somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির নৌকা বেয়ে

৩১ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেলবেলাটায় বেশ ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যায় বারান্দায় বসলে। গ্রীলের ওপাশে চোখ পেতে দোদুলকে দেখি আমি মুগ্ধ হয়ে। মাঠ নেই খেলার, তবু ভাগ্যিস আবাসিক এলাকা বলে বাসার সামনে এইটুকুনি রাস্তাটা পেয়েছে, যেখানে বড় যান চলে না। সেই সেইটুকুনি রাস্তাতেই কয়েকটা ইট একটার ওপর একটা সাজিয়ে উইকেট বানিয়ে ব্যাটসম্যান সেজে দাঁড়িয়ে গেছে তার সামনে। ২২ গজের তত্ত্ব এইটুকু জায়গায় ওরা মানতে পারে না, তাতে কি? অদূরে দাঁড়িয়েই হুংকার ছাড়ে ভবিস্যত মাশরাফি।

আমি মুগ্ধ হয়ে ওদের দেখি। চারপাশের যেসব ক্ষুদে ফিল্ডার ছুটোছুটি করছে ওদের দেখি। উইকেটের পেছনের দুধভাত ছেলেটাকেও দেখি। দেখতে দেখতেই কানের ওপরে চাপড় পড়ে। চমকে ওঠে তাকাতেই দেখি ফজলু আর নুরু দাঁড়িয়ে ফ্যাকফ্যাক করে হাসছে। ঠিক বুঝতে পারি না কেন, কিন্তু আমার একটু খটকা লাগে। ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকি আমি। আবার চাপড়।

- ব্যাটা,আমাদের দিকে তাকাইয়া দেখতাছোস কি? আকাশ দ্যাখ, ক্যামন ম্যাঘ করসে দেখছস? এক্ষনি নৌকা নিয়া বাইর হব। উঠ উঠ, সারাদিন বই পইড়া পইড়া ভ্যাবলা ভাবুক হইছস একটা।

এবার আমার সম্বিত ফিরে, তাই তো ! আজ দুপুরেও না ইস্কুল থেকে ফেরার পরে এমন কথাই হয়েছিলো? এর মাঝেই ভুলে গেলাম? ফজলু, নুরু এবার হাত ধরে টান মেরে উঠিয়েই ফেলে আমাকে। বাংলা ঘর পেরিয়ে উঠোনে বসে থাকা মা'কে চিতকার করে একটুখানি জানিয়ে যাই কেবল, "মা রে, আমি গেলাম , চিন্তা করিস না"...।

এবার ছুটতে থাকি তিন বন্ধু মিলে। নদীর ঘাটে নৌকো বাঁধাই ছিলো। নুরু আমাদের তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারে এইসব কাজ। আমি আর ফজলু একটু পরে দেখি নৌকা ভাসছে! আহা! চলতে থাকে আমাদের নৌকা... পারি না বলে কিছু নেই, তিনজনেই বৈঠা হাতে নেই পালা করে। আকাশের মেঘ একটু একটু করে বাড়তে থাকে, গুমগুম গুড়গুড় হাঁকডাক। এত জোরেলা বাতাস! আহা! পাড়ের বাড়িঘরের সামনে দাঁড়ানো কত্ত মানুষ, ছেলে, বুড়ো, বৌঝি, তাদের কচি কচি ননদেরা...!

- সবাই বুঝি আমাদেরই দেখতাসে রে নুরু?
- আররে না...অতদূর থেইকা অত বুঝা যায় নাকি রে? ওরা ম্যাঘ দেখে রে ম্যাঘ, বাতাস খায়!

একটু একটু দূরে সরে যেতে থাকে পাড়ের ছবি...আমাদের ছোট তরী বেয়ে আমরা দূরে, আরো দূরে ভাসতে থাকি। ফজলু হঠাত নৌকার মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাত শূণ্যে তুলে চিতকার করতে থাকে। "ওরে ফজলা, হাসু...আমি তো উইড়া যাইতেসি রে...আআআআআআআআ"। বাতাস বাড়তে থাকে আমাদের আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিতে। আমিও দাঁড়াই নুরুর পাশে, আমিও চিতকার করি। "উউউউউউউউউউউউউউ, হুইইইইইইইই"। দুইজন গলা জড়াজড়ি করে আমরা নৌকার ওপরে নাচতে থাকি দুলে দুলে। ফজলু বৈঠা হাতে দাঁত কেলিয়ে হাসে। "খাড়া...আমিও আই"।

একজন একজন করে হাল ধরি। তুমুল হাসি, হুল্লোড়ের সাথে বেড়ে চলে পাগলা হাওয়া। নৌকা চলে, চলতে থাকে। নৌকা চলে, হাওয়া চলে...নৌকা চলে, হাওয়া চলে ! কৈশোরের উদ্দামতায় আনাড়ীপনাকে তুচ্ছ করে চালানো নৌকাও এবার একটু হাসে আমাদের সাথে, "দাঁড়া রে দাঁড়া। এবার আমার খেল দ্যাখ"। অতঃপর নৌকার গতি আর বাতাসের বেগ পাল্লা দিয়ে উল্লাস করে। এক সময় দেখি গ্রাম ছেড়ে অনেক দূরে চলে এসেছি। কৈশোরের পাগলা যৌবন টেনে নিয়ে এসেছে আমাদের এত দূরে, এবার হানা দেয় ভয় কৈশোরের আরেক রূপ-ভয় পাওয়া শৈশব।

নুরু, ফজলু এবং আমি একে অন্যের নাম ধরে কান্না শুরু করে দেই এবার। মা"র কথা মনে হয়। এই নৌকা ঠিক দিক মেনে মেনে কেমনে বেয়ে নিব আবার আমাদের গ্রাম? ও আল্লাহ বাঁচাও, এইবার শুধু বাড়ী ফিরতে দাও, আর কখনো এমন করুম না। আল্লাহ তুমি মেহেরবান, তুমি দয়ালু...কাইল থেইকাই নামাজ পড়মু...গ্রামে ফিরাইয়া নাও, বাড়ী ফিরাইয়া নাও।

আস্তে আস্তে বাতাস কমে আসে, নৌকাও কথা শোনে আমাদের। আল্লাহর নাম নিতে নিতে গ্রামের বাড়ীঘর চোখে পড়তে থাকে আবার একটু একটু করে। আপন ঘাটে নৌকা ভেড়াই আমরা।... এতক্ষনের উত্তেজনায় কাঁপছে শরীর। হঠাত সব রাগ গিয়ে পড়ে একজনের ওপর। রাগে কাঁপতে কাঁপতে তাকেই গালি দিতে থাকি একমনে..."শয়তান আল্লাহ, খুব পাট নিলি আমাদের ওপরে না? তোরে যদি আর ডাকসি জীবনে"!।


- দাদু, আমি আজকে ৩৯ করেছি জানো?

দোদুলের ডাকে নেমে আসি আমার কৈশোরের নৌকো থেকে। আনমনে বলি,"আর আমি সেঞ্চুরি"!

(গল্প)


(পুনশ্চঃ আজ খুব বিশেষ একটা দিন। খুব দূর থেকে ভার্চুয়াল ভালোবাসা ছাড়া আর তেমন কিইবা দিতে পারি? তাই ছোট্ট এই গল্পটা আজকের দিনে, রু তোর জন্যে আমার উপহার।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৩:৪৪
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×