পুরনো দোতলা বাড়ি। কোথাও কোথাও খসে পড়েছে পলেস্তারা। সিঁড়ি ডিঙিয়ে ড্রইয়িং রুমে ঢুকতেই দেখা গেল পরিবারের সকল সদস্যদের। তাদের সকলের দৃষ্টি টেলিভিশনের পর্দায়। সৌদি আরবে কী হচ্ছে তা জানতে সবাই উদগ্রীব। সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে এ বাড়ির ছোট মেয়ে ডালিয়া নাজনিন নাছির। তাই সবার চোখে মুখে বেদনা ও উৎকণ্ঠার ছাপ। রোববার রাতে যখন টেলিফোনে এ খবরটি ভেসে আসে তখন থেকেই ফিরিঙ্গীবাজারের ঐতিহ্যবাহী দোভাষ পরিবারের এ বাড়িতে নেমে আসে শোক। চট্টগ্রামের প্রখ্যাত মোহাম্মদ আবু শাহীদ দোভাষের তিন ছেলে চার মেয়ের মধ্যে ডালিয়া ছিল সবার ছোট। ভাই বোনসহ সকলের প্রিয়পাত্র ছিল ডালিয়া। সৌদি আরব যাওয়ার আগে গত 18 ফেব্রুয়ারিও তিনি বাপের বাড়িতে এসেছিলেন। সারাদিন থেকে বিকেলে নিজের বাসায় ফিরেছিলেন। সেদিনের সেই স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তার (ডালিয়া) মেজ ভাই আবু তালেব বাবলু। বাবলু বলেন, 'দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর কিছুণ ঘুমিয়েছিল ডালিয়া। অন্যান্য সময়ের চেয়ে সেদিন তাকে খুব অস্থিরও লেগেছে। তারপর সৌদি আরব যাওয়ার দিন (26 ফেব্রুয়ারি) সকালেও টেলিফোন করে আমাদেরকে ভালো থাকতে বলেছিল। বলেছিল আমি ফিরে এসেই আবার আসব। কিন্তু আমার বোন আর এলো না।' বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবলু। পাশে দাঁড়ানো পরিবারের অন্য সদস্যরাও চোখ মুছতে থাকেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ডালিয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। বাবলু বলেন, 'আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার ছোট এ বোনটিকে মানুষ করেছি আমি। তার বিয়ের সময় আমি নাছির সাহেবের (মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন) তিন বার সাাতকার নিয়েছি। সবকিছু যাচাই বাছাই করে তারপর বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের পর সেই ছিল আমাদের পরিবারের অভিভাবক। যেকোন সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসত ডালিয়া। আমাদের সেই ছোট্ট বোনটি আমাদের মাঝে নেই আমার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।' মক্কা থেকে 10 মার্চ ফেরার কথা ছিল ডালিয়া এবং তার পরিবারের। আর ফেরার পর বাবলুর ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু সমস্যার সমাধান করে দেবে বলেছিল ডালিয়ার। ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসায়ী বাবলু বললেন, 'আমার সমস্যা সমাধানের দরকার নেই। যদি আমার বোনটিকে জীবিত ফিরে পেতাম তাহলেই খুশি হতাম! কিন্তু সে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে।'
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০০৬ সকাল ৯:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




