শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
বছর দশেক সৌদি ছিলাম
সাথে ছিল এক বাবু
দু’জনে দু’জনার বন্ধু ছিলাম
পরস্পরে ছিলাম কাবু।
কোম্পানীরা কাজ গুটালেন
এলাম ঢাকা ফিরে
অনেকের নাম ভুলে গেলেও
ভুলিনি বন্ধুটিরে।
কোলকাতাতে বাড়ি তাহার
জাতে আসল ঘটি
ধুতির সাথে ফতুয়া পরতো
পায়ে পরতো চটি।
সেই বন্ধুটি টেলিফোন করেছে
আসবে ঘুরতে ঢাকা
অতীত জীবনের অনেক স্মৃতি
হৃদয়ে ছিল আঁকা।
কোলকাতা থেকে আসবে বন্ধু
থাকবে দিন চারি
এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে নয়
সোজা এনেছি বাড়ি।
ইলিশ ভাজা, পাঠার মাংস
সাথে মাছের মুরো
খায় আর কয়, ‘করছেন কি দাদা,
দিয়ে দিলেন মোরে পুরো’।
ভাজি ভর্তার সাথে চচ্চরি ছিল
ছিল রুইয়ের ঝোল
অনেক পদের খাবার খেয়ে
মুখে তৃপ্তির বোল।
তেলে-ঝোলে খেয়ে নদীতে নেয়ে
থাকলেন চার দিন
এতো ভালো খেয়ে মনে মনে ভাবে
কেমনে শুধিব ঋণ।
যাওয়ার সময় বলল মোরে
হাসি মাখা পুরো বদন
”কোলকাতা গেলে হোটেলে নয়
সোজা যাবে মোর সদন”।
বন্ধুর কথায় বড় খুশি হলাম
মনে মনে ভাবি যাবো
কোলকাতা গিয়ে ঘটির রান্না
মজা করে সব খাবো।
কিছুদিন পর কোলকাতা গিয়ে
উঠলাম বন্ধুর বাড়ি
বড় আশা ছিল বড় আদর পাব
নিয়েছি মিস্টির হাঁড়ি।
আমায় দেখে বন্ধুর মুখ ভার
বধুটি উঠছে রুষি
মনে হলো তারা বড়ই বিরক্ত,
নয় যেন তত খুশি।
খাওয়ার টেবিলে তাকিয়ে দেখি
দু’টি বাটি আছে রাখা
একটিতে আছে ভাজি-ভুজি-ডাল
অন্যটিতে কি যেন ঢাকা।
তোষাতোষি করে খাওয়াচ্ছে মোরে
ভাত, আলু ভাজি, ডাল
কি আর বলবো, অর্ধেক ডিম
সাথে কাঁচা লঙ্কার ঝাল।
‘এসেছেন যখন অর্ধেক ডিমের
পুরো খেতে হবে দাদা
নইলে কিন্তু মাইন্ড করব
মাইন্ড করবে অনুরাধা’।
কথা শুনে ভাবি বড় আয়োজন
খাবার খারাপ নয়
অর্ধেক ডিমের পুরোটা খাব
বাকীটা নিয়ে মোর ভয়।
রাতের জন্যে রেখে দিবে নাকি
বাকি অর্ধেক ডিম
সেই কথা ভেবে খাওয়ার টেবিলেই
রক্ত হলো যেন হিম।
আর্ধেক ডিমের এতো তোষাতুষি
খেতেই হবে পুরো
এমন আদর ভাবিনি কখনও
পেলাম না মাছের মুরো?
তাদের চেহারায় বিরুক্তির ভাব
আর কি যায় থাকা
সকালে উঠেই হোটেলে উঠলাম
বন্ধুত্ব পড়িল ঢাকা।
ভারাক্রান্ত মনে ছাড়লাম বাড়ি
কেউ করল না মানা
হোটেলে থেকে হোটেলে খেয়ে
ছ’দিন কাটালাম টানা।
বাঙ্গালী খায় বাঙ্গালী খাওয়ায়
এ যে বাঙ্গালীর স্বভাব
ঘটি বন্ধুটিও বাঙ্গালী বটে
মানসিকতার বড় অভাব।
বিদায়ের কালে আবার গেলাম
বন্ধুটির পেলাম দেখা
আতিথেয়তা কাহাকে বলে
কত কিছু হলো শেখা।
”খেয়ে এসেছেন না গিয়ে খাবেন,
জিজ্ঞাসা না করে পারি
চাল সেদ্ধ দিবো পারছি না তা
করছেন যে তাড়াতাড়ি”?
একথা শুনে খিদে ছিল বটে
খিদে গেল সব ঘুচে
ক্ষুধার্ত পেটে এলাম ফিরে
রুমালে মুখটা মুছে।
রিক্সায় উঠে রওয়ানা হয়েছি
ছুটে এলো অনুরাধা
মোর পানে চেয়ে হাত নেড়ে বলে,
‘খেয়ে গেল হতো না দাদা’?
কথা শুনে মোর পিত্তি জ্বলে গেল,
ঢাকায় বসত করে
এমন আদর পাইনি কখনও
পেলাম বন্ধুটির ঘরে।
স্মরণীয় হয়ে আজো আছে মোর
বন্ধুটির সেই কথা
মনের অজান্তেই মনে পরে যখন,
হেসে ভাঙ্গি নিরবতা।
এমন আদর সেই যে পেলাম
আর পাইনি কভু
ভুলে যেতে চাই ভুলিতে পারি না
মনে পড়ে যায় তবু।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৩৯