প্রায় ৭০ শতাংশ জাপানী মানুষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী না। ধর্মপালন না করার হিসেবে সংখ্যাটা হয়ত আরও বেশি। কিন্তু ঐতিহ্যগত ভাবে জাপানে দুটি ধর্মের প্রাধান্য রয়েছে। শিন্টো আর বৌদ্ধ। শিন্টো ধর্ম আসলে জাপানের প্রথাগত বা আচারনির্ভর ধর্ম। কিছু কিছু দলিলে খ্রিস্টের জন্মের ৬৬০ বছর পূর্বে শিন্টো ধর্ম উৎপত্তি লাভ করেছে বলে উল্লেখ আছে। যেখানে তারা মূলত তাদের পূর্বপুরুষ, প্রকৃতি (কামি) বা খোদার উপাসনা করে। আপনি জাপানের পথে পথে ছোট আকারের শিন্টো স্রাইন বা উপাসনালয় দেখতে পাবেন। যেখানে নেই কোন ভিড়। শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশ। তবে, ওরা নাকি বিশেষ করে পরীক্ষার আগে বা গাড়ি কেনার পর দুর্ঘটনা না হবার জন্য ঐখানে প্রার্থনা করতে যায়। আর ওদের প্রাত্যাহিক জীবনে ধর্মের তেমন কোন প্রভাব চোখে পড়ে না বললেই চলে। তারা তাতে আগ্রহীও না। এর মানে এই নয় যে তারা সবাই নাস্তিক, তারা আসলে ঐরকম ভাবে এই বিষয়টা নিয়ে মাথাই ঘামায় না। আমি আগেও বলেছি পূর্বপুরুষের উপাসনা বা সম্মানকে তারা অনেকটা ধার্মিক রুপ দিয়ে ফেলেছে। এমনি একটা সংস্কৃতি হল ওবোন। তারা বিশ্বাস করে এসময় তাদের পূর্বপুরুষরা পৃথিবীতে বেড়াতে আসে। সাথে করে ভালবাসাময় গরম নিয়ে আসে। তাই, অগাস্টের মাঝামাঝি সময়টা এত গরম থাকে। তাদেরকে পথ প্রদর্শনের জন্য দরজার বাইরে বাতি জ্বালানো হয়। খাবার পরিবেশন করা হয়। তাওফিক ভাই কি মনে করে যেন আমাদের মত ভুখা-ব্যাচেলর ছোটভাইদের বাসায় নিয়ে খাবার খাইয়েছে। ব্যাপারটা রহস্যজনক
জাপানিরা অন্য যা বিশ্বাস করে তা হল কামি। কামিরা স্বতন্ত্র ধরনের দেবতা নয়। তারা গাছের বৃদ্ধি, বৃষ্টি বা প্রকৃতির অন্যান্য দিকগুলি বা ঘটনার সাথে সংযুক্ত। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই কামি প্রাকৃতিক জিনিসগুলিতে বাস করে। এক কথায় প্রকৃতির পূজা। এর জন্যই হয়ত তাদের জাতীয় বন্ধের দিনগুলার নাম সমুদ্র দিবস, পাহাড় দিবস ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো ছাড়া তাদের তেমন কোন ধর্মীয় বন্ধের দিন নেই। পুরো পৃথিবীতেই যখন বড়দিনের ছুটি থাকে, তখনও জাপানে ছুটি নেই।
তেমনি জাপানে যাপিত আমার দ্বিতীয় ঈদের দিনটিতেও কোন ছুটি ছিল না। মনে করেছিলাম প্রফেসরকে বলে ল্যাব থেকে ছুটি নিতে হবে। আমি গিয়ে বলতেই, উনি বললেন। “অবশ্যই, কোন সমস্যা নেই। তবে তুমি আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছ? তুমি নিজেই তোমার শিডিউল ম্যানেজ করবে। আমি কি জানি।” অর্থাৎ কোন নিয়ম নেই, কিন্তু দিনশেষে আমাকেই কাজের জন্য রেস্পন্সিবল হতে হবে। উনার কাজ শুধু আমাকে পর্যবেক্ষণ করা... ফলস্বরূপ এখন মাঝে মাঝে ভোর হয়ে যায় বাসায় ফিরতে ফিরতে ☹।কোন নির্দেশ ছাড়াই।
তো, এবার ঈদে পার্কে ঈদের জামাত পড়ার অনুমতি ছিল। তারপর ল্যাবেই ছিলাম বেশীরভাগ সময়। বিকেলে ল্যাবমেটদের সেমাই রান্না করে খাইয়েছি। পরদিন ছিল বাংলাদেশের ঈদ আর আমাদের ছুটি। আমরাও প্ল্যান করে বেরিয়ে পড়েছিলাম ঘুরতে। প্রথমে তাকিনো সুযুরান হিলসাইড পার্ক। ঐখানে খাওয়া-দাওয়া করে, বিকেলের জম্পেশ আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম সেই আসাহিয়ামা মেমোরিয়াল পার্কে। রাতের সাপ্পরো দেখতে। সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে ঈদের স্পেশাল চটপটি আর সেমাই খেয়েছি।
অন্য আরেকদিন গিয়েছিলাম অনেকটা দূরের চেরি বাগানে। এন্ট্রি-ফি দিকে ঢুকতেই ওরা হাতে বাস্কেট ধরিয়ে দেয়। যত ইচ্ছে নিজ হাতে পেড়ে খাও। শুধু নিয়ে আসা যাবে না। আমরা অবশ্য চেরি খেয়ে শেষটায় স্ট্রবেরিতে মনোনিবেশ করেছিলাম। বিকেলটায় কাটিয়েছি ক্যাল্ডেরা পার্কে খাওয়াদাওয়া আর আড্ডা দিয়ে।
এভাবেই কেটে যাচ্ছে এই গ্রীষ্মকালটা... গরমটা যেন বাংলাদেশের নভেম্বরের শীত... শুধু অন্য সময়ের মত কনফারেন্সগুলো বন্ধ। করোনার মানা..
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪৮