somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথাঃ ঘুম বাতাস

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে অনেকদিন আগের কথা।
পৃথিবীর এক মাথায় এক রাজ্য ছিলো। নাম কাঞ্চনপুর।
একবার সেই রাজ্যে এক অদ্ভুত বাতাস বয়ে গেলো। সেই বাতাসেরাজা-রাণী, কোটাল-সেনাপতি, প্রজা-প্রধানমন্ত্রী সবার চোখের পাতা ভারী হয়েগেলো।কেউ আর চোখ খুলতেই পারে না। পুরো রাজ্য শুদ্ধ মরণ ঘুমে ঢলে পড়লো সবাই।
কেউ কুয়া থেকে পানি তুলছিলো, সেই অবস্থাতে কুয়ার পাশেই ঘুম,কেউ ফসলের মাঠে, কেউ রান্না ঘরে, বাচ্চারা কেউ মাঠে, কেউবা পণ্ডিত মশাইয়ের সাথেপাঠশালাতেই ঘুমিয়ে পড়লো।
রাজদরবারে এক গুণী গান গাইছিলো, মুখের হা বন্ধ হওয়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়লো সে। রাজা মশাই আরমন্ত্রীরা তাদের চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়লেন। কয়েদখানায় এক কয়েদীকে চাবুক মারছিলোজল্লাদ, বাতাসের তোড়ে চাবুক ফেলে দুজনে গলাগলি করে ঘুমাতে লাগলো।
কাঞ্চনপুরের নাম পাল্টে তখন ঘুমপুর রাখলেও ভুল হতো না।
এই রাজ্যের রাজপুত্র নাবিল। সে অবশ্য বাতাসের কবল থেকে বেচেগেছে। কারণ বাতাস বওয়ার সময় সে পাশের রাজ্যে গিয়েছিলো রাজার দূত হিসাবে। এখন এসেদ্যাখে এই অবস্থা।
ও দৌড়ে গেলো রাজবদ্যির বাড়ি। গিয়ে দ্যাখে বদ্যিও ঘুমাচ্ছে।
রাজপুত্র মহা চিন্তায় পড়ে গেলো। কি করা যায়? অনেক ভেবে শেষেঠিক করলো ও পৃথিবীর সব রাজ্য ঘুরবে। কোনো না কোনো রাজ্যে নিশ্চয়ই এর সমাধান থাকবে।
রাজপুত্র বেরিয়ে পড়লো। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। রাজ্যেরপর রাজ্য যায়। রাজপুত্র সমাধান পায় না।
শেষমেশ পৃথিবীর আরেক মাথায় উদয়নগর রাজ্যে গিয়ে এর সমাধানপেলো সে।
সেই রাজ্যের এক তিনমাথা বুড়ো জানালো, পরীর পাখার জরী আরনিকুম্ভ গাছের শিকড় একসাথে বেটে চোখে লাগালেই আবার ঘুম ভাঙ্গবে সবার।
নিকুম্ভ গাছের শিকড় তো পাওয়া যাবে, কিন্তু পরীর পাখার জরী?রাজপুত্র পড়লো এবার নতুন চিন্তায়। পরীর দেখা সে কোথায় পাবে?
পরীরা মানুষের ধারে কাছেও আসে না। কারণ মানুষের স্পর্শমানেই মৃত্যু।
এক ডাইনীর অভিশাপের ফলে এমন হয়েছে।
একসময় মানুষ, জ্বীন, পরী, ডাইনী, রাক্ষস সবাই এক সাথেইথাকতো।
ঐ ডাইনীর সাথে একজন মানুষের ভালোবাসা ছিলো।
কিন্তু মানুষটা ভালো ছিলো না। সে ডাইনীর ক্ষমতার জন্যে তারসাথে থাকতো আবার লুকিয়ে আরেকটা পরীর সাথেও সম্পর্ক রাখতো। ডাইনী সেটা জানতোনা। ভালোবাসার প্রমাণ স্বরুপ মানুষটা যা-ই বলতো তাই করতো ডাইনীটা। কিন্তু একদিনলোকটা ধরা পড়ে গেলো।
কৈফিয়ত চাইলে উলটো লোকটা ডাইনীটাকে খুব অপমান করে তাড়িয়েদিলো। ডাইনীটা তখন ক্ষেপে গিয়ে অভিশাপ দিলো যদি কখনো কোনো মানুষ কোনো পরীকে স্পর্শকরে তবে পরীটার প্রাণ পাখি ওর খাচায় বন্দী হয়ে যাবে আর চিরকাল ওখানেই থাকবে। তারপরথেকে যে পরীই মানুষকে স্পর্শ করেছে, তার-ই প্রাণ পাখি ডাইনীর খাচায় বন্দী হয়ছে।
তখন থেকে পরীরা লোকালয় ছেড়ে কোথায় চলে গেছে। আর কখনোই মানুষতাদের দেখা পায়নি।

কিন্তু রাজপুত্র তো হাল ছাড়বার পাত্র নয়। সে আবার বেরুলোঅনুসন্ধানে।
আবারো দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। রাজ্যের পর রাজ্য যায়।রাজপুত্র সমাধান পায় না।
খুজতে খুজতে আবার সে নিজের রাজ্যেই ফিরে এলো। দুনিয়া ঘুরেনানান বিচিত্র জিনিস সে সংগ্রহ করেছে, এমনকি যে বাতাসে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে সেবাতাসের একটা শিশিও পেয়েছে কিন্তু যেটা দরকার সেই পরীর পাখার জরী ও কোথাও পায়নি।
কিন্তু নিজের বাবা মা আর প্রজা সাধারণের ঘুমন্ত ফ্যাকাশেমুখ ওর সহ্য হলো না।
রাজ্য ছেড়ে ও তাই জঙ্গলে চলে গেলো।
নদীর ধারে একটা কুটির বানিয়ে নিলো। ওখানে থাকে আর বন থেকেনানান লতা পাতা জোগাড় করে করে মানুষের চোখে লাগিয়ে পরীক্ষা করে কাজ হয় কিনা।
কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। ও তাই মন খারাপ করে বনের ভিতরঘুরে বেড়ায়।

রাজপুত্র জানেই না যে এই বনের ভিতরেই ফুলপরীরা থাকে।
বনের গভীরে একটা ঝর্ণা আছে। ঝর্ণার ওপাশেই ফুলপরীদের রাজ্য।কিন্তু কোনো মানুষের সাধ্য নেই এতো গভীরে যাওয়ার।
ফুলপরীদের অনেক কাজ। কেউ ফুলের আড়মোড়া ভাঙ্গায়, পাপড়িগুলোতেরঙ্গিন তুলি বুলিয়ে দেয় কেউ, কেউবা সুগন্ধি ঢেলে দেয়, কারো দায়িত্ব অসুস্থ ফুলেরযত্ন আত্তি- কাজের শেষ নেই।
তবে সব কাজই সূর্য ওঠার আগে সেরে ফ্যালে ওরা। মানুষের চোখেযাতে না পড়ে সেজন্য।
ফুলপরীদের ছোট রাজকুমারী তিতলী খুবই চঞ্চল। ফুলের ঘুমভাঙ্গানোর চেয়ে তার অন্যদিকেই আগ্রহ বেশি। কখনো প্রজাপতিকে ধাওয়া করে বা একটাপাখির বাচ্চাকে সুড়সুড়ি দেয়, কখনওবা বাগানের বুড়ো ইদুরটার লেজে টান দিয়ে পালায়।রাজা শত বলেও ওকে কথা শোনাতে পারেননি। রাণীমাও সারাক্ষণ ভয়ে থাকেন, কখন কি অঘটনকরে বসে মেয়েটা। সেজন্য আজকাল আর ওকে ফুলের ঘুম ভাঙ্গাতে পাঠানো হয় না। কিন্তুতাতে কি আর এই দস্যি পরীটার শিক্ষা হয়! কাজ শেষে সবাই যখন বিশ্রাম নেয়, তখন সে বেরিয়ে পড়ে।
ফুলেদের সাথে গল্প করে, মাছের পোনাদের সাথে সাতার কাটে,পাখির ছানাদেরকে পোকা ধরে খাওয়ায়। তারপর কেউ টের পাবার আগেই চুপি চুপি ফিরে আসে।
সেদিনও মনের আনন্দে বনের ভিতর ঘুরে বেড়াচ্ছিল রাজকুমারী তিতলী।হঠাৎ দ্যাখে একটা পাখির ছানা ওড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাসা থেকে উড়াল দিতেইকোত্থেকে একটা বাজ পাখি এসে ঠোকর দিলো ছানাটাকে। তবে ছানাটাকে পুরোপুরি ধরার আগেইকোত্থেকে একটা ঢিল এসে লাগলো বাজ পাখিটার গায়ে। বাজটা পাখির ছানাটাকে ছেড়ে দিলো আরছানাটা সোজা মাটিতে গিয়ে পড়লো। রাজকুমারী দৌড়ে ছানাটার কাছে যাওয়ার আগেই অন্য কেউদৌড়ে এলো। তাকিয়ে দ্যাখে একটা ছেলে। ও দ্রুত লুকিয়েপড়লো।
ছেলেটা আসলে রাজপুত্র নাবিল। রাজকুমারীতো আর সে কথা জানেনা।ও সবার কাছ থেকে শুনেছে মানুষের ইয়া বিশাল বিশাল দাঁত, আর ছুরির মত ধারালো নখ। ও ভাবলো ছেলেটানিশ্চয়ই এখন পাখির ছানাটাকে খাবে।
রাজকুমারী সাবধানে উকি দেয়। অবাক হয়ে দ্যাখে ছেলেটার ধারালোদাঁত বা নখ কিছুই নেই। ওদের মতই তো দেখতে! শুধু ডানা নেই।
রাজপুত্র ছানাটাকে কোলে তুলে নিলো। তারপর একটা পাতা চিবিয়ে ওটারকাটা জায়গায় লাগিয়ে দিয়ে আবার বাসায় তুলে দিলো। এ কয়দিন বনে জঙ্গলে ঘুরে কয়েকটাঔষধি গাছ ও চিনে ফেলেছে।
এদিকে সব দেখে রাজকুমারীতো তো পুরো অবাক। মানুষের চেয়েখারাপ প্রানী নাকি আর নেই! তাহলে এটা কি মানুষ না?
ওর খুব ইচ্ছা করছিলো মানুষটা আর কি করে টা দেখতে কিন্তুততক্ষণে অনেক বেলা হয়ে গেছে। তখুনি না ফিরলে ধরা পড়ে যাবে। তাই তাড়াতাড়ি রাজ্যেফিরে এলো। কিন্তু মন পড়ে রইলো জঙ্গলে।

পরদিন ভোর হতেই তাই চলে এলো জঙ্গলে। কিন্তু আজ তন্ন তন্নকরে সারা জঙ্গল খুজেও মানুষটাকে কোথাও পেলো না। খুজতে খুজতে বনপেরিয়ে চলে এলো রাজকুমারী।
বনের ধারেই একটা কুটির। কিন্তু কেউ নেই। রাজকুমারী বুঝলোএটাই ছেলেটার বাসা। ও লুকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ছেলেটা ফেরার।
রাজপুত্র আসলে গেছে নদীতে মাছ ধরতে। কিছুক্ষণ পরেইফিরে এলো। হাতে মাছ আর কোলে একটা হরিণ। হরিণটাকে ও বাঘের মুখ থেকে বাচিয়ে এনেছে।প্রথমে হরিণটার কাটা জায়গায় ওষুধ লাগিয়ে তারপর মাছটা কুটে চুলায় বসিয়ে দিলো।
রাজকুমারী দেখেই বুঝলো রাজপুত্র রান্না একদমই পারে না। ওররান্নার চেষ্টা দেখে তো তিতলী হেসেই শেষ!
হঠাৎ হরিণটার অবস্থা আরো খারাপ হওয়াতে রাজপুত্র অটাকে নিয়েবাড়ির ভিতরে গেলো; তারপর আর খবর নেই। এদিকে চুলার মাছ পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। রাজকুমারীচট করে রান্নাঘরে ঢুকে মাছে ঠিকমত তেল-মশলা দিয়ে চুলার জ্বালটা ঠিক করে দিলো। একটুপরে রাজপুত্র এসে দ্যাখে রান্না শেষ। চেখে দ্যাখে দারুন স্বাদ। এতো ভালো রান্না সেঅনেকদিন খায়নি।
আড়াল থেকে রাজকুমারী ভাবলো, ‘ইশ! ছেলেটার কি কষ্ট!’ ও ঠিককরলো প্রতিদিন এসে ছেলেটাকে সাহায্য করবে।
পরদিন রাজকুমারী আবারো গেলো রাজপুত্র নাবিলের বাড়িতে। রাজপুত্রকাজে বেরোতেই রাজকুমারীও কাজে লেগে পড়লো। পুরো উঠোন ঝাড়ু দিলো, বাসন পত্র মেজেদিলো।
রাজপুত্র ফিরে এসে তো পুরো অবাক। ভেবেই পায় না কে এসব করলো।ওর হতভম্ব মুখ দেখে রাজকুমারীতো হেসেই কুটি কুটি।
যে-ই করুক রাজপুত্র তাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়ে রান্না করতেলেগে গেলো। রান্না বসিয়ে বাড়ির ভিতরে যেতেই আজও রাজকুমারী এসে রান্না ঠিক করে দিয়েগেলো।
আজও রাজপুত্র খেয়ে বেরিয়ে পড়লো। রাজকুমারী আজ ওর পিছু নিলো।
রাজপুত্র সারা জঙ্গল ঘুরে নানান লতা পাতা সংগ্রহ করলো। ফেরার পথে দ্যাখেবিশাল একটা মাকড়শার জাল। তাতে একটা রেশম পোকা ছটফট করছে। রাজপুত্র ওটাকেছাড়িয়ে দিলো। তারপর বাড়ি ফিরে ওষুধ বানিয়ে রাজ্যে ফিরে গেলো ওষুধ কাজ করে কিনা দেখার জন্য।
আর রাজকুমারী ফিরে গেলো নিজের রাজ্যে। ছেলেটা এতো ভালো কিন্তুওর মনটা সারাক্ষণ এতো ভার হয়ে থাকে কেনো কে জানে? রাজকুমারীর খুব ইচ্ছা করলো হাতধরে ছেলেটার সব দুঃখ মুছিয়ে দিতে।
পরদিন রাজকুমারী ধরা পড়ে গেলো। যথারিতী রাজপুত্র মাছ ধরতেবেরুলে রাজকুমারী ঘরের কাজ করছিলো কিন্তু আজ মাছ ধরতে গিয়ে দ্যাখে একটা ব্যাঙসাপের মুখে ধরা পড়েছে। রাজপুত্র মেরে সাপটাকে তাড়িয়ে দিলো। কিন্তু ততক্ষণে দেরিহয়ে গেছে। ব্যাঙটা মরে ফুলে গেছে। মন খারাপ করে তাই ও আগে আগেই ফিরে এলো বাড়িতে।এদিকে রাজকুমারী সেটা খেয়াল করেনি। হঠাৎ রাজপুত্রের সাড়া পেয়ে পালাতে গিয়ে গাছেরগোড়ায় বেঁধে পড়ে গেলো।
রাজপুত্র দৌড়ে ওকে তুললো। রাজকুমারী দ্রুত পালাতে চাইলোকিন্তু ওর হাত পা কেটে গিয়েছে, ফলে সাথে সাথেই মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। রাজপুত্র আবারওকে তুলে বসালো। তারপর জোর করে কাটা জায়গায় ওষুধ লাগিয়ে দিলো।
রাজকুমারীতো ভয়েই শেষ, কিন্তু অনেকক্ষণ পরেও যখন রাজপুত্রকিছু করলো না তখন একটু ধাতস্থ হলো।
রাজপুত্রের জিজ্ঞাসায় আসল নাম বললেও আসল পরিচয় দিলো না রাজকুমারী। বললো ওর বাসাবনের ঐ ধারে। ঘুরতে ঘুরতে এসে আটকে পড়ে গেছে। রাজপুত্র ওর কথা বিশ্বাস করলো, কারণ রাজকুমারীওর পাখা ওর শরীরের সাথে মিশিয়ে রেখেছিলো।
ততক্ষণে অনেক বেলা হয়ে গেছে, রাজকুমারী তাড়াতাড়ি ফিরে গেলোনিজের রাজ্যে।

পরদিন আর রাজকুমারী লুকিয়ে থাকলো না, সাহস করে রাজপুত্রেরসামনে চলে এলো।
রাজপুত্রতো ওকে দেখে খুবই খুশি হলো। তারপর দুজন গল্প করতেকরতে জঙ্গলে ঘুরতে লাগলো। অল্পক্ষণেই ওরা দুজনের বন্ধু হয়ে গেলো। আজ দুজনে একসাথেমাছ ধরলো, তারপর রাজকুমারী রান্না করে দিলো।
রান্না খেয়েই রাজপুত্র বুঝলো এতোদিন তিতলীই সব রান্না করেদিয়েছে। খুশি হলেও কিছু বললো না, ঠিক করলো রাজকুমারী যেমন নীরবে ওর উপকার করেছে, ওও তেমনি নীরবেই ওর উপকার শোধ করবে।
এরপর থেকে রাজকুমারী প্রতিদিন আসে রাজপুত্রের কাছে। রাজপুত্রওঅপেক্ষায় থাকে প্রতিদিন। দুজন মিলে সারা বন দাপিয়ে বেড়ায়। কিন্তু বিদায়ের সময়েই আবাররাজপুত্রের খুব মন খারাপ হয়ে যায়। একদিন থাকতে না পেরে রাজকুমারী জিজ্ঞেস করেইফেললো মন খারাপের কারণ। রাজপুত্র ওকে সব খুলে বললো।
শুনে রাজকুমারী বললো, ‘এই ব্যাপার! আমি দেবো তোমাকে পরীরপাখার জরী।’
কিভাবে দেবে তা জানতে চায় রাজপুত্র। রাজকুমারী বলবে না,কিন্তু রাজপুত্র শুনেই ছাড়বে। শেষে রাজকুমারীও সব খুলে বললো।
রাজপুত্রের বিশ্বাস হয় না। এমনকি পাখা বের করে দেখানোরপরেও।
রাজপুত্র তখুনি রাজকুমারীকে নিয়ে রাজ প্রাসাদে চলে এলো। রাজকুমারীওর পাখার সব জরী রাজপুত্রকে দিয়ে দিলো। যাতে সব প্রজা সহ সবার ঘুম ভাঙ্গাতে পারে।
রাজপুত্র নিতে চাইলো না। কারণ এই জরী না থাকলে রাজকুমারীআগামী এক মাস উড়তে পারবে না। কিন্তু রাজকুমারী বললো এক মাস ওড়ার চেয়ে মানুষের জীবনবেশি দামী।
রাজপুত্র নিকুম্ভ গাছের শিকড়ের সাথে জরী বেটে রাজা রাণীকেখাইয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পরেই তাদের চোখ খুলতে শুরু করলো।
আর তখনই সর্বনাশটা ঘটলো। আনন্দের আতিশয্যে রাজপুত্ররাজকুমারীকে জড়িয়ে ধরলো।
মানুষের স্পর্শ পেয়ে সাথে সাথে রাজকুমারীর প্রাণ পাখি উড়েগেলো, আর নিথর দেহটা পড়ে রইলো।
শোকে দুঃখে রাজপুত্র বাক্যহারা হয়ে গেলো।

এদিকে মৌমাছিরা ফুলের কানে খবরটা পৌছে দিলো। ফুলেরা সে খবর পরীদেররাজ্যে পৌছে দিলো। পরীদের রাজা রাণী কাদতে কাদতে দৌড়ে এলেন।
রাজপুত্র তাদের স্বান্তনা দিয়ে বললো, সব দোষ ওর, তাই ওডাইনীর কাছে যাবে রাজকুমারী তিতলীর প্রাণ পাখি ফেরত চাইতে।।
পরীদের রাজা নিষেধ করলেন। কারণ এর আগে যারা গিয়েছিলো তারাকেউই ফিরে আসেনি। ডাইনী ওদেরকে কি করেছে কেউ জানে না।
কিন্তু রাজপুত্র দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ও রাজকুমারীকে আবার জীবিতকরবেই।
বাধ্য হয়েই তারা রাজপুত্রকে ডাইনীর আবাসের সন্ধান দিলেন।
জঙ্গল পেরিয়ে সাতশ ক্রোশ দূরে বিন্ধ পর্বতের গুহায় ডাইনীরবাস। প্রায় ছয় মাসের পথ।
রাজপুত্র তখুনি বেরিয়ে পড়লো।
রওনা দিতেই সেই পাখিটা উড়ে এলো। যাকে নাবিল বাজের হাত হেকেবাচিয়েছিলো। পাখিটা এখন অনেক বড় হয়েছে।
নাবিলকে ডেকে বললো, রাজপুত্র আমাকে সাথে নাও, তোমার কাজেলাগতে পারি।
রাজপুত্র ভাবলো, ক্ষতি কি!
পাখিটাকে নিজের পাগড়ির ভিতর ঢুকিয়ে নিলো।
আর একটু সামনে এলো সেই রেশম পোকা।
নাবিলকে ডেকে বললো, রাজপুত্র আমাকে সাথে নাও, তোমার কাজেলাগতে পারি।
রাজপুত্র ভাবলো, ক্ষতি কি!
পোকাটাকে জামার জেবের ভিতর ঢুকিয়ে নিলো।
আরো একটু এগুতেই এলো সেই ব্যাঙটা।
নাবিলকে ডেকে বললো, রাজপুত্র আমাকে সাথে নাও, তোমার কাজেলাগতে পারি।
রাজপুত্র ভাবলো, ক্ষতি কি!
ব্যাঙটাকে নিজের জুতার ভিতর ঢুকিয়ে নিলো।
বনের শেষ মাথায় পৌছুতেই দৌড়ে এলো সেই হরিণটা।
বললো, ‘কোথায় যাও রাজপুত্র? চলো পৌছে দেই।’
রাজপুত্র হরিণের পিঠে চড়ে বসলো। ছয়মাসের পথ হরিণ ছয়দিনেপৌছে দিলো।
ডাইনীর গুহায় পৌছুতেই দেখা গেলো গুহার মুখে বিশাল দরজা।তাতে ইয়া বড় তালা। রাজপুত্র বহে চেষ্টা করেও তা ভাংতে পারলো না।
পাশের একটা গাছেই বসে আছে ব্যাঙমা আর ব্যাঙমী পাখি। ওরাবললো এই দরজার চাবি ঝুলানো আছে বিরান রাজ্যের এক ডালিম গাছের একমাত্র ডালিমেরভিতর। সেখান থেকে চাবি উদ্ধার করে আনা ছাড়া এই দরজা খোলার উপায় নেই।
রাজপুত্র রওনা দিলো বিরান রাজ্যে। প্রথমেই পড়লো তেপান্তরেরমাঠ।
তেপান্তরের মাঠের চারিদিকে ধূ ধূ বালি। কোথাও কোনো ছায়ানেই। রাজপুত্র পাগড়ি খুলে পাখিটাকে ছেড়ে দিলো। পাখিটা ছায়া দিয়ে দিয়ে রাজপুত্রকেএগিয়ে দিলো।
মাঠ পেরিয়ে এগুতেই সামনে পড়লো আগুন সেতু। রাজপুত্রব্যাঙটাকে বের করলো। ব্যাঙ পানি ছিটিয়ে আগুন নিভিয়ে দিলো।
হেটে হেটে রাজপুত্র বিরান রাজ্যে পৌছে গেলো।
খুজে বের করলো ডালিম গাছ। কিন্তু গাছের ডাল অনেক উঁচুতে।গাছের গুড়িও অনেক বড়। বেয়ে ওঠা সম্ভব না। রাজপুত্র জেব থেকে রেশম পোকাটাকে ছেড়েদিলো। রেশম পোকা গাছের ডাল থেকে রেশমি সুতা বুনে ছেড়ে দিলো। তা ধরে রাজপুত্র উঠেগেলো উপরে। তারপর ডালিম পেড়ে নিয়ে ফিরে এলো।

ডালিমেরর ভিতর থেকে চাবি বের করে রাজপুত্র গুহার দরজা খুলেফেললো।
ওকে দেখেতো ডাইনী খুবই অবাক।
রাজপুত্র ডাইনীকে বললো রাজকুমারী তিতলীর প্রাণ পাখিটাকেফেরত দিতে।
তা শুনে ডাইনী খুনখুনে গলায় হেসে উঠে বললো কোনোভাবেই সেরাজকুমারীর প্রাণ পাখি ফেরত দেবে না।
রাজপুত্র বললো এর জন্যে সে যে কোনো দাম দিতে প্রস্তুত।
ডাইনী আরো জোরে হাসতে হাসতে বললো, ‘তাহলে তোর কলিজা কেটেদিতে হবে। তবেই রাজকুমারীর প্রাণ পাখি মুক্তি দেবো।’
রাজপুত্র বললো, ‘তাহলেতো আমি রাজকুমারীকে ভুলে যাবো।’
ডাইনী বললো, ‘অতো বুঝিনে বাপু। তোর ভালবাসা বাচাবি নাকি তোরভালবাসার মানুষকে বাচাবি তা তুই ভেবে দ্যাখ।’
রাজপুত্র ক্ষেপে গেলো। সে তরবারী বের করে ডাইনীকে মারতেগেলো। কিন্তু ডাইনী হাসতে হাসতে অদৃশ্য হয়ে গেলো। তারপর খ্যাক খ্যাক করতে করতেবললো, ‘আমকে মারলে তোরই ক্ষতি বাপু। আমার গলার স্বর ছাড়া প্রাণ পাখির দরজা খুলবেনা।’
রাজপুত্র বুঝলো আর উপায় নেই। রাজকুমারীকে বাচাতে হলে ওরকলিজা কেটে দিতে হবে।
ও রাজী হলো।
ডাইনী ওর লম্বা নখ দিয়ে নাবিলের বুক চিরে কলিজা বের করেনিলো।
ফলে ডাইনীর অভিশাপ মুক্ত হয়ে রাজকুমারীর প্রাণ পাখি মুক্তহয়ে নিজের দেহে ফিরে এলো কিন্তু রাজপুত্র ভুলে গেলো রাজকুমারী তিতলীর কথা। রাজকুমারীরজ্ঞান ফিরতেই ও দৌড়ে এলো রাজপুত্রেরর কাছে কিন্তু রাজপুত্র ওকে চেনেই না।
রাজকুমারী বার বার সব কথা খুলে বলে, কিন্তু রাজপুত্রেরকিছুই মনে পড়ে না। কিছুতেই মনে করাতে না পেরে রাগে দুঃখে কাদতে কাদতে রাজকুমারী ফিরে গেলো পরীরাজ্যে।
এদিকে ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী তো সবই দেখেছে। ওরা রাজকুমারীকেসব বলে দিলো।
সব শুনে ওর রাগ সব পড়ে গেলো।
নিজের হাতে রান্না করে নিয়ে গেলো রাজপুত্রের কাছে। খাবারমুখে দিতেই রাজপুত্রের ভিতরটা কেমন করে উঠলো। কি যেন মনে পড়ি পড়ি করেও পড়ছে না।খেতে খেতে মাছটা মুখে দিতেই রাজপুত্রের সব আবার মনে পড়ে গেলো।
ও হাটু গেড়ে বসে রাজকুমারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো।
রাজকুমারীতো আগে থেকেই রাজী।
অভিশাপ কেটে গেছে, তাই দুই রাজাও কোনো আপত্তি করলেন না।
ব্যাস! ধুম ধাম করে বিয়ে হয়ে গেলো রাজপুত্র নাবিল আররাজকুমারী তিতলীর।
সাত দিনের উৎসব ঘোষণা করা হলো দুই রাজ্যে।

কিন্তু বিয়ের দিন সেই ডাইনীটা এসে উপস্থিত।
সবাই ভেবেছিলো যা চেয়েছে তা পাওয়ায় ডানীটা আর উৎপাত করবেনা। কিন্তু ডাইনীর পরিকল্পনা ছিলো ভিন্ন। ও ভেবেছিলো রাজপুত্রকে রাজকুমারীর কথাভুলিয়ে নিজেই রাজপুত্রকে বিয়ে করবে। তাই এ বিয়ে সে কোনোমতেই মেনে নেবে না।
ও হুমকি দিলো ওকে বিয়ে করতে হবে, নাহলে ও রাজপুত্রের কলিজায়ছুরি দিয়ে ছিদ্র করে রাজপুত্রকে মেরে ফেলবে। উৎসব থেমে গেলো। সৈন্য দল তীর ছুড়েডাইনীকে মারার চেষ্টা করলো কিন্তু ডাইনী অদৃশ্য হয়ে সব চেষ্টা ভেস্তে দিলো।
কিছুতেই কিছু না হওয়ায় সবাই হায় হায় করে উঠলো কিন্তুরাজপুত্র সাহস হারালো না।
সে বললো, ও ডাইনীকে বিয়ে করবে, তবে সে জন্যে ডাইনীকে হাটুগেড়ে বসে চোখ বন্ধ করে রাজপুত্রকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে হবে।
এমন প্রস্তাবেতো ডাইনী সানন্দে রাজী।
যেই মাত্র ডাইনী হাটু গেড়ে চোখ বন্ধ করে প্রস্তাব দিতে গেলোওমনি রাজপুত্র তার জেব থেকে সেই ঘুম বাতাসের শিশিটা বের করে মুখ খুলে ডাইনীররচোখের সামনে ধরলো। ডাইনীর চোখের পাতা ভারী হয়ে এলো। সাথে সাথে সে ঢলে পড়লো মরণঘুমে।
ডাইনীকে একটা গুহায় ভরে গুহামুখ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হলো।
থেমে যাওয়া উৎসব আবার শুরু হলো। পরী আর মানুষ তারপর থেকেআবার এক সাথে সুখে শান্তিতে বাস করা শুরু করলো।

“আমার কথাটি ফুরালো
নটে গাছটি মুড়ালো”
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×