somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি পারিনি বাবা :(

১৯ শে জুন, ২০১১ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বাবা,

আজকে আরো একটা বছর শেষ হয়ে গেল তোমাকে হারিয়েছি। দেখতে দেখতে কেমন করে ৩টা বছর পার হয়ে গেল। তবু এখনো তোমার সাথে বলা আমার শেষ কথাগুলো কানে বাজে। আমি যখন তোমার সাথে বায়না করছিলাম তখন তুমি আমাকে যে স্বান্তনা দিয়েছিলে। সেই কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজে। এখনো মনে হয়, এই মাত্র না আব্বুর সাথে কথা বললাম! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তুমি এই কথাগুলো আমাকে বলেছিলে আজ থেকে আরো ৩ বছর আগে।



বাবা জানো, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারিনা যে তুমি আমাদের মাঝে নেই। এখনো আমার মনে হয় এই হয়ত তোমার ফোন আসবে, এখনি তুমি বলবে, 'বাবা, এই যে আমি, তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারি?' মাঝে মাঝে যখন ঘরে কেও থাকেনা তখন তোমার ছবির সাথে কথা বলি। তুমি কি সুন্দরভাবে তাকিয়ে আছো। মনে হয় যেন এখনি ছবি থেকে তুমি বের হয়ে আসবে। এখনো আমি এই আশায় আছি বাবা। এখনো।



আমি জানি, তুমি আমার সব লেখাগুলো পড়তে পারছো। আমাকে দেখতে পাচ্ছো।কিন্তু আমি তোমাকে দেখতে পাইনা। আমার জন্য তোমার এইটূকূ মায়া হয়না? আমার সামনে একবারো আসতে পারোনা? আমি কত খুজি তোমাকে। এখানে সেখানে। তোমার বয়সের কাউকে দেখলে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি, আমার বাবা যদি আজ থাকতো।! যখন কাউকে তার বাবা সম্পর্কে কথা বলতে শুনি, যখন বাবাদের গল্প করতে শুনি তখন আমার মনে হয় আমি যেন এদের মাঝে বড়ই বেমানান। আমি উঠে যাই সেখান থেকে। ঘরের কোনে গিয়ে গুমরে কাদি। আর আফসোস করি, 'আমার যদি বাবা থাকত! তাহলে আমিও হয়ত গল্প করতে পারতাম এমনি করে'



আমাকে সেই যে একটা ক্যামেরা কিনে দিয়েছিলা, সেটা এখনো আছে। সেই ক্যামেরা দিয়ে আমি অনেক ছবি তুলেছি। এখন আমি একজন স্বার্থক ক্যামেরাচালক। আমার ছবি এখন সবাই মোটামুটি পছন্দ করে। আমার ক্যামেরাটা না এখনো আছে। অনেক সুন্দর অবস্থায় আছে।



বাবা, ছোটবেলায় যখন তুমি আম্মুর কাছে চিঠি লিখতে, তখন আমি ভাবতাম, আমি কবে বড় হব। আমি কবে চিঠি লিখব। বহু চেষ্টা করতাম অংক খাতায় তোমার কাছে চিঠি লেখার। কিন্তু, লেখার বিষয় পেতাম না। আম্মুর সাথে রাগ করতাম আম্মু আমাকে সাহায্য করতনা বলে। শেষে এসে আম্মু আমাকে বলে বলে দিত, আমি তোমার কাছে চিঠি লিখতাম। আমার হাতের লেখা তোমার পছন্দ হতনা বলে আমি কত চেষ্টা করতাম হাতের লেখা সুন্দর করতে। বাবা, আজকে আমার হাতের লেখা অনেক অনেক সুন্দর। আমার হাতের আকা দেয়াল পত্রিকা পুরষ্কার পেয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এখন তুমি নেই।





বাবা, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারিনি। তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো। আমি পারিনি তোমার কোন আশা পূরন করতে। তোমার সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল আমি যেন একজন ভালো মানুষ হই, মানুষ যেন সবসময় আমাকে ভালোবাসে, ভালো জানে। কিন্তু বাবা, আমি পারিনি সকলের আদরের পাত্র হতে। আমি পারিনি ভালো মানুষ হতে। আমাকে ক্ষমা করে দাও। তবে তোমার কাছে আমি ওয়াদা করছি, আমি আমার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চেষ্টা করব তোমার মনের আশা পূরণ করতে।



বাবা, তোমার মনে আছে, অনেকদিন আগে তুমি গরমে অস্থির হয়ে গিয়ে একটা আইসক্রিম খেয়েছিলে দোকান থেকে কিনে। আমি তোমার সামনে ছিলাম না বলে তুমি বাসায় ফেরার সময় আমার জন্যে বিশাল সাইজের একটা আইসক্রিমের বক্স নিয়ে এসেছিলে। এনে বলেছিলে, 'আমি আমার বাবাকে রেখে আইসক্রিম খেয়েছি, বাবার জন্যতো আনতেই হবে।' কথাগুলো এখনো আমার অনেক মনে হয়। কিন্তু বাবা, আমি তোমার জন্য কি করতে পারলাম! আগামীকাল তোমার ম্রৃত্যু বার্ষিকী, আর গতকাল আমি একটা বিয়েতে গিয়েছি, পরশুদিনও যেতে হবে আরেক বিয়েতে। আমার মনের ভেতরে যে কেমন লাগে সেটা যদি কাউকে বুঝাতে পারতাম, তাহলে হয়ত শান্তি পেতাম। আমাকে বাবা মাফ করে দাও। আমি দুঃখিত। আমি তোমার ছেলে হবার যোগ্যতা রাখিনা। হয়ত তুমি আমার সামনে নেই, তবু তোমার মত মহান বাবা পেয়ে আমি গর্বিত। আমি আজো যেখানেই যাই, তোমার নাম কাউকে বললে তার চেহারা হঠাত করে পরিবর্তন হয়ে যায়। তাদের চেহারা দেখে আমি ঠিক বুঝতে পারি যে আমি কত মহান বাবার সন্তান, কত ভাগ্য নিয়ে আমার জন্ম।



তুমি আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে। অনেক অনেক দূরে। কিন্তু আমাকে এখন কেউ তোমার মত আদর করেনা। কেউ তোমার অভাব পূরণ করতে পারেনা। আমি তোমার জায়গায় অনেককেই বসাতে চেয়েছি, পারিনি। আসলে বাবা মারা গেলে বুঝা যায়, বাবা কি জিনিস! কেউ কখনো বাবার অভাব পূরন করতে পারেনা। যাকেই বলা হোক যে, আমি তোমাকে আমার বাবার মত দেখি। হয়ত এটা বলা অনেক সোজা, কিন্তু যাকে বলা হবে সে এই কথার মর্ম বুঝতে পারবেনা, পারেনা। আমি প্রমান করে দেখেছি। তবে হ্যা, বাবা, তোমার খালি জায়গার অভাবটা সম্পুর্ণ পূরণ করতে না পারলেও আংশিক পূরণ করতে পারে এমন একজন আছে। তুমি জানো সে কে। মেনন মামা! সে তোমার অভাব অনেকাংশেই আমাদের বুঝতে দেয়না। তুমি যেমন মামাকে ভালোবাসতে, মামাও আমাদের ভালোবাসে। অনেক অনেক।



ভালো থেকো বাবা। অনেক সুখে থাকো। আমার সব সুখ আল্লাহ তোমাকে দিয়ে দিন। আমার জন্য অপেক্ষা করো। এইতো কিছুদিন বাদে আমিও তোমার কাছে চলে আসব। আল্লাহ হাফেজ।
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×