somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবুবুর রহমান টুনু
মান্ধাতার ভাসমান শ্যাওলা এক! ভাসমান এই শ্যাওলাকে ফেসবুক, ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউডে পাবেনঃ Kb Mahbub Khan এই নামে। শ্যাওলার সম্বল ছাইপাঁশ লেখা, আবৃত্তি, বাঁশের বাঁশি আর যখন তখন মুখে এক চিলতে হুদাই মার্কা হাসি!

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল; নেই তবু আছেন এবং থাকবেন।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোন গানের কথা রেখে কোন গানের কথা লিখব! বাংলাদেশের একদম প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে এই শহরের মানুষদের মুখে মুখে এখনো যে সমস্ত গান গুনগুনিয়ে সুরের মূর্ছনা ছড়ায়, যে সমস্ত গান গুন গুন করে গেয়ে এখনো মানুষ গানের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করে, স্বস্তি পায়; সেই সমস্ত গানের প্রায় সিংহ ভাগেরই গীতিকার, সুরকার হচ্ছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ১৯৭৮ সালে “মেঘ বিজলি বাদল” ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের চলচ্চিত্রে কাজ করা। পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি এই মানুষটিকে। একাধারে তিন শতাধিক সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রায় সকল জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন। এছাড়াও অসংখ্য গানে সুর করেছেন বুলবুল যার অধিকাংশ গানই তাঁর নিজের রচিত। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গান হলোঃ

আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি......
আমার বুকের মধ্যেখানে......
আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি......
আইলো দারুণ ফাগুনরে............
আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে............
তোমায় দেখলে মনে হয়, হাজার বছর আগেও বুঝি ছিল পরিচয়............
ঐ চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহণ............
বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম............
স্বামী আর স্ত্রী বানায় যে জন মিস্ত্রি............
আম্মাজান আম্মাজান............
এই বুকে বইছে যমুনা............
সাগরের মতই গভীর............
আকাশের মতই অসীম............
যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে............
অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে............
তোমার আমার প্রেম এক জনমের নয়............
ঘুমিয়ে থাকো গো স্বজনী............
আমার হৃদয় একটা আয়না............
বিধি তুমি বলে দাও আমি কার............
এই তুমি সেই তুমি যাকে আমি চাই............
জীবন ফুরিয়ে যাবে ভালবাসা ফুরাবে না জীবনে.....সহ আরও অসংখ্য গান রয়েছে যেগুলির প্রায় সবগুলিই জনপ্রিয় এবং লোকমুখে সু-পরিচিত, নিজেদের গানের মতন, নিজেদের ভাললাগা, মন্দলাগা অনুভূতি ভাগ করে নেবার এক সাবলীল আশ্রয়স্থল। এই সমস্ত গানের বাইরেও শুধুমাত্র এ্যালবামে প্রকাশিত দেশের জনপ্রিয় শিল্পীদের কণ্ঠে গাওয়া তার লেখা এবং সুর করা অসংখ্য গান দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সেই সময়, এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যেগুলি কালজয়ী গান হিসেবেই জায়গা করে নেবে বলে আমার বিশ্বাস। এই সমস্ত গানও এখনো মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, এর ভেতর থেকে সামিনা চৌধুরীর গাওয়া “আমার দুই চোখে দুই নদী” কিংবা মনির খানের কণ্ঠে গাওয়া “চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে” অথবা “আট আনার বাড়ি” গানগুলির কথা বলা যায়, এই গানগুলি সম্ভবত এ্যালবাম আকারে প্রকাশ পাবার পরে আবার সিনেমাতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু তার পূর্ব থেকে গানগুলির ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়তা।


.
দেশপ্রেমিক এর এক অনন্য উদাহরণ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মাত্র ১৫ বছর বয়সে অংশগ্রহন করেছিলেন। আর সেজন্যই হয়তবা তার লেখা এবং সুর করা সব দেশের গানগুলি এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এবং সেজন্যই সম্ভবত তার লেখা দেশের গানগুলি এখনো আমাদের মরমে শিহরণ জাগায়, দেহের লোম দাঁড় করিয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রায় সবগুলি জাতীয় দিবসে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ভিত্তিক সব অনুষ্ঠানে সবার প্রথম যে গানগুলি জায়গা করে নেয়, যে গানগুলি ছাড়া অনুষ্ঠান পূর্ণতা পায় না, সেগুলিরও সিংহভাগ এই বুলবুলের ঝুলি থেকেই নেয়া। তার লেখা অথবা সুর করা সব দেশগানের ভেতর অন্যতম জনপ্রিয় কিছু গানের কথা বলা যায়ঃ

সব কটা জানালা খুলে দাও না...............
ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে......
সেই রেল লাইনের ধারে.........
সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য.........
মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না..................
জাগো বাংলাদেশ জাগো.........
I am a war child............
পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা............সহ আরও বেশ কিছু গান রয়েছে বুলবুল’র ঝুলিতে যেগুলি আমাদের সমৃদ্ধ করেছে এবং পরবর্তী প্রজন্মের দেশগানের জগতটাকেও সমৃদ্ধ করবে অকপটে বলা যায়। এবং এই গানগুলি ততোদিন বেঁচে থাক এই চাওয়া।
এখানে একটি কথা খুব গুরুত্বের সাথে বলতে হয়; আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ছিলেন যুদ্ধাপরাধ এর দায়ে দায়ী সাবেক জামায়াত প্রধান গোলাম আজমের বিরুদ্ধের অন্যতম একজন সাক্ষী। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে নির্ভয়ে সাক্ষী দিয়েছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে। এবং এই সাক্ষ্য দেবার পর ঢাকার কুড়িল ওভারপাসের কাছে তার ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এছাড়াও তার উপর আসতে শুরু করে একের পর এক মৃত্যুর হুমকি, ভাই হারানোর বেদনা বুকে এত শত হুমকির ভেতর থেকে তিনি সরকার’র কাছে থেকে নিরাপত্তা চাইতে বাধ্য হন। আগামী প্রজন্ম তাকে কতটুকু জানবে, তাকে কতটুকু চর্চা করবে, কতখানি পড়বে আমি জানি না তবে প্রকৃত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবার জন্য হলেও বুলবুল একজন অনন্য উদাহরণ বলে আমি মনে করি।

.
১ জানুয়ারি ১৯৫৬ সালে ঢাকায় জন্ম নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তার মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ এবং দেশ তথা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অসামান্য অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কার-সহ অন্যান্য অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। অনন্য এই মানুষটি আজ আমাদের মাঝে নেই। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে পাঁচটায় তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বুলবুল আপনি চির সত্যের সেই ঠিকানায় ভাল থাকুন, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ভাল রাখুন এই কামনা করি। আপনি আপনার কর্মের ভেতর দিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিরাজ করবেন, বেঁচে থাকবেন


ছবি এবং তথ্যঃ ইন্টারনেট থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৫১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×