
সিরাজুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুরের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে স্বামী হাসান সাঈদ। নির্যাতনে রুমানা এখন অন্ধপ্রায়। জীবন সঙ্কটাপন্ন। শিগগিরই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রুমানার চোখ, মুখ, নাক, ঠোঁট, হাত-পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষত। উপড়ে ফেলা হয়েছে চোখ দু’টি। সারা শরীরে কামড়ের দাগ। রুমানা এখন রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে নারাজ। স্বামী হাসান সাঈদ পলাতক। সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে ৭ বছর আগে এখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন রুমানা। স্বামী সাঈদ বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে শুরু করেন ব্যবসা। থাকতেন ঘরজামাই। রুমানা উচ্চ শিক্ষার জন্য ২০১০ সালে কানাডায় যান। গত ১২ই মে তিনি ঢাকায় আসেন। এরপর তার স্বামী আর তাকে কানাডায় যেতে দিতে রাজি হয়নি। আগস্ট মাসে রুমানার থিসিস পেপার জমা দেয়ার কথা। তাই পড়াশোনা করতে তিনি আবারও কানাডা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার স্বামী কিছুতেই তাকে দেশের বাইরে যেতে দেবেন না। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই দু’জনের মধ্যে চলছিল ঝগড়া। গত ৫ই জুন সাঈদ হামলে পড়েন রুমানার ওপর। সারা শরীর আহত করেন কামড়িয়ে। উপড়ে ফেলেন দুই চোখ। রুমানাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রেখে সাঈদ বাসা থেকে পালিয়ে যান। পরে কাজের বুয়া আশপাশের ফ্ল্যাটে বসবাসরতদের সহায়তায় রুমানাকে উদ্ধার করে ওই দিনই ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন রুমানার পিতা মেজর (অব.) মঞ্জুর হোসেন বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ৫। মামলাটির তদন্ত করছেন এসআই মকবুল হোসেন। বিষয়টি জানতে গতকাল বিকালে ল্যাবএইড হাসপাতালে গেলে অনুসন্ধান ও হেল্প ডেক্স থেকে জানানো হয়- এ নামের কোন রোগী আমাদের এখানে ভর্তি হয়নি। তবে ল্যাবএইড-এর কর্তব্যরত ডাক্তার থানা পুলিশকে জানিয়েছেন, রুমানা আশঙ্কামুক্ত নন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মকবুল হোসেন জানান, ঘটনার পর থেকেই সাঈদ পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন জানান, রুমানা পারিবারিক ভায়োলেন্সের শিকার। তিনি ৭ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেছেন। খুবই ভাল শিক্ষক তিনি। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে গতকাল বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত দেশের বাইরে পাঠানো হবে। ঘটনা সম্পর্কে আপাতত কিছু বলতে চাইছি না। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর পর মিডিয়াকে ডেকে আমরা বিষয়টি জানাবো। রুমানা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে যোগ দেন ২০০৩-০৪ সালে। একমাত্র ফুটফুটে কন্যা সন্তান রয়েছে তার। এক বছর মেয়াদি এমএস এবং ৩ বছর মেয়াদি পিএইচডি কোর্সে পড়াশোনা করতে সরকারি বৃত্তি নিয়ে তিনি যান বৃটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ৩ মাস পড়লেই এমএস কোর্স শেষ হয়ে যেত। তারপর শুরু হতো পিএইচডি। সেমিস্টার ব্রেকে তিনি এসছিলেন ঢাকায়। সহযোগী অধ্যাপক রুহুল আমীন জানান, বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তিনি জানান, রুমানা ছিল আমার সরাসরি ছাত্রী। সহজ-সরল লক্ষ্মী মেয়ে রুমানা। অন্য দশটি মেয়ের চেয়ে রুমানা অলাদা ধরনের। তার মধ্যে রয়েছে শিশুসুলভ কোমলতা। তার ওপর এরকম ভয়াবহ নির্যাতন আসতে পারে কল্পনাও করতে পারিনি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



