ছোট বেলায় বাংলাদেশে প্রথম ভোটার হয়ে যখন ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিলাম, তখন কেউ একজন আমার নাম জানতে চেয়ে উত্তরে বলেছিলো আমার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। আমি যাতে তাড়াতাড়ি ভোট কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাই, তা না হলে সে পুলিশ ডাকবে। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে স্বাধীন দেশে জীবনের প্রথম ভোট দিতে গিয়ে বাংলাদেশে এই হলো আমার অভিজ্ঞতা। আমেরিকায় এসে এদেশের গর্বিত নাগরিক হয়ে আমাকে কখনো অবশ্য তেমন সমস্যায় পড়তে হয় নি। বহুবার ভোট দিয়েছি, কেন্দ্রে গিয়েছি, বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছি।
এ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও আমার একবারের জন্যেও মনে হয়নি যে, আমেরিকায় কোন-ই ভোট জালিয়াতি হয় না। হয়, তবে সংখ্যায় সেটা অত্যন্ত নগন্য বলা চলে। বাংলাদেশে ফোনে যখনই আমি কোন বাংলাদেশী-র সাথে এ বিষয়ে কথা বলি তারা কেউই বিশ্বাস করতে চায় না যে, আমেরিকাতেও ভোট জালিয়াতি সম্ভব। ঐ যে বললাম বিশ্বাস! হ্যাঁ আমেরিকাতেও হচ্ছে তবে তা দিনকে রাত বানানোর মতো নয়। এ বছরের নির্বাচনে তেমনই ইস্যু নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, সেটা নিয়ে আমার কোন ব্যক্তিগত অভিমত নেই। কারণ, আইন আছে এবং আইনের শাসন আছে। আজ অথবা কাল, এ দেশে সত্য বের হয়ে আসবে।
রাষ্ট্রপতি এবং তার লিগ্যাল টিম ভোটে অনিয়ম নিয়ে অনেক অভিযোগই করছেন, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না এ ব্যাপারে কোন আদালত থেকে সিদ্ধান্ত আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এই নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয় মনে করি। তবে সংবাদে দেখলাম এ বছরের নির্বাচনে উইসকানসনের এক মহিলা এ ধরনের প্রতারণার দায়ে ইতোমধ্যে বিচারের সম্মুখীন হচ্ছেন (সূত্র)। যতটুকু জানা গেছে তাতে বোঝা গেল যে তিনি নিজের ভোট ছাড়াও জেনেশুনে তার পার্টনার (কোভিডে মারা গেছেন) এর নামে আসা ব্যালট ব্যবহার করে মেইল-ইন ভোট দিয়েছেন। সিডিসি-র তথ্য মতে এখনো পর্যন্ত করোনায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন (সূত্র) সে হিসেবে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজারের মতো (সূত্র) মানুষ মারা গেছেন। প্রশ্ন হলো, নির্বাচনের আগে করোনায় মৃত কত ব্যক্তির জন্যে মেইল-ইন ব্যালট পাঠানো হয়েছিলো এবং কতগুলো ভোট হিসেবে ফেরত এসেছে বা আসে নি তার কোন সঠিক তথ্য কারো জানা আছে বলে আমি জানি না। বিষয়গুলো ভাববার মতো অবশ্যই, অন্তত যতক্ষণ পর্যন্ত না এ ব্যাপারে কোন সরকারী তথ্য প্রকাশ করে, ততক্ষণ পর্যন্ত একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। বিষয়টা কে হারছে বা জিতছে তা নিয়ে নয়, বরং ভোটিং ফ্রড আদৌও কোন সমস্যা কিনা সেটা বোঝা অবশ্যই জরুরী।
যারা আমেরিকায় ভোটিং ফ্রড নিয়ে কথা তুলতেই ভ্রু কুঁচকে ফেলেন তাদের জন্য একটা লিঙ্ক দিচ্ছি। হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এ বিষয়ে বেশ আগে থেকেই কাজ করছে এবং তাদের কাছে বেশ সমৃদ্ধ একটা ডেটাবেইজ আছে, যেখানে বিভিন্ন স্টেট ভেদে পূর্ববর্তী সময়ে বিভিন্ন বছরে যারা ভোটিং ফ্রডে জরিত থেকে বিভিন্ন আদালতে সাজা পেয়েছেন তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়া আছে। চাইলে দেখে আসতে পারেন এখান থেকে। ইতোমধ্যে উপরে উল্লেখিত প্রতারণা ছাড়াও এ বছর ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে ১ জন, ভার্জিনিয়াতে ১ জন, লুইসিয়ানাতে ১ জন, এরিজোনায় ১ জন, নিউ মেক্সিকোতে ২ জন ও ক্যালিফোর্নিয়াতে ৮ জনের বিরুদ্ধে এবছর ভোট জালিয়াতির জন্য বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ধন্যবাদ।