
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের সরকারগুলো ব্যক্তিত্বহীন, কাপুরুষ, অথর্ব ও ভাবলেশহীন। বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে, গরু-মহিষ ও মাছ নিয়ে যাচ্ছে, অথচ সরকার এসব ব্যাপারে নির্বিকার। সরকারের উচিত বিরোধী দলসহ একটি জাতীয় কনভেনশন করে বিএসএফের বাংলাদেশী হত্যার প্রতিবাদ করা। এখনই বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আদালতে দাবি তুলতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরকালেও সীমান্তে বাংলাদেশীকে নির্বিচারে হত্যা করেছে বিএসএফ।
বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, সীমান্তের মানুষ কাকে ভোট দিয়েছিল। এর কি একটুও দায়বদ্ধতা নেই? তার ওপর এখন বলা হচ্ছে, আমাদের নাকি ট্রানজিট দেয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে। এটা দিয়েও কি সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষা করা গেছে। আজও (গতকাল) সাতক্ষীরা সীমান্তে এক বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ভারতে বানরকে গুলি করার অপরাধে এক চিত্রনায়ককে সাজা দেয়ার কথা উল্লেখ করে এক বক্তা বলেন, ভারতের কাছে বাংলাদেশী মানুষের দাম বানরের চেয়ে কম। তারা আবার জোর গলায় মানবাধিকারের কথা বলে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবি করে।
‘ট্রিগার হ্যাপি : এক্সেসিভ ইউজ অব ফোর্স বাই ইন্ডিয়ান ট্রুপস ইন দ্য বাংলাদেশ বর্ডার’ নামের ৮১ পৃষ্ঠার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী নির্বিচারে বলপ্রয়োগ, নির্যাতন, আটক করা ও হত্যাসহ অসংখ্য প্রমাণ পেয়েছে অধিকার এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। প্রতিবেদনে ভারত সরকারের প্রতি দায়মুক্তি ব্যবস্থা বাতিল করে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী বিএসএফ সৈন্যদের বিচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বিএসএফ নিয়ন্ত্রণহীন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব হলো, সীমান্তের অপরাধ দমন করা। অথচ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রায়ই অত্যন্ত দরিদ্র ও নিরীহ কৃষক বা শ্রমিকরা হত্যা এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন বিশ্বাস চলতি বছরের মার্চে বিএসএফের গুলিতে সন্দেহভাজন গরু পাচারকারী হিসেবে তার ভাতিজা হত্যার বিষয়টি বর্ণনা করে বলেছেন, ‘আমি লাশ দেখতে গিয়েছিলাম। আমাদের বাড়ি থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে পড়েছিল। সেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ ও রাজনীতিবিদ জড়ো হয়েছিলেন। সে যখন চিত্ হয়ে শুয়েছিল, তখন বিএসএফ তাকে গুলি করে। তারা তার কপালে গুলি করেছিল এবং বুলেট মাথা ভেদ করে মাটির কয়েক ইঞ্চি গভীরে ঢুকে পড়েছিল। সে যদি দৌড়াত, তবে গুলি লাগত তার পিঠে। তারা (বিএসএফ) স্রেফ তাকে হত্যা করেছে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত নওগাঁর সাপাহার উপজেলার কৃষক ফারুক হোসেন। যুবক ফারুক জানান, ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি তারা মাঠে কাজ করছিলেন। সীমান্তে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অনেক ভেতরের ওই মাঠে আসে বিএসএফ সদস্যরা। তারা মদ্যপ ছিল। পাশের নদীর জেলেদের কাছে মাছ চেয়ে না পেয়ে তারা ক্ষুব্ধ হয়। তারা মাঠে এসে কৃষকদের লক্ষ্য করে অতর্কিতে গুলি ছোড়ে। ফারুকের পায়ে গুলি বিদ্ধ হয়।বিএসএফের গুলিতে নিহত ১৫ বছরের কিশোর আবদুর রাকিবের পিতা আবদুস সামাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশি-বিদেশি মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার কিশোর ছেলে হত্যার বর্ণনা দেন। আবদুস সামাদ জানান, তার বাড়ি নওগাঁর সাপাহার উপজেলায়। তার ছেলে রাকিব সকালে মহিষ চরাতে বাড়ির পাশের মাঠে যায়। বিএসএফ ওপার থেকে রাকিবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বিএসএফ এসে তার ছেলের লাশের পা ধরে টেনে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যায়। তারা আবদুস সামাদের প্রায় ৬০ হাজার টাকা মূল্যের মহিষটিও নিয়ে গেছে। দুপুর ১২টায় দিনেদুপুরে এ ঘটনা ঘটে বলে তিনি জানান। নিহত রাকিব তার ছোট ছেলে। বড় ছেলেও কৃষিকাজ করে। বিএসএফের হাতে নির্মমভাবে প্রহৃত ৩ ছেলের পিতা কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডল বলেন, সন্দেহভাজনরা পালিয়ে যাওয়ায় বিএসএফ সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়েছিল। তারা ৩ ছেলেকে ঘেরাও করে কোনো কারণ না বলেই রাইফেলের বাঁট দিয়ে পেটাতে, লাথি ও চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করে। সৈন্যরা ছিল নয়জন। তারা আমার ছেলেদের নির্দয়ভাবে পেটায়। এমনকি ছেলেরা মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও বিএসএফ সদস্যরা নির্মমভাবে তাদের বুক ও অন্য স্পর্শকাতর স্থানে লাথি মারতে থাকে।
সূত্র: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:১৩