somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোলকাতার যে নামটি জীবনেও ভুলতে পারবো না

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
নামঃ পদাতিক চৌধুরি। পরিচয়ঃ সামহোয়ারইন ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগে আমি ছড়া লিখি পদাতিক চৌধুরি আত্মকাহিনীমূলক উপন্যাস লেখেন। তার উপন্যাস পড়ে খুব মজা পাওয়া যায়। যে কারণে আমি তার লেখার ভক্ত। তার লেখা পেলেই এক নিঃশ্বাসে পড়ে নেই এবং লেখার ভালোমন্দ নিয়ে মন্তব্য প্রতিমন্তব্য করে থাকি। লেখায় মন্তব্য প্রতিমন্তব্য পর্যন্তই আমাদের পরিচয় এর বাইরে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। কে কোথাকার আমরা কেউ কাউকে জানতাম না। তবে তার আত্মকাহিনীমূলক একটি লেখা পড়ে মনে হয়েছিল পদাতিক চৌধুরি পশ্চিম বঙ্গের হবেন। সেই অনুমান থেকেই কোলকাতা গিয়ে মেসেঞ্জারে অডিও কল করেছিলাম। অডিও কল করে আমার সেই ধারনা সঠিক হলো।
আমি কোলকাতার মারকুইস স্ট্রীট থেকে কল করেছিলাম। আমি কোলকাতায় এসেছি জানতে পেরে পদাতিক চৌধুরি তৎক্ষনাৎ তার বাসায় যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল। আমাকে তার বাসায় যাওয়ার ঠিকানাও বলে দিল। আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বাসায় যাওয়ার জন্য এমন ভাবে অনুনয় বিনয় করতে লাগল যে আমি না করেও সারতে পারছিলাম না, বাধ্য হয়ে তাকে শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণ দেখিয়ে বললাম, আমি তো এখন অসুস্থ্য, বেঙ্গালোরে চিকিৎসা শেষে যদি সুস্থ্য হতে পারি তখন না হয় ফেরার পথে দেখা করে যাবো। আমার এই কথাটি পদাতিক চৌধুরি মগজে জমা করে রাখবে আমি সেটা বুঝতে পারি নাই। বেঙ্গালোরে একমাস সতেরো দিন ছিলাম। মাঝে মাঝেই পদাতিক চৌধুরি ফোনে যোগাযোগ করতো। আমার চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ খবর নিত। সে যে ্এত আন্তরিক হবে সেটা আমার কল্পনায় ছিল না।
কোলকাতা থেকে বেঙ্গালোর প্লেনে গেলেও আমার ছোট ছেলের সমস্যার কারণে ট্রেনে চেপেই ফিরছিলাম। রাস্তায় এসে বেঙ্গালোর স্টেশনের ছবি দিয়ে “বিদায় বেঙ্গালোর” নামে ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম। সেই পোষ্ট দেখেই পদাতিক চৌধুরি ফোন করে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া আপনি এখন কোথায়? আমি বললাম, আমি এখন ভেলোর কাটপাডি পার হচ্ছি। আবার জিজ্ঞেস করল, কোলকাতায় কখন পৌঁছাবেন? ট্রেনের টাইমটেবুল অনুযায়ী বললাম, আগামীকাল রাত আটটা বাজতে পারে। বলল, কোলকাতা নেমেই আমাকে ফোন দিবেন। বললাম, ঠিক আছে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ট্রেন লাইনের সমস্যার কারণে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন ছয় ঘন্টা দেরিতে যেতে লাগল। পরদিন সন্ধ্যার সময় পদাতিক চৌধুরি আবার ফোন করল, ভাইয়া আপনি এখন কোথায়? বললাম, আমাদের ট্রেন ছয় ঘন্টা লেট হওয়ায় অন্ধ্র প্রদেশ পার হয়ে উড়িষ্যায় ঢুকতেছি। আমাকে বলল, আপনি কিন্তু কোন হোটেলে উঠবেন না সোজা বারাসাত স্টেশনে আসবেন আমি স্টেশন থেকে আপনাকে নিয়ে আসবো। বললাম, ঠিক আছে। রাত এগারোটার সময় আবার কল করে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া আপনি এখন কোথায়? বললাম, ভুৃবেনেশ^র পার হচ্ছি। কায়টায় পৌঁছাবেন, বললাম ছত্রিশ ঘন্টার জার্নি ছয় ঘন্টা লেট হওয়ায় বিয়াল্লিশ ঘন্টা হয়েছে সেই হিসাবে রাত দুইটা তিনটা বাজতে পারে। আমি কিন্তু আপনার জন্য অপেক্ষা করবো, আপনি সোজা আমার বাসায় চলে আসবেন। আমি তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে না করার মানসিকতা প্রকাশ করতে পারলাম না। বললাম, ঠিক আছে।
রাত তিনটার পরে হাওড়া স্টেশনে ট্রেন পৌঁছাল। এর আগে কয়েকবার ভারতে গেলেও কোলকাতায় এইবার প্রথম গিয়েছি। এতরাতে মারকুইস স্ট্রীটে গিয়ে হয়তো কোন হোটেল খোলা পাবো না, হোটেল খোলা না পেলে রাস্তায় রাত কাটাতে হবে। সেই চিন্তা করেই হাওড়া স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসে ভোর হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। রাত ৩টা ২২মিনিটে হঠাৎ মোবাইলে রিং বেজে উঠল। মোবাইল রিসিভ করতেই অপার প্রান্ত থেকে কন্ঠ ভেসে আসল, ভাইয়া আপনি এখন কোথায়? এত রাতে পদাতিক চৌধুরির ফোন পেয়ে আশ্চার্য হয়ে গেলাম। বললাম, এত রাতেও জেগে আছ! পদাতিক বলল, জী ভাইয়া আপনার জন্য জেগে আছি, আপনি এখন কোথায়? বললাম, আমি এখন হাওড়া স্টেশনে। হওড়া স্টেশনে কখন পৌঁছেছেন? বললাম, রাত তিনটার সময়। পদাতিক আর কোন কথা না বলে সরাসরি বলল, ভাইয়া আপনি একটা টেক্সী নিয়ে সোজা বারাসাত বটতলায় চলে আসেন, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। তার এমন আন্তরিকতা দেখে আমি এতই আশ্চার্য হলাম যে আমার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছিল না। যেখানে নিজের ঘনিষ্ঠ জনরাও কারো জন্য রাত তিনটা অবধি জেগে থাকে না সেখানে একজন ব্লগারের জন্য আরেক জন ব্লগার কতটা আন্তরিক হলে সারা রাত জেগে বসে থাকতে পারে সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
কোলকাতার আতিথেয়তা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কিছুটা নেতিবাচক ধারণা আছে কিন্তু পদাতিকের আন্তরিকতা দেখে সেই নেতিবাচক ধারণাটি মুহুর্তেই দূর হয়ে গেল। কোলকাতায় গিয়ে এমন আতিথেয়তার আমন্ত্রণ পাবো এটা আমি কল্পনাও করি নাই। পাদাতিক চৌধুরির কাছ থেকে এই পাওয়া যে কত বড় পাওয়া তা কোন ভাষা দিয়ে বুঝাতে পারবো না। যদিও পদাতিক চৌধুরির সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারি নাই। কারণ অনেক দিন ভারতে থাকার ফলে আমার দুই ছেলে দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল। তারা কোলকাতায় এক দিনও থাকতে রাজি হচ্ছিল না। সেই কারণে ইচ্ছা থাকা সত্বেও পদাতিকের এমন আন্তরিকতাপূর্ণ আমন্ত্রণ রক্ষা করা সম্ভব হয় নাই। ভোর ছয়টায় গ্রীণ লাইন বাসে সরাসরি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ায় পদাতিকের সাথে আর দেখা করা সম্ভব হলো না। দেখা করতে না পারলেও তবে তার রাত জেগে আমার জন্য অপেক্ষা করার স্মুতি জীবনেও ভুলতে পারবো না। তার আন্তরিকতা এবং বন্ধুত্বসুলভ আচরণে এতটাই মুগ্ধ হয়েছি যে কিভাবে ধন্যবাদ জানাবো সে ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি। তারপরও এটাই বলবো, সুখি হওয়ার পাশাপাশি বিধাতা যেন তাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:০৬
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৭


গত মে মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফটোকার্ডে দেখানো হয়েছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখন পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। গত ১১... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দ কুতুবের পোষ্ট: ভারতের করণীয় কি কি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৩



বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য ভারতের করণীয় কি কি?

০) শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো।
১) বর্ডার থেকে কাঁটাতারের ফেন্চ তুলে নেয়া।
২) রাতে যারা বর্ডার ক্রস করে, তাদেরকে গুলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাম্বার পরবর্তী অধ‍্যায় ,নাকি ১০% বদল হবে‼️অমি খোয়াব ভবনে ঘুমিয়ে , হাওয়া ভবনের আতঙ্কে আতঙ্কিত॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৮



খালেদা জিয়ার অসুস্থতার নাটক ছিল তারেক জিয়ার দেশে ফেরার রাজনৈতিক ট্রাম্পকার্ড। কথায় আছে,' দুষ্টু লোকের মিষ্টি ভাষা '। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দূর্নীতিবাজ ও মাফিয়া গডফাদার তারেক রহমানের দেশে ফেরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×