ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে মানবজমিন
সিলেটের বহুল আলোচিত ট্রাফিক সার্জেন্ট তসলিমের স্ত্রী সেতুর মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশের তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হলো। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্টো বাদিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে এ তদন্ত রিপোর্ট মানছেন না লিপি সুলতানা সেতু। তিনি প্রতিবেদনকে একপেশে ও প্রভাব-নির্ভর বলে দাবি করেছেন। এ কারণে তিনি এ মামলার জুডিশিয়ারি তদন্ত দাবি করেন। পুলিশের এ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সিলেটে আবার তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, সেতু যে গ্রাউন্ডে মামলা করেছেন তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুলিশ পরকীয়ার ব্যাপারে ব্যাপক অনুসন্ধানও চালায়নি। সিলেটের বহুল আলোচিত ট্রাফিক সার্জেন্ট মোল্লা তসলিম হোসেন মনি ও সিআইডির ঢাকা জোনের সিনিয়র এএসপি নাবিলা জাফরিন রিনার বিরুদ্ধে গত ২২শে এপ্রিল সিলেটের আদালতে এ মামলা দায়ের করেছিলেন সার্জেন্ট তসলিমের স্ত্রী লিপি সুলতানা সেতু। তিনি আদালতে এ মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাটি তদন্তে সিলেটের কোতোয়ালি পুলিশের কাছে পাঠায়। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সিলেট কোতোয়ালি পুলিশ ২৫শে এপ্রিল মামলাটি রেকর্ড করে ব্যাপক তদন্তে নামে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি খোন্দকার নওরোজ আহমদ সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একত্রে মিলে এ মামলার তদন্ত করেন। তদন্তকালে তারা ঘটনাস্থল নগরীর গুলশান হোটেলে সার্জেন্ট তসলিমের বর্তমান বাসস্থানস্থল ঘুরে দেখেন এবং গুলশান সেন্টারের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তারা সেতু ও সিনিয়র এসএসপি নাবিলা জাফরিন রিনার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবের বক্তব্য রেকর্ড করেন। একই সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলের সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যও গ্রহণ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলার তদন্তে কোন গাফিলতি করা হয়নি। যেহেতু পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা, সেহেতু পুলিশ তদন্ত করেছে বেশ জোরালোভাবে। পুলিশ সেতুর দায়ের করা মামলার বক্তব্যের সঙ্গে সিসি টিভি ও প্রত্যক্ষকারীদের ফুটেজ এবং বক্তব্যের কোন মিল খুঁজে পায়নি। এ কারণেই প্রায় এক মাস তদন্ত শেষে বুধবার বিকালে সিলেটের আদালতে এ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ওসি খোন্দকার নওরোজ আহমদ। মামলায় সেতু অভিযোগ করেছিলেন, সার্জেন্ট তসলিম তাকে নির্যাতন করেছেন এবং যৌতুক দাবি করেছেন। কিন্তু সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্টতা না পাওয়ায় পুলিশ সার্জেন্ট তসলিমকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে পুলিশ মিথ্যা মামলা দায়ের করায় বাদিনী সেতুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন আদালতে। এদিকে, পুলিশের রিপোর্টের আগে চলতি মাসের ১১ তারিখ সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করেন লিপি সুলতানা সেতু। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি তদন্ত কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তবে মামলা দায়েরের পর থেকে সার্জেন্ট তসলিম বলে আসছিলেন, যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা মিথ্যা। সেতুর ক্ষোভকে পুঁজি করে তার কয়েকজন সহকর্মী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা সেতুকে দিয়ে আদালতে মামলা করিয়েছে। এই মুহূর্তে সিলেটে অবস্থান করছেন মামলার বাদিনী লিপি সুলতানা সেতু। সিলেট নগরীর উপশহরে তার দূরসম্পর্কের এক খালার বাসায় উঠেছেন তিনি। গতকাল সেতুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি আগেই মামলার তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছিলাম। আমার আশঙ্কাই সত্যি হলো। পুলিশ তসলিম ও নাবিলাকে বাঁচিয়ে দিলো। তিনি বলেন, আমি পুলিশের কাছে কোন বিচার পাইনি। পুলিশের আইজিপি থেকে শুরু করে সবার কাছে গিয়েছি। তারা আমার আর্তনাদকে কানে জায়গা দেয়নি। তিনি জানান, আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছি। আমি পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের নারাজি দেব। আমি এ মামলারই জুডিশিয়ারি তদন্ত দাবি করবো। তিনি জানান, আমি পুণ্যভূমি সিলেটে এসে আমার স্বামীকে হারিয়েছি। নাবিলা আমার স্বামীকে আমার কাছ থেকে ছিনতাই করেছে। আমাকে পথে বসিয়েছে। তিনি জানান, আমি যখন বিচার প্রার্থনা করে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, তখনও নাবিলা-তসলিম ঢাকায় একত্রে বসবাস করছে।
সার্জেন্ট ও এএসপি প্রেম, পুলিশের তদন্ত, সেতুর প্রত্যাখ্যান
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন
সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?
আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?
রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন