somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমঝুপী নীলকুঠিঃ বিস্মৃতপ্রায় সোনালী অতীত

১২ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পূর্বতন নদীয়া, তৎপর কুষ্টিয়া এবং হাল মেহেরপুর জেলা ও থানাধীনে দুদিকে কাজলা আর একদিকে ছেউটে নদী ঘিরে রেখেছে আমঝুপী গ্রাম, এই আমঝুপীর পথেই একদিন মোঘল সেনাপতি মানসিংহের বিজয় রথ ছুটেছে, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার অধিপতি নবাব আলীবদ্দী খা-র মৃগয়ার স্মৃতিও রয়েছে এই আমঝুপীতেই।

এ গ্রামের দক্ষিণ পশ্চিম কোনায় নদীর কিনার ঘেঁসে গড়ে উঠেছে আমঝুপী নীলকুঠি। যার পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছেউটে নদী। শত বছরের ইতিহাস ধারণ করে নীলকুঠি এখনও বর্তমান। অতীতে এ নীলকুঠি জেনারেটরের আলোয় ঝলমল করত, ঘোড়াশাল, কুকুর-শালা, হাঁস-মুরগীর খামার ছিল, ছিল ফুলের বাগানসহ ইংরেজদের জন্য আধুনিক আরাম আয়েসের সকল উপকরণ। অনেক অত্যাচার, নিপীড়নের নীরব সাক্ষী হয়ে আজও বর্তমান আমঝুপী নীলকুঠি।



জনশ্রুতি আছে যে, পলাশীর পরাজয়ের নীলনকশা এ নীলকুঠিতেই রচনা হয়েছিল, এখানেই রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে ষড়যন্ত্রীদের শেষ বৈঠক হয়েছিল। কুঠিয়াল কেনী-সিম্পসন-ফাগু্সন ও তাঁদের সহযোগীদের অত্যাচার- শোষণ-নির্যাতনের স্মৃতি নিয়ে আজও দাড়িয়ে আছে এই আমঝুপী নীলকুঠি। নীলচাষ রহিত হবার পর সাহেবরা এ নীলকুঠি পরিত্যাগ করে। এরপর, আমঝুপী নীল কুঠির ঘটে হাতবদল, সাহেবদের পর হাতবদল হয়ে আমঝুপী নীলকুঠি মেদিনীপুর জমিদারী কোম্পানির কাচারিতে পরিণত হয়। কিন্তু দেশ ভাগের পর জমিদারী উচ্ছেদের সাথে সাথে সে অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। পরবর্তীতে নীলকুঠি অযত্ন আর অবহেলায় প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭৮ সালের ১৩ই মে, খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ডের “ আমঝুপী অধিবেশন ”-এ আমঝুপী স্বীকৃতি পায় পর্যটন কেন্দ্র রূপে। তৎকালীন খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ডের তদারকি ও অর্থায়নে প্রায় আঠার লাখ দুই হাজার টাকা ব্যয়ে এ কুঠি বাড়ির সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। বর্তমানে নীল কুঠির যে আমগাছগুলি তা ওই সময়েই লাগান। পরবর্তীতে ২৬ শে জুন, ১৯৮০ সালে দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য নীলকুঠিতে একটি পিকনিক কর্নারের উদ্ভোধন করেন তৎকালীন খুলনা বিভাগের কমিশনার জনাব মোঃ আবু হেনা।



কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, অযত্ন আর অবহেলায় নীল কুঠির অধিকাংশ সৌন্দর্য আজ কাল গর্ভে বিলীন, আগের মতো দর্শনার্থীর ভিড় এখন আর দেখা যায় না। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নীল কুঠির অধিকাংশ জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে, সীমানা প্রাচীরের অভাবে গরু, ছাগল যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায় যা দর্শনার্থীদের বিরক্তির উদ্রেক করে। নীলকুঠির সেই বিখ্যাত ফুল বাগানটি আজ মৃতপ্রায়। অযত্ন আর অবহেলায় নীলকুঠির আজ বেহাল দশা। এখন দর্শনার্থীও নেই আগের মতন। নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নীল কুঠি ও এর সোনালী অতীত। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে নীলকুঠিকে তুলে ধরতে এর যত্ন ও সংস্কার করা একান্ত আবশ্যক। তবেই নীল কুঠি ফিরে পাবে তার পুরাতন রূপ, আবার নীলকুঠি ঝলমল করবে দর্শনার্থীদের ভিড়ে।

পরিশেষে আমঝুপী নীলকুঠীর গায়ে শ্বেত পাথরে উৎকীর্ণ লিপিতে তৎকালীন কুষ্টিয়ার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার লেখা লাইনগুলো মনে পড়ে যায়, “তার ( আমঝুপী নীলকুঠি ) এই আলোকাভিসার আজ যদি ইতিহাসের সরণি বেয়ে স্বকাল ও ভাবীকালের মানুষকে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করে তবেই তার এই পুনঃজন্ম সার্থক হবে- সফল হবে এর ( আমঝুপী নীলকুঠি ) স্বপ্নদ্রষ্টা ও পরিকল্পকদের শ্রম ও সংকল্প”। তাই নীলকুঠির দিকে নতুন মনোযোগই পারে এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও পরিকল্পকদের শ্রম ও সংকল্প সার্থক করে নতুনভাবে স্বকাল ও ভাবীকালের মানুষকে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করতে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×