somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অহঙ্কার

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
ইভিনিং ডিউটি আজ। ডাক্তারদের ইভিনিং সন্ধ্যা না, দুপুর ৩টা থেকে শুরু হয়। হাসপাতালে ঢুকতেই দেখি রিসেপশনের সামনে এক মহিলা এক তরুণীকে সমানে বকাঝকা করছেন। মা মেয়ে সম্ভবত। পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাবো, হঠাৎ শুনি ভীষণ জোরে ‘চটাস’। চমকে তাকিয়ে দেখি মহিলা মেয়েটিকে চড় মেরেছেন। মেয়েটা ঘুরে পড়ে ফুলের টবের সাথে বাড়ি খেয়ে কপাল কেটে ফেলেছে। মহিলাও মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন সাথে সাথে। দৌড়ে গিয়ে ধরলাম। নার্সদের সহযোগিতায় দুজনকেই ধরে একটা কেবিনে নিয়ে গেলাম। মেয়েটাকে ব্যান্ডেজ আর মহিলাকে একটা ওষুধ দিয়ে শুইয়ে রাখা হলো।
কৌতূহল হলেও, ঐ মুহুর্তে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। হাতের কাজগুলো সেরে দেখতে গেলাম কি অবস্থা। মহিলা শক কাটিয়ে উঠেছেন তবে মুখ এখনো থমথমে। মেয়েকে এখনো সম্ভবত বকছেন, আমাকে দেখেই থেমেছেন। মেয়েটা আমাকে দেখে বহু কষ্টে কান্না সামলালো। পরিস্থিতি হালকা করতে হাসি দিলাম একটা। কিন্তু মা মেয়ে কাউকেই তা স্পর্শ করলো না। কিন্তু কি হয়েছে বলা যায় কিনা জিজ্ঞেস করতেই আবার শুরু হলো গুলিবর্ষণ। কথার স্পীডে তা-ই মনে হলো। হড়বড় করে যা বললেন তার সারমর্ম হল, তার মেয়ের বিয়ে হয়নি কিন্তু প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে। মেয়ে নষ্টা, দুশ্চরিত্রা, এমন মেয়ে তিনি আর চাননা, মেয়েকে কেটে ভাসায় দেওয়া উচিত, কিভাবে মুখ দেখাবেন মানুষকে? ইত্যাদি ইত্যাদি হ্যান ত্যান। মেয়েটা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। মুখ ঢেকে ঝরঝর করে কেদে ফেললো। বিব্রতকর পরিস্থিতি, কি বলা যায় ভাবছি, এমন সময় পরিস্থিতি আরো খারাপ করে দিয়ে মহিলা বিছানা থেকে প্রায় লাফ দিয়ে আমার পায়ের উপর এসে পড়লেন। চাটগাইয়া ভাষায় কাদতে কাদতে বলতে লাগলেন,
‘স্যার আমার মেয়েটারে বাচান। বড় ঘরের মেয়ে স্যার। ছোট বয়সে ভুল করে ফেলেছে স্যার। কিছু একটা করেন স্যার। মেয়ের বাবা বিদেশ থাকে। শুনলে খুন করে ফেলবে আমাকে। আপনিই এখন মা বাপ। কিছু একটা করেন স্যার।’
বহু কষ্টে সামলালাম তাকে। মেয়ে এসে মাকে ধরে বিছানায় তুললো। তারপর দুজন দুজনকে ধরে কাদতে লাগলো। কান্নার চোটে ভদ্রমহিলার হিক্কা ওঠা আরম্ভ হলো।
আমি নার্সকে ডেকে মহিলাকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়ায় দিতে বললাম। আর উত্তেজিত না হয়ে, ঠাণ্ডা হয়ে আমার সাথে দেখা করতে বললাম।
ডিউটি শেষে ফেরার সময় আরেকবার দেখা করতে গেলাম ওদের সাথে। ভদ্রমহিলা ঘুমাচ্ছেন তখনো। বাসা থেকে কেউ আসেনি। স্বাভাবিক। কাউকে খবর দিলেই জানাজানি হবে। মেয়েটা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। পায়ের শব্দে চমকে তাকালো। মুখ শুকিয়ে এতোটুক। গালে অশ্রুর দাগ। সারাদিনে কিছু খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই মাথা নাড়লো। বললাম, চলেন কিছু খাই।
রাজি হলো না। মাকে নিয়ে বাসায় গিয়ে খাবে।
আমি জোর করে ধরে নিয়ে গেলাম। ওর মার ঘুম কখন কখন ভাংবে কে জানে! ক্যাফেতে গিয়েও খাবেনা করতে লাগায় শুধু কফির অর্ডার দিলাম। অর্ডার আসতে আসতে আস্তে করে বললাম, ‘আপনার মা তো খুব টেনশন করছেন, কি হয়েছে বলা যাবে? ইফ ইউ ওয়ান্ট, আই মে হেল্প ইউ।’
কিছু না বলে চুপ করে থাকলো মেয়েটা। আবারো চোখের কোল বেয়ে নামলো অশ্রু। আমার খুব খারাপ লাগতে লাগলো, আমার ছোট বোনও এই বয়সী। অনেকদিন দেখি না ওকে। একে দেখে বারবার ওর কথা মনে পড়ছে। আমিও চুপ করে থাকলাম। কফি দিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আর কোনো কথা হলো না।
দুই চুমুক খেয়ে তারপর শুরু করলো মেয়েটা, ‘আমি আসলে জানি না কিভাবে এটা হয়েছে। বিশ্বাস করুন। আসলেই জানি না।’
‘মানে?’
‘আই ডোণ্ট রিমেম্বার মেকিং লাভ উইথ অ্যানি ওয়ান। আই ক্যান্ট বি প্রেগন্যান্ট।’
‘কি বলছেন? আলট্রাসনোগ্রাফী রিপোর্ট আমি দেখেছি। ফাইভ উইক্স প্রেগন্যান্সি। টিউমার বা অন্য কিছু না।’
‘হুম, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘দেখুন, সব খুলে না বললে কিভাবে হবে? আপনি নির্ভয়ে আমাকে বলতে পারেন।’
‘আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না, তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেনো?’
‘আপনার কথা কি বিশ্বাসযোগ্য? আপনিই বলেন?’
‘কিন্তু আমি সত্যি কথাই বলছি।’
‘ইউ আর নট মাদার মেরি। ইউ ক্যাণ্ট কনসিভ উইদাউট এ পার্টনার। সামওয়ান মাস্ট বি রেসপনসিবল। আপনার বয়ফ্রেণ্ড বা আরও কেউ।’
‘প্লীজ বিলিভ মি। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। কোনো ছেলের সাথেই আমার কোনো ঘনিষ্টতা নেই।’
মেয়েটার কথার জোরে এই প্রসঙ্গে আর কিছু বললাম না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গত এক মাসে আপনার কোনো অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে? মাথায় আঘাত বা এই রকম কিছু?’
‘নাহ।’
‘অবশ্য সেটাও আপনি ভুলে যেতে পারেন, আপনার মা কে জিজ্ঞেস করতে হবে।’
‘আমি জানিনা কিচ্ছু জানিনা। আই জাস্ট উইশ, ইটস এ নাইটমেয়ার।’ আবারো কান্না।
আমি কিছুটা বিরক্ত হলাম এবার। অনেস্টলি তাকে হেল্প করতে চাইলাম,বুঝলো না। ডাক্তার আর উকিলের কাছে কিছু লুকালে ঝামেলাই বাড়ে শুধু।
যাই হোক, কফি শেষ ততোক্ষণে। উঠলাম আমরা। মেয়েটাকে কেবিনে পৌছে দিলাম। আসার সময় ফোন নাম্বার দিয়ে বললাম, যদি তার স্মৃতি ফিরে আসে তাহলে যেন অবশ্যই জানায়।। আমার কথায় স্পষ্ট বিদ্রূপ! সেটা খেয়াল করে মেয়েটা যে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো তাতে ভয় পেয়ে গেলাম। মরা মানুষের চোখে এই দৃষ্টি থাকে। আর কিছু না বলেই তাই ফিরে এলাম। আসার পথে জেনে আসলাম নামটা, মার্জিয়া।

২।
পরের দিন বিকেলেই ফোন পেলাম মার্জিয়ার। ওর মা নাকি অস্থির হয়ে গেছেন। কি করবেন, এটা নিয়ে কথা বলতে চান। একটু যেন ওদের বাসায় যাই। বিরক্ত হলাম। এটা এদের একান্ত পারিবারিক বিষয়। আমাকে টানাটানি কেনো? সমস্যার সমাধানে আত্মীয় স্বজনদের সাথে পরামর্শ করুক। মেডিকেল লাইনে কি করা যায় আমি সর্বোচ্চ এ ব্যাপারে হেল্প করতে পারি। সেদিন সামনে পড়ে গেছিলো তাই নিজের কর্তব্য পালন করেছিলাম। এ কথা জানাতেই মার্জিয়া চুপ হয়ে গেলো। একটু পর আস্তে বললো, ‘আচ্ছা, আপনি একটু মার সাথে কথা বলেন।’
ভদ্রমহিলা ফোন নিতেই এবার শুরু হলো অবিশ্রান্ত বর্ষণ। খাস চিটাগোনিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে যেটুক উদ্ধার করলাম তার মর্মার্থ হলো, ‘আত্মীয় স্বজনকে কিভাবে জানাবেন, কেউ জানলেই তার মেয়েটার সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমিই আছি যে একটু হেল্প করতে পারি। মার্জিয়াকে যে ডাক্তারকে দেখিয়েছিলেন, উনি বেশ খবিশ! আমার সেদিনের আচার ব্যবহারেই বুঝে গেছেন যে আমি দিল দরিয়া মানুষ। আমিই তাই তাদের শেষ ভরসা। মার্জিয়াকে নিজের বোন মনে করে যেন উনাদের সাহায্য করি।’
কি আর করা! এই কথার পরেও না করাটা কেমন দেখায়! আজ অফ ডে। বিকেলের পর যাওয়াই যায়। সন্ধ্যায় তাই হাজির হলাম মার্জিয়াদের বাসায়।
শহরের অভিজাত এলাকাতেই বাসা। আটতলা বিল্ডিং এর তিনতলায়। বিল্ডিংটা ওদের নিজেদের। ওর বাবা বিদেশ থাকেন। এক বোন দুই ভাই এর মধ্যে মার্জিয়াই সবার বড়। এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে একটা বেসরকারি ভার্সিটিতে।
ওর মা আবারো আগেরদিনের কথাগুলোই বললেন বারবার। আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন অ্যাবরশন করাতে চান। আমি যেন একটু ম্যানেজ করে দেই। টাকা পয়সা ব্যাপার না। আত্মীয় স্বজন কাউকেই বলতে পারছেন না। আর, কোনো আত্মীয়ের সাথেই উনাদের ভালো সম্পর্ক নেই। গোষ্টীর মধ্যে উনাদের অবস্থাই সবচে ভালো হওয়ায় বাকি সবাই তাদের হিংসা করে। কেউ এই খবর জানলে সাহায্যতো করবেই না বরং আরো বেশি ক্ষতি করার সম্ভাবনা বেশি। তাই এই উপকারটুকু করে দিলে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন।
আবারো বিরক্ত হলাম উনার কথায়। মেয়ে এতো বড় অপরাধ করেছে। কার সাথে করলো, তার খোজ নাই। উনি আছে বাচ্চা মারার ধান্ধায়! কেনো, ছেলেটাকে ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দেওয়া যায় না? ভদ্র ভাষায় সে কথা জিজ্ঞেসও করলাম। উনি আমতা আমতা করতে লাগলেন। বললেন সেটাতো পরেও করা যাবে কিন্তু বাইরের কেউ জানার আগেই এটা মানে অ্যাবরশনটা তো করা দরকার।
আমি আর কি বলবো। উনাকে যে বুঝানো যাবে না তা স্পষ্ট।
তাও বললাম, ‘আপনার মেয়ের সর্বনাশ কে করেছে, আগে তার খোজ নেন। আমি অ্যাবরশনের ঘোর বিরোধী। আমাদের চেষ্টা করা উচিত হবে আগে ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলা। যদি এমন হয় যে কোনোভাবেই তাকে মানানো যাচ্ছে না তখনই আমি এ ব্যাপারে সাহায্য করবো। তার আগে না।’
‘মেয়েতো কিছুই বলে না। ও তো বলে কিছুই জানে না। সারাদিনে কতো মারা মারলাম। তাও বলে জানে না।’
‘ডাকেন ওকে। আমি কথা বলি।’
মার্জিয়া এলে দেখি মুখ লাল, ফুলে গেছে। মারের চোটে সম্ভবত। শান্ত ভাবে আবারো জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে জানাতে। আমি যে কোনো ধরণের সাহায্য করবো কথা দিলাম। পুলিশের সাথে যে আমার খুব ভালো খাতির সে কথাও জানালাম। কিন্তু ও ওর কথাতেই অনড়। কিভাবে হয়েছে, কেনো হয়েছে, কোথায় হয়েছে কিচ্ছু জানে না।
নানা ভাবে বুঝিয়েও যখন উত্তর পেলাম না তখন বেশ রেগে গেলাম। আষাড়ে গল্প শোনাচ্ছে আমাকে। গ্রীক মীথ যেন, আকাশ থেকে দেবতা নেমে এসে তাকে প্রেগন্যান্ট করে দিয়ে গেছে। রাগ নিয়েই বেরিয়ে এলাম ওদের বাসা থেকে।
রাত বারোটার দিকে আবার মার্জিয়ার ফোন। রিসিভ করতে দেখি মার্জিয়ার মা। মার্জিয়া ওদের বারান্দা থেকে লাফ দিয়েছে নীচে।

৩।
মার্জিয়ার অপারেশন শেষ। ব্লীডীং ভালোই হয়েছে। তবে কমন ব্লাড গ্রুপের রক্ত হওয়ায় সহজেই ম্যানেজ করা গেছে। আপাততো বিপদমুক্ত।
অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে মার্জিয়ার বলা শেষ কথাগুলো কানে বাজছে, ‘ভাইয়া আমি সত্যিই কিছু জানি না। আমি কিছুই করিনি। কেনো বাচালেন আমাকে? কিছু করলে তাও মানতাম সব, কিন্তু কিছু না করেও এতো বড় শাস্তি আমি কিভাবে সইবো। আমাকে মেরে ফ্যালেন প্লীজ। এই উপকারটুকু করেন।’
এবার আমি বিশ্বাস করেছি মার্জিয়ার কথা। ও যেভাবেই প্রেগন্যান্ট হোক ও জানে না। সেটা করা হয়েছে ওর অগোচরে, অথবা পরবর্তীতে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আমি খুঁজে বের করবো। কালপ্রিটটাকে খুঁজে বের করবোই আমি।
মার্জিয়ার মাকে খুঁজে বের করলাম। গত এক মাসে উনার বাসায় কে কে আসা যাওয়া করেছে বিস্তারিত জানতে চাইলাম। উনি জানালেন উনার আত্মীয় স্বজনদের খুব বেশি যাতায়াত নেই বাসায়। মার্জিয়ার বাবা পছন্দ করেন না। মার্জিয়ার বাবার এক বন্ধু মাঝে মাঝে আসেন উনাদের কোনো জরুরি প্রয়োজন পড়লে। গত এক মাসে উনি এসেছেন একবার। রিয়াজ নামে মার্জিয়ার এক খালাতো ভাই এসেছে কয়েকবার। আর ওর কিছু বান্ধবী। আর মেঝ ছেলেকে পড়ানোর জন্যে এক টীচার এসেছে নিয়মিত।
‘আপনি বাসায় ছিলেন না এমন কোনো সময়ে রিয়াজ বা টীচারটা বাসায় এসেছে?’
‘নাহ, রিয়াজ খুবই ভালো ছেলে। আর আমি বাসায় না থাকলে টিচার কখনোই আসে না।’
আমি কিছু বললাম না। গার্জিয়ানদের সামনে যে কোন ছেলেই ভেক ধরে থাকবে। এনার কাছ থেকে জানা যাবে না। মার্জিয়াকেও এই অবস্থায় জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না। ঠিক করলাম, আগে রিয়াজ আর প্রাইভেট টীচারটা সম্পর্কে খোজ নিবো তারপরে দেখা যাবে বাকিটা।
উনার কাছ থেকে এদের ঠিকানা নিয়ে নিলাম।
সন্ধ্যায় কমন রুমে বসে আছি, দেখি এক তরুণ এসেছে আমাকে খুজতে। তার খালা নাকি আমার কাছে পাঠিয়েছে। জিজ্ঞেস করতে জানালো ওর নাম রিয়াজ।
সুন্দর নিরীহ চেহারা। এই ছেলের পক্ষে এরকম কিছু করা সম্ভব বলে মনে হলো না। তবে চেহারা দেখে তো আর সব কিছু বোঝা যায় না। ফার্মেসীতে অনার্স শেষ করেছে, মাস্টার্স করবে। পড়ে মার্জিয়াদের ভার্সিটিতেই। মার্জিয়াকে দেখতে এসেছে । মার্জিয়ার আত্মীয়দের সবাইকে জানানো হয়েছে মার্জিয়া বারান্দার রেলিং এ ঝুকে কি একটা দেখতে গিয়ে পড়ে গেছে। রিয়াজও সেটাই জানে। মার্জিয়ার অসাবধানতার সমালচনা করলো বেশ। আমিও টুকটাক কথা বার্তা বলে ঠিকানা ফোন নাম্বার ইত্যাদি রেখে বিদায় করে দিলাম। রিয়াজ ও একটা কার্ড নিলো।
রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখি রিয়াজ আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে। বেশ চালু ছেলে তো! একসেপ্ট করে প্রোফাইলে গেলাম। একটা ছবিতে দেখি মার্জিয়াও আছে। কোনো একটা পার্টির ছবি। মার্জিয়ার আই ডি ট্যাগ করা আছে। কি মনে করে ওর প্রোফাইলেও একটা ঢু মেরে আসলাম। নর্মাল একটা মেয়ের টাইমলাইন। তারপরও গত এক মাসের পোষ্টগুলো চেক করলাম। নাহ, তেমন কৌতুহলোদ্দীপক কিছু নেই। মেয়েদের টাইমলাইন যেমন হয় আরকি! ছবি দিয়ে ভরা। একটা ছেলেকে দেখলাম প্রায়ই মার্জিয়ার সাথে ছবি তুলে আপলোড করেছে। নাম শাহরিয়ার। পার্টির ছবিতেও দেখলাম প্রায় ছবিতেই সে মার্জিয়ার গা ঘেষে ছবি তোলার চেষ্টা করেছে। এই ছেলেকেও সন্দেহের তালিকায় রাখতে হবে। আর এই পার্টিটার ব্যাপারে খোজ নিতে হবে। এসব পার্টিতে প্রায়ই ড্রাগ ইউজ হয়।
পরদিন সকালে নাস্তা না করেই গেলাম ছোকড়া টীচারটার মেসে। মার্জিয়ার ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলতে চাই শুনে বেশ অবাক হলো। সকালে নাস্তা করিনি, এই অযুহাতে ওকে টাকা দিয়ে জোর করে নাস্তা আনতে পাঠালাম। ও বেরুতেই তন্ন তন্ন করে ওর বেড, ড্রয়ার, টেবিল খুজতে লাগলাম। নির্দিস্ট কিছুই খুজছি না। শুধু মনে মনে বলছি, সন্দেহজনক কিছু চোখে ধরা পড়ুক। সেটা যে কোনো কিছুই হতে পারে। কিন্তু কিছুই পেলাম না। ছেলেটা ততোক্ষণে পরটা গোস্ত নিয়ে ফিরেছে।
ব্যাটাকে মানসিকভাবে ঘায়েল করতে হবে। ধূর, সাইকিয়াট্রি আরো ভালো করে শেখা উচিত ছিলো। তাহলে এখন একে মেন্টালি টর্চার করে সব বের করে ফেলতাম। তারপরও নিজের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করলাম। মার্জিয়াকে নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন করলাম। কিন্তু ও নাকি কয়েকবার দরজা খুলে দেওয়া ছাড়া আর কখনোই মার্জিয়াকে দেখেনি। কয়েকটা আপত্তিকর প্রশ্নও করলাম। কিন্তু এর বেশি কিছু বের করতে পারলাম না।
হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরলাম ওখান থেকে।
কলেজে যাবো না ঠিক করলাম আজ। ফোন করে ডিপার্টমেণ্টাল হেডকে জানিয়ে দিলাম সে কথা।
ওখান থেকে গেলাম রিয়াজদের বাসায়। ভিতরে গেলাম না। দূর থেকে লক্ষ্য রাখলাম বাড়ির দিকে। ভিতরে যাব কিনা, গেলে কি বলবো এসব নিয়ে ভাবনা চলছে মাথায়। হঠাৎ বাড়ির গেট দিয়ে একটা মেয়ে বেরিয়ে এলো। মেয়েটাকে আমি রিয়াজদের বাসার বারান্দায় দেখেছি। কাজের মেয়ে বোধহয়। ধরলাম গিয়ে। পরিচয় দিলাম পুলিশ। কিছু তথ্য জানার ছিলো। জানলাম। আসার পথে মুখ বন্ধ রাখতে দুটো একশ টাকার নোট ধরিয়ে দিলাম হাতে।
এরপর গেলাম মার্জিয়ার ভার্সিটিতে। ওর সবচে ঘনিষ্ট বান্ধবিকে খুঁজে বের করলাম। ফেসবুক থেকেই এর নাম ধাম পেয়েছি। নিজেকে ঘটক হিসাবে পরিচয় দিয়ে মার্জিয়া সম্পর্কে খোজ নিলাম। ইতস্তত করলেও অনেক কথাই জানা গেলো। রিয়াজ সম্পর্কেও জানলাম যেটুকু সম্ভব।
এরপর খুঁজে বের করলাম শাহরিয়ারকে। ওদের ডিপার্টমেণ্টের সামনে অনেকগুলো ছেলে আড্ডা দিচ্ছে। শাহরিয়ারের খোজ করতেই একজন এগিয়ে এলো। সানগ্লাস পরে থাকায় আমি চিনতে পারিনি। কি ব্যাপার জিজ্ঞেস করতেই বললাম মার্জিয়ার ব্যাপারে কথা বলতে চাই। মার্জিয়ার নাম শুনতেই তিড়িং করে লাফিয়ে উঠে দিলো এক দৌড়।

৪।
শাহরিয়ারের দৌড় দেখে ওকে ধরবো কি, ওর লাফানোর ভঙ্গিতে এমন হাসি পেলো যে সেটা সামলে সিরিয়াস ভাব ধরে রাখতে গিয়ে চোখে পানি চলে এলো।
সেটা সামলে ওর বন্ধুদের কাছ থেকে জানলাম ওর সম্পর্কে। এখানে অবশ্য পরিচয় দিলাম গোয়েন্দা হিসেবে। শাহরিয়ারের ক্ষতি না বরং শাহরিয়ারের পক্ষেই কাজ করছি এমন বুঝ দিয়ে তারপরে ওদের মুখ থেকে কথা বের করা গেলো। শাহরিয়ার নাকি একটু আগেই মার্জিয়াকে দেখে ফিরেছে হাসপাতাল থেকে। সেই গল্পই করছিল ওদের সাথে। আর শাহরিয়ার মার্জিয়াকে পছন্দ করে, মার্জিয়া এখনো কোনো মত দেয়নি।
‘তা, আমাকে দেখে দৌড় দিলো কেনো?’ জিজ্ঞেস করলাম ওদেরকে।
শাহরিয়ার নাকি মার্জিয়ার বাবার রাগ সম্পর্কে জানে। তাই ও সবসময় ভয়ে থাকে যে, উনি ওর সম্পর্কে জানলেই ওকে পেটানোর জন্যে কাউকে পাঠাবেন। আমাকে দেখেও তাই ভেবেছে বোধহয়। ‘ঘটনা শুধু এইটুক হলেতো ভালো-ই। নাহলে ব্যাটাকে আমি ছাড়বো না।’ মনে মনে বলি। ঐ দিনের পার্টি সম্পর্কেও জানলাম। ওদের ভার্সিটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর পার্টি ছিলো নাকি সেটা।
দুপুর হয়ে গেছে ততক্ষণে। বিকেলে ডিউটিতে যেতে হবে।
ঘোরাঘুরিতে ক্ষিধেও পেয়েছে প্রচুর। রুমে ফিরে আসলাম অগত্যা। খাওয়া গোসল সেরে গেলাম হাসপাতালে।
মার্জিয়াদের কেবিনে গিয়ে দেখি ও ঘুমাচ্ছে। তাই আর ডিস্টার্ব করলাম না। সন্ধায় গিয়ে দেখি তখনও ঘুমাচ্ছে। ওর মাকে জিজ্ঞেস করতে জানালো, সকালে খাওয়ার পর থেকেই নাকি ঘুমাচ্ছে। দুপুরে খাওয়ার জন্যেও তুলতে পারেন নাই।
কাছে গিয়ে কপালে হাত দিলাম। পালসে হাত দিয়ে দেখি দ্রুত কিন্তু বেশ রক্ত যে পরিমান আসার কথা ততটুকু নেই। মানে প্রেশার কম। চোখ দেখার জন্যে পাপড়ি টেনে সোজা করতেই মাথা খানিকটা উচু হলো, দেখি গলার ভাজে একটা জায়গা লাল হয়ে আছে। লালের মাঝে ছোট ছোট ঘামাচির মত কয়েকটা ফোস্কা। দেখার সাথে মনে হলো ১০০০ ভোল্টের শক খেলাম যেন। গত কয়েকদিনের সমস্ত রহস্য কেউ যেন আমার সামনে মুহুর্তের মাঝে রিলে করে দেখিয়ে দিলো।
‘সকালে মেয়েকে কি ওষুধ খায়িয়েছেন?’ আশপাশ ভুলে চেচিয়ে উঠলাম। ধমকের তেজে মার্জিয়ার মা কেপে উঠলেন। কথা জড়িয়ে তোতলাতে লাগলেন।
‘আ...আমি না... নার্স...’
‘দেখেনতো ওর বগল আর বুকেও এরকম দাগ আর ফুসকুড়ি আছে কিনা? আমি আসছি।’
প্রায় দৌড়ে গিয়ে নার্সকে খুঁজে বের করলাম। নার্স ওষুধের কোর্স দেখালো। ঠিকই আছে। অবশ্য এটাই হওয়ার কথা।
কেবিনে ফিরতে মার্জিয়ার মা জানালেন মার্জিয়ার ওসব জায়গাতেও দাগ আছে।
‘সকালে কে কে এসেছিলো মার্জিয়াকে দেখতে?’ জিজ্ঞেস করি মার্জিয়ার মাকে।
‘ওর ভার্সিটির এক বন্ধু আর ওর বড় খালা মানে রিয়াজের মা আর রিয়াজ।’
‘ওকে কি খাইয়েছেন সকালে?’
‘শাহরিয়ার মার্জিয়ার প্রিয় চিকেন ফ্রাই এনেছিলো, ওটা খেয়েছে। তারপর ওর খালারা স্যুপ এনেছিলো। সেটাও খাইয়েছি। ওরা দুপুরেও খাবার পাঠাবে বলেছে।’
সর্বনাশ। আমার আশঙ্কাই সত্যি। কালপ্রিটটাকে পরেও ধরা যাবে। আগে মার্জিয়াকে বাচাতে হবে। নার্সকে সাথে সাথে অর্ডার দিলাম স্টোমাক ওয়াশের ব্যবস্থা করতে।
ওয়াশের পর ওষুধ, ইনজেকশন দিয়ে অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে রেখে দিলাম। ঘুম ভাঙ্গছে না এখনো। এটাই চিন্তার বিষয়।
মেজাজ খারাপ হয়ে আমারো প্রেশার বেড়ে গেছে। কপালে হাত দিয়ে এসির ভিতরেও ঘামের অস্তিত্ব টের পেলাম। রুম থেকে বের হবো দেখি রিয়াজ ঘরে ঢুকছে। দেখেই রক্ত চড়ে গেলো মাথায়। সমস্ত শক্তি দিয়ে চড় বসালাম একটা গালে। ছিটকে পড়লো দেয়ালে। হাতে টিফিন বাটি ছিলো। ওটা ছড়িয়ে পড়ল মেঝেতে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে বসালাম আরেকটা। এবার ও ও পড়লো মেঝেতে।
দৌড়ে গিয়ে লাথি মারার ইচ্ছেটা সংবরণ করলাম বহু কষ্টে। মার্জিয়ার মা দৌড়ে এসে তুললেন রিয়াজকে।
‘কি হলো ডাক্তার সাহেব, পাগল হয়ে গেছেন নাকি?’
‘না, আমি সুস্থই আছি।’
‘একে মারছেন কেনো?’ রিয়াজের হতবিহ্বল ভাব এখনো কাটেনি।
‘আপনার একমাত্র মেয়েকে খুন করতে চেয়েছিলো ও। আপনি কি ওকে আদর করতে বলেন।’
‘কি...’ শকটা এতো বড় ছিলো যে পাথরই হয়ে গেলেন মার্জিয়ার মা।
‘এসব কি উলটা পালটা বলছেন আপনি?’ রিয়াজ ধাতস্থ হয়েছে এতক্ষনে।
‘উলটা পালটা? তাই নাকি? শুধু খুনের চেষ্টা না, যদি বলি তুমি ডেট রেপ করেছো মার্জিয়াকে?’
‘মানে?’
‘ও আচ্ছা, কাজটা করেছো কিন্তু কাজের নামটা জানো না! ভালো। ডেট রেপ হচ্ছে এমন ধর্ষণ যা ধর্ষিতার অনুমতি নিয়ে করা হয়। তবে ভিকটিম অনুমতি দেয় এমন এক পরিস্থিতিতে যখন আসলে তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রন থাকে না। ফলে তাকে যা করতে বলা হয়, সে তা-ই করে। বোঝা গেছে?’
‘আপনি বলতে চাইছেন, আমি মার্জিয়াকে ফুসলিয়ে ধর্ষণ করেছি। কিন্তু এটা করলে কি মার্জিয়া জানতো না?’
‘ওখানেইতো মজা। এক্ষেত্রে মার্জিয়াকে এমন একটা ড্রাগ দেওয়া হয়েছে, যেটা মানুষের স্মৃতি ভ্রম ঘটায়। ঠিক যতোক্ষন ওই ওষুধের প্রভাব থাকে, ততক্ষণের কোনো কিছুই ভিকটিমের মনে থাকে না। ফার্মেসীর ছাত্র হয়ে এটা জানো না? আমার ধারণা তুমি Benzodiazepine ব্যবহার করেছো। ঠিক না?’
রিয়াজ চুপ।
‘এন্ড, তুমি ওখানেই থেমে যাওনি। আজ সকালেও খাবারের সাথে তুমি মার্জিয়াকে Barbiturate দিয়েছো। যাতে ও মরে যায়। এই ওষুধে মৃত্যু ঘুমের মাঝে হয়। খুব আরামের। ডাক্তাররাও টের পেতো না। ভাবত পালমনারী এমবলিসম বা রেনাল শাট ডাউনে মরে গেছে। আমিও পারতাম না যদি না আমি ফরেনসিকের টীচার হতাম। কারণ এই ওষুধ প্রয়োগে কাউকে খুন করা খুবই রেয়ার। এই লাশের পোস্ট মর্টেম হতো না তাই ওর গলার লাল দাগটা আমার চোখে না পড়লে কেউ কোনোদিন জানতো না আসল ঘটনা কি।’
হঠাৎ সচল হয় মার্জিয়ার মার হাত। চটাস চটাস চলতেই থাকে আর চাটগাইয়াতে সাথে চিৎকার, কেন করলি এমন আমার মেয়ের সাথে, তোকে আমি আমার ছেলের মত দেখতাম। নিজের বোনের এত বড় সর্বনাশ কিভাবে করলি?
এবার আমি ঠেকাই উনাকে।
রিয়াজ দেয়ালের দিকে সরে যায় কিন্তু মহিলা চেচাতেই থাকেন। রিয়াজ নিশ্চুপ। মুখে হাতের ছাপ পড়ে গেছে।
‘ও বলতে পারবে না। আমিই বলি। নিজের বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতে।’
রিয়াজ এবং মার্জিয়ার মা দুজনেই অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে।
‘মানে?’
‘গত বছর কোরবানীর ঈদে মার্জিয়ার বাবা দেশে আসার পর রিয়াজের বাবা রিয়াজের সাথে মার্জিয়ার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছিলেন মনে আছে? আর সে প্রস্তাবে মার্জিয়ার বাবা রিয়াজের বাবাকে অপমান করেছিলেন।’
‘হ্যা।’
‘সেটাই হলো ঘটনা। ঐ ঘটনায় রিয়াজের বাবা খুব কষ্ট পান। স্বাভাবিক। রিয়াজের ঘটনাটা খুব গায়ে লাগে। সেই থেকে সে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো প্রতিশোধ নেওয়ার। প্রথমে ওর লক্ষ্য ছিলো মার্জিয়ার সাথে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করবে। কিন্তু মার্জিয়া ওকে প্রত্যখ্যান করে। এতেই ও ক্ষেপে যায়। সিদ্ধান্ত নেয় আপনাদের পুরো পরিবারকেই ছোট করবে। এ কারণেই ভার্সিটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিন মার্জিয়াকে বাসায় পৌছে দেওয়ার নাম করে ওদের বাসায় নিয়ে যায়। ঐদিন ওদের বাসায় কেউ ছিলো না। মার্জিয়াকে পার্টীতে থাকতেই সম্ভবত ওষুধটা খাওয়ানো হয়েছিলো। এজন্যেই ওর কিছুই মনে নেই। রিয়াজ মার্জিয়ার কিছু আপত্তিকর ছবি তুলে রাখে, পরশু রাতে ও মার্জিয়াকে বিয়ে না করলে সব ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মেসেজ পাঠায়। আমার ধারণা এর আগেও রিয়াজ মার্জিয়াকে জানিয়েছে, কিন্তু মার্জিয়া বিশ্বাস করেনি। কিন্তু নিজের প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট পেয়ে ও সিওর হয় যে রিয়াজের কথা সত্যি। রিয়াজ জানতো মার্জিয়া দুটো কাজ করতে পারে, হয় সে রিয়াজের কাছে যাবে, নয়তো আত্মহত্যা করবে। কিছুতেই ও নিজের এই সর্বনাশের কথা কাউকে বলতে পারবে না। দুটোতেই আপনারা ছোট হবেন। ওর ধারণাই সত্যি হলো। কিন্তু আত্মহত্যার চেষ্টা করেও যখন মার্জিয়া বেচে গেলো, তখনই বাধলো ঝামেলা। কারণ মার্জিয়া বেচে গেলে সব জানাজানি হয়ে যাবে। ও তাই মার্জিয়াকে মারার জন্যে আজ সকালে স্যুপের সাথে ওষুধ মিশিয়ে দিলো।’
‘হয়তো সবই সত্যি। কিন্তু কিছুই প্রমাণ করতে পারবেন না।’ কেমন হিসহিস করছে ওর কণ্ঠ।
‘প্রমাণ করতে হবে না। প্রমাণ তোমার সাথেই আছে।’
‘কি?’
ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। তারপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছো মেরে ওর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে নিলাম। জিন্সের প্যাণ্ট পরা তাই কোনো সমস্যা হয়নি। এতেই পাওয়া যাবে তোমার মেসেজ আর ছবিগুলো আশা করি। ও এগিয়ে আসতে যেতেই এক ঘুষিতে ফেলে দিলাম মাটিতে। গলগল করে রক্ত গড়িয়ে পড়লো মুখ থেকে। কিন্তু কোনো করুনা জাগলো না মনে। ওর পাশে হাটু মুড়ে বসে বললাম, ‘আর আজ খুন করার চেষ্টার প্রমাণ দেবে তোমাদের কাজের বুয়া। ওকে দিয়ে ওষুধ কিনিয়েছো। যখন ওষুধটা কিনেছে তখন আমি ওর সাথে ছিলাম। এমনকি তোমার লিখে দেওয়া ওষুধের নাম লেখা কাগজটাও আমি নিয়ে নিয়েছি।’
মার্জিয়ার মা বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে আছেন। উনাকে ওভাবেই রেখে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। পুলিশে ফোন দিতে হবে। রিয়াজ অপরাধী। কিন্তু অহঙ্কারও এক ধরণের অপরাধ। মেয়ের জীবন বাজি ধরে এখন মার্জিয়ার বাবা মা সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করছেন। চুড়ান্ত সাজা যাতে না পান সেই কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×