somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদাত শাহরিয়ারের 'আমাদের গল্প' --- বেশ কিছু মনোমুগ্ধকর ছোট গল্পের সংকলন

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাদাত শাহরিয়ার - পেশায় আমার মতই প্রকৌশলী। পার্থক্য সে কর্পোরেট জব করে আর আমি ঘুণে ধরা সিস্টেমের আবর্তে। তবে দু'জনেই গল্পকার। এইটা বড় মিল, নিবিড় একটা বন্ধন এই অংশেজীবনের হয়তো তাই।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২তে অনুজ এই ছেলেটির প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বইটির নাম `আমাদের গল্প'।


বইটির ২৪টি ছোট ছোট গল্প পড়ে আমার ঠিক অনুভূতিটা এমন -`এই ছেলেটা জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত মনে নিয়ে ভাবতে থাকে, তাই তার ছোটগল্পগুলো ছুঁয়ে যায় এ যুগের আধুনিক বাতাসে ধোঁয়া আমাদের মন।'

লেখক সাদাতের ভাষ্য -' আমি মনে করি, আমরা যা দেখি, শুনি কিংবা করি তাই এক একটা ছোট গল্প। প্রতিটা মানুষের প্রতিটা নিঃশ্বাসই ছোট গল্পের যেন এক একটা লাইন। '

তার সে ভাষ্য আর গল্প গুলো বুননের ক্ষেত্রে পরিপূর্ন মিল, অংকের সমাধানের মতই ইক্যুয়াল চিহ্ণের এপাশ ওপাশ ।

তারুণ্যে উন্মুক্ত দৃষ্টি মেলে সাদাত বর্তমান তারুণ্য আর যৌবন উদ্দীপ্ত সমাজ জীবনের প্রেক্ষাপটকে প্রতিটি গল্পের মূল গাঁথুনি করে তুলেছে। তরুন সমাজের বর্তমান জীবনধারন, গোপন মানসিকতা , বাস্তবতার এদিক সেদিক , নানা অসংগতির টিকে যাওয়া রূপ ছোট ছোট গল্প হয়ে জীবন্ত সব মুহূর্ত হয়ে উঠেছে তার গল্পে।

'কর্পোরেট সাউন্ড ' গল্পটির কথাই ধরি- স্পষ্ট একটা তফাৎ ফুটে উঠেছে খুব স্বল্প কয়টি লাইনেই তথাকথিত হাই সোসাইটি আর ধ্রুপদী মধ্যধারার সোসাইটির মাঝে। কর্পোরেট অফিসে জব করার ফলে এ ধরনের উপলব্ধি সে গল্পে কাজে লাগিয়েছে খুব তুখোড় ঢংয়ে। ঐ গল্পের শেষ লাইন -'হোয়াট এ কর্পোরেট সাউন্ড' - একাধারে তার ক্ষোভ, উষ্মা এবং বর্তমান সমাজের চরম কর্পোরেট পুঁজিবাদ সমাজের নেতিবাচক দিকটার একটা চিত্র যা পাঠকের সামনে মুহূর্তে একটা বাস্তবতা হয়ে ওঠে। এই বাস্তবতার আরও কিছু উদাহরণ সাদাত রেখেছে অন্য কয়েকটি গল্পেও। 'গ্রহণের কালে' গল্পটিতে কর্পোরেট জগতের সিঁড়িতে উঠতে গিয়ে নারীকে কিরকম নেতিবাচক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় সেদিকটিও ছোট গল্পের হালকা সুরে বেজে উঠেছে।

তার গল্পের নারী চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে সাদাত বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। একজন ব্যাচেলর সাদাতের মাঝে নারী চরিত্রের বেশ গভীর কিছূ দিক ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতায় তার নিজেরর প্রতিভা এবং ভাবনার সূক্ষ্ম গভীরতার পরিচয় পাওয়া যায়। `তিশার বাসর!' নামক গল্পটিতে খুব স্বল্প পরিসরে বাসর রাতে এক নারীর মনের গভীর অনুভূতিও তাই সাদাত বেশ বাস্তবতার আঙ্গিকেই ফুটিয়ে তুলেতে সক্ষম হয়েছে।

ছোট গল্পে বৈচিত্র খোঁজে পাঠক । ২৪টি গল্পে নানান বৈচিত্রও লক্ষনীয় বিষয়। হিজরা শিশুকে নিয়ে তাইতো কখনও লিখে ফেলেছ 'হারমাফ্রোডাইট' গল্প আবার জাপান প্রবাসী বাঙালী দম্পত্তির ভূমিকম্প আতংকও অন্যদিকে সে তুলে ধরেছে 'ভুমিকম্প' গল্পে। সমসাময়িক এক ভীতির নাম গোপন ভিডিও চিত্র। এ বিষয়েও তার একটি বেশ লক্ষ্যনীয় গল্প রয়েছে। তেমনি কয়েকটি গল্পে পরকীয়ার মত অবক্ষয়ের উপরেও তার কলম চলেছে।

'হ্যাপি ভেলেন্টাইনস ডে' ;'কর্পোরেট সাউন্ড' কিংবা `লুঙ্গি সন্ত্রাস' গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক তার রসবোধেরও পরিচয় দিয়েছে।

কয়েকটা গল্পে যৌনতা এসেছে। ছোটগল্পে ঠিক যতটা আসতে পারে, যতটা এলে অশ্লীল মনে হবে না পাঠকের কাছে ঠিক ততটাই পরিমিত ভাবে।

ছোট গল্পের বুননে সাদাতের পারদর্শীতা উন্নতির দিকে, এটা আমার পর্যবেক্ষণ।
সিরিয়াস একটা গল্প হচ্ছে 'পাগল'। কন্টেম্পরারি বাস্তবতা থেকে একদম সেই আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস যেন সে ফুটিয়ে তুলেছে। লেখক সাদাতের এই ভার্সেটালিটি লক্ষ্যনীয়।

ছোট গল্পের দুটি মুখ্য বিষয়- বাহুল্য বর্জন এবং একটা অন্তত জবরদস্ত চমকিত করার মত বিষয় থাকার প্রয়োজনীয়তা- এখানে বিধূরিত।

ভাষা হয়তো আরো গুরু গম্ভীর হতে পারত কখনও কখনও। কিন্তু তাতে আবার কন্টেম্পরারি তরুণ সমাজের বাস্তবতায়প প্রাঞ্জলতা হারাত। কয়েকটা গল্পে টুইস্ট মানে চমক একেবারএ ছিলনা। এই যেমন - 'একটি সাধারণ গল্প' । সে হিসেব পাঠকে সে গল্প আলাড়িত করেনি। কিন্তু একটা বাস্তব চিত্রের সাথে পরিচয় ঘটাবে নিশ্চিত।

ছোট গল্প লেখা বেশ কঠিন কাজ। অল্প কথায় মুহূর্ত ধারন এবং পাঠককে ভাবানো-কঠিনকর্ম না হয়ে কী পারে!। সাদাত শাহরিয়ার সেই কঠিন কর্মটিই নিয়মিত করে চলেছে। তার বাক্য গঠন এবং ভাষার ব্যবহার সরলতার স্বাক্ষর। জটিল বাক্য বা শব্দ খুব একটা তার গল্পগুলোতে চোখে পড়েনা।

আমি একজন যতসামান্য গল্পকার হিসেব তার এই প্রথম গল্প সংকলনটির যথাযোগ্য সাফল্য কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×