জীবনের অনেক না বলা কথা থাকে, যা কখনও কাউকে বলা হয় না। বলার মত কাউকে পাওয়াও যায় না। এদের মধ্যে আছে ভাললাগা, কষ্ট, অভিমান, সুখ কিংবা দুখের স্মৃতি। তেমনি একটি না বলা কথা আজ স্মৃতির গভীর থেকে রমন্থন করছি। জীবন অনেক ক্ষুদ্র হলেও তার গল্পের পরিধি অনেক বিস্তৃত। খোদ বিল ক্নিনটন ও মনিকা লিউনিস্কির পরকীয়া নিয়েই আমেরিকান আইনজীবী কেনেথ স্টার লিখেছিলেন প্রায় তিন হাজার পাতা। এবার শুরু করা যাক।
সময়টা সম্ভবত ২০০৮ সাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ আমার। হঠাৎ করিয়া ঘনঘন ভেজাস্বপ্নের বেড়াজালে আবদ্ধ আমি। দেহ ক্রমশ দুর্বল হইতে লাগিল।সপ্তাহে অন্তত চার কিংবা পাঁচবার। কি যে করি। কোন কৌশল কাজে আসিলনা। অবশেষে বন্ধু সোহেলকে বলিলাম। সে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে কহিলো, ‘ নিয়মিত হস্তসঞ্চালন করিস নাকি কেবল ভেজাস্বপ্ন?। বলিলাম, আমার দ্বিতীয়টা। অবশেষে সোহেলের পরামর্শে লইয়া বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের এক হোমিও ডাক্তারের শরাণাপন্ন হইলাম। সোহেল আগেও নাকি তাহার নিকট হইতে ওষুধ আনিয়াছিল।উনি তাহার খুব প্রিয় ডাক্তার। সরকারি ওষুধ ,টাকা লাগে না। মিস করার কোন হেতু নাই। সকাল এগারটায় সেন্টারে গিয়ে কার্ড দেখাইয়া ডাক্তার মহোদয়কে সব খুলিয়া বলিলাম।
মধ্যবয়স্ক গৌরি র্বণের ডাক্তার। বলিলেন, কোন কারণ নাই,সব ঠিক হবে। হঠাত কাগজে সমস্যাগুলো লিপিবদ্ধ করিতে করিতে বলিলেন, কোন কিছু গোপন করিবে না । ডাক্তারদের নিকটে কিছু গোপন করিতে নাই। তাহা হইলে রোগ মুক্তি হইবে না।জিজ্ঞেস করিলেন, দেশের বাড়ি কোথায়, বলিলাম দেশের নাম। মহোদয় হাসিতে হাসিতে বলিলেন, তোমার মহকুমার জনতারা খুবই সেক্সি হয়। তুমি আসিয়াছো এহেন সমস্যা লইয়া। তবে তোমার সমস্যা কতটুকু তা বুজিতে হইলে আমি যাহা বলিবো তাহা করিতে হইবে। তাহাকে বলিতে বলিলাম।
ডাক্তার বলিল, তোমার গালফ্রেন্ডের সংখ্যা কত.? বলিলাম গালফ্রেন্ড নাই তবে কয়েকটা বান্ধবী রহিয়াছে...। বলিল, তোমার সমস্যা সমাধান করিবার পূর্বে তোমার বান্ধবীদের সহিত যৌনক্রিয়ার মিলিত হইতে হইবে । তারপর আমাকে সবিস্তারে বলিবে, কীভাবে করেছো, কতক্ষণ ছিলে, কোন কোন পন্থা অবলম্বন করিয়াছো।যত ক্রিয়াকাণ্ড ঘটিবে তাহার সব আমাকে সবিস্তারে বলিবে । তাহা হইলে আমি বুজিতে পারিবো তোমার সমস্যার গভীরতা কতটুকু অত:পর সেটা নির্ণয় করিতে পারিবো। আমি বলিলাম, সেটাতো করা সম্ভব নহে। বিকণ্প কোন পন্থা থাকিলে বলুন । বেচারা আমাকে কয়েকটি টিপস বাতলিয়ে দিলেন, কিভাবে বান্ধবীদের মন গলানো যাবে।
ভদ্র লোকটি বাতচিতের আড়ালে আড়ালে আমার অনেক গভীরে ঢুকে গেলেন । কৌশলে সব গোপন বার্তা হাতিয়ে লইবার চেষ্টা করিলেন । জিজ্ঞেস করিয়াছিলেন, বান্ধবীদের হাত স্পর্শ করিলে আমার কামানুভুতি জাগে কিনা। কারো সঙ্গে পূর্বে মিলিত হইয়াছি কিনাসহ নানা প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ।কয়েকবার তাহার রুম থেকে বাহির হইবার আপ্রাণ চেষ্টা করিলাম কিন্তু ভদ্রলোক আমার সমস্যার কোন টিপস না দিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। আমি লজ্জায় বের হয়ে আসিতেও পারিলাম না। তাহার কথা শুনিয়া আমার শরীরের তাপ ক্রমশ বাড়িতে লাগিলো , শিহরণ জাগিতে লাগিল । ভাবছি কোনভাবে কক্ষত্যাগ করা যায় কি না ,অন্যথায় নিশ্চিত আমার ভেজাস্বপ্ন শুরু হইবে এখানেই।
ডাক্তার সাহেব আমার শিশ্নটাকে দেখিবার আকাঙখা প্রকাশ করিলেন। আমি লজ্জায় লাল হইয়া গেলাম । বলিলাম , দেখানো সম্ভব নহে। আমাকে শুধু ভেজাস্বপ্ন কমাবার ওষুধ দেন । আর কিছুই লাগিবে না। কিন্তু তিনি নানা প্রশ্নের ছলে প্রায় দুই ঘন্টা পার করিয়া দিলেন।অবশেষে বের হইবার প্রাক্কালে আমাকে দুইটা শিষি ধরাইয়ে দিয়ে খাইবার নিয়ম বাতলালেন আর বলিলেন দুই সপ্তাহ পর রমণ করিয়া আসিবে তারপর তোমার পুরো চিকিতসা হইবে। তা না হইলে তোমার সমস্যা আরো গাঢ় হইবে। পুরুষত্ব হানির শংকা থাকিবে। বলিলাম , আচ্ছা আসিবো । এই বলিয়া বের হইয়া গেলাম । তাহার মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলিলেন, কোন সমস্যায় পড়িলে আমাকে ফোন করিয়া টিপস গ্রহণ করিবে। বিদায় নিলাম। শরীরে কম্পন শুরু হইল। লৌহদণ্ডটি আস্তে আস্তে নীচের দিকে নামিতে লাগিল। রিকশা নিয়ে দ্রুত রুমে চলিয়া আসিলাম। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। বন্ধু সোহেলকে ফোন দিয়ে রুমে ডেকে আনিলাম ,পুরো ঘটনা খুলিয়া বলিলাম।
সপ্তাহ খানেক পর একটি সংবাদ আমাকে অবাক করিয়া দিল। তোলপাড় শুরু হইল ক্যাম্পাসে। সেই ডাক্তারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দাখিল হইল। জানিতে পারিলাম , বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণী চিকিৎসার জন্য তাহার শরন্নাপন্ন হইয়াছিল। কিন্তু চিকিৎসার নামে অশ্লীল বাক্যে তিনি নাকি তাহাকে যৌন হয়রানি করিয়াছিলেন। অভিযোগের পর তাহার বিরুদ্ধে তদন্ত আরম্ভ হইল । অবশেষে জানিতে পারিলাম, শুধু যৌন হয়রানি নয়, তাহার ডাক্তারি সার্টিফিকেটও নাকি ভূয়া ছিল।
দুইদিন পর , আমি আর বন্ধু সোহেল মেডিকেল সেন্টার গমন করিলাম,গিয়ে দেখি তাহার রুম বনধ।বসার স্থানটিও খালি(মেডিকেল সেন্টারে বেশিরভাগ কক্ষে দুইতিনজন বসে ভাগ করে, কারো ইউনিক রুম থাকে না) তাহার পাশের কক্ষের অন্য ডাক্তারের নিকট জানিতে চাহিলাম, হেতুটিা কি ছিল, ডাক্তার আক্ষেপ করিয়া বলিলেন, ‘ওকে বারবার স্বভাব বদলাইতে বলছি , কে শোনে কার কথা। তুই কেন তরুণীটির পানি বাহির করতে গেলি? এবার মজাটা বুঝ গিয়ে ...কুত্তার স্বভাব বদলায় না’
কয়েকদিন পর বিষয়টা নিয়ে আর শোরগোল থাকলো না....সাময়িক কর্মবিরতির পর আবারো তদবির করে যোগ দিলেন সেই পুরণো কর্মক্ষেত্রে.....অনেকদিন সাক্ষাৎ হয় না।
মাঝে মাঝে সেন্টারের পাশ দিয়ে গমন করিলে তাহাকে খুব মনে পড়িয়া যায়। আজও আমার খুব সাধ জাগে তাহার সহিত একদিন মোলকাত করিবার কিন্তু বিধিবাম। আমার হেলথ কার্ড তিনবছর আগেই হারাইয়া গেছে....চাইলেও যাওয়া যাইবে না,মেয়াদও নেই। আমাকে দেখিলেও তিনি চিনিতে পারিবেন না।...
পুনশ্চ: সময় বদলায়, মানুষের রুপ, যৌবন বদলায়, কিন্তু স্বভাব সহজে বদলায় না। সেটা খোলস বদল হোক আর যাই বদল হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৫৮