somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিকিৎসকের ব্যবহার এবং রোগীর প্রতি প্রতিশোধ

২৭ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৮, তিন তলার সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আমার ডান পায়ে হাঁটুতে প্রচণ্ড আঘাত পাই। আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় এক অর্থপেডিক্সের কাছে। হাটতে পারছিলাম না তাই দুই সাংবাদিক বন্ধুর কাঁধে হাত রেখেই তার চেম্বারে গেলাম। কক্ষে প্রবেশের পূর্বেই তিনি হেরে গলায় বলে উঠলেন-

- এদিকে ঢুকিস না, আগে এক্সরে করিয়ে আয়।
আমি থ হয়ে গেলাম ডাক্তারের কথায়। বয়সে সে আমার বড় হবে না। তাছাড়া একজন অপরিচিত রোগীর সাথে একদম শুরুতেই তুই-তাহারী জাতীয় ব্যবহার তিনি করবেন এটা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি। তারচেয়েও বড় কথা আমি যেখানে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে তার রুমেই প্রবেশ করতে পারলাম না তার আগে কোন স্থানের কি জাতীয় এক্স-রে করাব এটাও একটি বিষয়। বাস্তবিক অর্থে ডাক্তারের ব্যবহারের ধাঁচ শুনে আমার মাথাও বেজায় চড়ে গেছে। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে জিজ্ঞাস করলাম-
- কোথায় এক্স-রে করাব?
- পাশের রুমে যা। পায় ব্যথা পেয়েছ, চোখও খেয়েছ নাকি?
আমার মেজাজ তখন টগবগ করছিল। তবুও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিলাম। তবে সামলানোর মাত্রাটা ছিল প্রায় শেষ পর্যায়ে।
- তাতো বুঝলাম পাশের রুমে যাব, কিন্তু এক্স-রেটা করাব কোন জায়গার?
তিনি উত্তেজিত হয়ে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন-
- তুই ব্যথা পেয়েছ যেখানে।
আবার "তুই", এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। বন্ধু দুইজনকে ছিটকে ফেলে গিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে বললাম-
- বাইন-চোত, তাইলে তোর কাছে আসছি কিসের জন্য? ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই যদি রোগীকে এক্স-রে বা চেকআপ করাতে হয় তাইলে তোর মত ডাক্তারের কাছে মানুষ আসে কিসের জন্য?
এরপর যা হল তা বেজায় লঙ্কাকাণ্ড। অপেক্ষমাণ অন্যান্য রোগীরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ল ডাক্তারকে শায়েস্তা করার জন্য। এবার নিজে থেকে উদ্যোগী হয়েই সবাইকে থামালাম।
অতঃপর ডাক্তার মশাই যা করলেন তা আমার জীবন ধ্বংসের সামিল। এক্স-রে করলাম। তিনি জানালেন হাঁটুর উপরিভাগে সামান্য ফাটল ধরেছে। একদম ঠালাই মার্কা বেন্ডিজ করে দিয়ে জানালেন ২ মাস পরে আবার আসতে। কোন উপায় ছিলনা, কি করব। ডাক্তারের চিকিৎসা-পত্র যে মেনে চলতেই হবে। তাই ২ মাসের কারাভোগের পর ডাক্তারকে জানালাম। তিনি বললেন, বাসায় বসে নিজেদেরকেই বেন্ডিজ খুলে ফেলতে। খুললামও বটে। কিন্তু আমার অবস্থা তখন চরম শোচনীয়। পা ভাজ করতে পারছিনা। লাঠির মত সোজা হয়ে গেছে আমার ডান পা। অনুভুতিশক্তিও হ্রাস পেয়েছে বেজায়-ভাবে। ডাক্তারকে জানালাম। তিনি আস্তে আস্তে হাটার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু কিছুতেই আর কাজ হচ্ছিল না। বুঝতে পারলাম কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। এদিকে ভারতে আমার নিয়মিত চেকআপেরও সময় হয়ে আসায় ভারত যাওয়ারও সময় হয়েছে। তাই এক ডাক্তার বন্ধুই আমার হাঁটুর অংশে বেন্ডিজ প্রটেকশন করে দিলেন। চলে গেলাম স্ত্রী সমেত বাঙালরে। সেখানে চেকআপ শেষে অর্থপেডিক্সের ডাক্তার দেখালাম। তিনি আমার পূর্বেকার এক্স-রে রিপোর্ট দেখে আঁতকে উঠলেন এবং নতুন করে এক্স-রে করালেন। অতঃপর জানালেন- আমার হাঁটুর উপরিভাগে কোন চিড় ধরেনি। সমস্যাটা হয়েছে ভিতরের অংশে। সেখানে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং গত দু'মাসের বেন্ডিজের কারণে রক্ত জমাট বেঁধে পা এখন প্রায় কেটে ফেলার অবস্থায় উপনীত হয়েছে। আমার স্ত্রী ডাক্তারের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। ডাক্তারের শান্তনায় কিছুটা মনোবল ফিরে পেলাম।
অতঃপর দীর্ঘ ৩ মাসের চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলাম। আজও আমি পা নিয়ে খুব জোরে হাটা চলা করতে পারিনা। পারিনা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নামতে। এখনো প্রায়ই আমি পায়ের যন্ত্রণায় ছটফট করি। তবে আজও যে বিষয়টা জানিনা সেটা হল- এটি ডাক্তারের নিতান্তই ভুল চিকিৎসা ছিল, না ডাক্তার থাপ্পড়েরই প্রতিশোধ নিলেন তা।
সম্ভবত ঐ অবাঞ্জিত ঘটনার পরে তার চিকিৎসা নেয়াটাই ছিল আমার জীবনের জন্য একটি বড় ভুল। যা আজ আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
তবে বহির্বিশ্বে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার যে উপলব্ধিটা হয়েছে তা হল- সেখানকার ডাক্তারদের আচার-ব্যবহারেই রোগীরা অনেক তৃপ্তিলাভ করে। যা একজন রোগীর আরোগ্যের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের দেশের চিকিৎসকদের রূঢ় ব্যবহার একজন রোগীকে আরও অসুস্থ্যতার দিকেই ঢেলে দেয়।
(সংক্ষিপ্ত)
২১টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×