somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এরা স্ট্যান্টম্যান।সত্যিকারের হিরো...

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্যাখো দ্যাখো!ঐ যে আগুনের মইদ্দে দিয়া নায়িকারে লইয়া উইড়া যাইতাসে না?ওইডা কইলাম আমিই!
-ধুরো!কি যে কও না তুমি!উনি তো হিরু!তুমি আবার হিরু হইলা কবে?
আরে,আমারে কি সিনেমার কামে হুদাই রাখে??নায়ক যেইসব কঠিন কঠিন কাম পারে না ওইগুলা আমরা করি!(গর্বে চোখ-টা ঈষৎ বড় হয়ে যায় রাজু'র)
-ও!!!তাইলে আর হ্যায় কিয়ের হিরু??
(মৃদু হেসে)হিরু ব্যাথা পাইলে ছবি করব কেডা?তাই আমরা এই কাম কইরা প্যাট চালানির সুজোগ পাই আর কি।
-তয় আর যাই হোক,তুমি কইলাম নায়িকারে এমনে ধরবা না কইয়া দিলাম!তুমাগো পুরুষ মানুষরে তো আবার ভরসা নাই!
হেহেহে,যেমনেই হোক তোমার এই পাখি খাঁচা ভাইঙ্গা উড়াল দিব না।যেইদিন আমার ভালোবাসা টের পাইবা সেইদিন বুইঝো,দাড়িপাল্লা দিয়া মাইপ্পা কূল পাইবা না! :P
-হইসে হইসে!ওহন জলদি বাইর হন তো!সিনেমা হলেই বইয়া ঢং করবা নাকি?সিনেমা তো কক্ষন শ্যাষ!
ও,ভুইলাই গেসিলাম।চলো বাইর হই।কাইল আবার শুটিং আছে...

সিনেমা হল থেকে বের হয় তারা দুইজন।রাজু আর হেলেনা।
বিয়ে করেছে প্রায় দেড় বছর হল।
প্রেমের বিয়ে।
হেলেনা এখন সন্তানসম্ভবা।এ নিয়ে রাজু'র খুশির শেষ নেই।তার সারাক্ষন ডিউটি কিসে হেলেনা খুশি থাকে।

পেশায় রাজু একজন স্ট্যান্টম্যান।সহজ কথায় বলতে গেলে সিনেমায় নায়ক যেসব ঝুঁকিপূর্ণ শট নিতে শঙ্কা প্রকাশ করে সেসব নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে করে দেয় এরা।মাঝে মাঝে এদের চোট পেতে হয় ভয়াবহ।তবে সিনেমা পাড়ায় সেগুলো মোটেও উৎকন্ঠা রাখে না।রাজু এই লাইনে নতুন।তবে সাহস প্রচুর।আন্যান্য স্ট্যান্টম্যান যা করতে ভয় পায় তাতে একটু পয়সার তা দিলেই রাজু প্রবল আগ্রহ নিয়ে লুফে নেয়।তাই এসব কাজে খুব তাড়াতাড়ি সে ফাইট ডিরেক্টারদের নজর কাড়তে পেরেছে।


এফডিসি।
তপ্ত দুপুর।
বিগ বাজেটের একটি বানিজ্যিক সিনেমার শুটিং হচ্ছে।

শোন রাজু,আমি সিগন্যাল দিলেই মুখের সামনে কনুই দিয়া দোউড়াইয়া গিয়া সামনের গ্লাস ভাইঙ্গা ঢুইকা যাবি।এর পরই নায়ক মারামারি শুরু করব।
-জে আইচ্ছা।
খুব ভালো কইরা করবি কইলাম!চেহারা জানি না দেখা যায়!আর গ্লাস কইলাম তর লাইগা হাজার হাজার কিনতে পারুম না!একবারের বেশী শট দেওন লাগ্লে কইলাম ৩০০০টাকাও পাবি না!কাঁচের দাম কাইট্টা লমু তাইলে!
-উস্তাদ!গতবার না কইছিলেন এইসব কামে ৫০০০কইরা দিবেন?আপ্নে তো জানেন আমার একটার বেশী শট লাগেনা।এত অল্প টাকায় ক্যাম্নে কাম করুম?
দ্যাখ রাজু!তোরে ছোট ভাইয়ের মতো দেখি বইলা মাথায় উডিস না কইলাম!আমি রুস্তম ফাইট ডিরেক্ট্রার আওয়াজ দিলে ২০০০টাকায় এই কাম করনের লাইগা মানুষের লাইন পইড়া যাইব!লায় বেশী পাইসস মনে হয়?তয় যা,আমার লগে আর কাম করা লাগবো না।
(হেলেনার ট্রিটমেন্টে ইদানিং প্রচুর খরচ হচ্ছে,আর সামনে আরও বেশী লাগবে।তাই আর কথা না বাড়ানোই স্রেয় মনে হলো রাজু'র কাছে)
-ঠিক আছে ভাই,ভুল হইয়া গ্যাসে।আর করুম না।সেট রেডী হইলেই আমি শুরু কইরা দিমুনে।
হুম,তুই লাইনে আইতে অনেক লেট করস।যা তাত্তাড়ি রেডী হ!




আয় হায়!তুমার হাতে কপালে পট্টি বান্ধা ক্যান!?!রক্ত কিসের???
-কিছু অয় নাই হেলেনা।তুমি হুদাই ভয় পাইতাছো।আইজ শুটিং করতে গিয়া সামান্য কাইট্টা গ্যাছে।এইডা আর এমুন কি?কাম না করলে প্যাট চলবো?
অইসব লাগবো না!তারচে তুমি গারমেন্টসে কাম খুজো।আমি ঠিক হইয়া গ্যালে দুইজন মিলা কাম করুম,তাও এইসব করা লাগবো না!
-কি যে কও না তুমি...এই কামে অল্পতেই ট্যাকা!খালি একটু সাহস থাকা লাগে।তুমি অত টেনশন কইরো না তো!তোমার ভালবাসা লগে থাকলে আমার কিচ্ছু অইব না।
আমার যে খুব ডর লাগে।তুমার একটা কিছু হইয়া গ্যালে আমার কি হইব কও?
-কইলাম না তুমি চিন্তা কইর না!ডাক্তার কি কইসে জানো?আমরা নাকি আর এক মাসের মইধ্যেই নতুন মেহমান-রে দেখতে পামু!
কও কি!কি হইব তা কয় নাই?
-হ!কইসে আমাগো পোলা অইব!আমার পোলা অইব হিরু!
হ...আইসে আরেকজন।নিজে হিরুর বদলি খাটে,তার পোলা অইব হিরু!
-তুমি দেইক্ষো!অহন খাইতে দেও।খিদা লাগসে।




হাসপাতালে ডাক্তারের চেম্বারে...

আপনার স্ত্রীর অবস্থা খুব একটা ভাল না।সিজার না করলে মা আর বাচ্চার দুজনেরই ক্ষতি হবে।
-ডাক্তার সাব!আপ্নে জলদি অপারেশনের ব্যাবস্থা করেন!আমি ওদের কিছু হইবার দিমু না।
কিন্তু রাজু,টাকা তো অনেক লাগবে।এখনো তো দশ হাজার টাকা বাকি আছে,অপারেশনে প্রায় পঞ্চাশহাজার টাকার মতো লাগবে।এটা কে দেবে?
-দশ হাজার এখনি দিতাসি!আর পঞ্চাশ হাজার রাইতের মইধ্যেই দিয়া দিমু!
ঠিক আছে।আপনি কাউন্টারে কথা বলেন,এদিকে আমি অপারেশনের ব্যবস্থা করি।
-আইচ্ছা,আপ্নে অনেক ভাল ডাক্তার সাব!খোদা আপনার মঙ্গল করুক!
(ডাক্তার মৃদু হেসে চলে গেলেন)


হাসপাতাল থেকে বের হয়ে চিন্তায় পড়ে গেল রাজু।
এত অল্প সময়ে এত টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবে সে?
এদিকে এই দশ হাজার-ও ধার করা।
এমন সময় ফাইট ডিরেক্টর রুস্তমের ফোন...


হ্যালো,রাজু।কই তুই?এক্ষন একটু আইতে পারবি?তোর লাইগা বড় একখান কাম আছে।
-ভাই,আমি তো ব্যস্ত।ক্যাম্নে আসি?
দ্যাখ রাজু,সুজোগ হারাইস না।এমন কাম সহজে আহে না কইলাম!অনেক টাকা পাবি!
(টাকার কথা চিন্তা করেই রাজুর টনক নড়ে গেল।হ্যাঁ,তার টাকা লাগবে...অনেক টাকা!)
-ঠিক আছে ভাই।আমি আইতাছি।




শুটিং স্পট।
এক কোনায় ডিরেক্টর আর নায়িকা ফুসুরফাসুর কি যেন বলাকওয়া করছে।হিরো সেদিকে বিরস ভাবে তাকিয়ে আছে।এছাড়া কিছু উৎসুক মানুষের জটলা।


রুস্তম ভাই,কন কি কাম?
-ও তুই আইসা পরছস।কাম হইল তুই বাইক চালাইতে পারস?
হ পারি।এইডা তো হিরোও পারতো!আমার কি কাম?
-আরে ব্যাটা তোর-ই তো কাম!বাইক লইয়া কেরানিগঞ্জে যে ভাঙ্গা ব্রিজ আছে অইডা পার হইতে হইব।
এইডা আপ্নে কি কন!ওইডা যে উঁচা ব্রিজ,পইড়া গ্যালে লাশ-ও খুইজা পাওয়া মুশকিল!ক্যাম্নে করুম??
-রাজু!তোর মুখে কি এইগুলা মানায়?তুই না সাহসী পোলা?আমি কতো আশা লইয়া তরে ডাকসি...আর এই কামে তুই পুরা চল্লিশ হাজার টাকা পাবি!
(রাজু চিন্তা ভুলে যায়।তার মাথায় কিলবিল করা ডিজিট গুলোর খুব কাছাকাছি কিছু একটা শুনেছে সে)
কাম করতে পারি,যদি আপ্নে পঞ্চাশ হাজার দ্যান তাইলে।
-কি কইলি??অহন চাপে ফালাইয়া বেশী লবি?এইডা কি ভালা অইবো?আমি ছারা এই কাম এক লাখেও কেও করব না।আমি পঞ্চাশ ছাড়া করুম না!এক কথা!
(ফাইট ডিরেক্টর কিছুটা বিরক্ত হয়।শেষে চেহারায় সমঝোতা মূলক ছাপ আসে)
-আইচ্ছা,যা তুই রেডি হ। তোরে পঞ্চাশ-ই দিমু।তয় কামডা কইলাম ভালা করলি না।
আমার টাকা অহন-ই লাগবো।আপ্নে রোমেল-রে দিয়া এই টাকা ঠিকানা মতো হাসপাতালে পাঠাইয়া দেন।অয় জানি দেরী না করে।
-বাপরে!তোর দেহী ত্যাল সেইরাম বাড়ছে!কামের আগেই ট্যাকা?যা,তাও দিলাম।ওই রোমেল!দ্যাখ তো রাজু কি কয়?




বিশাল পুরোনো ভাঙ্গা ব্রিজ।দুই পাশের ব্যবধান প্রায় ১০মিটার।নিচে বিশাল স্রোতধারিনী।নিচে তাকালেই বুকে কেমন জানি কাঁপন দেয়।
রাজু শট নেয়ার জন্য রেডি।তার এখন বেশ খুশী খুশী লাগছে।রোমেল হাসপাতালে টাকা নিয়ে গিয়েছে।অপারেশন শুরু হয়েছে।আর কিছুক্ষণের মধ্যে সে বাবা হবে।

রাজু!সাবধানে টেক দিস!পুরা নতুন বাইক কইলাম!
-আইচ্ছা রুস্তম ভাই!আমি রেডি!আপ্নে টেনশন কইরেন না!
ওকে!ওয়ান,টু,থ্রী...একশন!
তীব্র স্পীডে এগিয়ে যাচ্ছে রাজু,বলতে গেলে একরকম উড়ে যাচ্ছে সে।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে ব্রীজ পার হচ্ছে সত্যিকারের হিরো...
এরপর শুধুই নিরবতা...




আর এক্টু,অল্প একটুর জন্য হল না।পৌছেছিল সে ঠিক-ই।তবে পুরোনো ব্রীজ তার গতি থামাতে পারল না।
রাজু ব্রীজ থেকে ফিনিক্স পাখির মত উড়ছে।
ক্ষয় হয়ে আবার জেগে ওঠার আগেই সদ্য জীবন থেকে মুক্ত সাহসী দেহটা আছড়ে পড়ল নদীতে......


পরদিনের জাতীয় দৈনিকের ভেতরের পাতার একপাশের সংবাদ-"শুটিং করতে গিয়ে স্ট্যান্টম্যান নিহত"
এরও বেশ কয়েকদিন পর বিনোদন পাতায় ভরা সংবাদ-
বক্স অফিসে তোলপাড় করে দিয়েছে "সেই" ছবিটি...

উৎসর্গঃexpendable-2 মুভিতে শুটিং করতে গিয়ে মারা যাওয়া স্ট্যান্টম্যান kun liu কে...
সাথে সেই সম্মানটুকু যা কিনা একজন সত্যিকারের হিরো'র পাওয়া উচিত।

#গল্প-টির আইডিয়া এবারে ঈদে প্রচারিত "সুপারম্যান" নাটক দ্বারা প্রভাবিত।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×