somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানে যাপিত জীবন- পর্ব ০৮

০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেশ কয়েক বছর থেকেই কেন যেন ঈদের আনন্দটা আর বাচ্চা কালের মত নেই। দুরন্ত শৈশবের নানা অর্থহীন কীর্তিকলাপের মাঝে যে সুখ খুঁজে পেতাম, বড় হয়ে যাবার পর অনেক অর্থবহ সামাজিক রীতি পালনে; তা পাই না। আর এবার... পরিবার পরিজন ছাড়া বিদেশের মাটিতে প্রথম ঈদ যেন নিরানন্দের নতুন ধাপ চেনাল। ভাগ্য ভাল ছিল বলে ল্যাব থেকে ছুটি নিতে হয়নি, রবিবার ছিল। একটু সকালেই উঠেছিলাম ঘুম থেকে। গোসল সেরে আগেই মায়ের বলে দেয়া রেসিপিতে বানানো ফিরন্নি খেয়ে আমি আর আসাদ ভাই চলে গেলাম মসজিদে। আটটায় ঈদের জামাত ছিল। সীমিত পরিসরে। আমরা বাঙ্গালীরা কি সীমিত পরিসর মানি! জামাতে অধিকাংশই মনে হয় বাঙ্গালী ছিলাম, শুধু স্বভাব সুলভ কোলাকুলিটা করা হয় নি।
নামাজ শেষ করে গেলাম ইমাম ভাইয়ের বাসায়, সেমাই খেয়ে উনাকে নিয়ে আমার বাসায় ফিরলাম। নাস্তা খেয়ে আড্ডা হলো বেশ কিছুক্ষণ। তারপর দাওয়াত খেতে চলে গেলাম শরীফ ভাইয়ের বাসায়। ভাই একাই বিশাল আয়োজন করে আমাদের মত অভুক্ত ব্যাচেলরদের সুপ্ত মনবাসনা পূরণ করলেন। তারপর মিনহাজ ভাইয়ের পরামর্শে আমি আর শরীফ ভাই বিনা বাক্যে একমত হলাম যে, প্রচুর বিয়ে করতে হবে। :p :p । ওখান থেকে ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। শুরু হল এখানকার বড় ভাইদের ফোন। খোজ খবর নিচ্ছিলেন। কি করছি ঈদের দিন! করোনা পরিস্থিতির কারণে কারো বাসায়ই যাওয়া হয়নি। দুই-একটা দাওয়াত ফিরিয়েও দিয়েছি আমি। তবে সজল ভাই, ভাবীদের নিয়ে বাসার নিচে এসে হাজির। নিচে নামতেই ঈদের খাবার ভর্তি প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিলেন। রাতের ভাল খাবারের ব্যবস্থাটাও হয়ে গেল। মা আর ভাইয়া যেটা রান্নার জন্য আমাকে পীড়াপীড়ি করছিল। এভাবেই কেটে গেল ঈদের দিন। তবে পরিবারের অভাব প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেছি। ঐদিন বাংলাদেশের তেমন কারো ফোন পাইনি বা দেইনি। কারণ, বাংলাদেশে যে তখনও রোজা চলছে। ভিন্ন সময়ে থাকার এই এক ঝামেলা।


সবচেয়ে বেশি মন খারাপ হয়েছে পরের দিন সকালে। আমি তখন ঘুম থেকে উঠে ল্যাবে। দেশে ঈদের দিন। আম্মাকে কল দিলাম। মোবাইলের পর্দার এপাশে এপ্রোন পড়া আমি আর অন্য পাশে মা কাঁদছে। এটাই মনে হয় মায়ের প্রথম ঈদ, যেটাতে এক ছেলেও কাছে নেই। ভাইয়ার ডিফেন্সে চাকরির কারণে একটা ঈদ কখনোই করতে পারত না। তবে তখনও আমি ছিলাম। এবার কেউই ছিল নাহ। তাই কান্নাও আর থামছিল নাহ। :☹ ফোনের এপাশে নিরুপায় আমি শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম স্তব্ধ হয়ে। ঐদিন অবশ্য ল্যাব থেকে জলদি ফিরে মাকে সময় দেয়ার চেষ্টা করেছি। এলাকার বড় ভাইরাও আমরা দুইভাই নেই বলে নিজ দায়িত্বে আম্মার হাতের চটপটি খেতে চলে গিয়েছিল। আলহুামদুলিল্লাহ.।।


এদিকে আমার এখানকার জীবন প্রায় স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরী অবস্থাও ধীরে ধীরে কমে আসছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া আমার কাজগুলো শুরু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ছাত্রদের যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় ভাবে, যেই ছাত্ররা পার্টটাইম চাকরি হারিয়েছে বা যাদের আয় কমে গিয়েছে, তাদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। আমাদের ফ্যাকাল্টি (এগ্রিকালচার) প্রায় বার’শ ছাত্রছাত্রীকে চাল আর দুধ উপহার দিয়েছে। আসাদ ভাইয়ের ভাষায় ‘ত্রান’ দিচ্ছে। যেটা আনতে গেলে, ফ্যাকাল্টির ডিন ছাত্রদের বলে “অনেগাইশিমাস”। মানে “দয়া করে” নিয়ে যান। আবার, যেসব ছাত্রের অনলাইন ক্লাস করার জন্য প্রয়োজনীয় নোটবুক বা ইন্টারনেট মডেম নাই, তাদের ফ্রিতে ধার দিচ্ছে। এর মাঝেই একদিন, আমার প্রফেসর আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ল্যাবে এসে হাজির। বলল, আমার নাকি সাহায্য লাগবে। উনি ফ্যাকাল্টির অ্যালাম্নাই এসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত। যেসব ছাত্রদের আয় কমে গিয়েছে, অ্যালাম্নাই এসোসিয়েশনও তাদের প্রণোদনা দিবে। তার জন্য একটা অনলাইন ফর্ম তৈরিতে আমার সাহায্য প্রয়োজন। খুশি মনে কাজ করে দিয়ে আসলাম। ওরা যে কতটা সংবেদনশীল বুঝা গেল। শুধুমাত্র ছাত্রদের না, পরিবারের আয় কমে যাবার প্রভাব যেন তাদের উপরে না পড়ে, সেই ব্যবস্থাও করছে। বাহ...
আর সামারে প্রকৃতির কথা নাই বা বললাম; ফুলের যেন শেষ নেই। একটা পর একটা ফুটেই চলেছে। অবিরাম। শুধু অবাক হয়ে দেখেই যাচ্ছি...



সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×