ হাজার দোকানে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ছাই করে দিয়ে মাত্র একটা কোরান রক্ষা করে তাঁকে প্রমাণ করতে হয় তার অপার ক্ষমতা।
কোরান কে কখনো খুলে আগুনে ফেলে দিয়ে দেখেছেন পুড়ে কি না? যদি কোরান আগুনেই নাই পুড়ে, তাহলে প্যারিসের কোরান পুড়ানোর ঘটনায় এত লাফালাফি করার তো কোন কারণ ছিলো না। কোরান কোন বই আকারে নাজিল হয়নি, হয়েছে আয়াত আকারে। পরে সেটা কে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে সাধারণ কাগজে, সাধারণ কলিতে। এটা কেন তারা ভুলে যায়? ধর্মের প্রতি যদি তাদের এত বিশ্বাস থাকে তবে ধর্ম কে প্রমাণ করতে এত মরিয়া কেন তারা? সৃষ্টিকর্তা কোরান কে রক্ষা করবেন বলতে তিনি আগুন, পানি থেকে রক্ষা করবেন বোঝাননি, বুঝিয়েছেন কোরানের আয়াত বিকৃত হতে দিবেন না।
ধর্মের এই বাড়াবাড়িতে ধর্ম বড় হয় না, বরং ছোট হয়। এগুলো নিয়েই নাস্তিকে হাসাহাসি করে, তারা ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার রসদ পায়। মহানবী (সাঃ) এর কথায় কেউ ধর্ম গ্রহণ করেনি। তারা আগে দেখেছে মহানবী (সাঃ) কতটা সৎ, চরিত্রবান। তাঁকে দেখে, তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হবার পর, তিনি যখন ধর্মের কথা বলেছেন তখন মানুষের ধর্মের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে। সব ধর্মই এমন ভাবে প্রচার হয়েছে। প্রথমে তারা ধার্মিক কে দেখে, ধার্মিকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরে তারা ধর্ম কে জানতে শুরু করে। আপনি ছুরি-চাকু নিয়ে ভয় দেখিয়ে জোর করে মানুষ কে ধর্ম মানাতে পারেন কিন্তু সে ধর্মের প্রতি না তাদের ভালোবাসা থাকবে, আর না বিশ্বাস। সুযোগ পেলেই তারা ধর্ম পরিত্যাগ করবে। হযরত ওমর তো মহান যোদ্ধা ছিলেন। তিনি কবে তোলায়ারের ধারের উপর রেখে মানুষ কে ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন। স্বয়ং মহানবী (সাঃ) যখন ধর্ম প্রচার করতেন, তখন কত বিধর্মী তাকে গালি দিয়েছ, তাঁকে গালি দেওয়ার অপরাধে তিনি কবে কার মাথা কেটেছেন?
তাছাড়া আল্লাহ্ রাসূল তো কিয়ামতের আলামতের কথা বলেই দিয়েছেন। তবে কি আপনারা কিয়ামত কে আটকাতে চাচ্ছেন। কিয়ামত কে আটকে আল্লাহ্ রাসূল কে, কোরান কে মিথ্যা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন? আল্লাহ্ রাসূল যা বলেছেন, কোরানে যা আছে তা তো আটকানো যাবে না, হবেই। শুধু শুধু কেন বৃথা চেষ্টা করতেছেন? যেদিন আল্লাহ্ রাসূলের নাম নেওয়ার মত আর কোন লোক থাকবে না, সেদিন কিয়ামত হবে। আমি তো দেখতেছি কিয়ামতের সেই কঠিন আজাব ভোগ করার মত মানুষই থাকবে না, তার আগেই ধর্মের নামে সব খুন হয়ে যাবে।
ধর্ম নরম হতে শেখায়, উগ্র নয়। ধার্মিক হন ধর্মান্ধ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



