কবিপরিচিতি
কবি মিজানুর রহমান শমশেরী ৮ই কার্তিক ১৩৫৩ বঙ্গাব্দে (২৩ অক্টোবর ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে) ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার অন্তর্গত সুতারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৯ আষাঢ় ১৩৮৮ বঙ্গাব্দে (১৪ জুলাই ১৯৮১) বিয়ের পূর্বরাতে হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকালে প্রয়াত হোন । তবে এ-ও জনশ্রুতি আছে যে, আরাধ্য মানবীকে না পেয়ে বিয়ের আগের রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন। তাঁর পিতার নাম শমশের উদ্দিন। সর্বজ্যেষ্ঠা এক বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে শমশেরী ছিলেন পঞ্চম।
একান্ত কৈশোর থেকেই লেখালেখির প্রতি শমশেরীর আগ্রহ গড়ে ওঠে। সাহিত্যসাধনা ও সাহিত্যচর্চা ছিল তাঁর প্রাণ। স্কুল-কলেজের বন্ধু-বান্ধবী ও এলাকার তরুণ-কিশোরদের নিয়ে গড়ে তোলেন সাহিত্যচর্চা বিষয়ক আসর ‘পদ্মাপার খেলাঘর’। এর পূর্বে আদমদজী নগরের 'অগ্নিকন্যা খেলাঘর' আসরের সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে তিনি তাঁর খেলাঘর জীবন শুরু করেন।
শমশেরী ৭০ দশকের কবি। ধূমকেতু, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সমাচার সহ তদানীন্তন গুটিকতক জাতীয় দৈনিকের সবকটাতেই এবং অন্যান্য লিটল ম্যাগাজিন ও সাময়িকীতে তিনি নিয়মিত লিখতেন। দৈনিক বাংলার বাণীতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে লিখতেন উপ-সম্পাদকীয়।
তাঁর জীবদ্দশায় একটিমাত্র কাহিনীকাব্য 'অশ্রুমালা' প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির আয়তন সুবিশাল। পাণ্ডুলিপিতে উল্লেখিত বইগুলোর নাম হলো : জীবন যন্ত্রণা, বসন্ত পরাগ, একাত্তরের চিঠি, শিকল ভাঙ্গার গান (গান) ও হিজলফুলের মালা (কাহিনীকাব্য)। এখানে সর্বমোট ১৩৭টি কবিতা, ৪০টি ছড়া ও ৫২টি গান রয়েছে।
প্রয়াত কবির কবিতা, গান ও ছড়া সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এ ব্লগটি সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঠকদের ভালো লাগলে শ্রম সফল হবে।
সামহোয়্যারইন ব্লগের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা থাকলো।
***
তুমি কি আমার কথা ভাবো ?
তুমি কি আমার কথা ভাবো?
কঠিন প্রাচীরে কান পেতে শুনি
মুক্তির দিন একদিন আসবেই
সেইদিন তোমাকে আবারো কাছে পাবো।
যেখানে সূর্যের সোনালি বিচ্ছুরণ
এখনো হোঁচট খায়
পড়ন্ত বিকেলের বসন্ত যৌবনে
যেখানে ধ্বনিত পাখির কাকলি
প্রাচীরের বাঁধ ভেঙে চলে যাবো
তুমি আর আমি পায় পায়
সেই নির্জনতায়।
রাত্রির নিঃসঙ্গতায় একা জেগে আছি
আমার চোখে নেই ঘুম,
চোখের সামনে প্রাচীরের গায়
স্বপ্নের পাখিগুলো ডানা ঝাপটায়
মুক্তির অন্বেষা খুঁজিতেছে পথ
সুপুষ্ট মৌসুম।
এখনো আমার চোখে নেমে আসে
সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশ,
পলাশের লাল রঙে রঙিন পদ্মাপার
পারভাঙা তীরে নব কিশলয়ে
পালতোলা নায়ে স্বচ্ছ সলিলে
গোধূলির সুস্পষ্ট প্রকাশ।
এই নির্জনতায় বসে বসে ভাবি
আবারো তোমায় কাছে পাবো
গানে আর কবিতায় কাটাবো প্রহর
মধুরাত এনে দিবে চাঁদের সুষমা
তারার মালিকা গেঁথে কবরী সাজাবো।
তুমি কি আমার কথা ভাবো?
আমার কথা কি ভাবো?
এই মাটি এই মন
এখানে নরম মাটি কাদামাখা ঘোলা জল
আমি তো চাই নি সবুজ ফসলের মাঠ
চেয়েছিলাম বাদামি রঙের তামাটে ফসল
এবং অঘ্রাণের শীতের সকাল, উন্মুক্ত কপাট।
ফুল পাখি নদী জল কালো চোখ এলোচুলে
সাজানো হরিৎ ক্ষেত্র সুশোভিত নদীতটে
আমার বাসনা নেই; শুধু বলিষ্ঠ আঙ্গুলে
কাস্তে চেপে এঁকে যাবো ছবি আমার প্রচ্ছদপটে।
পাখি যদি গান গায়, কুমারী ধানের ক্ষেতে
জেগে থাকে প্রজাপতি রাতের শিশিরে
আমি শুধু দেখে যাবো দূর থেকে আলপথে
যেহেতু আমার মন মিশে আছে মাটির গভীরে।
ধানক্ষেত : তুমি আর আমি
কাঁচা মরিচের সবুজের মতো,
কুমারী ধানের মতো আছো নুয়ে,
আমার হৃদয়ে একান্ত নিবিড় হয়ে, একান্ত নিবিড়;
যেমনি নেতিয়ে থাকে মাচানে
পুঁইয়ের ডগা নিতান্ত স্থবির,
আশ্বিনের সোনাঝরা রৌদ্রটুকু চুয়ে চুয়ে।
তোমাকে দেখেছি আমি কার্তিকের প্রথম ফসলে
শালিকের ভিড়ে, ভাঙা উঠোনের পাশে,
যেখানে চড়ুই বসে বেগুনের ডালে।
কার্তিকের দারুণ রোদ্দুরে যখন কাস্তে হাতে মাঠে নামি,
তোমাকে দেখেছি সেইবেলা,
দেখেছি মাঠের পরে ধানশিষে ফড়িঙের প্রেম-প্রেম খেলা।
নতুন উদ্যমে মনে হয় পৃথিবীটা ধানক্ষেত :
সেখানে শালিকের মতো শুধু তুমি আর আমি।
অস্পষ্ট জননী
আমি যতোদিন তোমাকে ভেবেছি এই দূরপ্রবাসে মা আমার,
যতোদূর মনে পড়ে, স্পষ্টতর নও তুমি; আধো আলো-আঁধারে
আলুথালু চুল, চোখের নীচে ঝুলে পড়া মাংস, অস্থিচর্মসার
তোমাকে হারাই যেন বার বার একদল ভিখারির ভিড়ে।
আমার পড়ার টেবিলের সামনে- প্রচ্ছন্ন দেয়ালের আস্তরণে
তোমাকে প্রতিষ্ঠা করি মাগরেবের সায়াহ্ন-কিরণে- জায়নামাজে,
অনেক মিনতিভরা চোখে তোমাতে তাকাই; তুমি তবু অকারণে
দূর থেকে ফিরে যাও ভিখারিণী বেশে একদল ভিখারির মাঝে।
আমার অস্তিত্ব সর্বদা ঘোষণা করে- আমি এক দূরন্ত পুরুষ;
বাবার বিশাল বক্ষ, তেজোদ্দীপ্ত আঁখি, আমি তাঁরই উত্তরসূরি :
তোমার লাঞ্ছনা দেখে ফেটে পড়ে বিদ্রোহের দারুণ আক্রোশ।
কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই
তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা
আমি কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই।
হৃদয় কন্দরে হতাশার জমাট অন্ধকার
ক্ষুধার মানিক খোঁজে পথ, কোথায় পথ,
আহার্যের এক টুকরো রুটির ঠিকানা!
বিড়ম্বিত জীবনের অনন্ত জিজ্ঞাসা-
তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা।
আমি ক্ষুধার্ত, জঠর জ্বালায় ছুটে যাই উচ্ছিষ্ট রুটির সন্ধানে
কোথায় সাহেব-বিবির বালাখানা
ডাস্টবিনে আবর্জনার সাথে মিশে থাকা রুটির টুকরো
এবং উচ্ছিষ্ট সালুন,
আমি ছুটে যাই হোটেলে হোটেলে
কোথায় পরিত্যক্ত ভাতের ফ্যান
বাঁচার তাগিদে ছুটে যাই
শুধু খেতে চাই
তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা
আমি কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই।
আমি মানুষ! আমার বিশ্বাস হয় না
সভ্যতার বিংশুতি যুগে আমার পরনে বস্ত্র নেই
রাতে ফিরার মতো এক টুকরো চলার ঠিকানা
খাবারের বাসন যা প্রয়োজন প্রত্যহ মানুষের
আমার তা নেই।
আমার রাত্র কাটে খড়কুটোয় প্রত্যহ নতুন আস্তানায়
আমার শীতের কাঁথা আঁধারের কালো কুজ্ঝটি
বুকের ক’খান হাড়ে চাপা পড়ে থাকা প্রাণ
মানে না নিয়ন্ত্রণ।
স্নায়ুতে স্নায়ুতে আনে কঠোর যন্ত্রণা
বিংশুতি যুগে আমি মানুষন এ আমার বিশ্বাস হয় না।
হায়রে জীবন, এটাই যদি জীবন হয়
এমন জীবন চেয়েছিল কারা?
সভ্যতার উষালগ্নে আমার মনে আদিম প্রবৃত্তি
খাবারের জন্যই কেবল ব্যস্ততা
যেখানে যা কিছু পাই
কেবল খেতে চাই।
ইচ্ছে হয় সভ্যতার বেড়াজাল অগ্রাহ্য করে
আদিম হিংস্রতায় ফিরে যাই;
তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা,
আমি কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই।
দুটি মন
ও পাড়ার মেয়েটির শাড়ির আঁচলে
কখন যে বাঁধা পড়ে প্রজাপতি মন
যতো চাই সরে যেতে- ডেকে ডেকে বলে,
ওরে তুই হতভাগা, দাঁড়া কিছুক্ষণ।
সবুজ ঘাসের বনে প্রজাপতি ওড়ে
বিকেলের লাল রোদে রাঙানো অধর,
ও পাড়ার শ্যামলিনী ডাক দেয় দূরে,
হাত নেড়ে ডেকে কয়- আয়, বাঁধি ঘর।
নীড়হারা মন বলে, ধীর পায়ে চলো
ক্লান্তিতে ভরে গেছে অলস অধর
মেয়েটিরে ফিরায়ো না, ওরে কিছু বলো
এমনি তো কেটে গেলো তিরিশ বছর।
ঘরভাঙা মাছরাঙা গাংচিল পাখি
রঙিন মাছের বুকে মেরেছে ঠোকর
প্রজাপতি-মন মোর, নিমীলিত আঁখি
ডেকে কই- ঘরভাঙা, আয়, বাঁধি ঘর।
গাংচিল ডেকে কয়- ঘরমুখো হবি!
সহসা গুটিয়ে পাও মেলে দিয়ে পর
ডেকে ডেকে কয়ে গেলো- ফিরে যাও কবি
কেন আর পিছু ডাকো, কোথা পাবো ঘর!
এ অসীম শূন্যতা, ঘরভাঙা ঝড়
এমনি তো কেটে যায় হাজার বছর।
জীবনটা এক ছোট্ট নদী
একটা নদী পেরিয়ে এলাম, সেই নদীটার মধ্যখানে
নষ্ট ক’টা পদ্মকুসুম পাঁপড়ি ভাঙে স্রোতের টানে।
সামনে এখন একটা নদী, যায় দেখা যায় শুষ্ক তট
মাঝখানে তার প্রবালদ্বীপে হাতছানি দেয় শিমুলবট।
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেখি ভাবের ভুবন অনুর্বর
জীবনটা এক ছোট্ট নদী, মাঝখানে তার শুকনো চর।
কালের বাল্মীকি
গীটারের তার থেকে ক্রমশ স্থবির হয়ে
হাত দুটো সরে যায় কুমারী মেয়ের
চুলের বেনুনে, পায়ের আঙুল থেকে
বেড়ে ওঠে শরীরী উত্তাপ, কখন যে
কেঁপে ওঠে ঠোঁট দুটি অসতর্ক ইঙ্গিতে।
অত্যাধুনিক কবিতার দু-চার পঙ্ক্তি আউড়িয়ে
তরুণেরা কিশোরীর গাল ঠোকে আঙুলে;
কখনো বা নাবালিকার যৌনাঙ্গে হাত রেখে তৃপ্ত হয়ে বলে-
‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং তম গমঃ শাশ্বত সমা।’
প্রার্থনা
বুকের মধ্যে আজন্ম ভালোবাসা তোলপাড় করে,
আমি ভালোবাসার পূর্ণতা পেতে চাই।
রাত্রির শরীর কেটে ক্রমশ বেড়ে ওঠে
সফেদ দুধের মতো রমণীর উন্মাদনা
অযথা শাণিত ঠোঁটে বক্ষে ঠোকর মেরে কেড়ে খায় ভালোবাসা।
আমি শিউলির কাছে সুবাস ছাড়াও কিছু সবুজতা চাই-
কেননা, আমার শরীরে ঘামের গন্ধ ছাড়াও প্রাণ আছে-
আমি প্রাণের পূর্ণতা পেতে চাই।
সুরঞ্জনা
আমি বুঝি না সুরঞ্জনা
প্রতিদিন কেন নিশীথে সিঁদুর আঁকো
চন্দনে রাঙা ঠোঁট লাল করে রাখো
এতো কী রঙের প্রবঞ্চনা!
কেন দেখি প্রতিদিন
প্রজাপতি-মন, স্পন্দিত বুক
অঞ্জনমাখা ঐ কালো চোখ
চপল দৃষ্টি পলকহীন!
অঙ্গীকার
অত্যন্ত গভীর হতে প্রতিদিন প্রতিজ্ঞা নিবিড় হয়ে আসে
উন্নত অজস্র চিন্তা হৃদয়ে হৃদয়ে ঘটায় বিস্ফোরণ।
দুরন্ত যৌবনে প্রত্যহ মনন ধায় ঊর্ধ্বশ্বাসে
গগনে গগনে জ্বলন্ত সূর্যরশ্মি ছড়ায় বিচ্ছুরণ।
রমণীর চুলের গন্ধে নয়- বারুদের গন্ধে এসেছে যৌবন
দুঃশাসনের রক্তসিন্ধুর জলে প্রজ্জ্বলিত অঙ্গীকার-
একদিন আমরা এই দিন থেকে ফিরে যাবো অন্য এক দিনে
যেদিনে পাণ্ডুর মতো ম্লান পিশাচের শক্ত হাড়- দানব হিটলার।
কৃষান
ফসলের মাঠে আজ কী প্রচণ্ড ভিড়
নতুন শপথে দীপ্ত চাষার নয়ন
কী আনন্দ ঘরে ঘরে আজ গৃহিণীর
উঠানে উঠানে করে ফসল চয়ন।
কৃষির দিগন্তে আজ নতুন প্রভাত
রোদে কী বৃষ্টিতে চলে অবিরাম কাজ
পুরুষের পাশাপাশি রমণীর হাত
সুকোমল বাহুদ্বয় নেচে চলে আজ।
মাটির সোঁদালি গন্ধে, ফসলের শিষে
আঁটিতে আঁটিতে বাঁধে সুপুষ্ট ধান
কাদা ও বৃষ্টির সাথে একাকার মিশে
ফসলের গোলা ভরে অভাবী কৃষান।
প্রান্তিক
হত্যার কাছে ক্ষমা নেই-
শিকারির কাছে নিস্তার নেই হরিণের
নারীর মাংসপেশিতে পুরুষের আজন্ম অধিকার
সভ্যতা লেবেল মাত্র
প্রকৃত সভ্যতা আদিম হিংস্রতা।
আমি তো জানি-
মানুষকে বাদ দিলে মনুষ্যত্ব নেই :
কেউ যদি বলে ‘আমি রাজা-মহারাজা’
পিঠের কাপড় খুলে চাবুক মেরে দেখো
কোথায় মর্যাদা।
স্মরণিকা
ক্রমশ ক্লান্ত কোকিলের ডাক যখন থেমে যাবে
মধ্যাহ্নের দীপ্ত রবি বিস্ময়ে যখন চেয়ে রবে
শ্যামল মাটির প্রান্তে, পৃথিবী যখন হারাবে
সকল সুষমা, তখনো তোমার কথা মনে হবে।
বর্ষার অবিশ্রান্ত বারিধারা যখন হবে শেষ
পত্র-পল্লবে যখন কোনো শিহরণ জাগবে না
সতত কল্পনা হারাবে মনের রঙিন আবেশ
তখনো হে প্রিয়তমা, অনেক দূরে থাকবে না।
অথবা তোমার কথা মনে হবে, যখন পৃথিবী
শীতের কাঁপন লেগে ক্রমশ স্থবির হয়ে রবে
শীতের হিমেল বায়ে লুটে নিবে মালতি করবী
শেফালি, তখনো তোমার কথা আমার মনে হবে।
অন্বেষা
আমাকে তোমরা একটু ভেবো না
নিশ্চিন্ত আমি মৃত্যুর কাছাকাছি
আমার ডান হাতে উদ্যত গ্রেনেড
বক্ষে আমার বিরাট পৃথিবী।
আমি আদিম হিংস্র আদমের নবজাত শিশু
চোখে আমার দুরন্ত অহমিকা
আমি ভালোবাসি ফল-ফুল-নদীজল- তাই
প্রতিদিন খুঁজে ফিরি অগ্নিদগ্ধ শ্মশান-ভস্ম-ছাই।
যুদ্ধ হবে
যদিও আমার হাতে বেয়নেটের মতো ধারালো
অস্ত্র নেই, নেই যুদ্ধযাত্রার বোমারু বিমান
গ্রেনেড কিংবা থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল
তবু আমি উদ্যত সৈনিকের মতো
ভালোবাসি যুদ্ধকেই।
কেননা যুদ্ধই আমার শাশ্বত চেতনার মুক্তি।
অসঙ্গত শান্তির প্রস্তাব অসম্ভব
এখানে যুদ্ধ হবে জানি-
তুমিও জানো আমিও জানি
তবু কেন অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তির ব্যর্থ প্রহসন!
চারশ কোটি মানুষের বিশ্বে
এখনো মুক্তির সীমিত তোরণ।
শ্রমিকের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে গ্রাস
পুঁজিবাদ গোগ্রাসে আঁকড়ে ধরে আছে
অগণিত রাজ্যপাট, সুরম্য প্রাসাদ;
ধোঁয়ার ভ্যাঁপসা গন্ধময় কারখানা হতে
প্রতিদিন ফিরে আসে শ্রমিকের শূন্য হাত।
এ কথা অসত্য নয়-
নিগ্রোদের পিঠে পিঠে চাবুকের দাগ
চিলির মুক্তিকামী মানুষেরা শান্তির প্রত্যাশী।
সাম্রাজ্যবাদের লোলুপ দৃষ্টির লেলিহান শিখা
যেখানে-সেখানে ছড়ায় আগুন;
বেপরোয়া সৈনিকেরা হত্যার আদেশ নিয়ে
উজাড় করে দেয় গ্রাম-গ্রামান্তর।
যে প্রাসাদে বাস করি
যে প্রাসাদে বাস করি, শুনি এর ভিত নাকি ভাঙা
কার্পেট উঠিয়ে দেখি
বুকভাঙা মানুষের খুন দিয়ে রাঙা।
দেয়ালের প্রতি ইটে অহরহ শুনি কার ক্রন্দন
কত যে চোখের জলে
ধুয়ে দেয় নিতি রঙিন আস্তরণ।
বহুদিন হতে এ প্রাসাদে আমি নিঃসঙ্গ কাল যাপি
নীরব নিভৃতে তবু শুনিতেছি বাতাসের দাপাদাপি
গভীর নিশীথ জেগে প্রতিদিন কার পদশব্দ শুনি,
মনে হয় কারা যেন খুঁজিতেছে- খুঁজিতেছে কার খুনি।
নিমীলিত আঁখি স্বপ্ন-জড়ানো কত যে তিমির রাত
নিঃশব্দে ক্ষয়ে গেছে সয়ে সয়ে বাতাসের পদাঘাত।
তীব্র ভ্রুকুটি হেনে প্রতিদিন প্রাণের উচ্ছ্বাস-
মহাক্রোধে ছুঁড়ে দেয়
দেয়ালে দেয়ালে বিষাক্ত নিশ্বাস।
আমি যে অনাথ-
নিয়েছি আশ্রয়, কেন এ ভ্রুকুটি হানো?
আমি তো জানি না এ রহস্য কিছু,
ইতিহাস তুমি জানো।
কান্ত দেখে হাসি
আমার কান্ত দেখে হেসে মরি
বুকের ভিতরে টক টক টক দু হাত দোলন যেন
বেজে চলে সময়ের ঘড়ি।
খাবার বাসন নেই- সিগ্রেটের বাক্সটা পকেটের পুঁজি
মনের দর্পণে ঘুরে ফিরে আপন সত্তাকে আমি খুঁজি।
চোখের কোটরে আঁটা একজোড়া চোখ যেন সুপারির মতো
নিঃশেষে আমাকেই গ্রাস করে যাবে এমন উদ্ধত।
অন্তহীন পথে হেঁটে চলি মাইল ক্রোশ পাঁচ দশ বিশ
আমার গতিকে রুখতে পারে না সিগন্যাল ট্রাফিক পুলিশ।
সারাদিন গাড়ি চলে, ধোঁয়া ছুঁড়ে গাড়ি চলে ট্রাক বাস রেল
আমি চলি দ্রুতগামী- কারা যেন ডেকে বলে- ফেল ফেল ফেল।
সমতার ঝড়
একটা ঝড় উঠুক, একটা ঝড়
ভেঙেচুরে যাক প্রাসাদ কানন
ক্ষুদ্র কুটিরের চালান খড়,
একটা ঝড় উঠুক, একটা ঝড়।
উঠুক না বেজে প্রলয় বিষাণ
ভয় কী রে আজ ভয় কী রে আর,
সে ঝড়ে জাগুক শ্রমিক কৃষান
আশার স্বপন ভেঙে গেছে যার।
আসুক তুফান প্রলয় বেগে
ভাঙুক রে সব ভাতের বাসন
বাতাসে উড়ুক ছিন্ন কাঁথা
ধূলিতে পড়ুক রাজার আসন।
বিশ্বে পড়ুক হায় হুতাশা
নিঃস্ব যারা খুঁজুক রুটি
সকল মানুষ একসাথে ফের
নতুক করে বাঁধুক খুঁটি।
প্রভাত প্রতীক্ষা
রাত জেগে বসে আছি প্রভাতের প্রতীক্ষায়
জানি না কখন ফুরাবে তিমির রাত,
রাতের দীনতা চিরে আলোর বন্যায়
অবশ্য তোরণ দ্বারে আসবেই সুপ্রভাত।
রাতের নৈঃশব্দ্যে শুনি আলোর মহোৎসব
চোখে মোর সম্ভাবনার উজ্জ্বল জ্যোতি
কান পেতে শুনি ধৃষ্ট আত্মার কলরব
মৃত্যুর করাল ভেদি জীবনের স্তুতি।
রাতের দীনতায় এসে অদৃশ্য তৃতীয় হাত
বার বার বিভ্রান্ত করেছে বন্দি আত্মার
চূড়ান্ত পরাজয়ে যখন টুটবে রাত
অবশ্যই বুঝে নিবে কী স্বাদ ধৃষ্টতার।
ব্যর্থ যৌবন
তোমাদের কঠিন প্রহরায়
প্রত্যহ এখানে নিঃসঙ্গ প্রহর কেটে যায়।
এখানে পড়ন্ত রোদে উড়ায় পথের ধূলি,
ঝরে যায় নব যৌবনের বসন্ত গোধূলি।
প্রত্যহ এখানে রুদ্ধ হয় জীবন প্রশ্বাস,
স্নায়ুতে স্নায়ুতে জড়তা জড়ানো যৌবনোচ্ছ্বাস।
মৃত্যুর পদাবলি প্রত্যহ এখানে শুনি
নিঃসঙ্গ নির্জনতায় তাই তো প্রহর গুনি।
কতদিন বাকি আর মুক্তির আসন্ন প্রভাত,
ব্যর্থ হলো জীবনের যৌবন বসন্ত রাত।
অবাক পৃথিবী
অবাক পৃথিবী, অবাক করলে
অবাক তোমার কাজ,
ওই ক্ষুধাতুর কাঁদে রাজপথে
রাজপথও কাঁদে আজ।
মহারাজ পোষে কুকুর প্রহরী
দারোয়ান দিয়ে ছুটি
কুকুরে চিবায় মাংস পোলাও
মানুষ পায় না রুটি।
জঠর জ্বালায় চলে গেছে মাতা
শিশুরে করিয়া নিঃস্ব
কাক শকুনেরা মাংস খেয়েছে
হায়রে অবাক বিশ্ব!
চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ
ভরেছে গোরস্থান,
বিস্মৃত আঁখি খুঁজে ফিরে হায়
কোথা এর সমাধান!
ইতিহাস
তোমরা যারা ইতিহাস লিখো
ইতিহাস হয়ে থাকবে,
ক্ষুধার্ত মানুষের মৃত্যুর শ্বাস
বিষাক্ত করে গেলো বিশুদ্ধ বাতাস
ওদের কথা কি লিখে রাখবে?
তোমরা যারা ইতিহাস পড়ো
ইতিহাস নিয়ে থাকবে
পা টিপে পেলো যারা শত পদাঘাত
লাঞ্ছিত মানুষের বঞ্চিত সাধ
চিরদিন চাপা পড়ে থাকবে।
তোমাদের ইতিহাস ছাড়া
আরো কিছু ইতিহাস আছে,
তোমরা তা পড়ো নাই,
আমরা পড়েছি বাস্তবের কাছে।
তোমরা লিখেছো জয়-পরাজয়
যুদ্ধের প্রলয়-উচ্ছ্বাস,
আমরা পড়েছি বাস্তবের কাছে
সাধারণ ইতিহাস।
তোমরা এঁকেছো ভৌগলিক সীমা
আমরা তা দেখি নাই
আমরা দেখেছি বাস্তবের কাছে
আমাদের সীমা নাই।
তোমরা লিখেছো রাজাদের কাছে
প্রজাদের অধিকার,
আমাদের ইতিহাসে স্পষ্টই লিখা
কিছুই পাই নি তার।
ইতিহাস সে তো ভুল নয়
তোমাদের আমাদের আছে,
সবার ওপরে রয়েছে আকাশ
প্রশ্ন করো তার কাছে।
সময়ের বিবর্তনে ভেসে গেলো কত
মৃত্যুর ইতিহাস,
তোমরা লিখো নি, আমরা লিখি নি
সবকিছু লিখেছে আকাশ।
বন্যা
বন্যা এলো বন্যা গো
শ্যামল মায়ের কন্যা গো
বন্যা এলো দেশে
দেশ ভাসালো গাঁও ভাসালো
মাঠ ভাসালো ঘাট ভাসালো
পাগলা হাসি হেসে।
যায় ভেসে কার ভিটে-মাটি
হালের বলদ ঘটি-বাটি
মাঠভরা সব ধান,
কৃষান-বধূর মিষ্টি হাসি
ভাসিয়ে দিল সর্বনাশী
উল্লাসী তার প্রাণ।
তুমি চলে গেছো
তুমি চলে গেছো তাই চলে গেছে স্বপ্নের সে দিনগুলি
তুমি চলে গেছো তাই দূরে সরে গেছে সন্ধ্যা-গোধূলি।
মেঘের পরতে লিখা আছে শুধু বাতাসে ওড়ানো বেগ
তুমি চলে গেছো তাই বুঝি আর আসে নি শ্রাবণ মেঘ।
ওই বনপথ রেখে দিয়েছে আজো বিদায়ী চরণ লিখা
জোনাকি মেয়েরা তাই বুঝি আর জ্বালে নি প্রদীপ শিখা।
তুমি চলো গেছো ঝরে গেছে তাই কুসুমের হাসি মুখ
তুমি চলে গেছো ভরে আছে তাই বেদনায় কঁচি বুক।
শেষের কবিতা
এই দেখা যদি শেষ দেখা হয় তবে কেন আসিলাম,
ভালোবাসা যদি বেদনাই হয় কেন ভালোবাসিলাম।
ফুটিবার আগে যদি ঝরে ফুল কী হবে প্রহর গুনে,
জানিবার আগে যদি যাই ভুলে কী হবে কাহিনি শুনে!
আকাশ জেনেছে চাঁদের সুষমা সাগর জেনেছে পানি,
তুমি যে আমার এতো কাছাকাছি তবু নেই জানাজানি।
রাতের আকাশে চাঁদের মরীচি যখন সুষমা আনে
সাগরের জল পারভাঙা তটে কথা কয় কানে কানে।
সারা তপোবন ঘুমায় যখন রাত্র গভীর হলে
নিমতলা থেকে ডাক দেয় পাখি বউ কথা কউ বলে।
বহুদিন হতে সে ডাকে আমার দু চোখে এসেছে নিদ
সেই ফাঁকে এসে জানি না কখন কেটেছো মনের সিঁদ।
লুটে নিয়ে গেছো তনু-মন-প্রাণ জীবনের যতো ধন
সব নিয়ে গেছো, রেখে গেছো শুধু ব্যথা আর ক্রন্দন।
হাতের বাঁশরি বাজে না তো আর তালছাড়া হয়ে যায়
সুরের লহরি আসে না তো আর আজিকার কবিতায়।
শেফালি কুসুম আতিয়া যখন শুনিবে সকল কথা
ওদের চোখেতে যদি আসে জল কোথা রবে মানবতা!
বিরহবেদনা বুকে নিয়ে যদি আমারই সময় কাটে
একবারও তুমি কাঁদিবে না এসে সেই পুকুরের ঘাটে!
যেখানে রয়েছে কচুরি ফুলেরা লাজুক বঁধুয়া বেশে
হংসমিথুন জলকেলি করে প্রতিদিন যথা এসে,
সন্ধ্যা কি কভু নামিবে না আর সোনালি ধানের শিষে?
এতোটুকু স্মৃতি রহিবে না বুঝি জীবনের সাথে মিশে।
সব কিছু তুমি ভুলে যেতে পারো, পারিবে কি ভুলে যেতে
আসবে যখন নিশিজাগা চাঁদ তোমাদের আঙিনাতে?
মনের বনেতে মন হারাবার এসেছিল যতো রাত
বহু রজনির একটি প্রমাণ ঘুমভাঙা ওই চাঁদ।
আমি চলে যাবো- বহু দূরে যাবো, আসিব না কোনোদিন,
দু ফোঁটা চোখের জল ফেলে ওগো শোধ করে যাবো ঋণ।
দেয়ালিকা
পাষাণ মানুষ বুঝলে না কেউ জীবনের অভিপ্রায়,
তাই লিখে যাই অমর কাহিনি মূক দেয়ালের গায়।
আঁধার জীবনে আলেয়ার আলো স্বপ্নসৌধ গড়ে,
দিনের আলোতে রাতের স্বপন নিমেষে নিমেষে ঝরে।
চলতি পথের এধারে ওধারে নিত্য বাসনা কুড়াই,
রোশনিবিহীন বাস্তবতায় ধূলিতে যে তা ওড়াই।
তিমির রাতের আঁধার ভাঙিয়া স্বপ্ন-আহত পাখি
নিয়ত খুঁজিছে আলোর পরশ তন্দ্রাবিহীন আঁখি।
মানবতাহীন মানব সমাজ- হায়রে কঠিন বিধা!
মানুষ চিবোতে মানুষের হাড় কেউ তো করে না দ্বিধা।
মানুষে মানুষে এতো ব্যবধান! কালের প্রবাহ শেষে-
হায়, বুঝি আজ সব খোয়ালাম বিংশুতি যুগে এসে!
আশা-নিরাশার এই ছোটো নীড়- এখানে স্বজন নাই,
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে এ কাহিনি লিখে যাই।
শেষ কবিতা
শত বেদনার অঙ্কুর বুকে চলিনু বন্ধুগণ
যে কথা কখনো বলিতে পারি নি, বলি তা কিছুক্ষণ।
সেই শুভদিনে লুটাবো ধুলায়- শুনে রাখো মোর বাণী,
যারা ছিলে মোর বন্ধু সুদিনে- ফেলো না চোখের পানি।
অশ্রুতে নয়, ক্রন্দনে নয়, ভালোবাসা দিয়ে মোরে
সুজন বন্ধু তোমরা আমারে বেঁধে রেখো প্রেম-ডোরে।
যেখানে নরম ঘাসের সবুজে নিশীথে জোনাক জ্বলে
বিটপীর শাখে যেখানে পাখিরা অনন্ত কথা বলে,
যেখানে বাতাস ধীরে বহে ধীরে- সন্ধ্যা যেখানে আনে
বন্ধু আমার সুখের বাসর বেঁধে দিও সেইখানে।
যে রাতে চলিব সুদূরের পথে জ্বালিয়ে আগরবাতি
বন্ধু আমার বিদায়-শ্রাদ্ধ করে দিও রাতারাতি।
দিনের আলোকে যন্ত্রণা আনে, রাতের আঁধারে ঘুম,
জোছনার সাথে মঞ্জরীগুলো যখন খাইবে চুম,
গোসল করাতে হবে না বন্ধু, হবে না কাফন দিতে
কখনো তো আর আসিব না এই মানুষের পৃথিবীতে।
আতর-গোলাপ মাখিলে কী হবে, কবরে ঢাকিবে দেহ,
তোমরা যে মোর বন্ধু স্বজন যাইবে না সাথে কেহ।
বাসর শয়নে ঘুমুবো যখন, ঘুমুবো অহর্নিশি,
সে ঘুম ভাঙাতে যাবে না কখনো আজিকার প্রতিবেশী।
রাখি-বন্ধন খুলিবে বন্ধু, আর কিছু আনিবে না,
কী সুখে প্রহর কাটাবো সেখানে কেউ তাহা জানিবে না।
আকাশ মাটিতে ক্লান্ত বালক খেলেছি কত না খেলা,
সবকিছু তার ভুলে যাবো আমি- ভুলে যাবো এই বেলা।
আমি যে ঘুমুবো কবরের দেশে তবু তো আমার লাগি
তারকা ফুটিবে, চন্দ্র উঠিবে আকাশ রহিবে জাগি।
আমাকে খুঁজিয়া ক্লান্ত বাতাস ধানক্ষেতে দিবে নাড়া,
শিয়াল ডাকিবে কবরের পাশে, তবু তো দেবো না সাড়া।
পাষাণ গ্রথিতে বেঁধো না বন্ধু আমার কবরখানা,
শ্রাবণ-মেঘেরা ঢালে যদি জল, আহা কী যে সান্ত্বনা!
জোছনার সাথে ফোটে যদি কভু হাসনাহেনার দল,
নরম ঘাসের সবুজে সবুজে ভরিবে কবরতল।
ঝিঁঝির মেয়েরা কবরের পাশে গাহে যদি কভু গান,
ইঁদুর বেজিরা বুঝে নিবে তবু এখানে কবরস্থান।
আঁধার নিশীথে জ্বেলো না বন্ধু মোম কী মাটির দীপ,
আমি যে কখনো জাগিব না আর ঘুমিয়ে রহিব ক্লীব।
আসিব না আর তোমাদের সাথে কহিতে অনেক কথা
আমি যে বন্ধু বুকে টেনে নিব চিরন্তন নীরবতা।
রাতের আঁধারে ফুটিবে যখন আকাশে অনেক তারা
তারই সাথে মোর জেগে রবে কিছু ছোটো-খাটো বেদনারা।
মৌসুমি বায়ু আনে যদি কভু ফসলের কিছু তান,
তারই সাথে মোর শুনিবে বন্ধু জীবনের কিছু গান।
যে কথা শুনিতে জেগে রবে তুমি রাতের পরেতে রাত
ফাগুনের বনে পাখির কণ্ঠে শুনিবে অকস্মাৎ।
কেউ বুঝে নিবে, কেউ না বুঝে কাঁদিবে সেদিন জানি
তবু অনুরোধ কেঁদো না বন্ধু পুরোনো সে ব্যথা টানি।
যে ব্যথা ভুলিতে চলে গেছি আমি দূর হতে দূর দেশে
তোমরা সে কথা ভুলে যেও ভাই আমাকেই ভালোবেসে।
একুশের কবিতা
এইদিন থেকে কিছুদিন আগে-
যখন ফাগুন নব-প্রতিভাত
কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আমেজ
একদল কিশোরের প্রাণে জাগে।
আর কিছু মানুষেরা সাগরবেলায়
নিজের অস্তিত্ব ভুলে
দাসত্বের রজ্জু পরে গলে মত্ত ছিল
কিছুদিন রাজা রাজা খেলায়।
খেলা জমেছিল, ওরা ঘাগু খেলোয়াড়;
আর সহসা মৌসুম গেলো ঘুরে।
দখিন দুয়ার থেকে নিদাঘ-বসন্ত বায়ু
ছুটে আসে দীর্ঘশ্বাসে
স্বদেশ-জননী চায় মাতৃ-অধিকার।
করপুটে করবীর রঙিন চুম্বনে
কিশোর-বালক আসে মা’র পাশে;
কণ্ঠে তার উদাত্ত মায়ের ভাষা।
রক্তের গোধূলি থেকে টেনে নিয়ে মুখ
জননী- শোকার্তা মাতা চলে রাজপথে
অশ্রুহীন শত আঁখি বিমুগ্ধ বিমূঢ়।
গান
১
আমার এ কবিতাখানি যদি হয় গান
তুমি দিও তার প্রাণ।
আমি শুনি বা না শুনি, তুমি গেয়ো অভিমানী
বাজিয়ে হৃদয়বীণা খান।
বাতায়ন পাশে যদি জোছনার ছোটো নদী
বয়ে যায়, চাঁদের তরণি যায় বেয়ে
স্মরণের আলেয়ারে ডেকে ডেকে বারে বারে
মরণের আবরণে করে অভিমান।
বাতাসের মর্মরে যদি কভু ফুল ঝরে
হিজলের বনতলে সাজায় বাসর,
জোছনার কুমকুম যদি চোখে দেয় চুম
অঘোরে ঘুমিয়ে যেয়ো বীণা খান।
২
কী সুখে ঘুমিয়ে আছো ভেবে কিছু পাই না
ঘনিয়ে এলো যে বিদায়লগন তবু কেন যাই না।
কথা ছিল তব সনে ভেবেছিনু মনে মনে
কহিব অনেক কথা এ নিশি জাগিয়া।
রজনি কাটিয়া যায় তবু জাগিলে না হায়
বৃথা হলো অভিপ্রায় পরাণপ্রিয়া।
খোলো আঁখি খোলো খোলো এ নিশি ফুরিয়ে গেলো
মরমের যতো কথা শোনো হে জাগিয়া।
যে নিশি ফুরিয়ে যায় ফিরে কি পাবে গো তায়
সহসা কাঁদিবে জানি এ নিশি লাগিয়া।
৩
কুড়াতে কুসুম ঝরে যদি জল
আঁখি কে বাঁধিবে বল্, সখী বল্।
ঝরাফুল যদি কাঁদে বনতলে কাঁদিবে কি মধুকর
নিশার স্বপন ফুরালে গো সখী রহিবে কি শশধর?
সখী, মরমে তাহার ঝরিবে কি আর বেদনার আঁখিজল?
আমি চিরদিন কেঁদে কেঁদে ওগো বনতলে গাহি গান
সাঁঝের বেলায় দেখেছি সকল কুসুমের অবসান।
প্রভাতবেলায় দেখেছিনু হায় শত শত পরিমল।
৪
আমারে স্মরণ করে যদি ঝরে আঁখিজল
আমার এ গানখানি গেয়ো তুমি অভিমানী
রাতের আঁধার চিরে নিশি জেগে অবিরল।
স্বপন-জড়ানো চোখে যদি কভু মনে হয়
আমার স্মৃতির কথা, তবু গো নিও না ব্যথা
আমি যে রহিব দূরে- কাঁদিবে মাধবীতল।
সেদিন কাঁদিবে জানি- কাঁদিলে কী হবে আর
তোমার-আমার মাঝে কভু দেখা হবে না যে
তৃষিত নয়ন শুধু ঝরাবে অমিয় জল
রাতের আঁধার চিরে নিশি জেগে অবিরল।
৫
যেদিন ঘুমিয়ে রবো মাধবীলতার বনে
সে-ঘুম ভাঙাতে যেয়ো না যেয়ো না গো
সখী যেয়ো না নিরজনে।
বাতাস বহিবে ধীরে, ধীরে অতি ধীরে ধীরে
অযথা মহুয়াগুলো ফুটিবে আমারে ঘিরে
ক্লান্ত পাখিরা ডাকিবে- কথা কও
কথা হবে না কারো সনে।
আকাশে তারার দীপ যুগে যুগে রবে জেগে
স্মৃতির মালিনী এসে খুঁজিবে শ্রাবণ মেঘে
তবু লো সজনি দিবস-রজনি
অঘোরে ঘুমাবো আপন মনে।
৬
নাইবা হলো দেখা, আবার নাইবা হলো দেখা
তোমার খাতার প্রথম পাতায় রইলো কিছু লেখা।
নাইবা তুমি আসলে কাছে, করলে অভিমান
ফাগুন-রাতে জেগে থেকো শুনবে আমার গান
হঠাৎ পথে থমকে যাবো ডাকলে তুমি একা।
তোমার বিরহে আঁখির কোণে যদিই ঝরে জল
শ্রাবণ-রাতে একলা জেগে গাইবো অবিরল
শুনবে তুমি গানের সাথে ডাকবে ময়ূরকেকা।
আজকে না হয় চলে গেলাম রিক্ত হাতে ফিরে
চোখের জলে ভাসিয়ে দিয়ে স্মৃতির লিখনটিরে
আবার না হয় ফিরে এসে লিখবো প্রেমের লেখা।
৭
হয়তো আবার দেখা হবে
জোছনা রাতের মেঘভাঙা চাঁদ যদি বা তাকিয়ে রবে।
কোথা তুমি আজ কোথা আমি আর
কত ব্যবধান আজ দুজনার
কত গিরি-মরু-সাগর-পাহাড়
কেউ কি বাধা হয়ে রবে?
কতদিন হয় দেখি নি তোমায়
আশার স্বপন তাই ঝরে যায়
আঁখি বলে বাকি নেই মধুমাস এলো এই
হবে গো, আবার দেখা হবে।
৮
আর কতকাল চেয়ে রবো, বনপথে এলো সন্ধ্যা
এলো মধুকর রাঙায়ে দু পাখা, ফুটিল রজনিগন্ধা।
সাজানো বাসর, ফুল রাশি রাশি
সবই তার আজ হয়ে গেলো বাসি
মিছে পথ চেয়ে আজো বসে আছি
বনপথে আঁখি মেলে।
জানি না কখন ফুরাবে আবেশ
এ মধুলগন হয়ে যাবে শেষ
কথা দিয়ে যদি না আসিলে বেশ
রহিব নয়নদীপ জ্বেলে।
এ জীবনে ছিল একটি যে চাওয়া
আজো তো আমার হয় নি তা পাওয়া
মিছে পথ চেয়ে শুধু গান গাওয়া
ভেসে ভেসে আঁখিজলে।
৯
আমি লিখি গান, তুমি দিবে সুর
তাই তো জীবন এতোটা মধুর।
যখন আমার আমি হারাবো ঠিকানা
তখনো তোমার কাছে রহিবে তা জানা
যদি বা কখন হারাই এ জীবন
তোমার হৃদয়ে আমি রবো ভরপুর।
সাত-সকালের সেই মধুকর
নীল আকাশের ঐ শশধর
তোমার-আমার পাশে দাঁড়াবে যখন
গানে গানে ভরে দিবে এ মধুলগন।
জানি না সে-গান জাগাবে কি প্রাণ
তোমার-আমার মাঝে স্বপনের সুর।
১০
একটি গান শুধু শোনাবার ছিল
শোনাবো তোমায় আমি যদি বা শোনো।
মরমের কথা যতো ছিল বলিবার
শরমে কিছুই বলা হয় নি তো আর
আজি আনমনে বসে দুই জনে
সে-কথা বলিব শোনো।
লজ্জা কী আহা এই মধু সন্ধ্যায়
আঁধারের বুক চিরে যদি বা হারায়
মরমের কথা, চলো যাই সেথা
ভয় নেই আজ কোনো।
হতাম যদি
হতাম যদি আমি কোনো গাঁও গেরামের চাষা
মাটির সাথে থাকতো আমার নিগূঢ় ভালোবাসা।
নদীর পারে থাকতো আমার ছোট্ট সোনার গাঁও
উজান-ভাটি স্রোতের টানে চলতো আমার নাও।
মাঠের পাশে থাকতো পাতা মাচান-বাঁধা খড়
বাড়ির পাশে থাকতো আমার ছোট্ট গোয়ালঘর।
গোয়াল ভরা থাকতো গরু আথাল ভরা গাই
সারা গাঁয়ের মানুষ আমায় ডাকতো কৃষান ভাই।
লাঙ্গল কাঁধে মাঠে যেতাম সূর্য ওঠার আগে
স্বপ্ন আমার সফল হয়ে ফুটতো নবীন রাগে।
দাদুর পায়ে খড়ম
দাদুর পায়ে খড়ম
নাকের ডগায় চশমা আঁটা
মেজাজ বড় গরম।
মাথায় বড় পাগড়ি আঁটা
লম্বা বেজায় পাতলা গা’টা
দুই হাতেতেই লাঠি-সোটা
বন্ধু যেন পরম।
বন্ধু তাহার জুটলো আরেক
বয়স তাহার কুড়ি চারেক
মুচকি হেসে ডাকলো বারেক
মেজাজটা তার নরম।
দিন কয়েক হয় মরছে দাদি
তাইতো দাদু করবে সাদি
বন্ধু শুনে খবর আদি
বললো, ছিঃ ছিঃ শরম!
বিদ্রোহী
পিঁপড়েরা সব জোট করেছে
রাজার কাছে বিচার চাই,
দেখছো না তাই এক মিছিলে
চলছে কেমন চলনটাই!
ওদের রাজা বেজায় পাজি
ওদের প্রতি নজর নেই,
রাজা থাকেন তিনতলাতে
ওদের বাসা গাছতলাতেই।
ওরা ফলায় শস্য-ফসল
রাজা করেন হুকুমজারি,
রাজবাড়িতে থাকবে জমা
দেখছো কেমন অত্যাচারী!
নিত্য রাজা খায় যে পোলাও
মাংস চিনি ঘি লুচি
হাভাতে সব শ্রমিকেরা
ওদের বুঝি নেই রুচি!
ওদের রাজা অত্যাচারী
তাই করেছে বিদ্রোহ
দেখছো না তাই এক মিছিলে
কেমন চলার আগ্রহ!
প্রতিভা-১
ইতিহাস বিজ্ঞান ধারাপাত অঙ্ক’র
একগাদা বই পড়ে ও-পাড়ার শঙ্কর।
মাথা নয় যতোটুকু পড়ে বই ততোধিক
সারাদিন পড়াশুনা, চেহারাটা লিকলিক।
রামপাল শিক্ষক তারে যিনি পড়াতেন
প্রতিভাটা দেখে তিনি মাঝে মাঝে ডড়াতেন।
এতো জ্ঞান কোথা পেলো এতোটুকু ভাণ্ডে?
রামপাল ভাবেন বসে প্রতিদিন সানডে।
প্রতিভা-২
সুকুমার মণ্ডল ঝানু পাকা নকলে
ও পাড়ার ছেলেবুড়ো চিনে তাঁকে সকলে।
টুকটাক কাটাছেঁড়া ছিল তাঁর নলেজে
পাশ করে তাই তিনি চলে যান কলেজে।
কলেজের মোটা বই দেখে বলে বাপরে!
এতোসব পড়াশুনা কী যে অভিশাপরে!
মনটারে ঠিক করে কাঁচি লয়ে আফটার
কচাকচ কেটে ফেলে বড় বড় চাপটার।
ছড়াকারের ছড়া
এক.
সুকুমার বড়ুয়া
ঝানু পাকা পড়ুয়া
যতোসব কথা বলে
সবকিছু ঘরোয়া।
ছড়া-গড়া মনটা
নেই উৎকণ্ঠা
সপ্তাহে মনে পড়ে
দুই চার ঘণ্টা।
দুই.
ছড়া কাটে ছড়াকার
মুখ ভরা দাঁড়ি তার
পল্টনে লোকটারে
দেখা যায় বার বার।
কী যেন কী নাম তার
পড়ে বই নামতার
এক টাকা পাঁচ সিকে
এক দুই তিন চার।
বখেটে
টাকা নেই পকেটে
লোকটা কি বখেটে!
বাসে ভাড়া না দিয়েই
চলে আসে ফকেটে।
মালপানি বাঁকাতে
খুব পারে তাকাতে
সারাদিন চলাফেরা
ডেমরা টু ঢাকাতে।
পয়সাটা না দিয়েই গাড়িতে
চট করে চলে এসে বাড়িতে
বয়কে সে ডেকে কয়,
দে কী আছে হাঁড়িতে
সিনেমায় চলে যায়
খেয়ে তাড়াতাড়িতে।
আমরা আছি
ঘুরছে লাটিম ঘুরতে থাকে ঘুরুক
লাগছে আগুন পুড়তে থাকে পুড়ুক।
মরি বাঁচি আমরা আছি
উড়ছে ধোঁয়া উড়তে থাকে উড়ুক।
অস্ত্রপাতি ধরছে যারা ধরুক
লাগছে লড়াই লড়তে থাকে লড়ুক
মরি বাঁচি আমরা আছি
মরছে মানুষ মরতে থাকে মরুক।
অভাব
অভাব অভাব দারুণ অভাব
পালটে গেলো লোকের স্বভাব
রাঘববোয়াল ফস্কে গেলো
চিংড়ি হলো দেশের নবাব।
করছে যে যা করে করুক
মরছে যারা মরে মরুক
চুনপুঁটিরা লেজ নাড়িয়ে
খাচ্ছে আহা মজার কাবাব।
স্বপ্ন
তুই যদি মা রানি হতিস কত্ত ভালো লাগতো!
আমি হতাম রাজকুমারী, চাকর-নফর থাকতো।
আব্বা যেতেন সিংহাসনে, আমি যেতাম তাঁর পেছনে
উজির-নাজির পেয়াদা-পাইক কত্ত ভালোবাসতো!
আমি যখন ছাদের পরে চুল শুকাতাম গোসল করে
দূর থেকে সব গরিব প্রজা আমায় চেয়ে দেখতো।
বলতো সবে রাজার মেয়ে, অনেক ভালো সবার চেয়ে
বল্ না গো মা, এসব কথা কেমন ভালো লাগতো?
বাড়ি ভরা দালান হতো, আব্বা কত ভোজ বসাতো
তখন কি আর ছাদভাঙা এই খড়ের কুটির থাকতো?
হাইজ্যাকার
হাইজ্যাকারের পকেট ভরা একশ টাকার নোট
তাই সে পরে জাপান থেকে তৈরি করা স্যুট।
বাপ যে ওদের কামলা খাটে, নেই পরনে শার্ট
ছেলেগুলো পয়সা কামায়, তাই তো এতো ডাঁট।
বাপের মাথায় টাক পড়েছে, বব কাটানো চুল
ওদের মতো ছেলেগুলোর বাপ হওয়াটাই ভুল।
অবৈধ ইচ্ছে
ইচ্ছে করেই ওরা আমায় মারতে আসে ঐ
অনিচ্ছাতে এখন আমি পালিয়ে যাবো কই?
ইচ্ছে করেই ওরা আমায় দিচ্ছে বহুত গাল
ইচ্ছে করে ওরা আমার ভাঙছে ভাতের থাল।
ইচ্ছে করেই ওরা আমার টানছে ঘরের খুঁটি
ইচ্ছে করে ওরা আমার নিচ্ছে সকল লুটি।
ইচ্ছে ওদের আমার ঘাড়ে থাকবে ওরা চেপে
মুছিয়ে দিবে মিষ্টি হাসি চুনকালিতে লেপে।
ইচ্ছে করেই ওদের সাথে মিষ্টি কথা কই
ইচ্ছে করে তবু ওরা মারতে আসে ঐ।
খাজনাপাতি
পাট কেটেছি ক’দিন হলো, মাত্র ক’টা দিন-
খাজনাপাতি সবই দেবো, সবুর করে নিন।
আজো জমির ধান পাকে নি, চাল-ডাল নেই ঘরে
পাঁচ বছরের কচি মেয়ে ভুগছে কালা জ্বরে।
কৃষানি আজ ক’দিন হলো খায় নি কিছু ভাই
হালের বলদ গেছে মারা, কাঁদছে শুধু তাই।
কলা দিয়ে জাউ রেঁধেছি, মরিচ বেটেছি
এই কটা দিন এমনি করে চালিয়ে যেতেছি।
উলুর পাকে ঘুরছে মাথা, খাটছি সারা দিন
খাজনাপাতি সবই দেবো, সবুর করে নিন।
দুর্ভিক্ষের ছড়া
গল্প শোনো ছোট্ট খুকু, গল্প শুনে হাসতে মানা
ক্ষুধার দেশে খোদার মানুষ ক’দিন হলো খায় নি খানা।
থাকার ঘরের চাল ভেঙেছে, গাছতলাতে বাসা
ভুলেই গেছে দেশের মানুষ মিষ্টি করে হাসা।
পায় নি মানুষ খাবার খেতে একটা রুটি, একটু ডাল
মরছে মানুষ জঠর-জ্বালায়, চাল-বাজারে নেই যে চাল।
দেশের রাজা টানছে গাঁজা, ছড়ান কথার বুলি
রাজপুতনার মোটর গাড়ি উড়ায় পথের ধূলি।
যে দেশে লোক ভাত না পেয়ে পথে-ঘাটে জীবন খোয়ায়
ঠিক সে দেশের রাজপুতেরা প্যারিস থেকে কাপড় ধোয়ায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



