somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সারপ্রাইজ

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"স্যার,আজকে আর পড়ব না।"-মাথার দুইপাশে বেণী দুটো দুলিয়ে রিনরিনে গলায় বলে ওঠে তিশা।
রোহান তখন গোবেচারার মত তাকিয়ে বলে," কিন্তু আরেকটা সরল যে বাকি ছিল।"
"ওটা আজকে থাক স্যার প্লিইইইজ।"
এবার হার মানল রোহান।ছাত্রীকে ছুটি দিয়ে দিল।উঠতে গিয়েও আবার বসে পড়ল।বলা ঠিক হবে কিনা বুঝে উঠতে পারছে না। আন্টি আবার কি মনে করে।ওর চেহারা দেখে স্মার্ট ছাত্রী বলে উঠল, "স্যার কি কিছু বলবেন?"
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল যেন রোহানের।
"মানে.... ইয়ে .... মানে আন্টি কি বাসায় আছেন?"
"হুম, আমি এখনই ডেকে দিচ্ছি।"

"এই যে বাবা কেমন আছ?তোমার মা ভাল আছেন?"
"জ্বী আন্টি।"
"তিশা বলছিল তুমি কি যেন......"
"জ্বী...মানে ...মানে ...বলছিলাম কি মানে... আন্টি এই মাসের ইয়েটা কি মানে ১৫ তারিখের আগে...মানে খুব দরকার..."
"ছি ছি বাবা এত লজ্জা পাবার কি আছে , অবশ্যই তুমি ১৪ তারিখ নিয়ে যেও।"
"ধন্যবাদ , আন্টি"
যুদ্ধজয়ী বীরের মত রাস্তায় বেরিয়ে এল রোহান।আজ তিন বছর এখানে পড়ায়, কিন্তু কখনো মুখ ফুটে টাকার কথা বলতে পারেনি।আসলে ও ছেলেটাই এমন।সবকিছুতেই কেমন যেন উদাসীন।আর এখানেই ওর উপর তিথির সব রাগ।এই তো গত বছরের কথা ।সেদিন ছিল তিথির জন্মদিন।আগেরদিন তিথির সাথে শহীদ মিনারে বসে কত প্ল্যান-কিভাবে তারা পরের দিন সেলিব্রেট করবে।কিন্তু পরের দিন রোহান বেমালুম ভুলে গেল।সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা।ঠিক ৯-৩০ মিনিটে তিথি যখন ওর সামনে এসে বলল,
"তোমার হাত পিছনে কেন?কোন সারপ্রাইজ নাকি?"
ও তখন নির্বিকারভাবে হাত সামনে এনে বলে উঠল,
"মানে ছাতাটা বাসে উঠতে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে তো , তাই পিছনে রেখেছিলাম।কেউ যদি দেখে ফেলে।কিন্তু সারপ্রাইজের কথা কেন উঠল?"
তিথির গলার স্বরে আরেকটু কপট রাগ এনে বলে,
"হুমম,বুঝেছি আর ঢং করতে হবে না, বের কর আমার গিফট।"
রোহান বেশ অবাক হল।
"কিসের গিফট?আমি তো কিছুই বুঝলাম না!"
"তুমি সত্যি ভুলে গেছ?তোমার সাথে পরিচয়ের পর আজ আমার প্রথম জন্মদিন,সেটা তুমি ভুলে গেলে।গতকালই তো তুমি আমার সাথে কত প্ল্যান করলে তুমি।"-কিছুটা আহত কন্ঠস্বর তিথির।
এবার আসল মেঘের গর্জন শুনতে পেল যেন রোহান।
"মানে সত্যি বলতে কি, রাতেও মনে ছিল।কিন্তু সকালে আকাশে মেঘ দেখে ভুলে গিয়েছি।আর ভুল হবে না।এবার লাস্ট।"
"সেবার যখন আমাদের পরিচয়ের একমাস হল, তুমি কি মনে রেখেছিলে?"-এবার আর আকাশ থেকে না , তিথির চোখ থেকেই বর্ষণ শুরু হল।
পরে অবশ্য অনেক কষ্টে ব্যাপারটা ম্যানেজ করা গেল।সেদিন থেকেই রোহান ঠিক করেছিল ওদের সম্পর্কের এক বছর যেদিন হবে সেদিন ঠিক ঠিক ও তিথিকে সারপ্রাইজ দিবে।এ মাসের ১৭ তারিখেই আসছে সেই দিনটি।তিথিকে সুন্দর দেখে একটা শাড়ি কিনে দিতে হবে।যদিও সেজন্যে মাসের প্রায় অর্ধেক ওকে একবেলা খেয়ে থাকতে হবে।

১৬ তারিখ রাত ১০ টায় হঠাৎ তিথির ফোন বেজে ওঠে,
"হ্যালো,তিথি।"
-"বল"
-"কালকে তোমার প্ল্যান কি?"
-"মানে ? তুমি আমাকে কি পেয়েছ?আজকে তোমার সাথে প্ল্যান করি আর সকালে তুমি হাজির হও ভাঙ্গা ছাতা নিয়ে।"
-"রাগ করে না,প্লিজ।"
-"না ,রাগ করব কেন?আমার কি আর এত সৌভাগ্য কোনদিন হবে?কি কাজে ফোন করেছ তাড়াতাড়ি বলে ফেল"
-"মানে বলছিলাম কি,কাল আমি ফোন করার পরে তুমি বাসা থেকে বের হবে।"
-"কেন?এত ভণিতা করার দরকার কি?"
-"প্লিজ, আমার এই কথাটা রাখো।কোন প্রশ্ন না।"
-"আচ্ছা, ঠিক আছে।"

আজ আর ভুল হল না রোহানের। সকালে উঠে গত ঈদে তিথির দেয়া পাঞ্জাবিটা পরে সোজা পৌছে গেল তিথির বাসার সামনের মোড়টায়।এখান থেকেই ও রোজ রিক্সায় ওঠে।আজ তিথি কি খুশিটাই না হবে।যখন বাসা থেকে বের হয়েই দেখবে আমাকে, তারপর যখন দুজনে একসাথে রিক্সায় সারাদিন।অবশ্য সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটা পাবে ও বিকেলে।যখন শাড়ির দোকানে ...
-"ওই মিয়া এদিকে আহেন।"
কর্কশ একটা কণ্ঠ রোহানের চিন্তায় ছেদ টানে।
-"জ্বী, আমাকে বলছেন?"
-"আপনারে ডাকে"
বলে লোকটি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবককে দেখিয়ে দেয়।রোহান কিছুটা ভয় পেয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়।
-"তুমি রনির সাথে থাক,তাই না?"
-"জ্বী, মানে আমি রনি নামে কাউকে মানে আমি এই এলাকার কাউকে চিনি না।"
এবার যুবকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
-"ইসস, আমার পোলাপান তো তোমারে রনির লোক মনে কইরা আরেকটু হইলে ..."
বলে সে একটা পিস্তল বের করে বুঝিয়ে দেয়।পিস্তল দেখে পুরোপুরি ঘাবড়ে গেল রোহান।
-"তা, তোমারে তো আমি জানে বাঁচায়া দিলাম।বড় ভাইরে একটু খাতির করবা না?"
বলেই লোকটি রোহানের পকেটে হাত দিল, মানিব্যাগ আর মোবাইলটা নিয়ে, সিমটা রোহানের হাতে ফেরত দিয়ে বলে,
-"তুমি শিক্ষিত মানুষ । সম্মান কইরা তোমারে সিম দিয়া দিলাম।সোজা উলটা ঘুইরা এইখান দিয়া বাইর হইয়া যাও।"
কিন্তু মরিয়া হয়ে রোহান বলে উঠল,
-" ভাই , আমি ছাত্র মানুষ।"
-"চোপ শালা।যাবি নাকি......।"
আর কথা না বাড়িয়ে ও হাঁটতে লাগল।বড় রাস্তায় নেমে ফোনের দোকান থেকে তিথিকে ফোন করল,
-"হ্যালো তিথি,আমি রোহান।"
-"আমি এখনই বের হচ্ছি।"
-"বের হওয়া লাগবে না।আমার একটু জরুরী কাজ ছিল তো তাই ...."
-"আমি আগেই জানতাম ।তুমি এর চেয়ে ভাল আর কি করতে পারবে।"
রাগ করে ফোনটা রেখে দিল তিথি।


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:৪৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×