somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানে যাপিত জীবন- পর্ব ০৩ (How do you make friends without drinking?)

১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাচ্চাকালে Snow white বা তুষার শুভ্র’র গল্প পড়েছি। এক অনিন্দ্য সুন্দর বাচ্চা মেয়ের গল্প, যে কিনা ছিল তুষারের মত সাদা। তখনও বুঝিনি, তুষার যে এত সাদা হতে পারে। তাইতো সাদা নামক বিশেষণকে বিশেষায়িত করতে তুষারের ব্যবহার। আর এখন সকালে চোখ খুলেই সবুজের পরিবর্তে চারপাশেই শুধু ধবধবে সাদা দেখি।


জাপানের সর্ব উত্তরের দ্বীপ এই হোক্কাইডো তার প্রচণ্ড শীত আর অফুরন্ত তুষারের জন্য বিখ্যাত। জাপানের অন্যান্য অঞ্চলের প্রচুর মানুষজন এখানে তুষার দেখা এবং স্কিইংয়ের জন্য আসে। প্রায় ৪ মাস ব্যাপী তুষারপাতের শুরু হয়েছে। মাঠঘাট থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই এখন বরফাবৃত। সাইকেল দিয়ে ভ্রমণ বন্ধ হয়ে গেছে অনেকদিন। পায়ে হেটে সকালে একবার এসে ল্যাবে ঢুকি আর সন্ধ্যায় বের হই। বাইরে এখন বেসম্ভব ঠাণ্ডা, প্রায়ই হিমাংকের নিচে ৭/৮ থাকে। বেশি কিছু করার উপায় নাই। জাপানিজরা অবশ্য এই সময়টা বেশ উপভোগ করে। কাল থেকে ৯ দিনের জন্য নতুন বছর উপলক্ষে ছুটি হয়ে যাচ্ছে। চলে যাবে সব পাহাড়ের উপর স্কিইং করতে। অন্য দেশ থেকেও এসময় প্রচুর পর্যটক আসে হোক্কাইডোতে শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যে। আমার পরিচিত ইউরোপের অনেক ছাত্রের এখানে পড়তে আসার অন্যতম কারন এই স্কিইং। জাপানিজদের এই সময়টা উপভোগ করার আরেক উপায় হল পার্টি। বছর শেষের অনেক অনেক পার্টি হয় এখানে। ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ পার্টিতে গিয়ে পরিচয় হয়েছে অনেক জাপানি ছাত্রের সাথে। বন্ধুত্বও হয়েছে। কয়েকদিন পরই দুইজন লাঞ্চে ডাকল। গেলাম। অনেক কথা হল, তারা আমাকে, আমার সংস্কৃতিকে জানতে চায়। জানতে চায় মুসলমানদের সম্পর্কে। সবচেয়ে বড় কথা, তারা একদমই বর্ণবাদী না। বৈচিত্র্যতাকে সম্মান করে এবং বুঝতে চায়। একজনতো ইতোমধ্যেই ১০ টা দেশ ঘুরে ফেলেছে। পড়াশুনার ফাঁকে কাজ করে নিজের টাকায়। মাত্র ৩য় বর্ষে পড়ে ও। আর পড়াশুনা শেষ করে দেশে দুই বছর চাকরি করা আমার... এটাই প্রথম বিদেশ ভ্রমণ।
আরেকজন ডাকল অন্যদিন, ওর অবশ্য ভিন্ন উদ্দেশ্য। সে আর তার কিছু বন্ধু মিলে একটি অ্যাপ তৈরি করছে, যা শুধু মাত্র হালাল বা ভেগান খাবার বা রেস্টুরেন্টের সন্ধান দিবে। আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিল। সাহায্য করতে পেরে আমিও খুশি, শেষ পর্যন্ত আমারইতো কাজে লাগবে।
আরেক পার্টিতে আমার এক ল্যাবম্যাট প্রশ্ন করে বসল… So, How do you make friends without drinking? তার এই প্রশ্নের কারণটাও ব্যাখ্যা করেছে আগেই। জাপানিরা জন্মগত ভাবে একটু সাই বা অন্তর্মুখী প্রকৃতির হয়। সহজে অপরিচিত কারো সাথে কথা বলা বা তাদের কথায় টোকা দেয়া পছন্দ করে নাহ। ফলস্বরূপ, সহজে তাদের বন্ধু বা শত্রু কিছুই হয় না। তারা যখন ড্রিংক করে তখন একটু ওপেন হয় এবং কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আর এই কারনেই তার এই প্রশ্ন। তার প্রশ্নের জবাবে আমি বেশ কিছুক্ষন হেসেছিলাম। তারপর আমাদের টং দোকানের চায়ের আড্ডার গল্প শুনালাম। বললাম, চা খেতে খেতে আমরা পাশে বসা অপরিচিত লোকটার জুতার দাম থেকে শুরু করে রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির ত্রুটি নিয়েও আলোচনা করতে পারি। আর কোন বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা না থাকলেও চা খেতে থাকা অপরিচিত ভদ্রলোকটি আপনাকে পরামর্শ দিতে ঠিকই এগিয়ে আসবে। বন্ধু না হয়ে যাবেন কোথায়??!!
গত একমাসে আরও অনেক কিছু করেছি…
* আসল কাজ বলতে, আমার গবেষণার একটা প্রাথমিক প্রস্তাব প্রফেসরের কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছি। কাজ শুরু করব এখন, মেশিনগুলোর খুঁটিনাটি শিখছি।
* আর্টিকেল লিখার পদ্ধতি নিয়ে একটি ফ্রি কর্মশালা শেষ করেছি। প্রশিক্ষক ছিলেন বিখ্যাত জার্নালের ম্যানেজিং এডিটর।
* বায়োটেকনোলোজি বিস্তারে কাজ করা সিঙ্গাপুরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপকের সেমিনার উপভোগ করেছি। ওই ভদ্রলোক ঝানু পাব্লিক, প্রযুক্তি বিস্তারে পুঁজিবাদীদের বাঁধা কাটানোর উপায় সম্বন্ধে প্রশ্ন করার পর আমাকে বাংলাদেশের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সাহসী পদক্ষেপের উদাহরণ টেনে উত্তর দিলেন। আর হাওয়াই দ্বীপে উদ্ভাবিত পচন প্রতিরোধী পেঁপে’বীজের বাংলাদেশ যাত্রার অন্তরায়গুলো বলে দিলেন। বৈশ্বিক চিন্তা বুঝি একেই বলে। কত কিছু যে শেখার বাকি…
* আমার ডরমের ক্রিসমাস পার্টিতে গিয়ে পেটপুরে কেক খেয়ে দিয়েছি। ওরা নাচ দেখানোর পর নিজেরাই আবার চকোলেটও উপহার দেয়। ভাবা যায়। :P
* বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের উদ্যোগে বিজয় দিবস ও পিঠা উৎসব পালন করেছি। দেশের বাইরে আসার পর দেশের মর্ম যে এভাবে অনুভূত হয়, জানা ছিল না। নিজেরা ভাপা পিঠা তৈরির চেষ্টা করেছি, খুব বেশি খারাপ হয়নি অবশ্য। সাথে ছিল ভাবীদের বানানো কয়েক রকম পিঠা। দিনটা ভাল কেটেছে...
তবে, মা'র হাতের ভাপা পিঠা না খেয়ে কোন শীতকাল গিয়েছে বলে মনে পড়ে না, কিন্তু এবার যাচ্ছে... মাঝে মাঝেই স্টেশনের পাশ দিয়ে যাবার সময় মনে হয়... এখনই যদি ট্রেনে চড়ে বিমানবন্দর হয়ে দেশে চলে যেতে পারতাম...
কিন্তু, পরক্ষনেই মন বলে... তাই কি হয়? বোকা ছেলে....

বেসম্ভব ঠাণ্ডা... ? তাতে ওনাদের কি?

দিন দুপুরে...

আমার স্কুল..

ক্রিসমাসের আগে...


সন্ধ্যে নামার আগে... বাড়ি ফেরা্‌...
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×