১. গত তিনদিন ধরে আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় আবার শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, এস সুহী নামক একই গার্মেন্টসে তিন শ্রমিককে বহিস্কার করার কারণে অসন্তোষের সূত্রপাত। যে শ্রমিকদের চাকুরিচ্যূত করা হয়েছে, তারা আগেরদিন শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছে এবং আলোচনায় একটা সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু পরদিন ঐ তিনজন শ্রমিককে কারখানাতে ঢুকতে দেয়া না হলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করে।
বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিককে বরখাস্ত করতে হলে তাকে লিখিত নোটিশ প্রদান করতে হয়। কিন্তু যে শ্রমিক আগেরদিন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ঘরে ফিরেছিল, সেতো জানতই না যে, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিধায়, সে পরদিন কারখানায় কাজে যোগ দিতে যায়। সাধারন শ্রমিকদের সাথে এমন অন্যায় আচরণ করার উদ্দেশ্য কি? যে শ্রমিক তাদের ন্যায্য কথা বলবার জন্য চাকুরি থেকে বরখাস্ত হয়, তাকে কি উত্তেজিত করার জন্য উস্কানি দেয়ার প্রয়োজন হয়? যে কথাটি কারখানা মালিকরা কখনো বুঝতে চেষ্টা করেন না, যার কারণে বার বার একই ঘটনা ঘটে যায় এবং এসব ঘটনায় ইন্ধন যোগানোর জন্য দেশী-বিদেশী চক্রের সন্ধান পান। তাদের নাকি তারা চিহ্নিতও করেছেন, এমন দাবী করেন; কিন্তু কারা সেই দেশী-বিদেশী চক্র তাদের পরিচয় কখনোই প্রকাশ করা হয়নি। পরিচয় প্রকাশ করা হলে এসব চক্র সম্পর্কে সাধারন মানুষ জানতে পারতো, খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের অভিযোগের সত্যতা নির্ধারণ করতে পারতো।
২. গার্মেন্টস কারখানায় মধ্যবর্তী পর্যায়ে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কর্মরত আছেন, তাদের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা নিয়ে কখনো কোন কথা আমরা জানতে পারিনি। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে, এই লেভেলের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যবস্থাপনায় ন্যূনতম দক্ষতা নেই। যা আছে, তা তাদের মালিকসুলভ আচরণ, যা কারখানার মালিকও পোষণ করেন বলে মনে হয়না। গার্মেন্টস সেক্টরে কথায় কথায় নাইট করার একটা সাধারন ধারণা প্রচলিত আছে। একজন শ্রমিক কারখানায় এলে তিনি যে সেদিনই বাসায় ফিরে যেতে পারবেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। পরদিনও যেতে পারবেন কিনা, তা বলা সম্ভব নয়। একাধারে তিনদিন (রাত ও দিন) থেকে ৫দিন পর্যন্ত বিরতিহীন কাজ করানোর ঘটনা পরিদর্শন করলে অনেক কারখানায় দেখা যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। সক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্ডার গ্রহন করলে কিংবা ব্যবস্থাপনার কারণে শিপমেন্ট ডিলে হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে নাইট ডিউটি করানো হয়।
প্রশ্ন হলো, নাইট ডিউটি করানোর ক্ষেত্রে শ্রমিকদের পূর্বে কেন অবহিত করানো হয় না। হয়না এজন্য যে, ব্যবস্থাপনায় এসব অদক্ষ ব্যবস্থাপকের হাতে গার্মেন্টস মালিকরা তাদের কোটি কোটি টাকার কারখানা ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন। মালিকগণের উচিত, এসব মধ্যবর্তী ব্যবস্থাপকগণের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া। সেইসাথে উচিত, তাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনয়নের উদ্যোগ গ্রহন করা। কারণ শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ সুপারভিশনে তারাই থাকেন; তাদের আচরণগত সমস্যাই অনেকসময় শ্রমিক অসন্তোষের কারণ হয়; যার পরিবর্তন করা জরুরি।
৩. এবার আসি আবার সমসাময়িক ইস্যুতে। সুহী গার্মেন্টসের ৩জন শ্রমিক বরখাস্ত করা হলে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন, আর সেই বিক্ষোভকে দমন করতে কর্তব্যরত আনসারগণ শ্রমিকদের ওপর চড়াও হন এবং আনসারের গুলিতে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হলে অসন্তোষ ছাড়িয়ে পড়ে চারদিকে। শ্রমিকদের এই অসন্তোষ দমনের জন্য স্থানীয় মাস্তান ঝুট ব্যবসায়ীও শ্রমিকদের ওপর হামলা করেন; যা শ্রমিকদেরকে আরও বিক্ষুদ্ধ করে তোলে।
গার্মেন্টস সেক্টরে ঝুট ব্যবসাই মূলতঃ শ্রমিক অসন্তোষের অনেকগুলি প্রধান কারণের অন্যতম একটি কারণ। একজন ঝুট ব্যবসায়ী তিনি যে কারখানা হতে ঝুট সংগ্রহ করেন, তাকে সাহায্য করার জন্য শ্রমিকদের অসন্তোষ দমনের লক্ষ্যে শক্তি প্রদর্শন করেন, অন্য ঝুট ব্যবসায়ী ঐ কারখানায় ঝুট না পাওয়ার কারণে শ্রমিকদের সহায়তা করে কারখানাটিতে হামলা করানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করেন। এই ঝুট ব্যবসায়ীরাই বিভিন্ন কারখানা ভাংচুর করার জন্য বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের কৌশলগত নেতৃত্ব প্রদান করেন। যা কখনো মালিকগণ বোঝার চেষ্টা করেন না। বরং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেন। কারণ ঝুট ব্যবসা মূলতঃ করেন স্থানীয় মাস্তান গোছের লোকজন, যারা কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। এর অর্থ এই দাঁড়ায় না যে, ঐ মাস্তান ঝুট ব্যবসায়ী যে রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেই রাজনৈতিক দল গার্মেন্টস কারখানা ভাংচুরের নির্দেশ প্রদান করেছেন। বিষয়টিকে এরকম সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলেই ভুল হবে। বরং নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য মাস্তানরা রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত থাকেন, তাই উচিত হবে, এসব মাস্তানদের চিহ্নিত করে সেই রাজনৈতিক দলকে তাকে বহিস্কার করার বিষয়ে তার মাস্তানীর তথ্য প্রমান উপস্থাপন করা। যদি তারপরও রাজনৈতিক দলটি তাকে বহিস্কার না করেন, তখন তার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে তাকে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে প্রতিরোধ করা।
বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ এর উচিত, অবিলম্বে ঘোষণা করা যে, কোন কারখানা নিজ উদ্যোগে কাউকে কারখানার ঝুট দিতে পারবেন না, বরং বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ এসব ঝুট কারখানা হতে মূল্যের বিনিময়ে সংগ্রহ করবেন এবং সেখান হতে নিলামে ঝুট বিক্রয় করা হবে। এই ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে কোন ঝুট ব্যবসায়ী স্থানীয় পর্যায়ে কোন কারখানা মালিকের ওপর ঝুট পাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের মান্তান ঝুট ব্যবসায়ীগণের রোষানল হতে গার্মেন্টস মালিকগণ রক্ষা পাবেন এবং শ্রমিক অসন্তোষে তারা আর শ্রমিকদের কারখানা ভাংচুরে সহায়তা প্রদান করতে উৎসাহ পাবেন না। বিজেএমইএ, বিকেএমইএ ও রাষ্ট্র বিষয়টিকে গুরুতর বিবেচনা করে কঠোরভাবে ঝুট ব্যবসাকে স্থানীয় পর্যায়ে সংঘটিত করা হতে বিরত থাকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা কারখানাগুলোকে সরবরাহ করবেন।
৪. যেসব কারখানা নিয়মিত শ্রমিকদের বেতনভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি দেন, সেসব কারখানাই ভাংচুর করা হয় বলে গার্মেন্টস মালিক পক্ষ হতে প্রায়শই শোনা যায়। এখানেই তারা দেশী-বিদেশী চক্রের সন্ধান পান বেশি করে। উনাদের অভিযোগ সত্য ধরে নিয়ে ধারণা করা যায়, যেসব কারখানা ভাল চলে না, তাদের ঝুটও তেমন থাকে না। বরং যাদের কারখানা ভাল চলে, তারাই বেশি বেশি ঝুট উৎপাদন করেন এবং কাউকে না কাউকে সরবরাহ করেন। একজনকে করলে আরেকজন নাখোস। নাখোস ব্যক্তি শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে এসব ভাল কারখানা ভাংচুরের নেতৃত্ব প্রদান করতে পারেন। এটা একটা ধারণাগত অবস্থান। তবে প্রতিটি অসন্তোষকে ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা গেলে এই ধারণার সত্যতা খুঁজে বের করা যেতো। বিজেএমইএ এবং বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এ বিষয়ে সচেষ্ট হতে পারেন নিজস্ব গবেষণা সেলগুলোকে কাজে লাগিয়ে।
৫. যখনই কোন শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেছে, তখনই বিজেএমইএ এবং বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দ দেশী-বিদেশী চক্র ও এনজিও, তাদের ভাষায় ষড়যন্ত্রকারী সম্পৃক্ততা দেখতে পান। এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক আপেক্ষিক কথাবার্তা হতে এবার আমরা মুক্ত হতে চাই। বিজেএমইএ এবং বিকেএমইএ এবার যেন প্রকাশ করেন, কারা সেই চক্র, কি তাদের পরিচয়। অভিযোগটি গুরুতর! বিধায়, এটাকে চেপে রাখা ঠিক হবে না।
৬. এবার এক ধাপ এগিয়ে বিজেএমইএ অভিযোগ করছেন, গার্মেন্টস সেক্টরে গুজব ছড়ানোর জন্য এনজিওরা গার্মেন্টসে শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছেন এবং এসব শ্রমিকই গুজব ছড়ানোয় নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছেন। কতটা সত্য এই অভিযোগ? যদি সত্য হয়, তবে তা মারাত্বক! কারণ সমাজ উন্নয়নের লক্ষে পরিচালিত না হয়ে তারা যদি দেশের শিল্প নষ্ট করার জন্য আদা-জল খেয়ে নামে, তবে তাদের জনতার সম্মুখে নিয়ে আসা উচিত। তাদের বিচার হওয়া উচিত। আর সেই সঙ্গে তো দেশের প্রচলিত আইনে তাদের কাজ করার আইনগত অধিকার - রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা যেতে পারে।
আমার জানামতে, শ্রমিক অধিকার নিয়ে দেশের কিছু এনজিও কাজ করেন, তারা কোনভাবেই শ্রমিকদের উস্কানী প্রদান করেন না। বরং সুষ্ঠ শিল্প সম্পর্ক তৈরীতে তাদের বিশাল একটা অবদান আছে, যা অস্বীকার করার অর্থই হলো, দেশের শিল্প বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করা। কারণ সুষ্ঠ শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত না হলে কোন শিল্পই এগিয়ে যেতে পারবে না, তা অর্বাচীন ছাড়া সবাই বুঝতে পারবেন। তাই আপেক্ষিক কথায় ভাল-মন্দ সবাইকে এককাতারে ফেলে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হলে তাতে কেউ যদি দেশের শিল্পের বিরুদ্ধে কাজ করেন, তারাই লাভবান হবেন। নিশ্চয়ই আমরা এমনটা চাই না।
৭. শ্রমিকদের কথা শোনার মতো কোন ব্যবস্থা নেই কোন কারখানায়। গায়ের জোরে শুধুমাত্র দাবী নয়, শ্রমিকদের কথা শোনার জন্য কারখানা মালিকবৃন্দকে একটা না একটা উপায় বের করতে হবেই এবং পারলে নিজেই শুনবেন এসব কথা। শ্রমিকদের কথা শোনার কোন উপায় মালিকবৃন্দ বের করতে পারলে অসন্তোষের পরিমাণ অনেকটা কমে যেতে পারে।
তবে তা যেন সুহী গার্মেন্টের মতো না হয়। আগের দিন যাদের সাথে সভা করা হলো, পরেরদিন তারা জানলো, তাদের চাকুরি নেই। তাহলে এরকম কথা শোনার পরিবেশ তৈরী করাও হবে বিপদজনক। অর্থাৎ কথা শোনার নামে কথার বরখেলাপ। বরং কথা শোনার মাধ্যমে যেসব আলোচনা হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমত তৈরী হবে, তা যেন কোনভাবেই কারখানায় ভঙ্গ না হয়, তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা মালিককেই নিতে হবে।
পার্টিসেপশন কমিটি গঠন করা যেতে পারে এ বিষয়ে, যা শ্রম আইনে বর্ণনা করা আছে।
গার্মেন্টস শিল্পের ধ্বংশযজ্ঞ আর চলতে দেয়া যায় না। তাই যদি মালিকগণ এসব বিষয় ভেবে দেখেন, তবে তা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগতে পারে।
নীচের অংশটুকু ০১ জুলাই ২০০৯ এ লেখা
৮. দেশের শ্রমআইন ও আইএলও কনভেনশনে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দেয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের মানুষের ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে ভীতি আছে। সেকারনে গার্মেন্টস সেক্টরেও শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করা হতে বিরত রাখা হয়। ফলে কোনরকম শ্রমবিদ্রোহ দেখা দিলে সমঝোতা তৈরীর জন্য তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং এরকম অবস্থায় বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ কে কতগুলি ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সাথে যৌথবিবৃতি দিতে দেখা যায়, শ্রমিকদের মধ্যে এসব ইউনিয়ন নেতৃত্বের তেমন একটা গ্রহনযোগ্যতা নেই। বিধায়, শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এরকম ঘটনা তেমন কোন ফলাফল বয়ে আনেনা। তাই শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়ার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৯. বিজেএমইএ হতে ইন্ডাষ্টিয়াল পুলিশ গঠণের দাবী করা হচ্ছে, বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই পুলিশ গঠন করার পক্ষে মতামত প্রদান করছেন। ইন্ডাষ্টিয়াল পুলিশ গঠন করার মাধ্যমে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করার ঘটনা হিতে বিপরীত হবে। কারণ শ্রমবিরোধে শ্রমিকরা পুলিশী হস্তক্ষেপ ঘটলেই মারমূখী হয়ে ওঠে, যা কারখানা ভাংচুরের ঘটনাকে ত্বরাণ্বিত করে। সুতরাং পুলিশী নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং সমঝোতা তৈরীর পথে এগিয়ে যেতে হবে। শ্রমিকের আইনগত ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করার চেয়ে অনেক গার্মেন্টস মালিকগণ পুলিশ ও মাস্তানের সাথে বেশি সখ্যতা গড়ে তোলেন; যার ফলে এক কারখানার সাথে অন্য কারখানার সমস্যা তৈরী হয়। সুতরাং এটি বন্ধ করা উচিত।
১০. পত্র-পত্রিকাগুলোতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এবার প্রশ্ন ওঠেছে। শোনা যাচ্ছে, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসাররা উর্ধ্বতন অফিসারদের ভুল তথ্য প্রদান করে কারখানা ভাংচুরে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছেন। এসব বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
১১. এবারো নাম উল্লেখ না করে হাজার হাজার শ্রমিককে আসামী করে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার ফলে অনেক নীরিহ শ্রমিকের আসামী হয়ে যাওয়ার রাস্তা খোলা রয়েছে। এরকম ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করা হতে বিরত থাকতে হবে।
১২. যেকোন ঘটনা ঘটলে বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ হতে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে ঘটনাকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টা করা হয়। এবারো বিজেএমইএ সভাপতি বলেছেন, আইডেনটিটি কার্ড না থাকার কারণে তিনজন শ্রমিককে কারখানায় ঢুকতে না দেয়ার মতো সামান্য ঘটনায় গার্মেন্টস ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই তথ্য সত্য নয়। সত্য হলো, শ্রমিকদের সাথে যৌথদরকষাকষিতে এই তিনজন শ্রমিক নেতৃত্ব নিয়েছিল, যার ফলে কোন নোটিশ ছাড়াই কিংবা তাদের জানানো ব্যতিরেকেই একপাক্ষিকভাবে তিনজন শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়। আইনগতভাবে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে উক্ত কারখানার মালিকের শাস্তি হওয়া উচিত। একইভাবে সত্য ঘটনাকে চাপা দিয়ে সমাধানের রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করা হতে বিরত থাকা উচিত।
১৩. সুয়েটার কারখানার পিছরেট উৎপাদন শুরুর আগেই ঘোষণা করা উচিত এবং কৌশল খাটিয়ে শ্রমিককে তার পাওনা হতে বঞ্চিত করার প্রচলিত চিন্তাভাবনা পরিত্যাগ করা উচিত। শ্রমিকদের ফাও খাটানো কিংবা ওভারটাইম কম হিসাবে রাখার ঘটনা গার্মেন্টেসে অবিরত ঘটে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।
১৪. শিপমেন্টের কারণে শ্রমিকদের টানা ৩ হতে ৭ দিন পর্যন্ত কারখানায় কাজ করানো হয়, যা মালিক কিংবা শ্রমিক দুপক্ষের জন্যই খারাপ ফলাফল নিয়ে আসে। তাই এ ধরণের নাইট করানো উচিত নয়। প্রয়োজন হলে শিফট ডিউটি চালু করে শিপমেন্ট ডিলের ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১৫. মালিক-শ্রমিক ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে গার্মেন্টস এলাকাগুলোতে আঞ্চলিক রির্সোস সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। যেখানে শ্রমিকরা চাকুরি সংক্রান্ত তথ্যাদি, শ্রম আইন সংক্রান্ত তথ্যাদি ও শ্রম বিষয়ক তথ্যাদি পাবেন। কোন কারখানায় কোন সমস্যা দেখা দিলে সেটি যদি কারখানা পর্যায়ে সমাধান না হয়, তবে তা আঞ্চলিক রির্সোস সেন্টারে উপস্থাপন করার বিধি-ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলে শ্রমিকরা কারখানার বাইরে তাদের অভিযোগ জানানোর একটা স্থান খুঁজে পাবে, ফলে এই প্রক্রিয়ায় অনেক শ্রম অসন্তোষ কমে আসবে।
১৬. আঞ্চলিক রির্সোস সেন্টারসমুহ হতে শ্রমিক ও মধ্যবর্তী কর্মকর্তাদের শ্রমআইন, শ্রম বিরোধ ও সমাধান সংক্রান্ত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং প্রতিটি কারখানার শ্রমিকদের বাধ্যতামূলকভাবে এই প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর ফলে শ্রমিক ও মধ্যবর্তী কর্মকর্তাদের শ্রম বিষয়ক সমস্যার সমাধান হবে ও আচরণগত সমস্যার উন্নয়ন সম্ভব হবে।
১৮. বিভিন্ন কারণের সাথে গুজব হলো বিদ্রোহ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। পদ্ধতিগত অসচেতনতার কারণে শ্রমিকরা গুজবে কান দেন, যা নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতি তৈরী করে; তাই গুজব সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন করতে যথোপযুক্ত প্রশিক্ষন প্রদান করতে হবে। ভুত দেখা, আগুন লাগা, শ্রমিকে মেরে ফেলা জাতীয় গুজব কমিয়ে আনার জন্য শ্রমিকদের মনো-পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ভুত দেখার বিষয়টি অসত্য হলেও যে শ্রমিক দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তিনি যখন টয়লেটে যান, তখন চোখে অন্ধকার দেখতে পারেন; শারিরীকভাবে দুর্বল শ্রমিক চোখে ভুত দেখতে পারেন; বষয়গুলি মানসিক বিকারের লক্ষন। বিধায় এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানী দিয়ে শ্রমিকদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
১৯. শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ক তথ্য উপাত্ত সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে; অসত্য ও ভিত্তিহীন তথ্য হয়ত নিজের স্বপক্ষে নীতি কৌশল প্রণয়নে সাহায্য করতে পারে; কিন্তু এই নীতি-কৌশলগুলোও শ্রম অসন্তোষের কারণ হতে পারে। বিধায়, কৌশলী না হয়ে প্রকৃত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও উপস্থাপন করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
২০. কোন ঘটনা ঘটলে মালিক, শ্রমিক, সরকার, গণমাধ্যম - সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এমন কোন বিবৃতি কিংবা মন্তব্য করা উচিত হবে না, যার কোন তথ্য-প্রমান নেই। বিশেষতঃ গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের মন্তব্য বা অভিমত প্রকাশ করেন; অনেকসময় কিছু ব্যক্তি শুধুমাত্র আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে কিছু মন্তব্য বা তার নিজস্ব অভিমত তুলে ধরেন। যা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ফলে এসব ভিত্তিহীন আন্দাজ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিভক্তি তৈরী করে। যা কারো কাম্য নয়। সুতরাং তথ্য প্রমান ছাড়া দায়িত্বহীন মন্তব্য ও অভিমত প্রচার কিংবা প্রকাশ করা উচিত হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ১:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



